আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪০
বাংলাদেশে স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী
উপরে আলোচানর সূত্র থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ৫০০০ বছরের পূর্বে বাংলাদেশে যে পশু-পাখি ছিলো এদের সকলের প্রজন্ম বর্তমানে নেই। কতগুলো এবং কি কি লুপ্ত হয়ে গেছে তার সঠিক বিবরণও দেয়া সম্ভব নয়। তবে নিকট অতীতে যে সব পশু-পাখি লুপ্ত হয়ে গেছে এবং যেগুলি হুমকির মধ্যে রয়েছে তাদের সম্বন্ধে এই অধ্যয়ের শেষে একটু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। তবে প্রচুর যুক্তি তর্কে না গিয়ে বলা যায় যে, আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ ছিল পশু-পাখির এক অভয়ারণ্য, যেখানে এদের শব্দ ও কাকলিতে বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত ছিলো। জীব-বৈচিত্রে এবং এদের বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশে আর্দ্র জঙ্গলাকীর্ণ স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মানুষের বসবাসের জন্য বোধ হয় অনুকূল ছিলো না। বর্তমানে পৃথিবীতে স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ৪৪০০; ভারত উপমহাদেশে স্তন্যপায়ী প্রজাতির সংখ্যা ৫০০ আর বাংলাদেশে আছে ১২০ প্রজাতি। ২০০০ থেকে ৩০০০ বছর পূর্বেও মরুঅঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণী ছাড়া ভারতের সব স্তন্যপায়ী প্রাণী বাংলাদেশে বিচরণশীল ছিল। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে সারা দেশে একসময় বিচরণশীল স্তন্যপায়ী জন্তু জানোয়ার, বৃক্ষ ও বন-বাদাড় উজাড় হওয়ায়, ক্রমশ শুধু বনাঞ্চলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে শক্তি, সামর্থ্য ও সৌন্দর্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে প্র মেই নাম করতে হয় ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ এই প্রজাতির মধ্যে আছে চিতা বাঘ, লাম চিতা, মেছোবাঘ, চিতা বিড়াল, বন বিড়াল, বাগডাস, উদবিড়াল। তার পরই আছে রামকুকুর, শিয়াল, খেঁকশিয়াল, নোঙ্গর, বেজী, ভালুক প্রভৃতি। গাছে বাস করে হনুমান, বানর, উলুক, গেরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং, গিবন, কাঠবিড়ালি, ভোঁদড় এবং ইঁদুর। উড়ন্ত স্তন্যপায়ীদের মধ্যে আছে বাদুড়, ছুঁচো, চামচিকা। আর পানিতে বাস করে শিশু বা শুশুক, ডলফিন এবং তিমি। স্তন্যপায়ীদের তিন-চর্তুাংশ বাস করে ডাঙ্গায়। খরগোশ, সজারু, শূকর, গরু, মহিষ, হরিণ, হাতি, গণ্ডার প্রভৃতি তৃণভোজী। শুধু পিপীলিকা খেয়ে বেঁচে আছে বনরুই।
