১.
২৭ মে, ২১১৩, সকাল বেলা।
ওসি মোকসেদুল মোমিন ঘামছে। তার ইচ্ছা হচ্ছে এখনি গোয়াইনঘাটের সারি নদিতে ঝাঁপ দিয়ে একটা গোসল দিতে। কিন্তু তা এ মুহুর্তে সম্ভব না। পুলিশের পবিত্র পোষাক গায়ে নদিতে ঝাঁপ দেওয়াটা আইনের খেলাপ। আইনের লোক হয়ে বেআইনি কাজ করা তার উচিত না। সে হাঁক দিলো, মোমিন।
কনস্টেবল মোমিন এসে হাজির।
-জি স্যার।
-এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দে ফ্রিজ থেকে। ঠান্ডা পানির সাথে বরফ কুচি দিবি কয়েকটা।
-জি স্যার।
কনস্টেবল মোমিন বরফ কুচি সহ পানি নিয়ে এলো দুমিনিটের মধ্যেই। ওসি মোমিন গ্লাস হাতে নিয়ে জিজ্ঞাস করলেন।
-মোমিন তোর নাম কে রেখেছে।
-স্যার আমার আব্বায় রাখছে।
-তোর আব্বায় রাখছে। তোর আব্বা তো একটা গর্দভ।
- জি স্যার সে একটা গর্দভ।
-তুই কিভাবে বুঝলি সে একটা গর্দভ??
- তার জানা উচিত ছিলো আমার স্যারের নামটা মোমিন।
- তোর বাপ গর্দভ হলেও, তুই কিন্তু গর্দভ না।
- জি স্যার হে গর্দভ। আমি গর্দভ না। তবে স্যার আপনের আব্বায় আপনের নামটা বারাক ওবামা রাখতে পারতো।
ওসি মমিন চিন্তায় পরে গেলো। তার নামটা মোকসুদুল মোমিন না রেখে বারাক ওবামা রাখলে কি হতো? এই নামটা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। ঢাকায় পোস্টিংটাও হচ্ছে না নামের কারনে। নৃপেন, বিপ্লব, অজয়, সন্জয় একসাথে কাজ করলাম অথচ ওদের পোস্টিং হয়ে গেলো ঢাকায় আমার হয়না। আমি কি কম সার্ভিস দিচ্ছি। আমার মতো লয়াল ও ডেডিকেটেড পুলিশ অফিসার কয়টা পাবে আওয়ামীলীগ। আগামী সপ্তাহে মিসবাইদ্দিন সিরাজের সাথে দেখা করতে হবে। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সাথে দেখা করার আগে ২ ডজন জামায়াত আর ১ ডজন বিএনপি ধরে বাকশালী ডলা দিতে হবে।
ওসি মোমিন গাড়ীতে উঠলো, ড্রাইভারকে বললো, বাসায় যা, শরীলটা ভালো লাগছে না। ড্রাইভার বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। যাওয়ার পথে মোমিন ফোন করলো সৌমেনকে। সৌমেন জানালো মাল রেডি।
-এইটা এই এলাকার হট মাল স্যার। সিটি মেয়র পর্যন্ত এই মালটার কদর আছে স্যার। কড়া মাল।
- কথা কম ক বেডা। মাল কড়া না হালকা এইডা এমনিই বুঝুম। এই লাইনে ৩০ বছরের উপরে আমি।
- কখন নিয়া আসুম স্যার।
-এখনি নিয়া আয়। ডিউটি করতে ভাল্লাগেনা। একটু এনজয় করতে চাই।
-জি স্যার।
-সৌমেন তোর নাম কে রাখছে?
-কইতাম পারিনা স্যার।
-তোর নাম যে রাখছে সে একটা গর্দভ।
-ক্যানো স্যার?
-তোর কাম কাজ খুবই অশ্লিল আর নামটা খুবই শ্লিল, মিলে নাই এজন্য। তোর নাম যে রাখছে তারে খুইজা বাইর করবি, তারপর বলবি তোর স্যার বলছে সে একটা গর্দভ।
- জি স্যার।
২.
২৭ মে, ২১১৩, দুপুর বেলা।
- এই তোর নাম কি?
