
মিষ্টি করমচা
কুল
ব্রোকলি
বারি মিষ্টি লেবু-১
কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রাইখালী , বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর একটি কেন্দ্র। ইহা ২৯ নং কৃষি পরিবেশিক অঞল এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার অন্তর্ভূক্ত। যার মোট জমির পরিমান ৩৮.৯৫ হেক্টর এবং ১৯৭৬ ইং সাল থেকে গবেষণার মাধ্যমে আজ অবধি অত্র জেলার তথা সমগ্র পার্বত্য অঞলের কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে।এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা কয়েকটি উদ্দ্যেশ্যকে (দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞলীয় পার্বত্য এলাকার ফসলাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক)সামনে নিয়ে-
• ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং যথাযথ মুল্যায়নের পর তা সুপারিশকরণ।
• বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনের জন্য চাষাবাদ পদ্ধতি এবং পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
• বিভিন্ন ফসলের পুষ্টির চাহিদা নিরুপণ, মৃত্তিকার পুষ্টি ঊপাদান মুল্যায়ন এবং সার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়ন।
• বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগবালাই দ্বারা ফসল ও উৎপাদিত দ্রব্যের ক্ষতির পরিমান নিরূপণ এবং যুক্তিসংগত বালাই ব্যাবস্থপনার উন্নয়ন।
• শস্যের ফলন এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য শস্য চাষ পদ্ধতির উন্নয়ন।
• দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞলীয় পার্বত্য এলাকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি সমূহের জন্য খামার পদ্ধতির মূল্যায়ণ।
এই কেন্দ্র পার্বত্য অঞলের কৃষকের মাঠের বিভিন্ন ফসলের চিহ্নিত সমস্যার সমাধান, জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকে।এ পর্যন্ত এই কেন্দ্র গবেষনার মাধ্যমে পদ্ধতিগত ভাবে জাতীয় বীজ বোর্ডের মাধ্যমে ফল ও সবজীর মোট ১০ (দশ) টি জাত মুক্তায়িত করেছে। যার মধ্যে ফলের ০৫ (পাঁচ) টি ও সবজীর ০৫ (পাঁচ) টি।
১। বারি ঝাড়সীম-২ : এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০২ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি খাটো ও নিয়মিত স্বভাবের সীমের জাত।সীম নিয়মিতভাবে থোকায় থোকায় ধরে। প্রতিটি গাছে প্রায় গড়ে ১৮ টি সীম ধরে। সীম ১০-১২ সেমি লম্বা এবং ০.৭-০.৮ সেমি চওড়া হয়ে থাকে। ফল হাল্কা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে যা দেখতে খুবই আকর্ষনীয়। সীম ৬০-৬৫ দিনের মাঝে সংগ্রহ করার মতো হয়ে থাকে।
২। বারি কলা-৩: এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০৪ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল বাংলা কলার জাত যা পাকা কলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাকা ফলের রং উজ্জ্বল হলুদ। ফল সংগ্রহের সময় রোপনের ১২-১৩ মাসের মধ্যে। ফল মাঝারি আকারের।পাকা শাস মিষ্টি (টিএসএস ২৬%) ও সুস্বাদু। কাঁদি প্রতি কলার সংখ্যা প্রায় ১৪১ টি এবং কাদির ওজন প্রায় ২৩ কেজি। এর প্রতি হেক্টরে ফলন প্রায় ৪৩ টন।
৩। বারি কলা-৪ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০৫ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল চম্পা কলার জাত যার প্রতি কাদিতে প্রায় ১৭৮ টি ফল ধরে এবং কাদির ওজন প্রায় ১৯ কেজি।ফল মাঝারি থেকে ছোট (৯৭ গ্রাম) এবং তক-মিষ্টি স্বাদের (টিএসএস ২০.৩%) ও উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের। প্রতি হেক্টরে এর ফলন প্রায় ৪৭ টন এবং সাধারন রোগ বালাই সহনশীল।
৪। বারি সীম-৪ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০৬ সালে নিবন্ধিত করা হয়। প্রতি মঞ্জুরিতে ১০-১২ টি শিম ধরে। শিম লম্বায় ১০-১১ সেমি এবং পাশে ২-২.৫ সেমি হয়। শিমের ওজন ১০-১২ গ্রাম, প্রতি শিমে ৪-৫ টি বীজ থাকে। গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ টি শিম ধরে। ভাইরাস ও অন্যান্য রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়। মধ্য জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। নভেম্বর মাসের প্রথমেই শিম সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২২ টন (৮০-৯০ কেজি/শতাংশ)।
৫। বারি কামরাঙ্গা-২ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০৮ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল কামরাঙ্গার জাত। ফল সংগ্রহের সময় জানুয়ারী, জুলাই এবং অক্টোবর। ফল মাঝারী (১০০ গ্রাম), স্বাদে মিষ্টি (টিএসএস ৮.০৫%) ও ছোট বীজযুক্ত। শাঁস কচকচে এবং রসালো। ভক্ষণযোগ্য অংশের পরিমান ৯৯%। এর ফলন প্রতি গাছে ২৬০ কেজি (৫৩ টন/হেক্টর)।
৬। বারি আম-৮ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০১০ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি বহুভ্রুনিক একটি উচ্চ ফলনশীল আমের জাত। নিয়মিত ফল ধরে এবং মাঝারি থেকে নাবী জাত। ফল সংগ্রহের সময় জুনের শেষ সপ্তাহ। খোসা হলুদ বর্ণের এবং শাঁস উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের হ্যে থাকে। ফল খুব মিষ্টি (টিএসএস ২২%)। খাবার উপযোগী অংশ ৭৩% এবং রপ্তানিযোগ্য। ফলন হেক্টরে ১৩-১৬ টন (৮ বছর বয়সী গাছে)।
সাধারনত উদ্ভিদের বীজে একটি মাত্র ভ্রুণ থাকে এবং একটি বীজ হতে একটি চারা উৎপন্ন হ্য়। তবে বারি আম-৮ বহুভ্রুণী হওয়াতে এর একটি বীজ থেকে ৫-৬ টি চারা উৎপন্ন হয় যেগুলোর মাঝে তুলনামূলকভাবে বড় একটি চারা বাদে বাকিগুলো চারা কলমের ন্যায় মাতৃ গুণাগুণ অক্ষুন্ন রাখে। ফলে সেই চারাগুলো চারাকলমের চেয়ে অনেক তারাতারি বড় হয়, ভিত্তি মজবুত হয়, তারাতারি ফলন দেয় এবং দীর্ঘজীবী হয়। যেখানে চারা কলমও একই সময়ে ফলন দেয়, তবে বৃদ্ধি হয় আস্তে, ভিত্তি হ্য় নরম এবং আয়ু হয় তুলনামূলখভাবে কম।
৭। বারি ঝাড়সীম-৩ (খ্যাইসা) : এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০১১ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি খাটো ও খাড়া একটি সীমের জাত। এটি খাইস্যা হিসেবে খাওয়া হয়।প্রতি গাছে ৮-১০ টি শিম ধরে। শিম লম্বায় ১৪-১৬ সেমি এবং চওড়ায় ১.০-১.৩ সেমি হয়ে থাকে। বীজের ফলন হেক্টরে ৫ টন হয়ে থাকে।রোপনের ৮০-৮৫ দিনের মাথায় বীজ খাইস্যা হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়।
৮। বারি জ্যাকবীন-১ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০০১১ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি খাটো ও খারা সীমের জাত। উচ্চতায় মাত্র ১০০-১১০ সেমি হয়ে থাকে যা মাঁচা ছাড়াই জন্মানো যায়। বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে।এটি সারা বছর চাষযোগ্য। শিম তলোয়ারের মতো, ২০-২৪ সেমি লম্বা এবং ১.৮-২.০ সেমি চওড়া হয়। হেক্টর প্রতি শিমের ফলন ১৮-২০ টন।
৯। বারি সীতালাউ-১ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০১১ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি একটি বহুবর্ষজীবী লতানো সবজী যা সারা বছর ফলন দিয়ে থাকে। এর ফল সবজী হিসেবে রান্না করে বা শরবত হিসেবে খাওয়া যায়। একই লতা থেকে প্রায় ১২-১৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। ফল লম্বায় ১২-১৪ সেমি এবং চওড়ায় ৮.৫-৯.০ সেমি। ফলন প্রতি হেক্টরে ৩০-৩৫ টন। সাধারনত লতা লাগানোর ৫০-৫৫ দিনের মাথায় প্রথম ফলন পাওয়া যায়।
১০। বারি মিষ্টি লেবু-১ এই জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কতৃক ২০১২ সালে নিবন্ধিত করা হয়। এটি উচ্চ ফলনশীল, প্রায় সারা বছর নিয়মিত ফল দানকারী জাত। ফল মাঝারী (১৩০-১৪০ গ্রাম), পাকা ফল দেখতে আকর্ষনীয় হালকা বা কমলা-হলুদ রঙের, রসালো এবং মিষ্টি (টিএসএস ৭-৮%), ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ (৪৫ মিগ্রা/১০০মিলি রস)। বীজ অল্প (৪-৫ টি), খোসা মধ্যম প্রুরু, খাদ্যাপযোগী অংশ ৬০-৬৫%। গাছপ্রতি বছরে ফলের সংখ্যা ৩০০-৫৮০ টি এবং ওজন ৭০-৭৫ কেজি (ফলন ৩৫-৪০ টন/হেক্টর)।
অত্র কেন্দ্র থেকে আরও জাত হিসেবে অবমুক্তায়নের জন্য প্রস্তাবিত ফল ও সবজী ফসল সমূহঃ
১। কুল (বারি কুল-৪ নামে)
২। দেশি বরই (বারি কুল-৫ নামে)
৩। ওপি ব্রোকলি (বারি ব্রোকলি-১ নামে)
৪। মিষ্টি করমচা
৫। জলপাই
৬। বারমাসী সজিনা
৭। জামরুল
৮। জাম
পরবর্তী আকর্ষন: বিভিন্ন অপ্রচলিত ফলের উপর ধারাবাহিক আয়োজন।
বি.দ্র. এই পোস্টটি লম্বা হওয়াতে দুঃখিত। একই সাথে সব জিনিস রাখতে চেয়েছিলাম!!!
