স্কুল কলেজের সেই আরিফ আর আজকের এই আরিফের মাঝে বিস্তর ফারাক। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করলে বেশ অবাক হয়ে যাই। এত দ্রুত চেঞ্জ হলাম কিভাবে। ভার্সিটির অনেকের থেকে আলাদা মনে হয় নিজেকে। হয়ত বাস্তবতাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। নিজেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ অনেক বেশি পরিপক্ক মনে হয়। মাথার ভিতর হাজার টেনশন বাট কোন কিছুকেই কিচ্ছু মনে হয় না।
ভার্সিটি লাইফের ২টা বছর প্রায় শেষ। খুব ভাল যায় নি পড়াশোনাটা। যে বিষয় নিয়ে পড়ছি তাতে আগ্রহ কম। যাই হোক সেটা আগে বুঝি নি। আর এত কাজে ব্যস্ত আমি পড়ার সময়টা কই? এই কম পড়াশোনার মাঝেও যখন একটু সিরিয়াসলি পড়াশোনা করে ভাল করতে চাই তখন ভাগ্য আমার সাথে খেলা করে। রোল ১ হয়েছি যেন পাপ করেছি এভারেজ থেকে ২ ১ নাম্বার কম হলেও যেন আমাকে পেতেই হবে? যাই হোক এসব নিয়ে টেনশন করছি না। কোনভাবে বিএসসি টা কমপ্লিট করতে চাই, সাব্জেক্ট নিয়েও তেমন মাথা ব্যথা নেই। ৩.৩ এর উপরে সিজিপিএ রেখে বিএসসি কমপ্লিট করতে পারলেই হাজার শোকরিয়া।
বিএসসির পর টার্গেট এমবিএ করা। সেটা বাইরে থেকে করার খুব ইচ্ছা। হয়ত অন্য অনেক অপূর্ণ ইচ্ছার মত এটাও পূরন হবে না। সেক্ষেত্রে আর কি দেশেই কোথাও এমবিএ শেষ করব। আর যদি দেশের বাইরে যেতেই পারি তাহলে পড়াশোনাটাকে এমবিএ এর পরে আরো একটু দীরঘায়িত করব। আর তা না হলে দেশের ভিতরেই যদি ভাল জব পাই ঢুকে পড়ব। অন্যথায় সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন বিজনেসের ট্রাই করব।
আগামী ৩ ৪ টা বছর আমার ফ্যামিলির জন্য এবং আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন ফ্যামিলির দিকে তাকাই তখন আর কোন কিছু ভাল লাগে না। বড় ছেলে হিসেবে অনেক দায়িত্ব এসে পরে আমার ঘাড়ে। এখন অবশ্য কোন কিছুই গায়ে লাগে না। একটা রোবট হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে, যে রোবটের অনুভুতি ক্ষমতা প্রচন্ড। আব্বু অবসর নিবে সরকারি চাকুরি থেকে ৫ বছর পর। আমাকেই কিছু করতে হবে এ চিন্তা সবসময় আমার মাথায় থাকে। ছোট ২টা ভাই বোন তো আমার পথের দিকেই চেয়ে আছে। আমি ভাল কিছু করতে পারলে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। আব্বু অসুস্থ মানুষ। ডায়াবেটিস, কিডনি সহ আরো কিছু কিছু রোগে আক্রান্ত তিনি। তার চিকিৎসা খরচ বাবদই মাসিক আয়ের বড় একটা অংশ চলে যায়। সব মিলিয়ে শুধু আমি না আমার আব্বু আম্মুও অনেক টেনশনে থাকে। আমাকে নিয়ে তাদের অনেক ভরসা।
এত কিছুর পরেও সামনে সুদিন দেখছি আমি। ৩ ৪ বছরের ভিতরে ডেভালপারকে ল্যান্ড দিলে হয়ত অংশীদারী বাড়ির মালিক হওয়া যাবে। বাড়ি ভাড়া থেকে একটা নির্দিষ্ট আয় আসলে হয়ত শান্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাবে। ৫ বছর পর আব্বু রিটায়ার্ড করলে কিছু ক্যাশ টাকাও হাতে আসবে। আর ডেভালপারের সাইনিং মানিও থাকবে। তখন হয়ত একটু কম টেনশন নিয়ে আমি আমার স্বকীয় পথে ছুটতে পারব। অনেক ছোট থেকেই স্ট্রাগল করতে শিখেছি। বলতে গেলে স্ট্রাগল জিনিসটাকে আমি এখন খুব এনজয় করি। সারা জীবন স্ট্রাগল করতেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কারও কারও জন্মই তো হয় স্ট্রাগল করার জন্য। তারপরও আমি নিজেকে অনেক সুখী মনে করি, কারন নিজেকে দুঃখী ভেবে কষ্ট পাবার কি দরকার?