- তুই তোকারি করইন কেনে?? আমার লগে ভদ্রভাবে মাতইন।
- ভদ্রভাবে কথা বলবো মানে। মাগী আমারে চিনস। আমি এই থানার ওসি।
- ওসি হইছেন তো কিতা অইছে। আমি যুব মহিলা লীগ নেত্রী। বিধান'দা আমার বগল তলায় থাকে।
ওসি মোমিন এবার একটু ভড়কিয়ে গেলো। বিধান'দাকে খুব ভালো করেই চিনে মোকসেদ মোমিন। সেন বাবুর সাথে কদিন আগেও গোয়াইনঘাট আসছিলো। চেয়্যার এগিয়ে না দেয়ায় বিধান দা যে কি পরিমান জঘন্য ভাষায় বকাবাদ্য করছিলো তা মোকসেদুল মোমিন জিবনেও শুনেনি। এমনকি জিবনেও কাউকে এমন গালি দেয়নি। মোকসেদের সামনে দুঃস্বপ্নের মতো বিধান'দার চেহারা ভাসছে। আচ্ছা মন্ত্রীর সামনে মানুষ মানুষকে এমন গালগালি করতে পারে? আর পাশে বসে সেন বাবু মুখটা বাঁকা করে হাসছিলো। সেটা দেখতে যে কি জঘন্য লাগছিলো। তবুও সব সহ্য করেছি, শুধু ঢাকায় পোস্টিংটার জন্য। একবার যদি ঢাকায় পোস্টিংটা হয় তাহলে। মাগীতো দিনে ৮ টা করে লাগাবোই। আর বছরে ৮ করে ফ্লাট কিনবো।
মোকসেদ এবার একটু সহজ হওয়ার ভংগি করে বললো। তা আপনি আগে বলবেন না। আমিওতো দাদার খাস লোক। দাদার সব কাজ তো আমিই করে দেই। সালুটিকর এলাকার ফেন্সিডিলের আড়ত তো আমারই দেখাশুনা করা লাগে। বলতে বলতে। খেক করে একটা আওয়াজ করলো ওসি মোকসেদ। ভাবছে, শালার আনন্দের মুহুর্ত মাগীটা দিলো বিনাশ করে। শালী একটা কুফা।
ফ্রিজ থেকে এক বোতল কোক বের করলো। আর সৌমেনের দেয়া জ্যাক ডানিয়েলের বোতলটা হাতে নিয়ে ভাবছে এ সময় মদ খুব ভালো জমে। তবে দিনের বেলায় মদ খাওয়া পুলিশ হিসেবে উচিত না। কিন্তু এনজয় করতে হলে মদ খেতে হয়। ওসি মমিন, কোক এর সাথে হুইস্কি মিক্স করে এক গ্লাস মাগীটাকেও দিলো। মেয়েটা চিয়ার্স বলে এক ঢোক নিলো। ওসি মোমিন আবারো খেক করে উঠলো।
আস্তে আস্তে মেয়েটার সাথে ঘনিষ্ট হতে চেস্টা করলো। মেয়েটাও কোন রাখ ঢাক ছাড়া কাপর-চোপর খুলে ফেললো। এবার সে ওসি মমিমনের কাপর খুলতে লাগলো। প্রায় নগ্ন হয়ে তারা মদ খাচ্ছে।
ওসি মোমিন মেয়েটাকে চুমু খেতে চেস্টা করলো। কিন্তু সে যতবারই তার ঠোঁট মেয়েটার ঠোঁটে লাগাচ্ছে ততবারই সে ঘন গোঁফের খোচা খাচ্ছে। সে বুঝতে পারলো না ক্যানো এমন হচ্ছে। সে আবারো চেস্টা করলো এবং ভাবলো মেয়েটাকে কোলে করে এবার চুমু খাবে। কিন্তু এবার সে দেখলো সে বিধান দা কে চুমু খাচ্ছে। আর পাশে কালো বেড়ালটা মুখ বাঁকা করে হাসছে।
বিতৃষ্ণায় সে মুখটা সরিয়ে নিলো। এবার সব কিছু ঠিকাছে। মনে মনে সে ভাবছে ওফ এক বিধান দা, কি পেইনটাই না দিচ্ছে। মদের ঘোরে ওসি মোমিন এবার মেয়েটার বগল পরীক্ষা করতে লাগলো। কারন মেয়েটা বলেছে বিধান দা নাকি তার বগলের তলায় থাকে।
হঠাৎ..।
টক টক করে দরজায় আওয়াজ হলো...
