কয়েক বছর আগের কথা, যখন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ মুসলিম জাহানে দস্তুরমতো নায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসরাইলকে উৎক্ষাত করে অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় চারটি প্রদেশে স্হানান্তরের প্রস্তাব করে চারিদিকে হলুস্হুল ফেলে দিয়েছেন, তখন আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আমাকে বলেছিলেন, শিয়া ধর্মীয় নেতৃত্ব শাসিত ইরানের সাথে আসলে পশ্চিমের একটা পরোক্ষ বোঝাপড়া আছে। পশ্চিম চায় ইরান যেন ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি আরব রাষ্ট্রগুলোর লাগাম হিসেবে কাজ করে।
তখন খোমেনী, আলী রেজাই, বা আহমাদিনেজাদরা আমার কাছে অথর্ব আরবদের চেয়ে ঢের উত্তম। তাই সেই আত্মীয়ের কথাটা উড়িয়ে দিয়েছিলাম সেবার। কিছুক্ষণ আগে জেনেভায় অবস্হানরত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জাফরীকে হোটেলের সুইমিং পুলের ধারে আন্তরিক পরিবেশে গুফতগু করার ছবিখানা দেখে আমার সেই ব্যক্তির কথাগুলো মনে পড়লো। সত্যিই, এখন ইরানকে আর আমেরিকার শত্রু বলে মনে হচ্ছে না! ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের ৩৫ বছর পর এসে ইরানকে অনেক পরিবর্তিত বলেই মনে হচ্ছে।
হয়তো, ১৯৭৯ সালে মার্কিন সেবাদাস শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর পতনের পেছনে কারণ ছিলো ঘুনে ধরা রাজতান্ত্রিক প্রশাসনের বদলে এমন একটি প্রশাসন ইরানে বসানো যাদের জনভিত্তি থাকার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি-শিয়া প্রশ্নে বিভক্তি ও ইসরাইলের অতি বাড়বাড়ন্তে মাঝমাঝে কিছু রাশ টানার সক্ষমতা থাকবে।
ইরানের সমরশক্তিকেও আমার কাছে যুযু বলেই মনে হয়। ইরানী বাহিনী শক্তিশালী, তবে সেটা আমেরিকা বা ইসরাইলের প্রতি হুমকি সৃষ্টির মতো যথেষ্ট নয়। অস্ত্রবলের দিক থেকে ইরানের চেয়ে পাকিস্তানী সমরশক্তি ঢের সুদৃঢ়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইরানী বিমানবাহিনী এখনো এফ-১৪ টমক্যাট জঙ্গিবিমান চালায়, যেগুলো শাহের আমলে ১৯৭৪ সাল থেকে রাজকীয় ইরানী বিমানবাহিনীকে সরবরাহ করা হয়। এগুলোকে সংস্কার করে এখন টমক্যাটের বদলে পার্সিয়ান ক্যাট বলে ডাকা হয়। তবে ইরানের কিছু মিগ-২৯ আছে, যেগুলো দারুণ জিনিস হলেও আমেরিকা বা ইসরাইলের জন্য ভীতির কারণ নয় অবশ্যই। পরমাণু বোমাও দৃশ্যত হতে হতে থেমে গেছে।
সর্বোপরি, এখন মেসোপটেমিয়া ও শামের রণাঙ্গনে ওয়াশিংটন, তেল আবিব আর তেহরানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরিদৃশ্যমান অস্বাভাবিক সাযুজ্যতেও আমাদের ভাবনার খোরাক আছে বলে আমার এখন মনে হচ্ছে...!