ইদানীং বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থা করুন থেকে আরও করুন হচ্ছে।
যেখানে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে যায় চিকিৎসার চর্চা করে মানবসেবায় নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতে, সেখানে তাদের বাধ্য করা হয় নানারকম "রাজনৈতিক" নামে অনৈতিক কাজে যুক্ত হতে।
একসময় এই মেডিকেলে গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা ছিল। যার সুত্রপাত ঘটিয়েছিল কে-১০ ব্যাচের শাওন কিংবা কে-১১ ব্যাচের তুষারসহ আরও অনেকে। এর ধারাবাহিকতা বজায় ছিল কে-১৫ ব্যাচের নাঈম, আরাফাত, কাফি এবং কে-১৬ ব্যাচের রনি, ফরহাদ এদের সময়ে। কে-১৭ ব্যাচের হিমাদ্রী, মাহবুব, প্রত্যয় এদের সময়ে রাজনীতির কিছু সুফল আমরা সবাই দেখেছি। এরা সবাই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত সেটা বড় কথা নয়, বরং তাদের মেডিকেলের প্রতি যে অবদান আর ত্যাগ-তিতিক্ষা এটি সবার জন্যই অনুসরণীয়।
কিন্তু তাদের কর্মের চরম অবমাননা ঘটে যখন তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর ঘটে কিছু অযোগ্য, রাজনীতির জ্ঞানে গণ্ডমূর্খ কিছু লোকের কাছে। কে-১৮ ব্যাচের রকিবুল, কে-১৯ ব্যাচের ফিরোজ, আসিফ , কে-২০ ব্যাচের সাইফ, আপেল প্রমুখ দায়িত্ব পেয়ে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তাদের অন্যায় আবদার না মানলেই "শিবির / রাজাকার" ট্যাগ দিয়ে মারামারি করা তো নিত্যদিনের ঘটনা। আমার সহকর্মী মেডিকেলের শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন, হুটহাট অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে তার সাথে বেয়াদবি এগুলোর কথা আমরা সবাই জানলেও কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।
সম্প্রতি পরীক্ষায় বসতে না দেয়ার কারণে রকিবুলের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালায় তার গুন্ডাবাহিনী।
সেদিন খুমেক বহির্বিভাগে আমি রোগী দেখা অবস্থায় ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় রোগীরা ডাক্তারের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে চলে যান, যা ডাক্তার সমাজের জন্য মোটেও সুখকর নয়।
ইনিই সেই "গুন্ডাবাহিনী"র সর্দার রকিবুল।
এখন কথা হচ্ছে ছাত্রাবস্থায় আমরাও সেই সংগঠন করে এসেছি যার নেতৃত্বে এখন এই মূর্খগুলো রয়েছে। কিন্তু আমরা করেছি ক্যাম্পাসের জন্য, শিক্ষার্থীদের জন্য, দেশের জন্য।
কিন্তু, আজ যে দুর্নাম হচ্ছে - তা হচ্ছে এসব ছাত্র নামধারী গুন্ডা বদমাশদের জন্য। আমাদের রাজনীতির অবস্থা এখন এতই খারাপ যে নিজেদেরকে সেই সংগঠনের একসময়ের অংশ বলতেও লজ্জা করে। আমার কাছে প্রায়ই অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসে , কেউ বা শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে, কেউ বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায়। যারা প্রকৃত অপরাধী বা জঙ্গীবাদী তারা কিন্তু কখনই এভাবে আসবে না। এরা সকলে ছিল নিতান্তই সাধারণ ঘরের কোমলমতি শিক্ষার্থী, গুন্ডামি করে যাদের মন আর আত্মবিশ্বাস ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। য়ামি একসময় দেখেও না দেখার ভান করে থাকতাম। এখন মনে হচ্ছে সকলের জানা দরকার - খুলনা মেডিকেল কলেজ এমন একটি জায়গা, যেখানে আগের মত আর গুণের কদর করা হয় না। এখানে আপনি যত ফন্দিবাজ আপনি তত আরামে থাকবেন। যত সাধারণ থাকতে চাইবেন, যত সত্যি কথা বলবেন ততই আপনি হয়ে যাবেন নিজ ভূমে পরবাসী।
পরিশেষে আমি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যেতে চাই। তিনি একজন যোগ্য লোক হিসেবে তার কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন স্বাস্থ্যখাতে। তিনি হয়তোবা দেখবেন না ... কিন্তু সবার জানা প্রয়োজন -
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ছাত্ররাজনীতি আপনি আমি দুজনেই করেছি। কিন্তু এভাবে এই সংগঠনটার অবক্ষয়ের দায় আপনি কি এড়াতে পারেন ?
পারেন না।
কিন্তু আপনি চাইলেই সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সুস্থ্য রাজনীতির চর্চার পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা শুধু আপনিই পারবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আজকের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা আগামীর ডাক্তার, দেশের ভবিষ্যৎ।
আপনি প্লিজ এদের এভাবে বখে যেতে দেবেন না।
ডাক্তার হওয়ার মানসিকতা নিয়ে যারা এখানে আসে তাদের এভাবে মন ভেঙে যেতে দেবেন না।
প্লিজ কথা দিন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ... কথা দিন।
[ লেখাটি আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের অনুমতিক্রমে নেয়া , প্রথমেই উল্লেখ করা হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করছি ]