কোন শালা এখন এসে ডিস্টার্ব করে..
খানকির পুত সৌমেন আর সময় পায়না.. এই খানকির পুত দাঁড়া আইতাছি
৩.
সময়: ২৬ জুন, ২১১৩, সন্ধ্যা বেলা।
ওসি মোকসেদুল মমিন বসে আছে। এক ঘন্টা ধরে বসে আছে। বসে আছে ওবায়দুল কাদেরের বাসার গেটে। বিধান দা বলেছেন এই একমাত্র লোক যে তাকে হেল্প করতে পারে এই বিপদের দিনে। মোমিন পকেটে হাত দিয়ে দেখলো চিরকুট টা আছে কিনা। বিধানদাই এই চিরকুটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাকে।
বের করে আবার পড়লো। সব ঠিকই আছে। হাতের লেখা খুব একটা ভালো না। মোমিনের মনে হলো ক্লাস টু'র বাচ্চাও এর চেয়ে ভালো লিখে। সেন বাবু মনে হয় বাংলা থেকে হিন্দিতে ভালো লিখতে পারেন। মোমিন ভাবছে, তা হিন্দিতে লিখে দিলেই কি হতো। জননেত্রী বেঁচে থাকলে আজ হোক কাল হোক হিন্দিতো আমাদের মাতৃভাষা হয়েও যেতে পারে। এ বিপদের দিনে বাবুর এ ঋন যে কিভাবে শোধ করবো।
মনে মনে পড়তে লাগলো মোমিন।
'' প্রিয় ওবায়দুল কাদের,
একজন অসহায় ও সৎ সাহায্য প্রত্যাশীকে তোমার কাছে পাঠালুম। আশা করি তুমি তাকে নিরাশ করবেনা।''
-বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত
ঘ্যাচ করে একটা র্যাঞ্জ রোভার থামলো। ওসি মোমিনের অন্তরটাও দুলে উঠলো সাথে সাথে। আশায় বুক বেধে আছে সে। আজ এখনই তার সব সমস্যার সমাধান হবে।
আরো আধা ঘন্টা পরে তার ডাক পড়লো। ওসি মোমিনের ভয় হচ্ছে। সে মনে মনে দোআ দুরুদ পড়ার চেস্টা করলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সে কোন দোআ মনে করতে পারছেনা। পুলিশে চাকরিতে কোনদিন দোআ পড়ার প্রয়োজন পরেনি। কারন দোআ-কালাম তো পড়বে অসহায় হয়ে ইশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য। পুলিশে থাকা কালে তো সে নিজেই একটা থানার ইশ্বর ছিলো তাই তার দোআ কালামের কোন প্রয়োজন ছিলোনা।
ওসি মোমিন কোনার একটা চেয়ারে বসে আছে। ওবায়দুল কাদের পিএসকে ইশারা করলেন। পিএস বাইরে চলে গেলো। মোমিন চিরকুট টা ওবায়দুল কাদেরকে দিলো। মনে মনে সে ভাবছে এবার তার সমস্যার সমাধান হবেই। এখন সে ভাবছে এই লোকটিই তার সব সমস্যার করে দিতে পারে। ইনিই তার ইশ্বর এখন।
- হুমমম। ভালো। তা আমার নেত্রীর জন্য কি করেছিস??
- স্যার ডলা দিয়েছি।
- ডলা দিয়েছিস মানে??
- না স্যার, সরি স্যার। জামাত-বিএনপিরে ডলা দিয়েছি।
- হুম... অতি উত্তম করেছিস। সেন বাবুর সাথে সম্পর্ক কেমন।
- জি স্যার আমি তারই লোক।
-আচ্ছা। মেয়েটা ক্যামন??