৫০০০ বৎসর পূর্বে যখন বাংলাদেশের লোকসংখ্যা এক লক্ষের উপর ছিল না বলে অনুমান করা হয়, যারা সম্ভবত বাস করত শুধু ল্যাটেরাইট বা লালমাটি অঞ্চলে, সমস্ত দেশের ঝোপঝাড়, জঙ্গলে বাস করত শুধু বন্যপ্রাণীরাই। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল কমতে থাকে এবং কমেছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। মাত্র ৬৮ বৎসর পূর্বেই শচীন্দ্রলাল মিত্র (১৯৪০) তাঁর বাংলার শিকার প্রাণী নামক গ্রন্থে বলেছেন, বাঘ, চিতাবাঘ, সম্বার, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, শূকর, ময়ূর, বনমোরগ, তিতির, বনমোরগ, অজগর, বনগরু, হাতি, গুঁই সাপ, হরিয়াল, হাঁস, বক ও কাদাখোঁচা, ভোদড়, উদবিড়াল, যাজারত, কুমির, সাপ, বানর, মথুয়া, শিয়াল, বনবিড়াল, বাগডাস, বেজী, হন্ডার, রাজহাঁস, হাঁস, খরগোস এবং বিভিনড়ব প্রকার পাখি ঢাকা, মোমেনশাহী, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা প্রভৃতি জেলায় পাওয়া যায়। বর্তমানে এর মধ্যেই কোনো কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেক জেলাতেই এসব প্রাণী আর পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের উভচর বা সরীসৃপঃ
দেশের ১,৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে সরকারি হিসেবে দেশে বনের পরিমাণ ২১,৯৫০ বর্গকিলোমিটার। বাস্তবে এতটা নাও থাকতে পারে। উভচর প্রাণীদের বৃহদংশের এসব বনেই আবাস স্থল।আমাদের দেশে উভচর প্রাণীদের নির্ভরযোগ্য কোনো তালিকা আজো তৈরি হয়নি। মোঃ আলী রেজা খান বলেছেন যে, দেশে উনিশ/বিশ প্রজাতির উভচর প্রাণী আছে। প্রথমেই ব্যাঙ দিয়ে আরম্ভ করা যাক। দেশে দুই গোত্রের ব্যাঙ পাওয়া যায়- একটি কুনো ব্যাঙ এবং অপরটি খসখসে ব্যাঙ যাদেরকে বুফেনিডী (Bufonidae) গোত্রের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় গোত্রটি মাইক্রোহাইলিডী( Microhylidae)। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই গোত্রের পাঁচটি প্রজাতি পাওয়া গেছে। এই পাঁচটি প্রজাতি হলো Microhyla, Uperodon, Kaloula, Microhyla Omata Ges M. Rubra. তারপর আছে বেলুন বা ফোটকা ব্যাঙ Clperodon glofulosum), মারবেল্ড বেলুন ফ্রগ Uperodon systoma), ভেঁপু ব্যাঙ Kaloula pulchra); ব্যাঙের তৃতীয় গোত্রটি হলো মসৃণ ব্যাঙ (Ranidae)। এই গোত্রের ৮/৯টি প্রজাতি আছে বলে জীব-বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই গোত্রের খুব পরিচিত প্রজাতি হলো খোসা ব্যাঙ, কোলা বা ভাউয়া ব্যাঙ। স্কিপিং ব্যাঙ, চীল ব্যাঙ, পানা ব্যাঙ, গাছ ব্যাঙ; চর্তুথ গোত্রটি হলো ব্যাকোফোরিডী (Rhacophoridae)। এই গেছো ব্যাঙ গোত্রের দু’টি প্রজাতি আছে; আমাদের দেশে সরীসৃপের অন্তর্ভুক্ত আছে তিনটি বর্গ, যথা- কিলোনিয়া (Chelonia) বর্গে আছে কাইট্টা, কচ্ছপ ও কাছিম, স্কুয়ামাটা (Squamata) বর্গের প্রজাতিসমূহ দুই পা-যুক্ত এবং পা-বিহীন এবং লেছারটিলিয়াতে (Lacertilia) আছে টিকটিকি, গিরিগিটি, তক্ষক, আঞ্চন ও গুইসাপ। অন্য প্রজাতিটির নাম ক্রোকোডিলিয়া (Crocodylia) । এই গোত্রে আছে কুমির এবং ঘড়িয়াল। সব সরীসৃপ Reptilia শ্রেণীভুক্ত।
