বেশ কিছু স্বপ্ন ছিল আমার।
তারা এসেছিল খুব ছোটবেলায়, এসেছিল কৈশোরে, এসেছিল যৌবনের প্রথম প্রহরে।
সবাই বলতো- চেপে রাখো সোনা- এখনও সময় আসেনি।
তারা আমাকে এগিয়ে যেতে বলেছিল আরো কিছুটা দূর- আর সবার মত। বলেছিল সময়ের পানিতে সাঁতরাতে সাঁতরাতে নাকি একদিন ওই সময়টা চলে আসবে আমার জীবনে। তখন স্বপ্নকে বেচে আমি উঠে যেতে পারবো অনেক অনেক উপরে..
আমি তখন গলা টিপে ধরেছিলাম আমার স্বপ্নগুলোর, আটকে রেখেছিলাম আমার নীল ব্যাগটার ভেতরে।
এরপর সেই ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে সাঁতরে গেছি ২৪টি বছর- ওই সময়টার লোভে।
কিন্তু একটা জিনিস আমি তখন জানতাম না, জানো?
জানতাম না স্বপ্নদেরও যে প্রাণ আছে।
স্বপ্নরা জীবিত। ওদেরকেও নিঃশ্বাস নিতে হয়, খেতে হয়। শ্বাস-খাদ্য ছাড়া এযুগের মানুষ বেঁচে থাকে ঠিকই, কিন্তু স্বপ্নরা এখনও এভাবে বাঁচতে শিখেনি।
তাই একে একে মারা যেতে থাকলো স্বপ্নদের সবাই- আমার ওই নীল ব্যাগটার ভেতরে। আমি জানতেও পারলাম না....
আজ বহু বছর পর- সবাই আমাকে বলল- সময়টা নাকি চলে এসেছে।
আমি খুশি হলাম। সাঁতার থামিয়ে ব্যাগ হাতড়ে বের করে আনলাম আমার সেই স্বপ্নগুলোকে।
কিন্তু আজ তারা আর বেঁচে নেই... দীর্ঘ সাঁতারে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি আমার অজস্র স্বপ্নের মৃতদেহের দিকে... আমি ওদেরকে ডাকি, ধাক্কাই- কেউ কোন সাড়া দেয় না। আমি হাটু ভেঙে ভেঙে পড়ি ওদের লাশের ওপরে। আস্তে আস্তে মেনে নিতে থাকি নিজের সেই পরিণতিটাকে- যেটাকে ঘৃণা করে এসেছিলাম সারাটা জীবন।
.
".....অচেতন কখন বেওয়ারিশ মাটির কাছে এসে সময়কে এপিটাফ ভেবে হাঁটু গেড়ে বসে...."
.
আমি তৈরী হচ্ছি- আমি আবার তৈরী হচ্ছি আরেক আমরন সাঁতারের জন্য... যে সাঁতার নির্মম, যে সাঁতার প্রাণ শুষে নেয় মানুষের মন থেকে, প্রাণ শুষে নেয় তার শরীর থেকে, প্রাণ শুষে নেয় তার মগজ থেকে....
যে সাঁতার মানুষকে আর শ্বাস নিতে দেয় না, খেতে দেয় না সময়ের ওই নোনা পানি ছাড়া আর কোন কিছুই...
যে সাঁতারে স্বপ্নরা মৃত, যে সাঁতারে এরপর মরে যাবে আমার মন, তারপর মগজ, আর সবশেষে ক্লান্ত, অসুস্থ শরীরটা।
যে সাঁতারের অখণ্ডনীয় পরিণতি শুধু একটাই- অসুখী এক মৃত্যুযন্ত্রনা- সারাটা জীবন ধরে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