কই জানি পড়েছিলাম- একটা মানুষের সম্পূর্ণ মেমোরি ফরম্যাট দেয়ার পর সে সামান্য যে কয়টা জিনিস উপভোগ করতে পারবে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে মিউজিক।
সেদিন নিজের ইন্দ্রিয়গুলো নিয়ে একটু ভাবছিলাম। তুলনামূলক ইন্দ্রিয়তত্ত্ব আরকি। তো ভাবনার লাস্টে যা মনে হল- টিকে থাকার জন্য চোখটা খুব জরুরি। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য আমার সবথেকে বেশী দরকার কান। অনেকে হয়ত চোখকে এই কাতারেও ফার্স্টে রাখবেন। কিন্তু আমি কানের ব্যাপারে খুবই দুর্বল। ( হয়ত ছোট থেকে চোখ খারাপ- এই জন্য)
শব্দ একটা অদ্ভুত জিনিস। এটা "হয়"। দৃশ্য কিন্তু "হয়" না, এটা হওয়াই থাকে। জাস্ট দেখে নিতে হয়।
শব্দকে কাগজে কলমে মানুষ বেশ ভালভাবে ভিজুয়ালাইজ করতে পারে। শব্দ নিয়ে খেলা করাটাও বেশ সহজ।
আলোর খেলা আর শব্দের খেলা- দুইটার মধ্যে কই জানি একটা অমিল আছে।
শব্দকে আমার কেমন জানি লিনিয়ার লিনিয়ার লাগে। যেখানে আলোর মাত্রা অনেক বেশী।
বাই দ্যা ওয়ে- এই গল্পে যা কিছু বলা হচ্ছে তার কোনটাই সাইন্টিফিক ট্রুথ না। জাস্ট বলা হচ্ছে। যা ইচ্ছা তাই। এটা আমার মুখের বা আঙুলের বা আল্টিমেটলি মাথার একটা মৌলিক অধিকার।
সো, কোন তর্ক হবে না। জাস্ট শুনে যেতে হবে...
কিন্তু টাইপ করা জিনিস আবার শুনতে পাওয়া যায় না। এটা একটা পেইন।
অক্ষর শোনা গেলে অসাধারণ হত না?
শুধু অক্ষর কেন? সবকিছুই যদি কান দিয়ে করা যেত?
কান দিয়ে দেখতাম
কান দিয়ে মুততাম
কান দিয়ে চুদতাম
অনলি কান ইজ রিয়েল, ব্রো।
যাই হোক, যেটা বলতেছিলাম-কি জানি বলতেছিলাম? দাঁড়াও, মনে করি বিষয়টা।
(দশ সেকেন্ড নিরবতা)
হ্যাঁ, মনে পড়েছে- কান।
না না.. কান না, শব্দ।
মিউজিক কিন্তু জাস্ট শব্দই। বাসে চড়ে মতিঝিল যাওয়ার সময় ফার্মগেটে যেটা কানে লাগে সেটাও শব্দ, আবার মোগওয়াই এর তৈরী করা যেই রকেটটা আমাদেরকে শনির নাইট্রোজেনের সমুদ্রের নিচে নিয়ে যায়- সেটাও শব্দ।
"এ, ভাই- শনিতে নাইট্রো...."
"এত বিজ্ঞান চুদতে চাইলে জার্নাল পড়। এখানে কি করস?"
বিজ্ঞানের একটা সমস্যা আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত জায়গায় এটা অনেক বেশী দেখা যায়। এখানে বিজ্ঞান মানে টেকনিক্যাল ট্রেনিং। সো ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বোকাচোদাগুলোকে কখনো মুক্তচিন্তা করা লাগে না। দুইটা মুখস্থ করা সূত্রকে জুড়ে দিলেই তাদের একটা করে পেপার পাবলিশ হয়ে যায়।
অনেকে বলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সবাই তো ধার্মিক। তার মানে সাইন্স আসলে ধর্মের দিকেই ইংগিত দেয়।
বাল দেয়।
সাইন্সের লিমিটেশনকে যারা ঐশ্বরিক ক্ষমতার সূচনা মনে করে- তারা সাইন্সকেও আসলে ধর্মের মত করেই ট্রীট করে।
বিজ্ঞান এসেছে প্রকৃতিকে দেখে দেখে, দুনিয়ায় যা যা হয়, তার যেগুলো আমরা বুঝি- তা-ই সাইন্স। এর বাইরে আর কিছু নাই। পুরোটাই অবজারভেশন। যদি দুটো আপেলকে একটা ঝুড়িতে রাখলে তিনটে আপেল পাওয়া যেত, তাহলে ১+১= ৩ ই হত।
ক্রিয়েটিভিটির অংশ কিন্তু আসলে সাইন্সে খুব বেশী নাই।
তাই সাইন্সের থেকে শব্দ জোস।
ফোটনিক্সের থেকে ফিল্ম মেকিং জোস।
সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কোল্ডপ্লে জোস।
নিউরোসাইন্স এর থেকে চিন্তা করাটা ইটসেল্ফ জোস।
আর মজার ব্যাপার হল- চিন্তাটা ঠিকমত করতে পারলে বাকিগুলো এমনিতেই তৈরী হয়ে যায়।
তাই এদেশে দর্শনে পড়া মানুষ, নাট্যকলায় পড়া মানুষ, বাংলা সাহিত্যে পড়া মানুষ বিজ্ঞানীদের থেকে অনেক বেশী মুক্ত চিন্তা করতে পারে।
পুরো ব্যাপারটাই চিন্তার প্যাটার্নে। দুনিয়ার রহস্য কে কত বেশী জানে -সেটাতে না।
আইন্সটাইন বলেছিল না- ইমাজিনেশন ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দেন নলেজ।
কি সব বলতেছি। ধ্যাত। এই বালটার জন্য অনেকক্ষণ টাইম ওয়েস্ট হইল। চল সমুদ্রের নিচে ফেরত যাই- কালচে নীল, হীমশিতল ওই সমুদ্রটা- শনি গ্রহের। প্রথম যেদিন ওখানে গিয়েছিলাম- আমি আটকে পড়ে ছিলাম বিশাল একটা মাছের ডিমের ভেতরে।
আসলে আমি নিজেই একটা মাছের ডিম হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।
গভীর সমুদ্রের আলতো স্রোতে টুক টুক করে হালকা দুলছিলাম তখন।
একবার ডানে,
একবার বামে।
শরীরটা ছেড়ে দিয়ে চোখ বুঁদে একবার ফীল কর...
