আমি ডকিন্সের পুরানো পাঠক৷ ডকিন্সের বই পেলেই পড়ে ফেলার চেষ্টা করি৷ ওর লেটেস্ট বই “The God Delusion” এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি, তবে এই সামারের টার্গেটে আছে৷ প্রায় পড়ে শেষ করেছি ২০০৪ এ পাবলিশ হওয়া The Ancestors Tale, বইটা নিয়ে দুচারটা পোস্ট দেয়ার জন্য হাত নিশপিশ করছিল৷ ডকিন্স এই বইয়ে আমাদের এভ্যুল্যুশনের জার্নি উল্টো দিক থেকে বর্ণনা করেছেন৷ মানে ব্যাপারাটা হচ্ছে এরকম আমি বলতে পারতাম জনৈক ‘ক’ এর তিন ছেলে ছিল খ,গ,ঘ, আবার ‘খ’ এর দুই ছেলে ‘চ’, ‘ছ’ ইত্যাদি, আবার উল্টো করে ‘চ’ এর দিক থেকে বললে তার বাবা ‘খ’, ‘খ’ আবার ‘ছ’ এরও বাবা, একই ভাবে ‘ক’ হচ্ছে ‘চ’ এর দাদা, সেই সাথে গ, ঘ এর ছেলেমেয়েদেরও দাদা৷ সুতরাং ‘খ’ যেমন ‘চ’, ‘ছ’ দুই জনেরই কমন পুর্বপুরুষ, ‘ক’ তেমন চ, ছ তো বটেই, আরো অনেকের পুর্বপুরূষ (যেমন গ, ঘ এর ছেলেমেয়েদের)৷ উল্টো দিক থেকে গেলে মনে হবে আলাদা আলাদা পথ এসব পুর্বপুরুষে এসে মিলেছে (রঁদেভু বিন্দু)৷
ডকিন্সের বইয়ে উনি, মানুষের ব্রাঞ্চ নিয়ে শুরু করেছেন৷ এর পর সময়ের উল্টো দিকে গিয়ে দেখিয়েছেন পেছনে কাদের রাস্তার সাথে আমাদেরটা মিলে যায়৷ ডকিন্সসুলভ চমত্কার বর্ণনা, আর ইনফরমেশন খুব কনসাইজ আকারে আছে৷ এখানে বলে রাখা ভালো মানুষের ব্রাঞ্চের এমন কোন বিশেষত্ব নেই, এমন নয় যে এটা কোন ধরনের মুল শাখা, অথবা এটাই সর্বশেষ শাখা৷ আসলে অন্য সব শাখাও একই সাথে বিবর্তিত হচ্ছে সবসময়, কোনটাই মুল শাখা বা সর্বশেষ শাখা নয়৷ শুধু কিছু শাখা আছে যেগুলো মরে গেছে (বিলুপ্ত হয়ে গেছে), অনেকটা গাছের মতো যেকোন পাতা থেকে শুরূ করে উল্টো দিকে গেলে সবাই ঘুরে ফিরে একই মুলে গিয়ে পৌছবে, তবে এই পৌছানোর রাস্তায় আরও বড় বড় ডাল পালার সাথে দেখা হবে৷ ডকিন্স সেরকমই করেছেন গোটা চল্লিশেক রঁদেভু পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন যেগুলোতে বিবর্তনের পথে আমরা আমাদের গুরুত্ববপুর্ন কাজিনদের সাথে আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম৷
মজার ব্যপার হচ্ছে মায়ের পেটে যখন আমরা বড় হতে থাকি, তখন এই রঁদেভু পয়েন্টগুলো ঘুরেফিরে আমাদের পার হতে হয়৷ কারন আমাদের অনেক বেসিক মেকানিজম আগেরটাই রয়ে গেছে৷ ওইদিন রঁদেভু 3৫ পড়ছিলাম৷ ৩৫ অবশ্য বহু পেছনে, ১ বিলিয়ন বছরেরও আগে, যখন এমিবা-রা ছিল সবচেয়ে জটিল জীব৷ এমিবা এখনও আছে, এবং বেশ সফলই বলতে হয়৷ যেমন এন্টামিবা কোলাই আমাদের পেটেই থাকে, তবে ক্ষতিকর নয়৷ অবশ্য এর কাজিন এন্টামিবা হিস্টলাইটিকা আমাশয় তৈরী করতে পারে৷
