বিডিনিউজে দেখলাম, নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের দক্ষিণে বন বিভাগ থেকে ৫০০ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরসমূহে অবস্হিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরিয়ে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
নেহায়েত সাময়িক ব্যবস্হা হিসেবে এটা করা হলে তাও একটা কথা ছিলো। কিন্তু এটা যদি প্রকারান্তরে স্হায়ী প্রত্যাবাসন হয়ে থাকে, তাহলে এতে বাংলাদেশের কমপক্ষে দুটি আশু পরাজয় ঘটবে।
প্রথমত, ব্রহ্মদেশের দাবী অনুযায়ী আরাকানের ভূমিপুত্র রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশে রেখে দেয়ার দাবীর সামনে কার্যত বাংলাদেশের নিস্ফল আত্মসমর্পণ ঘটবে।
দ্বিতীয়ত, আরাকানে রোহিঙ্গাদের স্বাধীন হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে ভূরাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশ চিরতরে হারাবে। অষ্টম শতাব্দী থেকে আরাকানকে সাজাতে মুসলিমদের যা কিছু অবদান, তা বাংলাদেশের পৌরহিত্যে ধ্বংস হবে।
এছাড়াও এখানে আরো অনেক বিবেচনার বিষয় রয়ে যাচ্ছে। যেমন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের এক শ্রেণীর বিড়াল তপস্বীর অভিযোগ (যাতে কিছুটা বাস্তবতা আছে) হচ্ছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অপরাধ তৎপরতায় জড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও শ্রমবাজার উভয়ই কমাচ্ছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের আরো ভেতরে হাতিয়া দ্বীপে স্হানান্তরের ফলে উপরিউক্ত সমস্যাগুলো তো কমবেই না, বরং জ্যামিতিক হারে বাড়বে।
তাছাড়া হাতিয়া দ্বীপের জনমিতির স্বাভাবিক অবস্হিতির প্রশ্নও আসছে। হাতিয়া জনবিরল কোন দ্বীপ নয়। সেখানে হুট করে বড় সংখ্যায় বহিরাগত নিয়ে জুড়ে দিলে তা স্হানীয়দের দৈনন্দিন আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডসমূহে প্রভাব ফেলবে। অত্র অঞ্চলে এর সামাজিক কুপ্রভাব হবে মারাত্মক।
আর যদি ভাবা হয়ে থাকে যে, দ্বীপের দক্ষিণে বনবিভাগের ম্যানগ্রোভ জমিতে রোহিঙ্গাদের বসিয়ে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মুখে ফেলে এই অভাগাদের নিশ্চিন্হ করাতেই শর্টকাট সমাধান নিহিত, তাহলে বলবো, আল্লাহ আছেন। মজলুমের কণ্ঠস্বরই আল্লাহর কন্ঠস্বর। স্পেন থেকে মাথা গুনে গুনে মুসলিমদের খুন করার পরও আজ ছয় শতাব্দী পর গ্রানাডা বা কর্ডোবা শহরগুলোতে আজানের সুললিত আওয়াজ ভেসে আসে। আজো টিকে আছে আল হাম্বরা। স্পেনের খ্রীষ্টান মৌলবাদী সরকারগুলো স্বর্ণ যুগের মুসলিম শৌর্য ও ঐশ্বর্যের প্রতীক আল হাম্বরার পর্যটন বেচে রোজগারের জন্য এখন এর রক্ষণাবেক্ষণ করে যত্নের সাথে।
আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুগোস্লাভিয়ার মুসলিমদের পরিণতিও দেখেছি। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী টিটো ও লেলিনের দেশদ্বয়ের ধ্বংসাবশেষে মাথা উঁচু করেছে মুসলিমরা। আমার আব্বা বলতেন, ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এতোগুলো ভূখণ্ড আছে, তা যুগোস্লাভিয়া না ভাঙ্গলে জানতেই পারতাম না!
কিংবা তুরস্কের কথাও বলা যায়! বড্ড গণতান্ত্রিক উপায়ে সে দেশ থেকে ইসলামী তমুদ্দুন ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিলেন কামাল পাশা ও তদীয় উত্তরাধিকারীরা। সেই গণতান্ত্রিক কাঁটা দিয়েই কামাল পাশার কাঁটা উৎপাটনের কাজ চলছে আজ প্রায় নয় দশক পর এসে, এরদোগান তো কেবল একজন উসিলা মাত্র। ইস্তানবুলের হাজিয়া সোফিয়ায় এখন আবার কোরআন তেলাওয়াত হয়।
যতো দিন গড়াবে, এসব দেশের সাথে আরো নতুন নতুন দেশের নাম তালিকাভুক্ত হতে থাকবে। দোয়া করি, এদেশকে যেন আল্লাহ এভাবে আত্মঘাতী না করেন। দুই পাশে হাজার মাইলে কোন মুসলিম ভূখণ্ড না থাকার পরও আল্লাহ এই বাংলাকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রেখেছেন। সেটাও এমন প্রতাপের সাথে যে, নৃতাত্ত্বিকভাবে আরবদের চেয়েও বাঙ্গালী মুসলিম সংখ্যায় গরিষ্ঠ। বাংলার প্রতি এহেন বিরল রহমতের পেছনে কোন গুঢ় উদ্দেশ্য যদি থেকে থাকে, তবে তার ঝলক যেন আল্লাহ সত্ত্বর প্রকটিত করেন...!