খুব শান্তি না?
যে শান্তি প্ল্যানেট আর্থে পাওয়া যায় না।
দাদু খুব হেসেছিল সেদিন। কিন্তু পরে ওকেও নিয়ে গিয়েছিলাম আমি আমার সাথে। ওর ঠিক মাথার উপর দিয়ে সাঁতরে চলে গিয়েছিল আমাদের আম্মু- বিশায়ায়ায়ায়ায়ায়াল একটা মাছ।
আম্মু দেখতে খুবই উইয়ার্ড। আমার এখানকার আম্মুর সাথে তো মিল নেই-ই, আমি এরকম কোন কিছু আমার লাইফেই আর দেখিনি । সাফাত পরে ব্যাখ্যা করেছিল- তরল নাইট্রোজেনের ভেতরে টিকে থাকার জন্য ওদের বিবর্তনটা নাকি অন্যরকম করে হয়েছে।
টোল্ড ইউ- বিজ্ঞান বোরিং।
বোরিং অ্যাস ফাক।
হিহিহি.. "Ass" fuck. :প :p
আমি শব্দের প্রতি খুবই দুর্বল। কিছু মানুষ আছে না- গানের লিরিক্স পড়ে খুব মজা পায়? অনেক কিছু উদ্ধার করে ফেলে?
আমি ওই দলের না। আমার কাছে মানুষের গলার স্বরও জাস্ট একটা শব্দ। গিটারের শব্দ যেমন- মানুষের গলার শব্দও তেমন।
কিছু গানে মানুষের গলার শব্দ থাকে না। ওগুলো হয় আরো অসাধারণ।
শনির সমুদ্রে তো মানুষ থাকার কথা না। তাহলে যে গানে মানুষ আছে- সেটা কিভাবে আমাকে শনিতে নিয়ে যাবে?
মাঝে দুইদিন টানা স্পেস রক শুনে কাটিয়েছি।
মহাকাশের পাথর। সেই না জনরাটার নাম?
কিছু আবাল হয়ত এখন বলবে স্পেসে শব্দ শোনা যায় না।
শব্দ শুনতে কান লাগে ,কান। আর কানের মত কান থাকলে আসলে কানও লাগে না শব্দ শুনতে।
হাহাহাহাহা...
নিজের জোকসে নিজেই হাসি। কি প্যাথেটিক না ব্যাপারটা?
সেদিন জিবরাঈলের সাথে ডিনারে গিয়েছিলাম- ঈদের আগের রাতের কাহিনী। কুরবানির ইতিহাস নিয়ে সে বেশ কিছুক্ষণ আমাকে জ্ঞান দিল। আমার কেন ধার্মিক হয়ে যাওয়া উচিৎ - সেটাও অনেকক্ষণ ধরে বুঝালো। কিন্তু আমি না- ফোকাসই করতে পারতেছিলাম না। কারনটাও ওই শব্দ। পৃথিবীতে যেহেতু এখন জিবরাঈলের আসা নিষেধ, আমরা বসেছিলাম চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝখানটায়- যেখানে মহাকর্ষ বল নিউট্রাল। কি করবো বল? আমার তো আর ওর মত ডানা নাই যে মহাকাশে ভেসে থাকবো।
যা বলছিলাম- আমার মনোযোগ ছিল পৃথিবীর দিকে- কাছ থেকে আমরা নরমালি পৃথিবীর যেটা বুঝি না- এর ঘোরার শব্দ।
উফফফ... এমেইজিং। এত্তো বড় একটা জিনিস এত্তো স্পীডে বনবন করে ঘুরতেছে, আবার সামনেও যাচ্ছে- দুটো মিলিয়ে কি অসাধারণ একটা শব্দ যে তৈরী হয়... যার কাছে জীবরাঈল আসেনি- সে কখনো এটা বুঝবে না।
লেট মি ডু দ্যা অনার- হাল্কা একটা আইডিয়া দেই।
সাইক্লোনের শব্দ আছে না? অনেকটা ওরকম একটা শব্দ। কিন্তু আরো অনেক বেশী গম্ভীর। মানে ফ্রিকুয়েন্সি কম। এবং স্থির। শব্দের কোন উত্থান পতন নেই। ঝিম ধরা ভোঁতা টোনের তীব্র একটা শব্দ। মহাজাগতিক একটা ভয় ধরিয়ে দেয় মনের ভেতরে।
এটা হল পৃথিবীর শব্দের একটা পার্ট। এটাকে সেভ করে রাখো। সাথে আরেকটা যোগ হবে।
স্পীডবোটে করে কখনো নদীতে ঘুরতে বেড়িয়েছো?
