Thompson SMG
=============
১৯১৮ সালে জন থমসন যখন এটার ডেভেলাপমেন্টের শেষ করেন , তখন বোধ হয় ভাবেন নি তিনি কতটা গুরুত্ত্বপুর্ণ একটা ডিজাইন শেষ করেছেন । পুলিশ থেকে আর্মি , কন্ট্রাক্ট কিলার থেকে গ্যাং লর্ড সবার হাতেই যে এর ব্যবহার শুরু হবে সেটা বোধ হয় তার ধারনাতেও ছিলো না । এর কত আদরের নাম আছে ... ট্রেঞ্চ সুইপার , দ্যা চপার , শিকাগো অর্গান গ্রিন্ডার , ট্রেঞ্চ ব্রুম ... আরো কত কি ! কিন্তু সেরা নামটা মূলত এসেছে যাদেরকে মারার জন্য এ অস্ত্র ডিজাইন হয়েছিলো তাদের কাছ থেকেই । হ্যা , অ্যাল কাপোন গ্যাং এর মেম্বাররা এই অস্ত্র ব্যবহার করতো আর একে ডাকতো "টমি গান" । নিঃসন্দেহে এই অস্ত্র শিকাগোর সবচেয়ে বেশী রক্তপাতের কারন ।
=============
এই সাব-মেশিনগান এর ডিজাইনার এটির নক্সায়ন করেছিলেন কারন তখনকার ইউ এস মিলিটারির মূল লক্ষ ছিলো , বোল্ট অ্যাকশন রাইফেলের থেকে অটোমেটিক ওয়েপনের দিকে অগ্রসর হওয়া কিন্তু গ্যাস-অপারেটেড ওয়েপনের মতো জটিলতায় না যাওয়া ।
কারন তখনকার সময় আমেরিকানদের কাছে ট্রেঞ্চে ব্যাবহারের জন্য অস্ত্র বলতে ছিলো ব্রাউনিং অটোমেটিক রাইফেল (BAR) যা আসলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট পার্ফরমেন্স দেখাতে পারছিলো না । সেটা রিপ্লেস করার জন্যই এই অস্ত্রের উদ্যোগ নেয়া হয় । চূড়ান্ত নক্সায়ন শেষ হয় , ১৯১৯ সালের দিকে । এর ডিজাইনারদের মাঝে ছিলেন জর্জ গোল , থিওডর ইকহফ , থমাস রয়ানসহ আরো অনেকেই । প্রথমে এর অফিশিয়াল নাম রাখা হয় "অ্যানিহিলেটর" কিন্তু পরবর্তিতে তা পাল্টে ডেভেলাপারের নামে "থমসন সাব-মেশিনগান" রাখা হয় । যদিও আমি মনে করি এর পার্ফরম্যান্সের কথা চিন্তা করলে "অ্যানিহিলেটর" নামটাই ভালো ছিলো ।
ইউ.এস.এ. এর সেনাবাহিনীতে এর ব্যাবহার হয়েছে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত । কিন্তু অন্যান্য অনেক দেশেই এই জিনিস আজও ব্যাবহার হচ্ছে ।
এই অস্ত্র উৎপাদন শুরু হয় অটো-অর্ডিনান্স কোম্পানি শুরু করলেও পরবর্তিতে বার্মিংহাম স্মল আর্মস কোম্পানি , কোল্ট , স্যাভাজ আর্মস কোম্পানিও এই অস্ত্র উৎপাদনের কাজটি করেছে যা ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলমান ছিলো ।
২০ লক্ষ থমসন এসএমজি উৎপাদিত হয়েছে বলে জানা যায় ।
এর কার্যনীতি : ব্লো ব্যাক , ব্লিশ লক ।
==============
এতে ব্যাবহার হয় .45 ACP কার্ট্রিজ যা তৎকালীন বেশ কয়েক মডেলের পিস্টলের কার্ট্রিজের সাথে মিলে যায় । এর ম্যাগাজিন সাইজ বেশ ভালো , ৩০ রাউন্ড ক্লিপ ম্যাগাজিন । ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২০ রাউন্ডের ম্যাগাজিন ব্যাবহার করেছে । যদিও এর মূল ভ্যারিয়েন্টে ড্রাম ম্যাগাজিন ব্যবহার করা যেত না , কিন্তু এর ব্যাবহারের সুবিধার্থেই পরবর্তি ভ্যারিয়েন্ট গুলোতে ৫০ রাউন্ড ও ১০০ রাউন্ডের ড্রাম ম্যাগাজিন ব্যাবহার করা যেত যা পাশ্চাত্য গ্যাং গুলোর মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ।
==============
এই অস্ত্রটি দুই ধরনের ব্যাবহারের জন্য বিখ্যাত ।
এক । আমেরিকান গ্রাউন্ড ফোর্স । তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান কাঁপিয়ে দিতে এটি বেশ ভালোভাবেই ব্যাবহার করেছে । এই অস্ত্রটি মূলত BAR এর রিপ্লেসমেন্ট ছিলো , সে হিসেবে বলা যায় এটি একটি সফল প্রোজেক্ট । তাছাড়া জার্মানি যখন প্রথম সাব-মেশিনগান ব্যাবহার করে , বার্গম্যান এমপি১৮ , তখন এর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে আমেরিকানদেরকে ত্রান দিয়েছে এই থমসন । ব্রিটিশরাও এই অস্ত্রের টুকটাক সুবিধা নিয়েছে ।
