***২০০৮ সাল, আমি ভোট দিতে যাব, জীবনের প্রথম ভোট। এর আগে ২০০১ সালে ভোটার হয়েও ভোট দিতে পারিনি, তাই এই বার মনে টান টান উত্তেজনা ছিলো। মনে মনে ১ মাস আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম কাকে ভোট দিবো। নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলে গেলাম, আমার ভোট কেন্দ্র।তেমন বেশী একটা ভীড় ছিলো না। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে ব্যালট পেপার নিলাম এর পর আড়াল করা ঘেরা কাউন্টারে গিয়ে ব্যালট পেপার টির ভালো ভাবে তাকালাম। আমার চোখ গেলো ধানের শীষের দিকে। এর পর নৌকায়। আমি নৌকায় সীল মেরে দিলাম। আর ধানের শীষ কে বললাম সরি বি এন পি।
*** বি এন পির উদার দলীয় নীতির উপর আমার হয়ত কিছুটা দুর্বলতা আছে। তার পরো আমার নৌকায় ভোট দেয়ার কারন হিসেবে আমি বলবো পর পর দুই বার আমি বি এন পি কে ক্ষমতায় দেখতে চাইনি। ব্যাপক দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যার্থতা আর বিদ্যুৎ ঘাটতি আমার বিরক্তির বাধ অতিক্রম করে গিয়েছিলো। আমার মতন বেশীরভাগ বাংলাদেশি ই ঠিক একই কারনে নৌকায় ভোট দিয়েছিলো। আওয়ামিলীগের নির্বাচনি ইস্তেহারে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা ছিলো। আমি ভালো ভাবেই জানতাম এই টা হবে না। চাল-ডাল সহ নিত্য দ্রব্যের অনেক কম মুল্যে প্রদানের কথা বলেছে। অর্থনীতি আমি একে বারে যে বুঝি না তা না। কিন্তু রুপকথার মতন কাহিনী গুলা বিশ্বাস না করলেও নৌকায় ভোট দিয়েছিলাম। আমার মন চেয়ে ছিলো কিছুটা পরিবর্তন।
*** কোন কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। যেই লাউ/সেই কদু। আওয়ামিলীগের ন্যাক্কার জনক কাজ গুলো সাধারন মানুষের ঘৃনা কুড়িয়েছে। শেখ মুজিব বেচে থাকলে উনি নিজেও লজ্জাপেতেন আওয়ামিলীগের ঘৃন্য কর্মকান্ডে। আজকে শিবির-আওয়ামিলীগ যা ঘটাচ্ছে তার বেশীর ভাগের জন্য লিগের ছেলেরাই দায়ী। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ভোট টা দেয়া মনে হয় ভুল হয়েছে।
*** আরেকটি ন্যাক্কার জনক ঘটনা দেখলাম গতকাল। আমি খবর টা দেখে হতভম্ব!! জিয়া বিমান বন্দরের নাম চেঞ্জ করে ফেলা হয়েছে। ভেবে ছিলাম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হবে, কিন্তু না, কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এর নাম দেয়া হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। শাহজালাল একজন মহান সুফি ছিলেন, সেকুলারিস্ট আওয়ামিলীগের থেকে এই নাম আশা করা সত্যই অবাক করার মতন। বিতর্ক এড়ানোর জন্যই সরকার এই নাম দিয়েছে, এতে সন্দেহ নাই। মহান শাহজালাল (রঃ) বেচে থাকলে উনার এই নাম দেখলে কি বলতেন তা বুঝতে অসুবিধা হয়না। মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হই। আমি এই সরকারকে ভোট দিয়েছিলাম, তার মানে এই সরকারের কর্মকান্ডের সাথে আমার সমর্থন আছে। আমি তখন নিজেকে অপরাধি ভাবি। আমি নৌকায় এই জন্য কি ভোট দিয়েছিলাম?
*** আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি না, এই টা আমার ব্যার্থতা। কিন্তু জুম্মার নামাজে সব সময় যাই। জুম্মার নামাযে খুতবার শেষে ইমাম সাহেব জোরে জোরে পড়েন “...............ওয়াল নাসারা, ওয়াল মালাউন, ওয়াল হুলুদ.....................আল্লাহ হুম্মা মিনান নাআল ওয়াল ফিলিস্তিন, খুফু ওয়া মুস্লিমিন ইন কাস্মির ওয়া চেচনিয়া,ওয়া রুয়ান্ডা ওয়া বার্মা।
আমার প্রশ্ন হলো এই খানে মালাউন শব্দের অর্থ কি? আমাদের গ্রামের বাড়িতে কেউ কেউ আওয়ামিলীগ সমর্থন কারীদের মালাউন বলে থাকে। তার মানে আওয়ামিলীগ মানে কি ইহুদি নাসারা দের প্রতি শব্দ?
