আজকের রাতটা অমাবস্যার।
যে রাতে ঘুম আসে না।
জোর করে সারা রাত জেগে থাকি আমি। আর কানের ভেতর উপুর্যুপরি ছুঁড়ে মারতে থাকি অন্ধকার কিছু শব্দ।
কান ফেটে যায়। কিন্তু ভলিউম কমে না।
কান ফাটলে ফাটুক।
তবু থামুক।
থামুক মগজের ভেতরে চলতে থাকা ঘুর্ণিঝড়টা।
থেমে যাক বুক চিঁড়ে বের হতে থাকা চিন্তার অসীম তলোয়ারটা।
অমাবস্যার চিন্তাকে আবার ধরতে পারা যায় না।
কখনো প্রেম, কখনো বা মৃত্যু,
কখনো সময়, কখনো বা সত্য।
আর কখনো বা হারিয়ে যাওয়া চাঁদ-
এই অমাবস্যার রাতে।
এ রাতে ছাদে যেতে হয়। সেখানে শরীরকে ঘেঁষে যেতে থাকে মাঘ মাসের দাঁত কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস।
যে বাতাসকে দেখা যায় না-
অমাবস্যার চাঁদের মত।
চাদরটা আরেকটু টেনে নেই আমি। টেনে নেই ঘন সাদা ধোঁয়া।
চোখ জ্বলতে থাকে আমার,
মাথা ছিঁড়ে যায়।
বুকের ভেতর বাস করে জীবন্ত এক মহাকাশ।
যে মহাকাশে সাঁতরাতে ভয় পাই আমি।
আর তাই সেখানে ধোঁয়া ভরি,
আর ছুঁড়তে থাকি শব্দের বর্শা।
তবু কেন কমে না?
মাথাটা ঘাড়ের উপর ঝুলতে থাকে একটা সময়। আর আমি যন্ত্রণায় চোখ বুজি। সাথে সাথে ভেসে ওঠে ওই মুখটা। আর কিছু ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি।
উফফফ... অসহ্য। আমি চোখ খুলি। চোখের পাতাদুটো টেনে ধরে থাকি নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে। আমি দেখতে চাই না- একদম চাই না- কোনদিনও চাই না।
তবুও দেখতে থাকি আমি,
শুনতে থাকি ওর চিৎকার-
হারিয়ে ফেলা এক স্বরে।
দম আটকে আসে আমার। দাঁড়িয়ে থাকার আর কোন শক্তি নেই। নির্জীব শরীরটাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলি আমি। শোবার পর দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসে আমার। আমি আবার টেনে ধরি চোখের পাতাদুটোকে।
এবার আর কাজ হল না।
আমার সমানে ঘটে যেতে থাকল হারিয়ে ফেলা প্রত্যেকটি ঘটনা।
দেখা দিতে থাকল হারিয়ে ফেলা সব ক’টি গল্প, সবগুলো স্বপ্ন।
আমি কুঁকড়ে যেতে থাকলাম নিজের ভেতরে- বুকের ভেতরে গর্জন করতে থাকা ওই মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে থাকলাম বিন্দু বিন্দু করে।
বিছানার চাদর খামচে ধরলাম আমি। “প্লীজ... না... প্লীজ আর না... প্লীজ গড। আজকের মত মুক্তি দাও”।
আকুতিতে কাজ হয় না আমার। মহাশূণ্য আমাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে তার ক্ষুধার্থ পেটের ভেতর। যেখানে আছে শুধু হিমশীতল অন্ধকার- আর নিরঙ্কুশ হতাশা।
আমি ডান হাতের তালুটা মুখের কাছে নিয়ে আসি। শরীরের সকল শক্তি দিয়ে কামড়ে ধরি ওটাকে। অন্ধকার জেঁকে বসা মগজে হুট করে ছোবল মারে শারিরীক যন্ত্রণাটুকু। অন্ধকার দূর হতে থাকে। পরিষ্কার হতে থাকে পচে যাওয়া মাথাটা। আমি কামড়ের জোর বাড়াই। রক্তে রঙ্গিন হয়ে ওঠে আমার হাত আর মুখ। চোখদুটোকে শান্ত করার জন্য সেই রঙ্গিন হাত মেলে ধরি আমি ওদের সামনে।
ওরা ঠান্ডা হয়।
ঠান্ডা হয় বুকের ভেতরটা।
শুধু মাথার যন্ত্রণাটা কমে না।
কিন্তু সেটাই বা কম কিসে? আমি হাতটা উঁচু করে ধরি চোখদুটোর সামনে। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়তে থাকে আমার কনুই পর্যন্ত।
আমি ওদেরকে দেখি... আর ক্লান্তিমাখা শান্তিতে মুচকি মুচকি হাসি...
হাহাহাহাহা...
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা...
হোহোহোহোহোহোহোহোহো...
আহাহাহাহাহাহা...
আমি বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি এবার। রক্তাক্ত হাতটা দিয়ে কম্বলটা টেনে আনি বুকের কাছে।
চোখ বন্ধ করি অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে...
আরেকটা দিন আমি সার্ভাইভ করলাম।
সরি, আরেকটা রাত।
সেই কুখ্যাত অমাবস্যার রাত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪০