আগামী ১২ জুন শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের বিশতম আসর। বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা করা হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। কেউ কেউ আবার চূড়ান্ত দলও ঘোষণা করে ফেলছে। সাধারণত নিজ দেশের লীগ কিংবা বিশ্বের সেরা লীগগুলো বিবেচনা অথবা অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই দল ঘোষণা করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া লীগও শেষ। বিশ্ব কাপে সকলে যেমনি তাদের প্রিয় দলের জয় দেখতে চাইবে ঠিক তেমনি মাঠে প্রিয় খেলোয়াড়রের নৈপূণ্যও দেখতে চাইবে। কিন্তু বিভিন্ন লীগে কিংবা বিভিন্ন দেশের লীগে সেরা নৈপূণ্য দেখানো কিংবা অতীতে দলের হয়ে সাফল্য পাওয়া অনেক খেলোয়াড়কেই এবার বিশ্ব আসরে দেখা যাবে না। বিশ্ব কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী দেশগুলো থেকে বাদ পড়া শীর্ষ ১০ খেলোয়াড়ের দিকে নজর দেয়া যাক।
কার্লোস তেভেজ (আর্জেন্টিনা):
ব্রাজিল বিশ্ব কাপ দলে তেভেজের জায়গা না পাওয়াটা খুবই বিস্ময়কর। কেননা আর্জেন্টিনার বিশ্বাস হারিয়ে তিনি নিজেই বেশ হতাশ। ২০১১ কোপা আমেরিকায় উইংসে খেলতে খুব বেশী ইচ্ছুক ছিলেননা তিনি। সেময় সার্জিও বাতিস্তা তাকে মাঝে মধ্যেই বিকল্প হিসেবে মাঠে নামাতেন। সার্জিও এ্যাগুয়েরো এবং এজেকুয়েল লাভেজিকে দিয়ে তার শুন্যস্থান পূরন করা হতো। যে কারনে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টারফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় আর্জেন্টিনাকে। সেই থেকে জাতীয় দলে উপেক্ষিত তেভেজ। কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা বলেছেন সকলের স্বার্থেই তেভেজকে দলে রাখা হয়নি।
রিকার্ডো মন্তেলিভো (ইতালি) :
বিশ্বকাপ শুরুর আগে ধাক্কা খেলো ইতালি। পায়ের আঘাতের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন তাদের অন্যতম মিডফিল্ডার রিকার্ডো মন্তেলিভো। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে শনিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে বা পা ভেঙে যায়। ম্যাচের ৮ মিনিটে আইরিশ তারকা অ্যালেক্স পিয়ার্সের করা ট্যাকলে বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত পান মন্তেলিভো। সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় এসি মিলানের এ তারকাকে। তখনই মন্তিলিভোকে এক্স-রে করানোর জন্য নেয়া হয় লন্ডন হাসপাতালে। এক্স-রে করার পরই মন্তেলিভোর পা ভাঙার বিষয় নিশ্চিত হয় ইতালি। দলের চিকিৎসক এরিকো কস্তেলাচ্চি বলেন, ‘এরকম ইনজুরি সত্যি ভয়ের। তার সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। সে বিশ্বকাপে খেলার প্রত্যাশা করতে পারে না। এসি মিলানের অধিনায়ক মন্তেলিভো এ পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১০ এর বিশ্বকাপে ইতালি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ২৯ বছরের এ খেলোয়াড়। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে হারিয়ে ইতালি কোচ সিজার প্রানদেলি বলেন, ‘মন্তেলিভোর ইনজুরিতে পুরো দলই শোকাহত। তাকে ঘিরেই আমাদের সকল পরিকল্পনা ছিল। আজকের ম্যাচে এ ঘটনা সবার ওপর ছাপ ফেলেছে।
জেরি আকামিঙ্কো (ঘানা) :
