সে অনেকদিন আগের কথা। অনন্য ও অনন্যা ছিল প্রিয় দুই বন্ধু। বন্ধুত্ব বেশিদিন আর 'বন্ধুত্বে' থাকেনি অনন্যের কাছে। অনন্যার প্রেমে পড়ে যায় সে।
অতঃপর একদিন ক্লাসে চিরকুট চালাচালি:
অনন্য:
তুই আমার প্রেয়সী হবি
রাত-দুপুরের সঙ্গী?
কথায় কথায় খুনসুটি আর
যেমন-তেমন ভঙ্গি?
যদিও অনন্যা হকচকিয়ে যায়। আমরা তবুও বুঝতে পারি না তার মনের অবস্থা। মেয়ে বলে কথা, মন বোঝা এতো সহজ? পাল্টা চিরকুট:
অনন্যা:
প্রেমের কথা চটুল করে
যতোই গাঁথ শব্দমালায়
বিশ্বাস কর দেখলে তোকে
ভালবাসা অমনি পালায়!
অনন্যের মুখ পোড়া বেগুণের মতো চুপসে গেলেও মনে বড় বল! ছেলে বলে কথা, এতো সহজে হার মানা কি সাজে? ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে:
অনন্য:
ঠিক আছে সই
আর হবে না প্রেম নিয়ে ছন্দ
পরপুরুষে আলাপ যদি
আগে করিস বন্ধ!
যাহ! অনন্যাটা বুঝি এবার রেগেই গেল!
অনন্যা:
তুই কে রে হনু বিড়াল
তুই-ই তো পরপুরুষ!
বলছি তোর লেজটাই বাঁকা
যতোই লাগা তৈল-বুরুশ!
এবার অনন্যের পালা:
ছেরির কথার ছিরি দেখ
আজগুবি সব ননসেন্স!
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে:
তাই যদি হয় ভাগ তবে
ওরে আমার প্রেমিক মেন্স!
অবশেষে নায়কের গান:
আচ্ছা আমি যাচ্ছি চলে
জল ফেলিস না চোখ গলে!
নায়িকার টিজ:
আমার খুব বয়ে গেছে
গোঁফে তেল কাঁঠাল গাছে!
ইনিয়ে বিনিয়ে নায়ক:
এই আমি গেলুম তবে
ডাক দিস না পেছন থেকে!
ঐ নায়িকা আসছে তেড়ে:
কথা শুনে কাকও হাসে
আসব নাকি বাঁশটি হেঁকে?
ছুটির ঘণ্টা বেজে গেলে আমরা সবাই তেড়েমেড়ে বাইরে দৌড়। সেদিন বিকেলে মাঠে অনন্য আসেনি। পরদিন সকালে অনন্যাকে প্রাইভেটে দেখলাম না।
অনন্য ও অনন্যা পরপর তিন দিন স্কুল, বিকেলের মাঠ আর স্যারের বাসা কামায় করেছিল। গোটা ক্লাস জুড়ে অনন্য ও অনন্যা আলোচনার বিষয়।
অতঃপর চতুর্থ দিন অনন্য এল। নিজের সিটে বসলো। একটু পর অনন্যা এল। নিজের সিটে বসলো।
আমাদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। কি হয়। কি হবে।
একটা ঘণ্টা গেল, দুটা ঘণ্টা গেল, কিছুই হলো না। দুজনেই অসুস্থতার দরখাস্ত দিয়েছে। স্যার দুটোই নিলেন। কিচ্ছু বললেন না।
দুজনকেই ভয়ানক অসুস্থ লাগছিল। টিফিন পিরিয়ড এলো, গেল। কিচ্ছু হয় না কেন?
শেষ ক্লাসটা এমন এক স্যারের যার ক্লাসে সবাই কথা বলে আর স্যার ঘুমায়! এবার বোধহয় কিছু একটা হবে!
অনন্য প্যাড বের করে কলম ঘষল কাগজে। তারপর আমার হাত ছুঁয়ে অনন্যার হাতে সে এক আশ্চর্য চিরকুট:
প্রিয় অনন্যা,
তোমার শূন্য হাতে তুলে দিলাম
লাল গোলাপ
পাপড়ি ছিঁড়ে কলির দেখা
পাবে না!
হৃদয় দিয়েছি ওখানে
পাপড়ির আড়ালে সাজিয়ে!
বুঝতে পার যদি গোপন কথা
আমার ছায়া ছেড়ে
কখনও যাবে না!
প্রতিদিন নতুন করে
ভালবাসা শেখাব তোমাকে
দুঃখের পরিচয়
বিলক্ষণ জানবে না!
ইতি,
তোমার অনন্য
আশ্চর্যের বাপ অপেক্ষা করছিল পরের চিরকুটটাতে:
প্রিয় অনন্য,
তোমার ভালবাসার কাছে
আমি পরাজিত!
আমাকে অমর কর
তোমার চুমুতে
আমাকে মহান কর
তোমার বাহুতে
আমাকে ধারণ কর
তোমার পাঁজরে
আমাকে হরণ কর
তোমার নিঃশ্বাসে
তোমার প্রেমের কাছে
আজ আমার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!
ইতি,
তোমারই অনন্যা
আমি তখন মূর্ছা যায় যায়! তাই পরের চিরকুটে কি ছিল জানতে পারি অনেক পরে!
প্রিয় অনন্যা,
তোমাতেই আমার উৎসর্গ...
আমার নৈঃশব্দ্যের পরী
জোছনার জলসা, ঝড়ের জোনাকি
শীতের উষ্ণতা, স্বপ্নের সহচারিণী
যাকে তুফানের মতো ভালবাসি
আমার কবিতার ধাত্রী!
তোমাতেই আমার উৎসর্গ! তোমাতেই আমার স্বর্গ!
ছুটির ঘণ্টার শব্দে স্যারের ঘুম ভাঙ্গার পর বাকি ক্লাস হাওয়া! একটু পর অনন্য ও অনন্যা হাত ধরাধরি করে চলে গেল! আমি ঠায় বসে রইলাম কতক্ষণ জানি না!
_______
☛ গল্প: ভালোবাসা এমন কেন