কাছিমঃ
বাংলাদেশের জলবায়ু, পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থান কাছিম বেঁচে থাকা ও বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল। বিভিনড়ব সরীসৃপের মধ্যে কাছিমই শুধু গোলাকার। গোলাকৃতি দেহের উপরিভাগে আছে শক্ত প্রাকৃতিক বর্ম (Carapace ) এবং নিচের দিকে আছে চ্যাপ্টা বক্ষস্ত্রাণ (Plastron) উপরের কৃত্তিকাবর্ম এবং বক্ষস্ত্রাণে কাছিম তার সামনের এবং পিছনের শরীরের অংশ গুটিয়ে লুকিয়ে রাখতে পারে। কাছিমের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে বিশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ বৎসর পূর্বে। এরা সেই প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসোরদের আমলের প্রাণী। বর্তমানেও, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২৫টি প্রজাতির কাছিম বাংলাদেশে বেঁচে আছে। কাছিম এ গোত্রের সাধারণ নাম। দেশের অধিবাসীদের কাছে এই গোত্র তিন নামে পরিচিত। তুলনামূলক নরম বর্মের অধিকারী গোত্রকে বলা হয় কাইট্রা, পানিতে বাসকারী শক্ত বর্মের অধিকারীকে বলা হয় কচ্ছপ এবং সমুদ্রে বাসকারী প্রজাতিকে বলা হয় কাছিম। সারা ভারতবর্ষে ৩১/৩২টি প্রজাতির কাছিম আছে, কিন্তু শুধু বাংলাদেশেই আছে এর ২৫টি প্রজাতি। এদের মধ্যে ১২টি হমাইডিডী, ২টি টেস্টুডিনিডী, ৬টি ট্রায়োনিকিডী, ৪টি কিলোনিডী এবং ১টি ডারমোকেলিডী প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এসব প্রজাতি এবং উভচর থেকে স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীদের যে ৮৫০টি প্রজাতির প্রাণী আছে যা বাংলাদেশে পাওয়া যায় তার মধ্যে কেবল দুটি প্রজাতির কাছিম পুরোপুরি বাংলাদেশের বাসিন্দা। ৮০ কারণ, এ দেশের বাইরে এই দুই প্রজাতির কাছিম আর কোথাও পাওয়া যায় না। অন্তত আজ পর্যন্ত যত বই কাছিমের উপর প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। প্রজাতিদ্বয় হচ্ছে বায়েজীদ বোস্তামীর পুকুরের কাছিম (Aspidertes nigricasn) এবং হলদে কাইট্টা (Morenia petersi)। বাংলাদেশে প্রাপ্ত কাইট্টাগুলির বিভিনড়ব প্রজাতি, যেমন ইমাইডিডী (Emydidae), কালি কাইট্টা (Hardella thurji), গণকাইট্টা (Genus Kachuga), মাঝারি কাইট্টা (Kachuga Tentoria), বড় কাইট্টা (Kachuga Dhongoka) ও সিলেটি কড়ি কাইট্টা Kachuga Sythetensis)। বাংলাদেশে প্রাপ্ত কচ্ছপের প্রজাতি: শীলা কচ্ছপ ( Melannochelys tricarinata Ges M. trijuga), ডিবা কচ্ছপ (Curora amboinensis পাহাড়ি কচ্ছপ (Manouria emys) ও হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ (Indotestudo elongata)। বাংলাদেশে প্রাপ্ত কাছিমের প্রজাতিগুলি: ট্রাইওনিকিড়ী (Family Trionychidae) সুন্দী বা চিতি কাছিম (Lissemys punctata) খালুয়া