অনেক অনেক দিন পর আজ সবার সাথে দেখা হল- তানভীর, তাসিফ, মঈন...
একটা সময় আমরা সবাই একসাথে মিশে থাকতাম একটা ছোট্টো পাত্রে...পাত্রটার নাম ছিল "ভার্সিটি"। সেই পাত্রের ডেট একদিন ওভার হয়ে গেছে আর তাই সবাই উড়ে উড়ে চলে গেছে যে যার আকাশে।
আজ সন্ধ্যা থেকে সবার আকাশের গল্প শুনছিলাম আমি। লাল আকাশ- নীল আকাশ- দেশী আকাশ- বিদেশী আকাশ- নিজেদের আকাশে আজ সবাই আমরা অনেক একা।
আকাশের গল্প শুনতে শুনতে বারবার আমার ওই আগের পাত্রটার কথা মনে পড়ছিল। সেখানে আমাদের আকাশটা হয়ত খুব ছোট ছিল- কিন্তু ছিল একটাই। ছোট্টো পাত্ররূপী ওই আকাশটাই ছিল আমাদের জীবনের সবথেকে সুন্দর অধ্যায়।
গল্প শেষে বাড়ি ফিরছিলাম- হুট করে চোখে পড়লো বাদামওয়ালা এক মামার ছোট্টো দোকানটা। এক কোণে একটা কুপি রাখা। আর তা থেকে প্রতি মুহুর্তে বেরিয়ে আসছে এক রাশ কালো ধোঁয়া। উড়তে উড়তে তারা সাদা হয়ে যাচ্ছে- ছড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসের আহবানে- যে যার দিকে...
আমার খুব লোভ হল ওদের সাথে মিশে যাওয়ার। আমি প্রার্থণা করতে থাকলাম প্রকৃতির কাছে- আমাকে বাষ্প করে দাও মা... আমি মিশে যাই ওদের সাথে... প্লীজ আম্মু..দাও না..দাও না..
এই যখন চলছে আমার জীবনে- ঠিক তখনই আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলেন ইচ্ছা পূরণের দেবী। উনি এই অধম বান্দার কথা শুনলেন, আমার ইচ্ছা পূরণ করলেন তার জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়..
আমি ধীরে ধীরে বাষ্প হতে থাকলাম- উবে যেতে থাকলো আমার হাত, পা, আঙুল.... আমি মিশে যেতে থাকলাম ওই ধোঁয়াদের দলে। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যেতে থাকলো ওই ধোঁয়ার দল। আর আমি ঢুকে যেতে থাকলাম তাদের শরীরের সবগুলো ফাঁকে... মিলে মিশে এক হয়ে যাবার যে চির আরোধ্য অনুভূতি- তা আমি আজ পেলাম- একদম অজানা অচেনা একদল ধোঁয়ার সাথে..
আমি সুখ পেলাম- তীব্র সুখে আমার সারা শরীর অসাড় হয়ে যেতে থাকলো। পার্থিব ভালোবাসা, মিলনের সুখ- সব কিছু ছাপিয়ে গেল ওই মুহুর্তটা। আমার ধোঁয়াটে ফাঁকা শরীরের সবটুকু পূর্ণ করে দিল ওই ধোঁয়ার দল, আমি পূর্ণ করলাম তাদের সব অপূর্ণতা...
চোখ বুদে আমি যখন সুখ নিচ্ছিলাম তখনও কিন্তু আমি সচল। বাতাসে ভর দিয়ে আমি একটু একটু করে সরে যাচ্ছিলাম আমার প্রেয়সীর থেকে। একসময় আমি সেটা বুঝলাম। চোখ মেলে চাইলাম ওই কালচে ধোঁয়ার দিকে...
সে এখন সাদা। হালকা হতে হতে সেও সরে গেছে আমার থেকে অনেক অনেক দূরে.... আমার চোখ ভিজে আসলো মুহূর্তেই- "তুমিও চলে যাবে আজ?"
"এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম" ধোঁয়া জবাব দিল রূঢ় কন্ঠ্যে। আমি তার হাত ধরে রাখলাম শক্ত করে। কিন্তু আমার ওই অন্তঃসারশুণ্য ফাঁকা হাত গলে সে দূরে সরে গেল মুহুর্তেই....
আমি ভাসছি- ভেসে চলছি আকাশের দিকে- আমার নিজস্ব সেই আকাশ- যেখানে আমি একা... ভেজা চোখে দেবীকে গালি দিচ্ছিলাম তখন। কতকাল এভাবে ভাসবো আমি?
ভাজ্ঞিস- বাষ্পরা বেশীদিন ভেসে থাকে না। আমার ভেজা চোখ গ্রাস করে নিলো আমার গোটা শরীরকে। আমি ভারী হলাম- ফেলে আসা সেই মাটিটাতে পড়ে যেতে থাকলাম ফোঁটায় ফোঁটায়...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৭