আপনি বাংলাদেশী হয়ে থাকলে পাসপোর্টের তৃতীয় পৃষ্ঠাতেই এধরনের একটি কথা দেখতে পাবেন - "ইসরাইল ছাড়া অন্য সব দেশের জন্য প্রযোজ্য"। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্যালেস্টাইনের ভুমি দখল করে সৃষ্টি হওয়া জায়নিস্ট রাষ্ট্র ইসরাইলকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না, কোন ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। সে হিসেবে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী কেউ যেমন ইসরারইল যেতে পারে না, ইসরাইলি পাসপোর্টধারী কেউও (অন্তত সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে) বাংলাদেশ আসতে পারে না।
কিন্তু ইসরাইলি নাগরিক প্রবেশের বাধা থাকলেও তাদের ইন্টেলিজেন্স সংস্হা হিসেবে বিখ্যাত (মতান্তরে কুখ্যাত) "মোসাদ" এর নাগাল থেকে সম্ভবত বাংলাদেশ বাইরে নেই। ব্লগার সৌম্যের "অগুনিত মেহেরের গল্প " পড়লে হয়ত কিছুটা ধারণা পেতে পারেন। সেখানে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া সবাইকেই মৃত্যুবরণ করতে হয় ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার পর। তাদের অপরাধ??? তারা সেনা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে তাদের সেনা প্রশিক্ষণের তথ্য সম্ভবত বাংলাদেশ থেকেই মোসাদ সংগ্রহ করেছে।
বাংলাদেশে গত বছরের দ্বিতীয়ভাগে মৌলবাদি হরকাতুল জিহাদ ও ইসরাইলের কিছু প্রতিনিধি মিলে(খুবই অদ্ভুত বন্ধন!) একটি "ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি" নামক নতুন একটি দল তৈরী করে এবং নির্বাচন কমিশনে অন্তুর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে। তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে জরুরী অবস্হার মধ্যেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্হানে ইফতার পার্টির আয়োজন করে প্রচারনা চালানো হয়। উল্লেখ্য প্রায় সবগুলোতেই উপস্হিত ছিলেন বিতর্কিত "সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী", যাকে ইসরাইলি পাসপোর্টসহ ২০০৩ সালে একবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে বাংলাদেশের ডেইলি স্টার পত্রিকা এই নবগঠিত দলটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে দলটি সম্পর্কে সংগঠকরা দাবী করে "গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ইসলামী শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি দল"। কিন্তু ডেইলি স্টারের সাথে সাক্ষাতকারে শোয়েব চৌধুরীর একটি কথাতেই বেরিয়ে আসে দলটির আসল চেহারা - "Since IDP echoes the demand for establishing ties between Dhaka and Jerusalem, and upholds interfaith understanding, it is our responsibility to promote them at international level"।
আমাদের ব্লগেও সেই দলের একজন প্রতিনিধি দেখা যাচ্ছে। তিনি গাজায় ইসরাইলি হামলাকে যাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন । তার লেখাটি পড়লে মনে হবে ইসরাইল একটি জঙ্গী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করছে, যেটি যেকোন স্বাধীন রাস্ট্রই করবে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদের হামলার জবাবে এভাবে এই আকারের মাস পানিশম্যান্টের একটিই পরিভাষা, "জেনোসাইড"। ডিসেম্বরের ২২তারিখ থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৫০০ প্যালেস্টাইনীর প্রাণহানী হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নারী-শিশু রয়েছে। কোন সাহায্যকারী সংস্হাকেও সেখানে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। আজ থেকে শুরু হয়েছে গ্রাইন্ড এসল্ট। কাজেই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর জানা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।
["হিব্রু" নিকের এ লেখাটির প্রয়োজন ছিল। জানতে পারলাম, ইসরাইলি চরেরা শুধু দল গঠন করে বসে থাকেনি। কমিউনিটি মিডিয়াতেও হাত দিয়েছে।]
---------
আপডেট: নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল মুসলিম-ইহুদিদের যৌথ দল হিসেবে পরিচয়দানকারী "ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি"। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। এ খবরটি এসেছিল ডেইলি স্টারের নভেম্বর ২ তারিখের সংখ্যায় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:২৯