বা গঙ্গা কাছিম (Aspideretes gangeticus), ধুম কাছিম (Aspideretes gangeticus), বোস্তামী কাছিম (Aspideretes nigricans,) ছিম বা চিত্রা কাছিম (Chitra indica) ও জাতা কাছিম (Pelochelys bibroni)। সমুদ্রে প্রাপ্ত কাছিমগুলি: কিলোনিয়া মাইডাস (Chelonia mydas) বা গ্রিন টারটল, কেরেটা কেরেটা (Caretta caretta) বা লগারহেড টারটল, লেপিডোকেলিস অলিভেসিয়া (Lepidochelys olivacea) বা অলিভ রিড্লেটারটল। অপর দুটি প্রজাতি যথা ডারমোকেলিস কোরিয়াসিয়া( Dermochelys coriacea) ও ইরিটমোকোলিস ইমব্রিকাটা (Eretmochelys imbricata)। অন্যান্য কাছিমের মতোই সামুদ্রিক কাছিমের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই প্রাণিকুলকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং বাংলাদেশও এ প্রাণী রক্ষার অংশীদার। সামুদ্রিক কাছিম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে দেওয়া হলো।
সবুজ সামুদ্রিক কাছিম,
গ্রিন টারটল (Chelonia mydas): সবুজ সামুদ্রিক কাছিম এ দেশের সমুদ্রতীরবর্তী সকল এলাকায় পাওয়া যায়। মগ চাকমাসহ অপরাপর উপজাতীয়রা এদের ডিম খেয়ে থাকে। এরা সমুদ্রে মাছ ধরে। পাড়ে মাছ শুকাতে এসে গর্ত খুঁড়ে কাছিমের ডিম বের করে এবং সেসব মহা উৎসবে খায়। বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যত্র এদের মাংসের খুব কদর। সবুজ কাছিম সামুদ্রিক সকল প্রজাতির চেয়ে সর্বাধিক শক্ত কৃত্তিকাবর্মের অধিকারী; বৃহদাকার প্রাণীদের কৃত্তিকাবর্ম সবুজ এবং বক্ষস্ত্রাণ সাদা অথবা হাল্কা হলুদ রঙের। এরা দৈর্ঘ্যে সাধারণত ১০০মিমি এবং ওজনে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি হয়। এদের পাঁজরার শীল্ডের সংখ্যা চার জোড়া।পাঁচটি আছে মেরু শীল্ড; এগারো জোড়া প্রান্তদেশীয়; একজোড়া অধিলেজুড় (subcaudal) এবং একটি প্রশস্ত ঘাড়ের শীল্ড আছে। শীল্ডগুলি নরম এবং পাশাপাশি সাজানো (একটি অন্যটির উপর উঠেনি); মাথা বিশেষ সরু নয়, সামনের দিক গোলাকৃতি; চোয়াল খাঁজাকাঁটা, মাত্র একজোড়া ললাট-পূর্ব আঁইশ। বক্ষস্ত্রাণে একটি বা দুটি মধ্যকণ্ঠা, কখনো খুব সরু মধ্যবক্ষ শীল্ড থাকে। এদের চার জোড়া করে প্রান্তনিমড়বস্থ (inframarginals) শীল্ড আছে। প্রায়শই চর্তু এবং পঞ্চম মেরুশীল্ডের মাঝে একটি অতিরিক্ত মেরুশীল্ড দেখা যায়। প্রথম পাঁজরার শীল্ডের সাথে ঘাড়ের শীল্ডের যোগাযোগ নেই। এরা ডুবন্ত সামুদ্রিক গাছের বন থেকে বিভিনড়ব উদ্ভিদ, জেলিফিশ, ঝিনুক বা সামুদ্রিক শামুক, ইকিনোর্ডাম বা স্পঞ্জ খায়। বাংলাদেশের সমুদসৈকতে এরা শীতকালে ডিম পাড়ে;
