আজ নারী দিবস
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসে আমাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে। নারী দিবসে আমরা বিগত বছরগুলোতে নারীর প্রতি রাস্ট্র ও সমাজ কিরূপ আচরন করেছে তার হিসেব নিকেশ কষি। প্রতি বছর নারী দিবসে আমরা নতুন করে শপথ নিই নারীকে কিভাবে সমজে সমতা দিয়ে সমজাকেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। কিভাবে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি স্থান দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।
এখনো বৈষম্য
অতি দুঃখের বিষয় হলো যে বিগত ১০০ বছর ধরে ৮ই মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালন করলেও আজ ১০০ বছর পরে নারী যে জায়গায় থাকার কথা আজো পৃথিবীতে আমরা নারীদেরকে সেসব জায়গায় দেখিনা। এখনো নারীর প্রতি ডিসক্রিমিনেশন করা হচ্ছে। সেই বৈষম্যের প্রভাবে নারীর উন্নয়নের বদলে দিনকে দিন প্রান্তিকে ঠেলে দিচ্ছি। আর যেসব নারীর অবস্থান ইতোমধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে আছে তাদের আর্থ-সমাজিক অবস্থানের কি রূপ উন্নতি হয়েছে তা বলা বাহুল্য।
নারীর অধিকার
বাংলাদেশ রাস্ত্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত আমাদের দুই নেত্রীর জন্য। দুই নেত্রীই গৃহবধু থেকে নিজ গুন, নেতৃত্ব, ধৈর্য ও শক্তিমত্তা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছেন। সে হিসেবে আমাদের দেশের নারীদের যে পরিমান উন্নতি সাধন হওয়ার কথা ছিলো তার সিকিভাগও হয়নি। পরিসংখ্যান ও গবেষনাপত্রগুলো তাই বলে। দেশের কর্মক্ষম নারীর যে অংশটুকু কাজ করছেন তার মধ্যে শতকরা ৯০ভাগই আছেন গার্মেন্টস সেক্টরে। অথচ গার্মেন্টস সেক্টরে তাদেরর ন্যায্য বেতন ভাতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কোনভাবেই স্তান্ডার্ড নয়। এইসব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের দেশের অনেক কর্মজিবী নারীকে জিবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে মালিক পক্ষ ও সরকারী বাহিনীর রোষানলে পরে।
আমাদের ব্যার্থতা
আজ নারী দিবসে যে কথা বলার জন্য কীবোর্ড নিয়ে বসেছি। নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে নতুন কোন বিষয় নয়। নারীকে আমরা এখনো নিরাপদ দেশ উপহার দিতে পারিনি। এটা যেমন রাস্ট্রের ব্যর্থতা তেমনি পুরুষেরও ব্যর্থতা কারন সমাজটা এখনো পুরুষ কতৃক নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু তাই বলে দিনের পর দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে তা মেনে নিতে কষ্ট হয়। আজ রাস্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে একজন নারী থাকার পরও দেশব্যাপী নারীদের উপর সরকারী বাহিনীর নির্যাতনের কথা শুনে নিশ্চয় আমাদের সমাজ ও সভ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে হয়।
নারীর প্রতি রাস্ট্রীয় সহিংসতা
বিগত বছরটি ছিলো রাজনৈতিক হানাহানির বছর বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে বিরোধীদলীয় কর্মী নির্যাতনের কারাগার হিসেবে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো সাতক্ষীরা, নীলফামারী, সীতাকুন্ড সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশ পুলিশ ও যৌথবাহীনি নামক গেস্টাপো বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের খুন, গুম ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে না পেয়ে সেইসব বাড়ীর নারীদের উপর যে লোমহর্ষক নির্যাতন করতে দ্বিধাবোধ করেনি। সাতক্ষীরাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুরুষ সদস্য না পেয়ে নারীদের উপর যেভাবে তারা চড়াও হয়েছে এমন কি ধর্ষন সহ ভয়ানক নারী নির্যাতনের যেসব বর্ননা আমরা ফেসবুক, ইউটিউব সহ নানা সামজিক মাধ্যমে দেখতে পাই তা জাতি হিসেবে আমাদেরকে মধ্যযুগীয় বর্বর হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। ২০১৩ সালে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ যেভাবে নির্বিচার গুলি করে ৮০ বছরের বৃদ্ধা থকে বাচ্চা শিশু পর্যন্ত হত্যা করে রাস্ট্র ও রাজনীতিকে কলংকিত করেছে তারপরে সরকার প্রধান নারী হয়েও তার নারীত্ব, মর্যাদা ও মানুষ হিসেবে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নারীর সম্মান, নারীর অধিকার নিয়ে আজ যখন আমরা পুরুষরাও সারা বিশ্বব্যাপী সোচ্চার তখন বাংলাদেশের মতো নারী সরকার প্রধান রাস্ট্রে যখন তারই নির্দেশে দেশজুড়ে নারী নির্যাতন করে রাস্ট্রীয় বাহীনি তখন নারী দিবস পালন করতে লজ্জা হয়। প্রগতির কথা বলতে লজ্জা হয়।
সরকারের সহিংসতার শিকার বিপ্লবী নারীদের সশ্রদ্ধ সালাম
২০১৪ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “Equality for women is progress for all” প্রতি বছর আমরা এমন প্রতিপাদ্যগুলো দেখি বাস্তবে বাংলাদেশের মতো রাস্ট্রে কতটুকু বাস্তবায়ন হয় তা খতিয়ে দেখার বিষয়। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা যখন নারীর প্রতি এখনো সহিংস তখন আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশ্বের সকল নারীর জয় হোক। বাংলাদেশের যেসব নারী শেখ হাসিনার বর্বরতার শিকার হয়ে জিবন দিয়েছেন, পংগুত্ব বরন করেছেন, পুলিশের নির্বিচার গুলিতে আহত হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেইসব নারীর প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। বিপ্লবে, সংগ্রামে আমাদের নারীরাই আমাদের প্রেরনা।