প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান মারা গেছেন। বাংলা সাংবাদিকতার জগতে সিরাজুর রহমানের মৃত্যুকে নক্ষত্রের পতন বললে অত্যুক্তি হবেনা। দীর্ঘদিন লন্ডনে বিবিসি বাংলার সাংবাদিক হিসেবে তিনি বাংলাদেশীদের কাছে খুবই পরিচিত এক মুখ হয়ে গেছিলেন।
সিরাজুর রহমানের শেষ জীবনটা খুব কষ্টের মধ্যেই কেটেছে। দুই সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। দুজনের লাশই বৃদ্ধ বয়সে সিরাজুর রহমানের স্কন্ধে উঠেছে। এ বিষয়ের একটি দুঃখজনক কথা মনে পড়ছে। তাঁর আত্মজীবনীমূলক 'এক জীবন এক ইতিহাস' বইতে তিনি লিখেছিলেন পিতার সাথে তাঁর শীতল সম্পর্কের কথা। সিরাজুর রহমান কতৃক পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে মেনে নিতে না পারা থেকেই পিতাপুত্রের সম্পর্কের অবনতি। সম্পর্কের শীতলতা এতোই বেড়ে গেছিলো, যে মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা গ্রামের বাড়িতে সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেও তিনি খুব একটা গ্রামে যেতেন না।
তাঁর বইতে এমন এক সময়ের কথা বলেছেন, যখন দীর্ঘদিন পর নোয়াখালীতে নিজের বাড়িতে গেছিলেন তিনি। সেদিন বৃদ্ধ বাবার রান্নার জন্য ঠিক করা রাঁধুনি আসেনি। সিরাজুর রহমান তখন নিজে রেঁধে পিতার সাথে খেয়েছিলেন।
সত্যি বলতে সিরাজুর রহমানের মতো এতো বড় সাংবাদিকের জীবনের এই দিকটা সম্পর্কে আমি অতিশয় দুঃখিত। চাকরি করতে নোয়াখালী আসাতে চাঁদপুরে আম্মা এক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার মনে এক প্রলম্বিত অপরাধবোধের জন্ম দিয়েছে। প্রায়শ এই মর্মবেদনায় আমি যখন ম্রিয়মাণ হই, তখনই আমার সিরাজুর রহমানের কথা মনে পড়ে।
যদিও এখন এটা বলা একদমই শোভনীয় নয়, তবে শেষকালে সন্তানদের লাশ টেনে নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে সিরাজুর রহমান বোধকরি প্রায়শ্চিত্তই করে গেছেন।
আশা করি, বাংলাদেশীদের মধ্যে 'বিবিসির সিরাজুর রহমান' নামে বিপুলভাবে সমাদৃত এই গুণী সাংবাদিক তাঁর কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। বিশেষত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একজন ধারাবিবরণী দানকারী বা সাক্ষী হিসেবে সিরাজুর রহমানের নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে...।