লগারহেড (Caetta caretta) লগারহেডের মাথা খুবই বড়। অবশ্য তার জন্য এরা যে অধিক মগজের অধিকারী সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মোটা মাথার পাশে ঘাড়ের খুব পুরু এবং মোটা পেশী যুক্ত হয়েছে। সে জন্য মাথাটা ভারী দেখায়। লগারহেডের খোলা লালচে বাদামি রঙের। এদের খাপড়া সামনে থেকে পিছন দিকে ক্রমশ সরু ও নিচু হয়ে গেছে। পাঁচটি মেরু এবং পাঁচ জোড়া পাঁজারার শীল্ড বিদ্যমান। অধিলেজুর শীল্ড বাদে প্রান্তদেশীয় শীল্ড ১১ বা ১২ জোড়া। এদের খাপড়া খুব পুরু। খোলার উপরকার শীল্ডগুলি পাতলা এবং পাশাপাশি সাজানো। খোলার পিছনের কিনারা খাঁজকাটা। বক্ষস্ত্রাণ হলুদ। এদের তিনজোড়া প্রান্তদেশীয় নিন্মস্থ ছিদ্রবিহীন শীল্ড আছে। অর্ধপ্রাপ্তবয়স্ক লগারহেডের মেরুশীল্ডের উপর একটি স্পষ্ট কাটার সারি আছে। বাংলাদেশে এদেরকে অল্পবিস্তর দেখা যায়। এরা সর্বভুক প্রাণী হলেও সিলেনটারেট, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, চিংড়ি খেতে পছন্দ করে। এরা লম্বায় ৮০০ মিমি এবং ওজনে ৫০ থেকে ১৫০ কেজি হতে পারে। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে হাতিয়ার কচ্ছপিয়া দ্বীপে একটি মৃত নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। জলপাইরঙা কাছিম বা রীড্লের সামুদ্রিক কাছিম।
অলিভ রীড্লে টারটল (Lepidochelys olivacea): রীড্লের সামুদ্রিক কাছিম ৬০০ থেকে ৭৫০ মিমি লম্বা এবং ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের হতে পারে। এই প্রজাতির কাছিম ধূসরে সবুজে মিশানো বা জলপাই সবুজ রঙের। এদের খাপড়া খুব প্রশস্ত। প্রান্তনিমড়বস্থ শীল্ডের উপর ছিদ্র থাকে। রীডলের কাছিমের মাথা অপেক্ষাকৃত হাল্কা। এদের মেরু অঞ্চল বেশ উঁচু। পিছনদিক চ্যাপ্টা; এদের পাঁজরির শীল্ড তৈরি করে। ফলে এই সংখ্যা পাঁচ জোড়া থেকে ৯ জোড়া অবধি যেতে পারে। মাঝে মাঝে মেরুশীল্ডগুলি ভেঙ্গে পাঁচটার জায়গায় ৮/৯টা হয়ে যায়। সাধারণত এদের দেহে ৬ জোড়া করে পাঁজরার শীল্ড থাকে। মধ্যকণ্ঠাস্থি থাকতে পারে, না-ও পারে। বাংলাদেশে বেশ দেখা যায়। এরা আমিষভোজী তবে শেওলাও খেতে পারে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শীতের সময় ডিসেম্বর-ফেব্র“য়ারি মাসে, জোৎসড়বারাতে বালুবেলায় ডিম পাড়ে। ডিমের শ’বিক্রি হতো ২৫ টাকা করে। টেকনাফে যার দাম ছিল ৪০ টাকা। বার্মা এবং বাংলাদেশের মগ সম্প্রদায় এ ডিম খায়। গড়পরতায় প্রতি বাসায় ১২০টি করে (১০০-১৬০) ডিম পাওয়া যায়। ডিম চুরির ফলে গেলো পাঁচ-সাত বছর কোনো বাচ্চা ওখান থেকে সমুদ্রে নামেনি;
বাজ ঠোঁটো কাছিম, হক্সবিল টারটল (Eretmochelys imbricata): হক্সবিল কাছিমের মোটামুটি রঙ সবুজ ও বাদামিতে মিশানো থেকে কালো-বাদামী মিশানো হতে পারে। এদের কৃত্তিকাবর্মে মোট ৪টি করে ৮টি পাঁজরার শীল্ড আছে। কৃত্তিকাবর্মের সব শীল্ড একটি অন্যটির কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত, Imbricate, অন্যদের মতো কাছাকাছি নয়। তবে বাচ্ছা এবং বুড়োদের শীল্ড পাশাপাশি হতে পারে;
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৯