somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গাদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ

১৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল কিছুদিন পরপরই রোহিঙ্গাদের উপর অবিশ্বাস্য সব বিপর্যয়ের খবর আসে। কিছুদিন তাদের নিয়ে নির্লিপ্ত সব নির্মম আলোচনা চলে। তারপর তাদের ব্যাপারে সব নীরব হয়ে যায়। আমি নিজেও এরচেয়ে ব্যতিক্রম নই। কিন্তু মজলুম এই মানুষদের জন্য নীরব প্রার্থনা ছাড়া তাদের প্রতি আমার তো করণীয় নেই। যাদের কিছু করার আছে, তাদের তো এ ব্যাপারে হেলদোল নেই। তবে মুসলিম হিসেবে রোহিঙ্গাদের প্রতি গর্ব করা যায়। এতোকিছুর পরও রোহিঙ্গা সমাজে ইসলামের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। অথচ তাদের যাবতীয় দুর্দশার পেছনে তাদের ধর্মীয় পরিচিতির ভূমিকা অগ্রগণ্য।
যাহোক, যখনই আরাকানের ক্ষত নতুন কোন প্রসঙ্গে দগদগে হয়ে ওঠে, তখনই অনুভূত হয় আরাকানের ভূত ও ভবিষ্যতের সাথে বাংলা কতোটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বইতে পড়া ইতিহাসের নানা অধ্যায়ের কথা মনে পড়ে, যেখানে বাংলার শাসকদের অত্যন্ত কার্যকর আরাকান নীতির বিভিন্ন দিক লিপিবদ্ধ আছে। মধ্যযুগে বাংলার শাসকরা অতন্ত মেধার পরিচয় দিয়ে বাংলার রাজনীতিতে আরাকানের গুরুত্বকে উপলব্ধি করে গেছেন। বাংলার স্বাধীন সুলতান থেকে ঢাকায় নিযুক্ত মুঘল সুবাদার পর্যন্ত সকলের আরাকান নীতিই প্রায় অভিন্ন ছিলো। বাংলার শাসকদের ফলপ্রসূ আরাকান নীতির কারণে সেখানে মুসলিমদের বসতি গড়ে উঠতে থাকে। আরাকানের মুসলমানী নাম ছিলো রোসাঙ্গ। রোসাঙ্গের নামানুসারেই আরাকানী মুসলিমরা ক্রমান্বয়ে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত হতে থাকে।
আরাকানের রাজনীতিতে বাংলার জড়িয়ে পড়ার সূচনা হয় ১৪০৬ সালে। আভা নগর কেন্দ্রিক বর্মীরাজ প্রথম মিনখাউঙ্গের আক্রমণে রাজ্যচ্যূত হয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে আসেন আরাকানের রাজা মেং সামাউ। বাংলার সুলতান গিয়াস উদ্দীন আজম শাহ আরাকানের রাজাকে দূত পাঠিয়ে সসম্মানে রাজধানী নিয়ে গিয়ে দরবারে আশ্রয় দেন। কিন্তু বাংলার পক্ষে তখনই আরাকানে আত্মনিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। শীঘ্রই বাংলায় রাজনৈতিক গোলযোগ ঘণীভূত হয়। ১৪১০ সালে সুলতান আজম শাহ স্বীয় পুত্র হামযার বিদ্রোহে মারা যান। হামযা সাইফ উদ্দীন হামযা শাহ নাম নিয়ে গৌড়ের সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর পিতৃহন্তারক হামযা শাহ নিজেই উত্তরবঙ্গের ভাতুড়িয়ার জমিদার গণেশের হাতে নিহত হন।
এরপর ঘটনা অনেকদূর এগিয়ে যায়। গণেশ দনুজমর্দন (মানে যবন তথা মুসলিমকে যে মর্দন করে) দেব নাম নিয়ে গৌড়ের সিংহাসনে আসীন হয়ে যাকে আজকাল ভারতে 'ঘর ওয়াপসি' কর্মসূচী বলা হচ্ছে, তেমন কর্মসূচী চালু করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় গৌড়ের প্রখ্যাত আলেম নূর কুতব আলমের আহবানে ১৪২০ সালে জৌনপুরের সুলতান ইবরাহীম শরকীর গৌড় আক্রমণের পরও সংকটের সমাধান হয়নি। এভাবে নূর কুতব ও গণেশের দ্বৈরথ দুই বছর চলতে থাকে। গণেশ নূর কুতব আলমের ছেলে আনোয়ারুল হককে হত্যা করেন। পুত্রশোকে নূর কুতব আলম মারা যান।
তবে যেদিন আনোয়ারুল হককে হত্যা করা হয়, সেদিনই গণেশের ছেলে যদু পিতাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। যদু পুনরায় ইসলামে দীক্ষিত হয়ে জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ নাম নিয়ে গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। ১৪৩০ সালে সুলতান জালাল উদ্দীন সসৈন্যে সাহায্য করে মেং সামাউকে আরাকানের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
সমকালীন সময়ে জারী করা আরাকানের মুদ্রায় লিখিত পাঠ প্রমাণ করে সাহায্য করলেও বাংলা আরাকানে কোনরূপ প্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি। আরাকান বাংলার সামন্ত রাজ্যেও পরিণত হয়নি। কিন্তু আরাকান বাংলার প্রতি এমনই কৃতজ্ঞ হয় যে, পরবর্তী আড়াই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আরাকানের বৌদ্ধ রাখাইন রাজারা নিজেদের নামের সাথে হোসেন শাহ, ইসলাম শাহ প্রভৃতি নাম ধারণ করতেন। মুদ্রায় রাজারা নিজেদের মুসলমানী নাম আরবী লিপিতে লিখতেন। বহু পরে মুঘল আমলেও আরাকানের রাজাদের এই দস্তুর চলমান থাকে।
এখানে প্রাণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মারাত্মক গৃহবিবাদে জড়িয়েও আরাকানের বিষয়ে বাংলার শাসকরা অভিন্ন স্হানে ছিলেন। এমনকি রাজা গণেশও আরাকানের রাজাকে দরবার থেকে বিতাড়ন করেন নি, যদিও তখন গণেশের সাথে মুসলিমদের ধর্মযুদ্ধ চলছিলো। গণেশ চাইলে সুলতান আজম শাহের মেহমান মেং সামাউকে বিতাড়ন করতে পারতেন। অনুরূপভাবে, গণেশের পুত্র জালাল উদ্দীন দুই দশক আগের সুলতান গিয়াস উদ্দীন আজম শাহের নীতিকে এগিয়ে নিয়ে আরাকানে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গদিচ্যূত রাখাইন রাজাকে পুনর্বহাল করেন। মধ্যযুগে বাংলার শাসকদের দেশের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে এমন ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বিস্ময়ের উদ্রেক করার পাশাপাশি আমাকে গর্বিতও করে।
অথচ যখন আরাকানের ব্যাপারে মধ্যযুগ আর আধুনিক যুগের বাংলার নীতির আকাশপাতাল ফারাক দেখি, তখন সত্যিই দুঃখ হয়। আল্লাহ আমাদের অনেক সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তার সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। এই অক্ষমতা ক্ষমার অযোগ্য...!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×