এমিবা এককোষী প্রানী, সাধারনত একাই থাকে৷ কোন খাবার পেলে কোষপ্রাচীর দিয়ে খাবারকে ঘিরে ধরে, হজম করে শুষে নেয়৷ আমার কাছে অনেকদিন ধরেই রহস্য ছিল ঠিক কোন পর্যায়ে এমিবার মতো এককোষী প্রানী থেকে বহুকোষী প্রানী জন্মালো, কারন বহু কোষে সুবিধা যেমন আছে, আবার অসুবিধাও আছে৷ এছাড়া কোষগুলোর মধ্যে একরকম কো-অর্ডিনেশন দরকার৷ মার্কিন বায়োলজিস্ট জে টি বোনার (J. T. Bonner) অবশ্য এই নিয়ে সারাজীবন গবেষনা করেছেন৷
ওনার গবেষনার পাত্র ছিল এরকম একধরনের এমিবা, যারা আসলে এককোষী প্রানী, তবে সুযোগ পেলে বহুকোষী সেজে বসে (dictyostelids)৷ সাধারনত অনেকগুলো কোষ মিলে শামুকের মতো একটা আকার নেয়, অনেক ছোট অবশ্য লম্বায় এক মিলিমিটারের মতো৷ শুরুতে তারা আর দশটা এমিবার মতো খাবার পেলে দুইভাগে ভাগ হয়ে বিভক্ত হতে থাকে (এই এমিবাগুলো ব্যাক্টেরিয়া খায়)৷ তারপর এক পর্যায়ে হঠাত্ করেই সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে সবাই মিলে এগ্রিগেট করতে থাকে৷ একধরনের কেমিকাল দিয়ে এই এগ্রিগেশনের সিগনাল দেয়৷ এগ্রিগেশন হতে হতে একজায়গায় এমিবার স্তুপ জমে যায়৷ এক পর্যায়ে স্তুপের এমিবাগুলো লম্বা হয়ে শামুকের মতো আকার নেয়, এমনকি সবাই মিলে কো-অর্ডিনেট করে শামুকের মতো হাটতে থাকে৷ এভাবে কিছুক্ষন হাটার পর এমিবাগোষ্ঠি যে নতুন প্রানীটা বানিয়েছে সেটা মাথা নীচে দিয়ে (মাথা বলতে হাটার সময় যে অংশটা সামনে ছিল, সত্যিকার মাথা বলতে কিছু নেই এখানে), আর পেছনটা উপরে দিয়ে একটা মাশরুম টাইপের স্ট্রাকচার তৈরী করে৷ এটা হচ্ছে ওদের জীবনের ফাইনাল স্টেজ৷ মাশরুমের ছাতার কাছে যে এমিবা গুলো থাকে ওরা স্পোর হয়ে বার্স্ট করে ছড়িয়ে পড়ে৷ স্পোর গুলো থেকে আবার জীবন চক্র শুরু হয়৷
অদ্ভুত যে এই এককোষী প্রানীগুলো, এরকম অবস্থা বিশেষে বহুকোষীর মতো আচরন করতে পারে৷ ভেবে দেখলাম আসলে আমি নিজেও তো এক অর্থে কয়েক বিলিয়ন আলাদা প্রানীর এগ্রিগেশন৷ আমার শরীরের কোষগুলো চাইলে আমাকে ছাড়াও বাচতে পারে৷ সুবিধাজনক পরিবেশ পেলে আসলে পুরো স্ট্রাকচারটার দরকার নেই, যে যার রাস্তা দেখলে বাধা দেয়া কঠিন৷ আপাতত অবশ্য এরকম বিদ্রোহ যাতে না হয় সে চেষ্টা করতে হবে৷

আলোচিত ব্লগ
কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!
কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!
কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসর্জনের ছাই
একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।
পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা
বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন
=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=
এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।
এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?
আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন