***প্রথমেই আমি বলে নেই, আমি এই লিখাটি লিখছি যাতে সবাই বুঝতে পারে।ইকোনোমিক্স এর সকল সংজ্ঞা ও ইকুয়েশন আমি উহ্য রাখবো। শেয়ার বাজারে যারা ব্যাবসা করেন তারা সবাই ইকোনোমিক্স নাও জানতে পারেন। আবার সবাই অর্থনীতি না বুঝেও শেয়ার ব্যাবসা করতে পারেন।আমার ব্লগটি যাতে কম শিক্ষিত-সল্পশিক্ষিত সবাই যাতে বুঝতে পারে তাই সহজ ভাবে হিসেব গুলো উপস্থাপন করলাম। আবার আসুন মুল লিখায় যাইঃ
ক্ষতিঃ সহজ ভাবে ক্ষতি বলতে বুঝায়, লাভ করতে ব্যার্থ হওয়া, মুলধন বা পুজি হারানো, অনাকাংখিত আয়।
শেয়ার বাজারে ক্ষতি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা শেয়ার বাজারে কখনো ক্ষতির শিকার হয়নি তারা কখনো ভালো ব্যাবসায়ী হতে পারেনি। তাই আপনি যদি শেয়ার ব্যাবসায় ক্ষতির শিকার হন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি কিছু শিখেছেন।এবং সেই শিক্ষা কে কাজে লাগিয়ে আপনাকে পরবর্তিপদক্ষেপ নিতে হবে।পৃথিবির সব শেয়ার বাজার উত্থান ও পতনের। তাই বাজার পতনে কখনোই আতংকিত হবেন না। এই সময় আপনার চিন্তাশীল পদক্ষেপ আপনাকে ক্ষতি থেকে উদ্ধার করবে।
আসুন দেখে নেই এই ব্যাবসায় ক্ষতি কতো ধরনের ঃ বিভিন্ন আলোচনা থেকে জানা যায় ক্ষতি সাধারনত দুই ধরনের একটা স্থায়ী ক্ষতি আরেকটা অস্থায়ী ক্ষতি।]
১) স্থায়ী ক্ষতি বা(সরাসরি ক্ষতি)ঃ যেই ক্ষতির জন্য আপনার পুজির উল্লেখ যোগ্য অংশ খোয়া যায়। তা হলো স্থায়ী ক্ষতি। আমাদের বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিরা সাধারনত স্থায়ী ক্ষতির শিকার হন। যেমন ঃ আপনি ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ার ১০০ টাকা করে ৫০০ টি শেয়ার কিনে ছিলেন।ক্রয় মুল্য ছিলো (১০০*৫০০=৫০০০০ টাকা)। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে আপনি তা ৮০টাকা(৮০*৫০০=৪০০০০) করে বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন। আপনার লস (৫০০০০-৪০০০০)= ১০০০০।
২) অস্থায়ী ক্ষতি বা (পরোক্ষ ক্ষতি)ঃ আপনি কোন শেয়ার কিনলেন প্রতিটি ১০০ টাকা করে ৫০০ টি ক্রয় মুল্য ৫০০০০। কিন্তু ১ বছর পরে ওই শেয়ার বিক্রয় করলেন ঠিক একই দামে মানে ৫০০০০ টাকায় মানে কোনো লোকসান ছাড়া। কিন্তু এই টাও আপনার ক্ষতি। কারন আপনি এই টাকা ব্যাংকে রাখলে আপনার লাভ হতো ১২% সুদ হারে ৬০০০ টাকা। আপনার পুজি দাড়াতো ৫৬০০০ টাকা। তাছাড়াও আরো কয়েক ধরনের ক্ষতি আছে যেগুলা ক্লাসি ফিকেশনে এই ক্যাটাগরিতে পরে, যেমন আপনার পুজি ৫ লাখ টাকা আপনি বছরের প্রথমে ৬ মাসে এই পুজিদিয়ে ৮০০০০ টাকা লাভ করেছেন। কিন্তু প্রাইস ফলের কারনে আপনার পরবর্তি ৬ মাসে ক্ষতি দাড়ালো ৭০০০০ হাজার টাকা। তাহলে বছর শেষে আপনার লাভ দাড়ালো (৮০০০০-৭০০০০)=১০০০০ টাকা। এইটাও আপনার ক্ষতি যদিও আপনার ব্যাবসায় টোটাল লাভ করেছেন। এইটা অনাকাংখিত আয়। কারন আপনি যদি এই পরিমান টাকা কোনো ব্যাংকে সঞ্চয় পত্র বা অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন তাহলে এর চাইতেও ভালো লাভ করতে পারতেন।