*** মাঝে মাঝে আমিই আবার বিভ্রান্ত হই, আওয়ামিলীগ কি ভাবে ইহুদি-নাসারাদের দল হতে পারে? কারন এই দলটিই তো আবার গোড়া ধর্মীয় কাওমি আলেম দের সাথে হাত মিলিয়েছিলো। মনে আছে “ ফতোয়া বাজদের সাথে চুক্তি?” সেকুলারিস্ট আওয়ামিলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল সেই হুজুর দের সাথে যখন হাতে হাত রেখে চুক্তি পত্রে সই করেছিলেন আমি এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।
*** আওয়ামিলীগের নির্বাচনি প্রচারনা শুরু হয় সিলেটের শাহজালাল মাজারের থেকে।লীগের বড় বড় নেতারা মাজারে যেয়ে হাত তুলে দোয়া চান, ব্যাপক দান খয়রাত করেন। তারা যদি ধর্ম নিরপেক্ষ হয়েই থাকেন তাহলে মাজারে যাবে কেন। তাহলে তারাতো ইসলামপন্থি দল হয়ে গেল। শেখ হাসিনা হজ্বে গিয়ে মাথায় স্কার্ফ লাগিয়ে মিডিয়ার সামনে আসেন। বঙ্গবন্ধুর মাজারে বিশাল দলবল নিয়ে জিয়ারত করতেযান। আওয়ামি-ওলামা লীগ নামে একটি আলেমদের দল আছে। ওনারা বিভিন্ন সময়ে চরমোনাই, জামাত,ও যাকের পার্টিকে কাফের বলতে ব্যাস্ত। লিগের এই কার্যকলাপ তালেবান যুগের কথাকেও হার মানায়। তার পরো ভাবি এই দলটি সেকুলারিস্ট হয় কি ভাবে?
*** কয়েক দিন আগে খবরে দেখলাম ৫০,১০০,৫০০,১০০০টাকার সব নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপা হবে। বাহ বাহ তা বেশ ভালোই। এই দিক থেকে উনারা বি এন পি কেও হার মানাবে সন্দেহ নাই। বি এন পি , জিয়াউর রহমানের ছবি একটা নোটেও ছাপাতে পারে নাই।
*** ইদানিং ব্লগে যুদ্ধাপরাধি,জামাত শিবির ছাগু... বিভিন্ন আওয়ামী পন্থি ব্লগারদের নিকট থেকে শুনা যায়। বর্তমানে সেক্টর কমান্ডার গুলা গোফে তেল দিয়ে লীগের নেতাদের থেকে জামাত ও শিবিরের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইছে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে- উনারা ইয়াহিয়া খান,টিক্কা খান, ভুট্যো, নিয়াজির বিচার চান না কেন? শুধুই জামাতের কেন? সঠিক যুদ্ধাপরাধের বিচার চান তো? নাকি এইটা রাজনৈতিক ভাবে কোন ঠাসা করার জন্য? সেক্টর কমান্ডার দের যদি প্রশ্ন করি, ১৬ ডিসেম্বর আত্নসমর্পনকারী ৯৩০০০ সৈন্য কিভাবে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করেছিল? উনারা মুখে কুলুপ এটে বসে যাবেন।
*** ব্লগে আওয়ামিলীগের বিরুদ্ধে কিছুই লিখা যায় না। কিছু লিখলেই বলবে “তুই রাজাকার”। এই রাজাকার শব্দটিকে উনারা অনেক কমন গালি বানিয়ে দিয়েছেন। এখন এইটা আর তেমন গুরুত্ত্ব বহন করে না। সাধারন ব্লগার কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই রাজাকার। আমি জানি আওয়ামিলীগ গনতান্ত্রিক দল। গনতন্ত্রে আলোচনা সমালোচনা থাকবে। কিন্তু সমালোচনা করলেই রাজাকার???? এটা কি বাকশালী ব্লগারদের বাকশালীয় চিন্তা??
*** সব শেষে, আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। বাংলাদেশের ঘৃন্য রাজনীতি কই যাচ্ছে। আমি ভোট দিয়েই ভুল করেছি। সৃস্টি কর্তা আমাকে ক্ষমা করবেন না। সরকারের পাপের জন্য আমাকেও পরম করুনাময়ের নিকট জবাব দিহি করতে হবে।
*** আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন-আমিন।