সদ্যজাত শিশুদের জন্য দোকানে যেসব প্রক্রিয়াজাত খাবার পাওয়া যায়, সেগুলোতেই লুকিয়ে রয়েছে ক্যান্সারের জন্য দায়ী ক্ষতিকর রাসায়নিক। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল কারখানায় উৎপাদিত সিরিয়াল, সেরেল্যাক, চিপস ও ক্রিস্পি ধরনের বিভিন্ন খাবার। খবর ডেইলি মেইলের।
বৃটিশ সংস্থা ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সির (এফএসএ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় এই খাদ্যগুলোতে ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে অত্যন্ত উচ্চমাত্রায়। এমনিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও রান্নার সময় কিংবা গরম করা হলেই উপাদানটি একরকম বিক্রিয়া করে যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি বর্তমানে উপাদানটির সক্রিয়তা বৃদ্ধির কারণ ও তা কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। অবশ্য ভোক্তাদের এসব খাবার কিনতে নিষেধ করেনি সংস্থাটি।
খাদ্যদ্রব্যে অ্যাক্রিলামাইডের উপস্থিতি নিয়ে প্রতি বছর নিয়মিত গবেষণা করে এফএসএ। ২০১৩ সালের গবেষণা প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়- সিরিয়াল, ক্রিস্প ও হিমায়িত আলু জাতীয় খাবার প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী রান্না বা ব্যবহার করতে গেলেই অ্যাক্রিলামিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে উচ্চ তাপে রান্না করার সময় মাইলার্ড নামের এক ধরনের বিক্রিয়া হয় যার ফলে খাবারটির রঙ বাদামি হয়ে যায় এবং এটি সুস্বাদু ও কুড়মুড়ে হয়ে যায়। এই বিক্রিয়াই অ্যাক্রিলামাইড বেড়ে যাওয়ার কারণ।
কাগজ তৈরি, পানি পরিশোধন ও কোনো কিছু সিলগালা করার জন্য ব্যবহৃত পলিমার তৈরির জন্য কারখানাতে ব্যবহার করা হয় অ্যাক্রিলামাইড।
এফএসএ’র নির্দেশনা বলা, কুড়মুড়ে ক্রিস্প জাতীয় খাবার ভাজলে তা হালকা সোনালী রঙ ধারণ করলেই ভাজা বন্ধ করে দেয়া উচিত এবং রুটি টোস্ট করার ক্ষেত্রেও তা যতটা সম্ভব কম বাদামি বর্ণের হওয়া উচিত। এতে অ্যারিলামাইডের নিঃসরণ অনেক কম হয়।
চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা ইএফএসএ একই ধরনের একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। ওই নির্দেশনায় হিমায়িত আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ হিমায়িত আলু বা আলুর তরকারি বা ক্রিস্পি স্ন্যাকস রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, ‘পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে যে খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের উপস্থিতি বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ক্যান্সারের কোষ তৈরি করে। তাই এই উপাদান সমৃদ্ধ খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এই রাসায়নিক উপাদানটি খাদ্যে থাকলে তা ‘মানবদেহের জন্য হুমকি’।
মানবদেহে প্রবেশ করার পর অ্যাক্রিলামাইড ভাঙতে শুরু করে এবং গ্লাইসিডামাইড নামের আরেক ধরনের উপাদান গঠন হয়। প্রাণীদেহে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, গ্লাইসিডামাইডের উপস্থিতির কারণে জিন বিভাজন হয় এবং টিউমার বা মাংসল পিণ্ড সৃষ্টি হয়।