আমি সিজনাল। যৌথভাবে আমি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। তাই এই ছুটিটা কাটালাম আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেন্ট মার্টিন'স দ্বীপে। এই ছুটিতে অনেক ভিড় থাকায় অনেক আগে থেকেই পুরা ট্যুরের সব বন্দোবস্ত করে রাখতে হয়েছিল। পরে জানলাম এত ভিড় আসলে ডাক্তারদের জন্যে। আধুনিক উপায়ে ডাক্তারদের মনোরঞ্জন করার জন্যে 'ঔষধ কোম্পানি' থেকে তাদের 'ট্যুরের' ব্যবস্থা এই ছুটিতেই করা হয়েছিল। তো একসাথে শ'দেড়েক ডাক্তার গেলেতো ভিড় বাড়বেই। রিসোর্ট বুকড, জাহাজের সিট বুকড, এসি বাস বুকড। সব জায়গায় ক্রাইসিস!
সে যাক, সেন্ট মার্টিন'স নিয়ে বলার মত আসলে কিছু নেই। আল্লাহ তা'আলার কুদরতের এক নিদর্শন। বলার মত আছে এখানকার মানুষদের নিয়ে। তাদের মত বন্ধুসুলভ এত ভাল মানুষ আসলেই ঢাকা শহরে বিরল। তারা ধর্মভীরু। মহিলারা পরহেজগার। এবং তাদের (স্থানীয়দের) দেখা সাক্ষাত খুবই বিরল। তারা 'হুমায়ূন আহমেদ'কে' একটু অপচ্ছন্দ করে। মদ্যপান এবং নারীসঙ্গ তার কারন। তারা আসলে নিজেদের এই দ্বীপটাকে খুব ভালবাসে। তারা মনে করে এই দ্বিপটা আল্লাহ তৈরি করেছেন এবং তিনি'ই একদিন এটাকে সাগরে মিলিয়ে দেবেন। ঘটনা সব সত্য। মিথ্যা না।
সেন্ট মার্টিন'স ট্যুরে যা বলার মত আছে তা হল ২৬ শে মার্চ নিয়ে। এবার বাংলাদেশের অনেক মানুষের সাথে আমাদের জাহাজের সবাই ২৬ শে মার্চ বেলা ১১টায় বঙ্গোপসাগরের উপরে, জাহাজের ভেতরে দাঁড়িয়ে একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলাম। সেই অনুভুতি ছিল চমৎকার। দ্বিতীয়তেই যা বলতে হয় তা ও জাহাজ নিয়ে। আমার কোন ধারণা ছিল না যে সমুদ্রেও ডুবোচর থাকে! আমাদের জাহাজ ফেরার পথে 'ভাটা'র' কারনে তিন থেকে চারবার বালিতে আটকে এমন জোরে ঝাঁকুনি খেয়েছিল যে জাহাজের সবাই ছোটাছুটি আর দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করেছিল। তবে আল্লাহ যে সব সময় সাথে আছেন তা তিনি আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। বিপদ কেটে গেল। সেই জায়গায় আমাদের কপাল ভাল যে শুধু বালু'ই ছিল পাথর ছিল না। বিশ্বাস করেন সেই সময়ে আসলে বোঝা যায়, কত ধানে কত চাল। ঠিক তা না, সেই সময়ে আমি বুঝেছি কত মানুষে কত বয়া!! আর কি আশ্চর্য! যে জাহাজ সমুদ্র পাড়ি দেয় সেই জাহাজে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই! তারা পানি মাপে দড়ি ফেলে! আমার মনে হয় এইসব জাহাজের (কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন এবং কুতুবদিয়া) এই রুটে চলাচল বন্ধ করে দেয়া উচিৎ।
সবার শেষে যে বিষয়টা বলার আছে তা হল শ্যামলী'র বাস ড্রাইভারকে নিয়ে। যাওয়ার সময় যে বাসে গিয়েছি আমি শিউর আল্লাহ তাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন। তার কারনে পুরা রাস্তায় আমি আমার আম্মাকে দোয়া পড়তে দেখেছি। আমি নিজেও যতটুকু পারি, পড়েছি। এবং তিনি বোধহয় 'কালা'ও ছিলেন। কারন বহুবারের অনুরোধও তার কর্ণে প্রবেশ করেনি। মানুষ 'খারাপ' চালালে বোঝানো যায়, কিন্তু 'সব উলটাইয়া ফেলবাম', খালি 'ওভারটেকিং' করবাম আর 'রং সাইডে চালাইবাম' এই সব মনোভাব একসাথে নিয়ে যে গাড়ি চালায় তাকে আসলে বোঝানোর কিছু নাই। সে 'এরশাদ' ক্যাটাগড়ির। অবুঝ।
সর্বপরি, ভাল লাগা বিষয়টা আপেক্ষিক। কিন্তুু কিছু ভাল লাগা সার্বজনীন। আপনি যখন শিতল ঠান্ডা হাওয়ায়, এক আকাশ তারার নিচে শুয়ে শুয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনবেন তখন আপনার ভাল লাগবে। তার সাথে কিছু দূরে যদি কেউ গিটারে নিকষ কালো অন্ধকারে গানটি তোলে তাহলে তো কথাই নেই। মনে হবে জিবনটা এই জায়গায় 'পজ' হয়ে যাক না। ভাল লাগা বাড়তে থাকবে। গান ও পরিবর্তন হতে থাকবে। আসলে বাংলাদেশটা সুন্দর। জিবনটাও সুন্দর।