ভাইয়েরা এখনই এত আনন্দিত হইও না। সাবধানে থেকো। তোমাদের নেতারা তাঁকে 'ভারতের দালাল'সহ এতকিছু বলার পরেও তিনি কুল আছেন, তোমাদের দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন, এটা সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কার্টেসি দায়িত্ব পালন। ভুলে যেও না, হলিউড-বলিউডের ছবিতে দেখা যায় সরিয়ে দেয়ার আগে মনের সুখে সিগারেটে একটা সুখটান দিতে দেয়। এর মানে এই নয় যে সে তাকে মারবে না! সে কিন্তু তার নজরেই আছে এবং যেকোনো সময়ই টিগার চাপতে পারে! খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই, কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা কেউ ইফতারে নাই।
তিনি যা বললেন, তাঁর তর্জমা এমনটাও হতে পারে:
সেনাপ্রধান বললেন 'জুলাই আন্দোলন' এর আহত যোদ্ধা, একটিবারও বলেননি 'অভ্যুত্থান' বা 'বিপ্লব'-এর আহতযোদ্ধা বা 'এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা'। তিনি বলেছেন 'পাশে আছি'। পাশে থাকা মানেই কিন্তু পক্ষে থাকা নয়। ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু তাঁর পাশে থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা গার্ডের গুলিতেই নিহত হয়েছিলেন! ভারতে চলে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনাও কিন্তু এই আহতদের পাশে ছিলেন। তিনি কিন্তু আবু সাঈদের মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেনও। তবে তাঁর চেয়েও সুন্দরভাবে বিষয়টা সামলেছেন সেনাপ্রধান। জেলের মধ্যে কয়েদিকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়। কেন? আইনানুগ বিচার করার আগ পর্যন্ত বাঁচিয়ে তো রাখতে হবে!
তিনি যেভাবে আহতদের জড়িয়ে ধরেছেন, প্রশংসা করেছেন, আবার হাসনাত-সার্জিসরা যেভাবে উলটো মোড় নিয়েছে, আমি এখন অনেকটাই নিশ্চিত, তিনি ভালো রাজনীতিবিদও হতে পারবেন। শীঘ্রই তাঁর নেতৃত্বে সরকার দেখলেও অবাক হবো না। কেননা আহতরা বারবার সুচিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, সরকার ও সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে সেনাপ্রধান আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের কাছে যেতে চাইছেন কিনা সেটাও ভাবার। হয়তো একটা সময় আহতরা বলেও বসতে পারে, "আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়ে ওরাই স্নাইপার ৭.৬২ দিয়ে গুলি করে মেরেছিলো/আহত করেছিলো"!
তিনি বারবার বক্তব্যর শেষে 'ইনশাল্লাহ' বলেছেন। এর অর্থ যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়। এটা বলা অবশ্যই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো, কিন্তু এর একটা সুবিধাও আছে। পরে করতে না পারলে বা দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে বলা যাবে, আল্লাহর ইচ্ছা হয়নি বা আল্লাহ চাননি বিষয়টা ওভাবে হোক, আমিতো চেষ্টা করেছি মাত্র, বাকিটা তো মহান আল্লাহর হাতে!
তিনি বললেন, "আজকের এই ইফতার আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা মনে করিয়ে দেয়া যে আমরা সবসময় তাদের পাশেই থাকব"। এটা একটা হুঁশিয়ারিও হতে পারে, যার সরলার্থ করলে দাঁড়ায়, তোমরা ভেবো না আমরা তোমাদের হুংকারে ভয় পেয়ে চলে যাচ্ছি, আমরা আরও অনেকদিন তোমাদের পাশেই আছি, তোমরা বাইরে থাকলেও আছি, ক্ষমতার পালাবদলে ভেতরে থাকলেও থাকব। তাছাড়া গোয়েন্দাসংস্হা DGFI এর হাতে আড়িপাতার প্রযুক্তিও আছে, তারাও সবসময় পাশেই (মোবাইলে) থাকেন।
কাজেই, তোমরা যারা বলছো সেনাপ্রধান ভয় পেয়েছেন, তারা সতর্ক হয়ে যাও। তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী মানসিকতার একজন যোদ্ধা। তাঁকে এতটা দুর্বল ভেবো না। দেব দুলাল গুহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৫৪