১। পশ্চিমা চলচ্চিত্র/ উপন্যাসে পাইরেট বা জলদস্যুদের যে পতাকা সাধারণত দেখানো হয় তার নাম আসলে জলি রজার ফ্ল্যাগ। মজার ব্যাপার হল মাথার খুলি এবং আড়াআড়ি দুইটি হাড় সম্বলিত এই পতাকা পাইরেটদের মাঝে তেমন জনপ্রিয় কিছু ছিল না। সব পাইরেট ব্যবহার করার তো প্রশ্নই উঠে না। সাধারণত সমস্ত পাইরেট ক্যাপ্টেন নিজেদের পছন্দ মতো সম্পূর্ণ ইউনিক পতাকা উড়াতেন। যেমন কুখ্যাত জলদস্যু ব্ল্যাক বীয়ারডের পতাকা ছিল একটা শয়তান আকৃতির কঙ্কাল যার একহাতে মদের গ্লাস আরেক হাতে একটি বর্শা যা হৃদপিন্ড বিদ্ধ করছে।
২। সব জলদস্যুই পুরুষ ছিল না। ইতিহাসে নারী জলদস্যুরও নজির পাওয়া যায়। তবে তারা পুরুষ হিসেবে ছদ্মবেশে থাকতেন। এমন দুইজন বিখ্যাত নারী জলদস্যু ছিল Mary Reed এবং Ann Bonnet. তৎকালীন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পরার পর তাদের নারী পরিচয় ফাঁস হয়।
৩। পাইরেটদের এক চোখে যে কালো কাপড়ের পট্টি পড়তে দেখা যায় তা ঐতিহাসিকভাবে সঠিক। তবে শুধুমাত্র এক চোখ হারানো পাইরেটরাই পট্টী পড়তো এমন নয়। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক দুই চোখের জলদস্যুরাও প্রায়ই এক চোখে পট্টি বাঁধতেন। এর কারণ ছিল পাইরেটদের প্রায়ই ডেকের তীব্র সূর্যালোক থেকে নীচে প্রায় অন্ধকার কেবিনে প্রবেশ করতে হত। এক চোখ পট্টি দিয়ে বেঁধে রাখার সুবিধে ছিল, সেই চোখ সব সময়ই অল্প আলোতে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকত। কেবিনে ঢোকার সময় তারা স্রেফ সেই পট্টি চোখের ওপর থেকে সরিয়ে নিত।
৪।জলদস্যুরা তাদের চিরনিদ্রার ব্যাপারে খুবই সেন্সিটিভ ছিল। সাধারণত কেউই চাইত না সমুদ্রের তলদেশ হোক তাদের শেষ আশ্রয়। সমস্ত জলদস্যুই কানে দামী রিং পড়তো, যাতে তার মৃত্যুর পর সম্ভব হলে সেই রিং বিক্রি করে সঠিক ভাবে তাকে সমাহিত করা যায়। এমনকি কোন জলদস্যুর লাশ সমুদ্রে কিংবা তীরে ভাসমান পেলে সাধারণত অন্যান্য জলদস্যুরা তাকে সমাহিত করতো। কোন নির্দিস্ট স্থানে সমাহিত হতে চাইলে জলদস্যুরা সাধারণত সেই স্থানের ঠিকানা তাদের ইয়ার রিং এ খোদাই করে লিখে রাখতো। সম্ভব হলে তার সাথী জলদস্যুরা তাকে সেখানেই সমাহিত করতো।
৫। সবচেয়ে ভীতি প্রদর্শনকারী পতাকা ছিল লাল পতাকা। যখন কোন পাইরেট জাহাজে লাল পতাকা উড়তে দেখা যেত তার অর্থ ছিল তারা আক্রান্ত জাহাজের ক্রু দের কোন দয়া দেখাবে না। শিকার জাহাজের সমস্ত ক্রুদের হত্যা করা হবে।
৬। জলদস্যুরা তাদের সম্পদ মাটিতে পুঁতে রাখতো না। এর একটা সিম্পল কারণ ছিল, পাইরেটরা সাধারণত পুঁতে রাখার মত কোন সম্পদ লুট করতো না। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল মালবাহী জাহাজ। তাদের প্রধান লুট ছিল সাধারণত অস্ত্র, কাঠ, পশুর চামড়া, তামাক, চিনি, মসলা, মদ ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, পুঁতে রাখলে এগুলোর কোন মূল্য নেই। ইন ফ্যাক্ট, সম্পদ পুঁতে রাখার নজির কেবল মাত্র একজন জলদস্যুর জীবনে পাওয়া যায়। তার নাম ছিল William Kidd. এই পুঁতে রাখা সম্পদই পরবর্তিতে তার কাল হয়েছিল। এই সম্পদ তার বিরুদ্ধে পাইরেসীর অভিযোগ প্রমাণে ব্যবহৃত হয় এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।
৭। জলদস্যুদের মাঝে সমকামী বিয়ে প্রচলিত ছিল। এইরূপ বিয়ের পর দুই পাইরেট নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি শেয়ার করতো এবং এক জনের মৃত্যুতে আরেকজন তার সম্পত্তির মালিক হত।
৮। বিখ্যাত সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে জলদস্যুরা অপহরণ করেছিল। জলদস্যুরা তার জন্য বিশ স্বর্ণমুদ্রা মুক্তিপণ চাইলে সিজার বলেন তার মূল্য কমপক্ষে পঞ্চাশ স্বর্ণমুদ্রা। জলদস্যুদের জিম্মায় থাকাকালিন সিজার তাদের কবিতা আবৃতি করে শুনাতেন। মুক্তিপণ পাওয়ার পর ছেড়ে দিলে সিজার সমস্ত জলদস্যুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৮