৩) আপেক্ষিক ক্ষতিঃ মনে করুন আপনি চড়া মুল্যে কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন। আপনি আশাকরেছিলেন ভালো ডিভিডেন্ট অথবা লভ্যাংশ পাবেন, কিন্তু ঐ কম্পানি যে লভ্যাংশ দিলো তা আপনার নিকট অনাকাংখিত। এটাও আপনার ক্ষতি যদিও আপনি কিছু লাভ করেছেন। অনেকে এটাকে অস্থায়ী ক্ষতি মনে করেন।
***এবার আসুন একটু আলোচনা করি, কিভাবে বেশীর ভাগ বিনিয়োগ কারি ক্ষতির শিকার হয়?
প্রথমেই আমি বলবো বিনিয়োগ কারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাজার মন্দার কারনে।আসুন একটু বুঝে নেই, বাজার মন্দা কি?বাজার মন্দা হলো, বাজার মুল্য হারনো কিছু দিনের জন্য বা দীর্ঘ দিনের জন্য। অর্থাত বাজারে বেশীর ভাগ বা সব শেয়ারের দাম কিছু দিনের জন্য বা দীর্ঘ দিনের জন্য মুল্য কমে যাওয়া।
বাজার মুল্য কেন কমে যায় বা মন্দা কেন আসে? এর যথাযথ ব্যাখ্যা খুব কঠিন তবে এর মধ্যে কিছু কিছু কারন সহজে জানা যায়। যখন বাজারে শেয়ার ক্রেতার চাইতে বিক্রেতা বেড়ে যায়। জুয়াড়ি রা কোন শেয়ারের দাম আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায়, এর পর সুযুগ বুঝে কেটে পরে। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসবের কারনেও বাজারে মন্দা আসে। যেমন ধরেন কোরবানীর ঈদ। বাজারের বেশীর ভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রা ঈদের কারনে বেশীর ভাগ শেয়ার বিক্রয় করে দেয় ঈদের খরচ মেটানোর জন্য। সেই সময় ক্রেতা থাকে কম। শেয়ার বিক্রয়ের চাপ বেশি থাকে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা,হরতাল ইত্যাদি কারনেও বাজারে মন্দা আসে। বিনিয়োগ কারিরা আতংকে ও অনিশ্চয়তায় থাকে। তাছাড়া সরকারের নেয়া কিছু খারাপ পদক্ষেপের কারনেও বাজারে মন্দা আসে। পৃথিবির সব শেয়ার বাজারে মন্দা-চাঙ্গা ভাব আছে। এইটা শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম। তাই মন্দা বাজারে শেয়ার ধরে রাখা এবং নতুন শেয়ার কিনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
***এবার ছবি গুলোর দিকে নজর দিন। picture 1, বাজার পতনের চিত্র। picture 2, বাজার মন্দার চিত্র।picture 3 বাজার চাঙ্গার বা তেজী চিত্র।
***বিনিয়োগ কারিদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার দ্বিতীয় কারন হলো, জুয়ার ফাদে পা দেয়া। আপনি মনে করেন, এক্স নামক শেয়ার টি নিয়ে ব্যাপক কারসাজি চলছে, শেয়ার টির দাম ব্যাপক উর্ধ্বমুখি। শেয়ারটির দাম আরো বাড়বে আপনি অনেকটা শিওর হয়ে শেয়ার কিনলেন। কিন্তু জুয়াড়িরা অপ্রত্যাশিত ভাবে বাজার থেকে কেটে পড়লো। বাজারে ওই শেয়ারটির দাম ধীরে ধীরে পড়তে লাগলো। যেমন ১০ টাকার শেয়ার আপনি কিনেছিলেন ৩৫০ টাকা করে। কিন্তু কমতে লাগলো ৩৪৫,৩৩৫,৩২৫,৩২০........................১০০,৮৫। আপনি কি করবেন? আমার উপদেশ হলো দ্রুত ওই শেয়ার বিক্রয় করে দেয়া। মনে করেন আপনি দেরি করে বিক্রয় করে করলেন ৩২৫ টাকা করে অথচ আপনি আরো আগে ৩৪৫ টাকায় বিক্রয় করলে আপনার ক্ষতি অনেক কম হতো।
ভুলেও কম দামে ওই শেয়ার কিনে গড় ক্রয় মুল্য কমাতে যাবেন না। আমার আগের লিখা “শেয়ার বাজারে জুয়া থেকে দূরে থাকুন” ব্লগে বলেছিলাম(৩ নং পয়েন্টে), ভালো শেয়ারের দাম কমে গেলে নতুন ওই শেয়ার কিনে গড় ক্রয় মুল্য কমাতে। মনে রাখবেন, জুয়ার ফাদ আর মার্কেট কারেকশান ও মন্দা এক নয়।
*** জুয়াড়ি রা যখন কোনো শেয়ার বিক্রয় করে কেটে পড়ে। তখন ওই শেয়ারের দাম দ্রুত পড়া শুরু হয়। এই কারনে ঐ শেয়ারটির দীর্ঘ মন্দাও শুরু হয়।
*** জুয়াড়িরা কোনো শেয়ারের দাম বাড়াতে বাড়াতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যা কখনোই প্রাইস কারেকশানের পরেও ওই দামে যাবে না। বাজার চাঙ্গা থাকলেও ওই দামে যাবে না। যতই ভালো কোয়ালিটির শেয়ার হোক না কেন। তাই আপনি ক্ষতি গ্রস্থ হলেও ওই শেয়ার বিক্রয় করে সরে দাড়ান, আপনার ক্ষতি কম হবে। সর্বশেষ কেনা চড়া দামে ওই শেয়ার বিক্রয় হবে, এই আশায় বসে থাকা বোকামি।
*** এর পর আমার উপদেশ হলো আপনি কম মুল্যে ভাল যেই শেয়ারটি চলছে, সেটি কিনে রাখা। এতে আপনার ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। ভালো ভাল কয়েকটি শেয়ারে ক্রয় বিক্রয় আপনাকে আবার লাভের মুখ দেখাবে। বছর শেষে আপনি যথেস্ট লাভের মুখ দেখবেন। লোকসানের কারনে বাজার ছেড়ে চলে যাবেন না। লোকসান বাজারের একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সারা বছরের কেনা বেচার ও লাভ লোকসানের ভিতরে লুকিয়ে আছে হাজারো বিনিয়োগ কারির দুঃখ- কস্ট, হাসি-আনন্দ। বছর শেষে যখন আপনার লাভের পাল্লা ভারী হবে, আপনার মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠবে। আমি সেই হাসি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
*** প্রিয় ব্লগার গন, আমি চেস্টা করেছি খুব সহজ ভাবে এবং সংক্ষেপে আমার লিখা বর্ননা করতে। চেস্টা করেছি সবার জন্য সহজ পাঠ্য করতে। যদি কোনো ভুল ত্রুটি থাকে, আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