মন এক না একাধিক? না কি অসংখ্য? অজানা? মন কি অসীম? অসীম হলে তো মন একাধিক হয়ে কাজ নেই। একটি মন-ই যথেষ্ট। কেউ যদি 'ছোট মনের' মানুষ কিংবা 'বড় মনের' অধিকারী হয়- একটি মন অসীম হতে পারবে না কেন? মন অসীম। কেউ সীমানা বেঁধে দেয়, গণ্ডিবদ্ধ করে। কেউ সীমানার তোয়াক্কা করে না, দ্বার খুলে দেয়। একটি শরীরে মন একটিই।
এটা নিশ্চিত মন শরীরেই আছে। কারণ শরীরের বাইরে আমাদের অস্তিত্ব নেই। নাহে, খটকা লাগছে। শারীরিক জগতের বাইরে কি আত্মিক জগত নেই? আমরা কি আত্মার কথা বলি না? আত্মার শান্তি কামনা করি না? আত্মার শরীর নেই আমরা জানি। তাই যদি হয়, মাটিতে পুঁতে ফেলা কিংবা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া বিদেহী আত্মার শান্তির মানে কি? দেহ নেই, তবে শান্তি কিসের? মনের শান্তি? তবে কি আত্মা-ই মন? মন-ই আত্মা? আত্মার শান্তি মানে মনের শান্তি, মনের শান্তি মানে আত্মার শান্তি!! চমৎকার!
কিন্তু মন বাবু যদি শরীরেই থাকে, কোথায়? হাত কোথায় আমরা জানি, ধমনীর খবরও রাখি। কিন্তু ওহে মন, তুমি বাপু কোথায়? হৃদপিণ্ডে নাকি মগজে? মনে ব্যথা লাগলে বুকে ব্যথা লাগে, কিন্তু হৃদপিণ্ড কেটে কেউ দেখাতে পারেনি- দেখ দেখ... এই যে মন! বুঝেছি, সব মস্তিষ্কের ষড়যন্ত্র! প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে মস্তিষ্ক বিগড়ে যায়, কিন্তু খুলি ভেঙ্গেও কেউ তো বলতে পারলো না- মন বাপধন এখানেই!
তবে কি শরীরে মন নেই? মন ছাড়া ভালবাসি কিভাবে? মন পারলাম না তোরে বুঝতে- তুই থাকিস কই? মনের ঠিকানা আত্মা কিংবা আত্মাটাই মন। কিন্তু শরীরে আত্মা কোথায়? আছে, প্রাণ! প্রাণটাই তো আত্মা! ওহে মন, তুই তো ভবঘুরে! কিন্তু প্রাণটা দেখি না কেন? প্রাণ কি কোন কোমল পানীয় যে দেখতে হবে! প্রাণ আছে বলেই তো শরীরটা নিয়ে এতো কিছু করছেন। প্রাণ আছে জানি, কিন্তু অদৃশ্য। প্রাণ বড় অপদার্থ!
প্রাণ আছে বলেই আমরা প্রাণী। মন প্রাণে আছে এই কথাটাও না হয় মানি। প্রাণের মন আছে - কথাটা মানবো না কেন? প্রাণ দেহ ছাড়ে, আত্মা হয়। আত্মারও প্রাণ আছে, তাই আত্মাও প্রাণী - বাহে কথাটা মন্দ নহে! মন দেখি বহুরূপী, কখনও প্রাণে, কখনও আত্মায়। কথা সত্য, এক মন যে কতজনকে দেয়া যায়!
আসলে সব এক। প্রাণ-মন-আত্মা সব এক, অদ্বিতীয়। মানুষ অমর। দেহটাই মরে শুধু। দেহটা যন্ত্রের মতো। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আত্মা অমর। তাই মানুষ অনন্ত, মানুষ বিশাল, মানুষ অসীম। মানুষ মরে না কখনও!