১৪ শত বছর আগে ইসলামের সূচনার সাথে ইসলাম অর্ধেক পৃথিবীর বুকে অতিদ্রুত কেমন করে ছড়িয়ে পড়েছিলো?
বিদ্বেষীরা বলে বেড়ায় তলোয়ারের দিয়ে! অথচ বেকুবগণ ভালো ভাবে জানে ধর্মকে ধারণ করতে হয় মন থেকে। যেখানে কোন তলোয়ার প্রবেশ করতে পারেনা।
হ্যাঁ, অসত্য অন্যায় এবং অশান্তিকে দ্রুত দূর করতে তলোয়ারের দরকার হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু মানুষের মনে মণিকোঠায় তলোয়ার দিয়ে ইসলামকে ইনপুট করে দেয়া হয়নি।
তখনকার দিনে প্রচলিত যত মত পথ আর ধর্ম ছিলো, তাদের সবগুলোকে থেকে নতুন বিকশিত ইসলাম ছিল সহজ সরল এবং স্বচ্ছ। যার কারণে মানুষের মনে জগতে ইসলামের আহ্বান সহজে প্রবেশ করতে পেরেছিলো। ইসলাম শুধু আধ্যাত্মিকতা ফলাতে মানুষদেরকে আহ্বান জানায় নি, বরং ইসলাম সকল মানুষের মধ্যে; সব ধরণের উচ্চ নিচ জাত বংশের ধারণাকে অস্বীকার করে ঘোষণা করেছিলোঃ- সকল মানুষ এক আদমের সন্তান।
১- ইসলাম মানুষকে বহু প্রভুত্ব বাদ থেকে মুক্ত দিয়ে এক আল্লাহর একত্ব একক প্রভুত্বকে সামনে তোলে ধরে।
২-সকল মানুষের উৎপত্তি এক আদম থেকে; তাই মানুষকে আহ্বান জানায় সকল মানুষ সমান এবং সকল মানুষের একমাত্র প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ তিনি ছাড়া আর কেউ মাবুদ নন।
৩- মুহাম্মদ সা: হচ্ছেন আল্লাহর নবী ও রাসুল।
তার অতি সরল অর্থ ছিলো আল্লাহর ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই , মানুষ কোন দিন মানুষের প্রভু হতে পারেনা শুধু তাই নয় আসমান জমিন, দুনিয়া আখেরাতের সকল স্তরে আর কোন মাবুদ নেই। আল্লাহকে একমাত্র মাবুদ মেনে; মুহাম্মদ সা: যেভাবে জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিবেন তাই অনুসরণ করে চলতে হবে।
ইসলামের এই অতি সাধারণ মন্ত্র সেদিন মানুষের কানে পৌছা মাত্র তা এক সামাজিক বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়ে পড়েছিল। যার প্রবল বেগে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফ্রান্সের সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই এক বিপ্লবী আমন্ত্রণে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গিয়েছিলো রোমান, পারসিয়ান সাম্রাজ্য। দলে দলে যখন সাবেক ধর্ম ত্যাগ করে; সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রবেশ করতে থাকে; তখন প্রচলিত ধর্মীয় আচার প্রথাকে পরিবর্তনের জন্য চাপে পড়েছিলো ইউরোপীয় এবং ভারতীয় সভ্যতা।
সে যুগে আজকের আমেরিকা রাশিয়ার মত মুসলিমদের কাছে উন্নতমানের অস্ত্র ছিলোনা যা দিয়ে তারা অনুন্নত অস্ত্রধারী রোমান এবং পারসিয়ান সাম্রাজ্যকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো। বরং সে সময়ের উন্নত অস্ত্র মুসলিমদের হাতে ছিলোনা ছিলো অমুসলিমদের হাতে। এমনও নয় যে শত শত বছর ধরে যারা বীরযোদ্ধা ছিলো তারা ইসলামের আগমনে কাপুরুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো , যার কারণে তারা মুসলিম যোদ্ধাদের সাথে পেরে উঠেনি!