এখন আসি এর দ্বিতীয় ব্যাবহার ক্ষেত্রের দিকে । গ্যাং । অ্যাল কাপোন যখন শিকাগোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন তার গ্যাং মেম্বারদের সবচেয়ে পছন্দের অস্ত্র ছিলো এই থমসম এসএমজি বা টমি গান । তারা এর অন্য ভ্যারিয়েন্ট ব্যাবহার করতো এর ড্রাম ম্যাগাজিনের সুবিধা নেবার জন্য । তাদের হাতে এটা যমদূতের অস্ত্রে পরিণত হয়েছিলো । কতজনকে এ অস্ত্রের জন্য বধবা আর এতীম হতে হয়েছে তার কোন হিসাব নেই ।
===============
এই অস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো , এটা একটা প্রায় নিখুঁত সাব-মেশিনগান । অসাধারণ অ্যাকুরেসি , তার সাথে দুর্দান্ত ফায়ার রেট । বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে এর ফায়ার রেট ছিলো ৬০০-৭২৫ (এম১৯২৮) , ৭০০ (এম১এ১) , ১৫০০ (এম১৯১৯) । ১৫০০ রাউন্ড পার মিনিট !! বিশ্বাস করা যায় না , তখনকার সময়ে এ ধরনের অসাধারণ একটা অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব ।
রিকয়েল খুবই কম হওয়ায় ব্যাবহার করেও মজা আছে । ইফেকটিভ রেঞ্জ প্রয়োজনের থেকে বেশীই , প্রায় ১৫০ মিটার ।
দক্ষ হাতে এই জিনিস তখনকার প্রতিদ্বন্দ্বী বার্গম্যান এম১৮ কে এটা বেশ ভালোই ভেল্কি দেখিয়েছে । যাদের অতিরিক্ত টেনশন করার বদ অভ্যাস আছে , তাদের হাতে এরকম কিছুই দরকার ।
===============
এর সমস্যা আসলে খুজে বের করাটা মুশকিল । পেনিট্রেশন করার ক্ষমতা সাধারণ সাব-মেশিনগানের মতই । ফায়ার রেট মাত্রাতিরিক্ত বেশি হওয়ায় অদক্ষ হাতে লক্ষ ভ্রষ্ট ও গুলির অপচয় হবার সম্ভাবনা থাকে ।
===============
এর ভ্যারিয়েন্ট আছে বেশ কিছু ।
পারসুয়েডার : প্রথম যখন অ্যানিহিলেটর ডিজাইন করা হয় তখন এটিরও ডিজাইন হয় , এটি ছিলো বেল্ট ফিডিং ওয়েপন ।
মডেল ১৯১৯ : মহান টমি গান ।
---- এ দুটি ছাড়াও আরো কিছু প্রোটোটাইপ ডিজাইন করা হয়েছিলো । এবং বেশ কিছু ব্যর্থ প্রোটোটাইপও ছিলো ।
===============
এতে তেমন কোন গ্যাজেট ব্যবহার করা হতো না । এটা যেভাবে আছে , সেভাবেই ভালো ।
তারপরেও আধুনিক প্রোটোটাইপগুলোতে কিছু কিছু গ্যাজেট বসাবার সুবিধা রেখেছে -
সাইলেন্সার - খুব একটা কাজের না ।
ট্যাক লাইট - ক্ষেত্র বিশেষে দরকার হতে পারে ।
স্কোপ - সম্পুর্ণ অপ্রয়োজনীয় । কারন একটা টমিগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করার আনন্দ থেকে এটা আপনাকে বঞ্চিত করবে ।
================
এই ছিলো আমাদের আজকের মারণাস্ত্র সিরিজের অস্ত্র বিবরণী। পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।
পরবর্তি কোন অস্ত্র নিয়ে লিখবো বুঝতে পারছি না , আপনাদের কোন সাজেশান থাকলে বলবেন । আর না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটা কোন অস্ত্র নিয়ে লিখে ফেলবো ।
================
এই সিরিজের আগের পোস্টগুলো -
১। একে৪৭ - Click This Link
২। এম১ গ্যারান্ড - Click This Link
৩। ডেজার্ট ঈগল - Click This Link
৪। রেমিংটন ৮৭০ - Click This Link
৫। স্করপিওন ভিযি-৬১ - Click This Link
=================
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১২