যাকগে, বলছিলাম মস্তিষ্কের যত্ন ও পরিচর্যার কথা। দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐ অঙ্গটি দিনে দিনে আমাদের অলক্ষ্যেই বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে। আসুন দেখি, এর ক্ষয় ও গোলযোগ রোধ এবং সুস্থতা সুরক্ষার জন্যে কি কি করা যায়:
১. মস্তিষ্কের ব্যায়াম: নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও নির্দিষ্ট ধরনের কিছু কাজ (ব্যায়াম) মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু এলাকায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে বলে জানা গেছে। যেমন: খুব তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন তো নিচের ছবিতে লেখা শব্দগুলো কি কি রঙের? খেয়াল করুন, এখানে শব্দটি পড়া কিন্তু মুখ্য নয়!
(আরো ব্যায়ামের আইটেম আগামী পোস্টে দেয়ার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ!)
২. কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য: কফি মানুষকে চাঙ্গা করে ঠিকই, কিন্তু এর আধিক্য মোটেও উপকারী নয়। অস্থিরতা বাড়িয়ে ঘুম কমিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত কফি সেবনে একসময় স্মৃতিশক্তিই লোপ পেতে পারে!
৩. কিছু সময়ের একাকীত্ব: একাকী চুপ করে নিজের ও মানুষের জন্য একাগ্রচিত্তে যৌক্তিক, সুন্দর ও ভাল কিছু কল্যাণ-চিন্তা মস্তিষ্ককে অনেক প্রশান্তি দেয়। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি (ওযু) নিয়ে নিয়মিত অর্থ বুঝে মনোযোগসহ নামাজ আদায় মস্তিষ্ক সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে! অন্যান্যদের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা ও পদ্ধতি।
৪. খাদ্যাভ্যাস: খাবারের ধরনের সাথে মন ও মস্তিষ্কের সরাসরি যোগাযোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। টাটকা ও সতেজ ফল ও শাক-সবজি গ্রহণে মন ও মস্তিষ্ক সুস্থ ও শান্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর লোহিত মাংস (বিশেষ করে শুকর), অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত গরু, খাসি ইত্যাদি, তামাক, মদ ও মাদকদ্রব্য চিন্তাশক্তিতে মন্থরতা নিয়ে আসে। তবে মাছ (ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ) বরং বয়োবৃদ্ধিকে স্তিমিত করে দেয়!
৫. পানি: খুবই উপকারী। সবসময় পান করা উচিত প্রচুর পরিমানে। বিভিন্ন ফলের (হোম-মেড) জুস ও হারবাল চা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী!
৬. হাঁটা: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট একটু দ্রুত হাঁটার অভ্যাস শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এতে রক্তে অতিরিক্ত চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে চিন্তাশক্তি পরিচ্ছন্ন ও তীক্ষ্ণ হয়!
৭. দুশ্চিন্তা: দীর্ঘমেয়াদী দুশ্চিন্তা স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়। বরং মারাত্মক সব স্নায়ুবিক রোগের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতির বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে নিয়ে সেলফ-রিল্যাক্সেশন প্র্যাকটিসের মাধ্যমে সুস্থধারার চিন্তা ও কাজের মাধ্যমে অবস্থার উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। উপযুক্ত প্রচেষ্টার পাশাপাশি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করা দুশ্চিন্তা দূরীকরণে অত্যন্ত ফলদায়ক এবং এতে স্বস্তিদায়ক ওষুধের প্রয়োজন কমে যাওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে!
তাছাড়া মিথ্যা না বললে, দুর্নীতি না করলে, কাউকে দুঃখ না দিলে, কারো অধিকার হরণ না করলে এবং নিজ-দায়িত্ব যথাসাধ্য পালন করে চললে দুশ্চিন্তার পরিমান এমনিতেই কমে যায়।
৮. বিশ্রাম: নিয়মিত প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা পরিপূর্ণ বিশ্রামকে নিশ্চিত করতে হবে। এতে চিন্তা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি কম্পিউটার হার্ডডিস্কের অনেকটা ডিফ্র্যাগমেন্টেশানের মতো - যা প্রতিনিয়ত কম্পিউটিং পারফরমেন্সকে বাড়িয়ে দেয়।
আজ এ পর্যন্তই! সবার জন্য রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!