স্পীডবোটের ইঞ্জিন আর প্রোপেলারের উগ্র শব্দটা বাদ দিলে যেটা থাকে- পানির উপর দিয়ে খুব দ্রুতগতিতে একটা নৌকা চলার যে শব্দ- জাস্ট ফুসসসসস... টাইপ - ওইটা। এটাও মোটামুটি স্থির। মাঝে মাঝে সুর্য থেকে আসা আলোর ধাক্কায় কিছুটা টার্বুলেন্স তৈরী হয়।
এইতো- এখন দুটো শব্দকে এক কর- এটাই হচ্ছে পৃথিবীর শব্দ। এরকম একটা শব্দ যেখানে কন্টিনিউয়াসলি পারসিস্ট করে সেখানে আর কোন কথায় মন দেয়া যায়, বল?
যায় না। আর তাই লাস্টে জিবরাঈল রাগ করে আমাকে রেখেই চলে যায় ওখান থেকে। আমার ঘোর কাটে- শব্দের মোহ থেকে বের হয়ে আসি। চিন্তায় পড়ে যাই- এখন বাসায় যাই ক্যাম্নে?
এরকম তীব্র একটা টেনশনে যখন আক্ষরিক অর্থেই আমি আকাশে ঝুলে আছি, তখন কিছু আবছা ফিগার দেখতে পেলাম। সাথে পরিচিত একটা শব্দ-
"Samothing in the way..
হু হু... হু হু...."
শব্দটা বাড়তে থাকল ধীরে ধীরে,
আবছা মুর্তিটাও স্পষ্ট হতে থাকল তার সাথে সাথে।
শব্দ এখানে কারন। আর মুর্তির কাছে আসা হল ফলাফল। বেশ কাছে আসার পর আমি লোকটাকে চিনতে পারলাম- কার্ট কোবেইন। তার পিছে পিছে এলো জন লেনন। তার পিছে দুজন সাধারন ফেরেশতা, তিন জন জ্বীন, আর একজন অপরুপা পরী। আমি জানলাম এদেরকেও এভাবে করেই জিবরাঈল ফেলে গিয়েছিল সময়ের আলাদা আলাদা কিছু বিন্দুতে।
তারা এখন নিজেদের নিয়েই একটা সমাজ তৈরী করে ফেলেছে। এ সমাজে মানুষ আছে, জীন আছে, পরী আছে, ফেরেশতা আছে, টিয়া আছে, শুশুক আছে, আমার শনি গ্রহের আম্মু আছে- সবাই আছে। একে একে সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়া হল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- তোমরা এই ধু ধু জায়গায় সময় কাটাও কিভাবে?
ঈষৎ হেসে আম্মু উত্তর দেয়- "শব্দ করে"।
আমার মুখ সাথে সাথে স্মাইলি হয়ে গেল। একটা উটপাখি এসে আমার হাতে একটা গিটার দিল। আমি ডানে বামে তাকালাম- সবাই সবার অস্ত্র নিয়ে তৈরী।
ড্রিংং..
জীবনে প্রথমবারের মত গিটারের স্ট্রিং এ টোকা দিলাম আমি। আর বেড়িয়ে এলো মনকে অবশ করে দেয়া কিছু শব্দ।
গিটারের সেই শব্দের সাথে পাশ থেকে যোগ হল পিয়ানোর সুর, ড্রামের গর্জন, সেতারের মুর্ছনা আর বাঁশির কান্না..
আমার কান কখনো এত সুখ পায়নি আগে।
আমি চোখ বুঁজে জাস্ট শব্দ করেই গেছে সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত..
সাথে ছিল মন ভরা নীল তৃপ্তি আর চোখ ভরা নোনা পানি।
আমার সামনে- দু লাখ মাইল দূরে নীল রঙের পৃথিবী। আর পেছন দিকে ধুসর একটা চাঁদ।
আমি ভেসে আছি শব্দে।
ভেসে আছি আনন্দে।
জাস্ট মরে যেতে ইচ্ছে করে না এরকম মুহুর্তে?
চল, মরে যাই- সবাই একসাথে...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩২