somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ღ আজ একটু অন্যরকম গল্প। গল্প ও গল্পের অর্থটি বুঝার চেষ্টা করুন ღ

০৯ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক কাল আগের কথা।
একজন দরিদ্র লোক একটি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় পানি বহনের কাজ করত। তার দুইটি পাত্র ছিল, একটি লাঠির দুই প্রান্তে পাত্র দুটি ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে সে পানি বহন করত। রোজ অনেকটা পথ তাকে হেঁটে পাড়ি দিতে হত।

দুটি পাত্রের একটি কিছুটা ভাঙ্গা, আরেকটি ত্রুটিহীন। পানি নিয়ে যেতে যেতে ভাঙ্গা পাত্রটি প্রায় অর্ধেক খালি হয়ে যেত। অপরদিকে ত্রুটিহীন পাত্রটি প্রতিদিন সুন্দর ভাবে কানায় কানায় ভরে পানি পৌছে দিত। এভাবে দরিদ্র লোকটি রোজ তার মনিবের বাড়িতে এক পাত্র আর অর্ধেক অর্থাৎ দেড় পাত্র পানি পৌছে দিত। স্বাভাবিকভাবেই, ভালো পাত্রটি তার এ কাজের জন্য খুব গর্বিত ও আনন্দিত থাকত। অপরদিকে ভাঙ্গা পাত্রটির মন খুব খারাপ থাকত। সে খুব লজ্জিত আর বিমর্ষ থাকত। কেননা তাকে যে কাজের জন্য বানানো হয়েছিল সে তার সেই কাজ পুরোপুরিভাবে করতে পারছিল না।

ত্রুটিপুর্ণ পাত্রটি এভাবে অনেকদিন পানি বহনের কাজ করার পর একদিন আর সইতে না পেরে লোকটির কাছে তার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইলো। সে বলে উঠলো, “আমি আমাকে নিয়ে লজ্জিত ও হতাশ, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই”।
দরিদ্র লোকটি জানতে চাইলো, “কেন তুমি লজ্জা পাচ্ছো?”

“তুমি কত কষ্ট করে রোজ আমাকে বয়ে নিয়ে যাও, নদী থেকে আমাকে পানি দিয়ে পূর্ণ করে নাও, অথচ আমি তোমার মনিবের কাছে যেতে যেতে অর্ধেক পানি ফেলে দিই, আমার এক পাশে ফাটল, ঐ ফাটল দিয়ে অর্ধেক পানি ঝরে পরে যায়।”
লোকটি তার পাত্রটির প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করলো, বলল, “মন খারাপ করো না। হয়তো এর মাঝেও ভাল কিছু আছে যা তুমি এখন বুঝতে পারছো না।”

ভাঙ্গা পাত্রটি তবু তার অপরাধবোধ আর লজ্জা থেকে মুক্তি পেল না যদিও স্বান্তনার বাণী শুনে কিছুটা শান্তি পেল। মন খারাপ করে সে প্রতিদিনের মতো আজকেও লোকটির কাঁধে চড়ে পানি বয়ে নিয়ে যেতে লাগলো, আর পথ চলতে চলতে ফাটল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরতে লাগলো, কান্নার সাথে মিলে মিশে এক হয়ে ঝরতে লাগলো।
পাত্রটি পথে যেতে যেতে আশেপাশে দেখতে লাগলো, সবাই কত ভালো আছে সুখে আছে, কি চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল সকাল, পাহাড়ি পথের পাশে নাম না জানা কত শত ফুল ফুটে রয়েছে। সকালের রোদে, মন ভোলানো কোমল হাওয়ায় তারা হেলছে, দুলছে, খেলছে। “অথচ আমার মাঝে এত কষ্ট কেন” ।
পাত্রটি ভাবতে ভাবতে রোজকার মত আজও ধনী লোকটির বাড়িতে অর্ধেক পানি পৌছে দিল।

ফিরতি পথে আবারও তার ব্যর্থতার জন্য দরিদ্র লোকটির কাছে সে ক্ষমা চাইলো। তার মন খারাপ দেখে লোকটি একটু থেমে পথের পাশে ফুটে থাকা কিছু পাহাড়ি ফুল ছিঁড়ে এনে দিল তাকে। “দুঃখ করো না। আমি আগে থেকেই তোমার এ ত্রুটির কথা জানতাম, তাই যাবার বেলা প্রতিদিন তোমাকে আমার কাঁধের একই দিকে বয়ে নিয়ে যেতাম। আর যেতে যেতে তুমি তোমার ফাটল দিয়ে পানি ঝরিয়ে ঝরিয়ে যেতে, কখনো কাঁদতেও। এভাবে পথের এক পাশে তুমি প্রতিদিন পানি দিতে, দেখো পথের ঐ দিকে চেয়ে! কত শত সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে! তুমিই তো তাদেরকে পানি দিয়েছো,
অথচ পথের অপর পাশে চেয়ে দেখো! ধূলো পাথর ছাড়া কিচ্ছু নেই, কোনো ফুলও ফোটেনি”।


শিক্ষাঃ আপনি যে কাজ করছেন, তাতে হয়তো আপনি কোন কারনে হতাশ। কিন্তু আপনি আপনার অজান্তে বড় কোন কাজ করে ফেলছেন। নিজের দায়িত্বটুকু সর্বোচ্চ দিয়ে, সততা দিয়ে পালন করার চেষ্টা করুন। প্রতিদান আসবেই। পরিশ্রম আর আন্তরিকতার ফল কখনো বৃথা যায় না।

Courtesy:⌠ অনুপ্রেরণা ۞ Inspiration ⌡
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×