আসল সত্য হলও তাদের আচরিত ধর্মের আচার প্রথা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় বিরাজমান ছিলো। যখন তারা বুঝতে পারলো যে, নতুন ধর্মমত আরব উপদ্বীপ থেকে প্রবল বেগে অপ্রতিহত গতিতে চারিদিকে ছড়িয়ে পরছে। তখন তাদের মনে সন্দেহের দোলা সৃষ্টি হয় তারা ভাবতে থাকে তারা স্রষ্টার সঠিক পথে থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে বিধায় ; স্রষ্টা তাদের থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিয়েছেন। আরবদের ধর্ম মতের সাথে স্রষ্টা আছেন বলেই তারা অপ্রতিহত গতিতে চারিদিকে সব ধরণের প্রতিরোধকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে এগিয়ে আসছে।
তারা জানতে পারে মুসলিমরা নিছক সম্পদ লুণ্ঠন আর সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করছেনা, তারা যুদ্ধ করছেন এক আল্লাহর তৌহিদ প্রতিষ্ঠা করতে এবং দুনিয়ার সব মানুষকে মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেবার জন্য।ইসলামের উন্নত জীবন দর্শনের আহ্বানে তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছিলো, কাজেই তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অক্ষম হয়। বরং যুদ্ধের ময়দান থেকে স্বপক্ষ ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমদের পক্ষ হয়ে তাদের সাবেকী ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শরীক হতে থাকে।
ইসলাম যখন চারিদিকে বিজয়ী হচ্ছিলো; তখন শক্তিতে মুসলিমদের অগ্রাভিযান রোধ করতে না পেরে অমুসলিম শক্তি চিন্তা করতে শুরু করে; কোন সে শক্তি যার ফলে মুসলিমদেরকে পরাজিত করা যাচ্ছেনা।
একসময় তারা পেয়ে যায় ইসলামের প্রাণ ভোমর।১- এক আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা, ২-মুহাম্মদ সা: এর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং ৩- ইস্পাত কঠিন ইসলামী উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব শক্তি।
তারা যখন কারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হলো; তখন থেকে এর প্রতিরোধক বের করার কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়ে।
ইঁদুর যে ভাবে অতি সন্তর্পণে একটি একটি করে গাছের শেকড় কাটে; ঠিক সে ভাবে অমুসলিম শক্তি প্রথমে যে কাজ করে ; তা প্রকাশ্যে ইসলামী শক্তি বিরোদ্ধাচারণ করা বন্ধ করা। তারা দলে দলে মুসলিমদের দেশে কর্মের সন্ধানের উসিলায় এসে প্রবেশ করে। সাথে নিয়ে আসে তাদের সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের। মুসলিম প্রভাব শালীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। এমন কি গণহারে তাদের মেয়েদেরকে মুসলিম আমির উমরাহ খলিফা বাদশাহ বাদশাহজাদাদের বিয়ে দিতে থাকে। এই বিয়ের মাধ্যমে যে প্রজন্ম মুসলিম সমাজে সৃষ্টি হয় তারা ধীরে ধীরে ইসলামের প্রাণ ভোমর থেকে দূরে সরে চলে যায়, আমোদ প্রমোদ শরাবি আর ইন্দ্রপরায়ণ হয়ে পড়ে।
ধীরে ধীরে মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানেও পিছিয়ে পড়ে জ্ঞান বিজ্ঞানে ইউরোপের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ততদিনে মুসলিম উম্মাহ থেকে ইসলামী প্রাণ ভোমর নিভো নিভো হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয়রা ততদিনে উন্নত অস্ত্রধারী হয়ে উঠেছে। তখন সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপ মুসলিমদেরকে লণ্ডভণ্ড করতে আগ্রাসী আক্রমণ চালায়। তখন সব দিক দিয়ে হীন বল হয়ে পড়েছিলো মুসলিম উম্মাহ কাজেই ইউরোপীয় আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করার মত শক্তি ছিলোনা। সব গুলো মুসলিম ভুখণ্ড তাদের কলোনীতে পরিণত হয়ে পড়ে।
অস্ত্রে মাধ্যমে বিজয় যে সাময়িক জয়; ইতিহাস থেকে শিক্ষা ইউরোপীয় শক্তিরা ভালো ভাবে জেনে গিয়েছিলো। যাতে অদূর ভবিষ্যতে ইসলাম আবার বিশ্ব শক্তি হয়ে উঠতে না পারে, তার প্রতিরোধক শক্তি তারা অনেক আগে আবিষ্কার করতে পারলেও সেই প্রতিরোধক অস্ত্র এতদিন প্রকাশ্যে ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। এখন সে সমস্যা আর নেই এখন তারা রাজশক্তি আসনে প্রতিষ্ঠিত তাদের অভিলাষ ই বাস্তবায়ন করতে আর কোন অসুবিধা নেই।
এবার তারা ইসলামের প্রাণ ভোমরের অন্যতম শক্তি উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব বোধে ফাটল ধরাতে মুসলিমদের অঞ্চলে অঞ্চলে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিতদের দ্বারা জাতীয়তাবাদী দর্শন প্রচলিত করতে থাকে। জাতীয়তাবাদী দর্শন বাস্তবায়নের ফলে- এক ধর্ম এক মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বে , সারা আরব ভূখণ্ডকে কৃত্রিম জাতীয়তাবাদী আদর্শ দিয়ে ১৮ খণ্ডে বিভক্ত করে দিয়ে; এক অঞ্চলের মুসলিমদেরকে অন্য অঞ্চলের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিবাদ সীমান্ত সংঘাতে লাগিয়ে, ভাগ করো আর দুর্বল কর, আর তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করো নীতি সফল বাস্তবায়ন করে , অন্য দিকে মুক্তি বুদ্ধির চর্চার খোলসে তারা আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থায় মুসলিম যুব সমাজের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়া যায়, মুহাম্মদ সা: এর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা থেকে যুব সমাজকে দূরে ঠেলে দেয়া যায় সেই শিক্ষা ব্যবস্থা মুসলিমদের দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত করে। কারণ দেশে অগ্রগামী দলে বা নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে তাদের তৈরি শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন পথ তারা খোলা রাখেনি।
যার ফলে দুনিয়ার কামিয়াবি লোভী পদ লোভী আয়েসি জীবনের প্রতি লোভে মুসলিমরা তাদের সন্তানদেরকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে থাকে। আর এই পথেই আমাদের কয়েক জেনারেশনকে তারা তাদের মত করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখন তাদের প্রত্যক্ষ শাসন আমাদের দেশে নাই কিন্তু তাদের শিক্ষায় তাদের চিন্তা চেতনা ধারণকারী আমাদের সন্তানরা তাদের অধরা কাজ আজ সম্পন্ন ভালোভাবে করে চলছে।
তাইতো আজ মুসলিমদের দেশে দেশে ইসলাম কোণঠাসা হয়ে পড়ে আছে। কেউ ইসলামের কথা উচ্চারণ করলে এখন আর ইউরোপীয় সৈনিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েনা আমাদের সৈনিকরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।