যুগ যুগ ধরে কালো আফ্রিকাকে নিকৃষ্ট চোখেই দেখে এসেছি আমরা। আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে দায়ী পশ্চিমা উপনিবেশিক শক্তিগুলোর বর্ণবাদ। অথচ মানব সভ্যতার উৎকর্ষের যাত্রায় আফ্রিকীয়দের অবদান অন্য কারো চেয়ে কম নয়। মধ্যযুগে যখন ইউরোপ সবে আল উন্দুলুসের কাছ থেকে সভ্যতার আলো লাভ করছিলো, তখন আফ্রিকা মহাদেশের সুদূর অভ্যন্তরেও পরিশীলিত সভ্যতা বিকশিত হচ্ছিলো। এখন যদি আমি বলি বাণিজ্যকুশল সোমালিদের কথা, অথবা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশের কেন্দ্র হয়ে থাকা মালির টিম্বাকতু নগরের কথা, তাহলে অনেকেই অবাক হবে। কারণ সোমালিয়া বা মালিতে এখন তো কদর্যতা ছাড়া আর কিছুই দেখিনা আমরা।
দাস ব্যবসা আর ঔপনিবেশিকতার কাগজেকলমে অবসান হয়েছে বহু যুগ আগে। কিন্তু বাস্তবে আফ্রিকা আজো এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে চলেছে। মাঝেমাঝে আমার মনে হয়, সোমালিয়া বা মোজাম্বিকের মতো দেশগুলো আসলে বিশ্ব দরবারের অসীম শক্তির আধার হতে পারে। বিশেষত ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সোমালিয়া হতে পারে সমূদয় আফ্রো-এশীয় অঞ্চলের শিল্প ও বাণিজ্যের একটি বৃহৎ কেন্দ্রভূমি। সোমালিয়ার অবস্থান পৃথিবীর প্রায় মাঝামাঝি। লোহিত সাগর হিন্দ মহাসাগরে এখানে এসে মিলেছে। এটি আসলে পূর্বের সাথে পশ্চিমের মিলনক্ষেত্র, মানব সভ্যতার জন্য একটি অসীম শক্তির আধার।
আমরা কংকালসার দেহের সোমালি জলদস্যুদের দেখি। কিন্তু এরা ইচ্ছা করে জলদস্যু হয়নি। এদের পূর্বপুরুষ ছিলেন মধ্যযুগের সোনালী দিনগুলোতে বিশ্ববাণিজ্যে দাপিয়ে বেড়ানো সোমালি সওদাগর, যারা কেবল ব্যবসাই করেননি, বিশ্বের অনেক স্থানে উন্নত রুচিবোধ, ধর্মীয় দর্শনও নিয়ে গেছেন।
আজকের সোমালি দস্যুরা আসলে সেই উন্নত প্রজন্মের বংশধর, যারা উপনিবেশবাদ আর বর্ণবাদের সাথে আজো সংগ্রাম করছে। তাদের আমরা আজ নিকৃষ্ট জলদস্যু বলেই চিনি। সোমালিয়া এখন দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ আর কদর্যতার প্রতিশব্দ। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুকে একদা হিন্দ মহাসাগরের মুক্তা বলা হতো। আজ একে কেউ হিন্দ মহাসাগরের ভাগাড়ও বলতে চায় না...!