- জি স্যার সেন বাবুর তো কোন মেয়ে নেই।
- সেন বাবুর মেয়ে নয়। সেই মেয়ে। যাকে নিয়ে মৌজ করা অবস্থায় তোর স্ত্রী তোরে হাতেনাতে ধরেছে।
- ভালো স্যার। খুব ভালো মেয়ে। অতি উত্তম, সে যুব তেজি মহিলা লীগের নেত্রী। খুব জাঁদরেল নেত্রী স্যার।
- ওরে কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। জাঁদরেল নেত্রীদের গ্রাম গঞ্জে থাকা ঠিক না। তাছাড়া জননেত্রীও পছন্দ করেন না। সামনে বিএনপি আন্দোলনে যাবে। সে আন্দোলন হবে ভয়াবহ আন্দোলন। লড়াই করতে হবে সমানে সমান। আর জানিসতো ঢাকা থাকবে যাদের দখলে তারাই জিতবে আন্দোলন সংগ্রামে। তাছাড়া ছাত্র জিবন থেকেই আমি জাঁদরেল নেত্রীদের লাইক করি।
- জি স্যার আমি নিজে ঢাকায় নিয়ে আসে আপনার কাছে পৌঁছে দিবো।
- না আমার কাছে পৌঁছে দিতে হবে না। ও এখন থেকে তোর সাথেই ঢাকায় থাকবে। তোর পোস্টিং এখন থেকে ঢাকায়। সামনে আন্দোলন সংগ্রাম। তোর ঢাকায় থাকা দরকার আছে। আর আমি মাঝে মাঝে তোর বাসায় যাবো ২/৪ ঘন্টার জন্য।
- স্যার সে আমার পরম সৌভাগ্য। আসলেই আপনি ইশ্বর স্যার।
ওবায়দুল কাদের চুপ করতে ইশারা করেন। আর তার মাথার উপর একটা ছবি দেখিয়ে বললেন আমাদের ইশ্বর হচ্ছেন ইনি।
মোকসেদ ভক্তিতে তাকিয়ে থাকলো তার নতুন ইশ্বরের দিকে। এবার ওবায়দুল সাহেব মোমিন কে জিজ্ঞেস করলেন,
- তোর নাম কি?
- জি স্যার আমার নাম মকসেদুল মমিন।
ওবায়দুল সাহেব খেক করে উঠলেন। তোর নাম কে রাখছে??
-স্যার আমার আব্বায় রাখছে।
-তোর আব্বায় রাখছে। তোর আব্বা তো একটা গর্দভ।
- জি স্যার সে একটা গর্দভ।
- তুই কিভাবে বুঝলি সে একটা গর্দভ??
- তার জানা উচিত ছিলো আমি ডিজিটাল সরকারের আমলে চাকরি করবো।
- তোর বাপ গর্দভ হলেও, তুই কিন্তু গর্দভ না। সময়মত ঠিক জায়গায় এসে গেছিস।
- জি স্যার সে গর্দভ। আমি গর্দভ না।
৪.
১০ জুলাই ২১১৩, সকাল বেলা।
ওসি মোমিন গাড়িতে কারে সারি নদি পার হচ্ছে। সে মহা আনন্দের সাথে ঢাকা জয়েন করতে যাচ্ছে। ড্রাইভারকে বললো গাড়ী থামাতে। গাড়ি থেকে নেমে মোকসেদ মোমিন নদিতে ঝাঁপ দিলো। তিন বার ডুব দিলো। তারপর গাড়ীতে এসে বসলো। ড্রাইভার বললো
- স্যার আইনের পবিত্র পোষাক পরে নদীতে ঝাঁপ দেওন ঠিকনা, এটা আইনের খেলাপ।
মোকসেদুল মমিন গাড়ীতে ঝুলানো একটা ছবি দেখিয়ে বললো। এই ইশ্বরের আশির্বাদ থাকলে নদীতে ক্যানো আগুনে ঝাঁপ দিলেও আইনের খেলাপ হয়না।
( অ.ট. এই গল্পের চরিত্র ও ঘটনার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।)
পূর্বের পোস্ট
বিহাইন্ড দ্যা স্টরি: দেয়াল, স্টারিং: হুমায়ুন ও আওয়ামীলীগ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ রাত ১০:২২