গোড়ালির ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়লেন ঘানার ডিফেন্ডার জেরি আকামিঙ্কো। তাই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল তার। ২৬ বছরের আকামিঙ্কো ২০১২ সালে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি জড়ান। শনিবার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে হল্যান্ডের বিপক্ষে গোড়ালিতে আঘাত পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। গতকাল মেডিকেল পরীক্ষার পর আকামিঙ্কো বিশ্বকাপে খেলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ঘানা দলের প্রধান চিকিৎসক ডা. আদম বাবা। তিনি বলেন, ‘এক্সরে রিপোর্ট অনুযায়ী তার বাঁ পায়ে চিড় ধরা পড়েছে। এ কারণে তার অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচারের উপর নির্ভর করবে তার ফিরে আসতে কতদিন সময় লাগবে। তবে আকামিঙ্কোর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগতে পারে’। ঘানার কোচ আপিয়া বলেন, ‘এরকম দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সত্যিই দুভার্গ্যজনক। বিশ্বকাপে তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। তার সুস্থতার জন্য আমরা সবাই প্রার্থনা করছি’।
লুইস মোন্তেজ (মেক্সিকো) :
বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল মেক্সিকোর ফুটবলার লুইস মোন্তেজের। ডান পায়ের আঘাতের কারণে বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না এ মিডফিল্ডার। শনিবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে তার। ৩৩ মিনিটে দারুণ এক গোল করে মেক্সিকোকে এগিয়ে দেন মোন্তেজ। কিন্তু গোল করার ২ মিনিট পরেই ইকুয়েডরের সেগুন্ডো ক্যাস্টিলোর বাধায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ২৮ বছর বয়সী খেলোয়াড়কে। ফরাসি ক্লাব লিলেতে খেলা মোন্তেজকে পরে হাসপাতালে নেয়া হলে তার ডান পায়ে চিড় ধরা পড়ে। তাই বিশ্বকাপে খেলা তার পক্ষে আর সম্ভব নয় বলে জানায় মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান মোন্তেজ। মেক্সিকোর পক্ষে এ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে গোল করেছেন ৩টি। অনেক স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু এক আঘাতে চূর্ণ হয়ে গেল স্বপ্ন।
র্যাদামেল ফ্যালকাও (কলম্বিয়া) :
ফিট হওয়ার জন্য লড়ছিলেন কলম্বিয়ার তারকা ফুটবলার রাদামেল ফ্যালকাও। আর কয়েকটা দিন পেলে হয়তো নেমেই পরতে পারতেন বিশ্বকাপে ৷ শেষে স্বপ্ন সফল হল না ফ্যালকাওয়ের ৷ বিশ্বকাপের আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন না তিনি ৷ এমন নিদানই দিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷ কলম্বিয়ার কোচ হোসে পেকেরম্যানও চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে দিয়েছেন ৷ তাতে অবশ্য নেই ফ্যালকাও ৷ চলতি বছরের শুরুতেই হাঁটুতে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন ফ্যালকাও। তখনই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন ফ্যালকাও ৷ এরপরও দ্রুত সেরে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কলম্বিয়ার এই তারকা ফুটবলার। কোচ পেকেরম্যানও ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে নিয়েছিলেন ফ্যালকাওকে। চূড়ান্ত দল ঘোষণার সময় আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি পেকেরম্যান। হতাশ ফ্যালকাও ৷ আকাঙ্খা পূরণের জন্য পুরো দলকে বিপন্ন করা যাবে না ৷ কলম্বিয়ান তারকা বলেছেন, ‘একশো শতাংশ ফিট এমন কোনও ফুটবলারের জায়গা আমি দখল করতে চাই না ।
ফ্রান্ক রিবেরি (ফ্রান্স) :
জিদানের ছায়াতেই ঢাকা পড়ে থাকার কথা ছিল তাঁর। সেটা হলে অবশ্য আজকের ফ্রাঙ্ক রিবেরি তিনি হতে পারতেন না। হতে দেননি রিবেরি নিজেই। ২০০৬ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে স্পেনের বিপক্ষে সেই গোলটি করে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম গোল, ম্যাচটাও জিতল ফ্রান্স। তবে এসব কিছু নয়, রিবেরির বড় অর্জন ওই ম্যাচের পরে খোদ জিদানের কাছ থেকে পাওয়া সনদ, ‘ছেলেটা ফরাসি ফুটবলের রত্ন"। রত্ন অনেক রকমের হয়। রিবেরি হয়তো ছিলেন হীরা। যে হীরায় তখনো খনির রুক্ষতা থেকে গিয়েছিল। পরের আট বছরে অভিজ্ঞতার ঘর্ষণে যা মসৃণ থেকে মসৃণতর হয়েছে। সুবাদে শুধু ফ্রান্স নয়, বিশ্ব ফুটবল পেয়েছে চকচকে-ঝলমলে রিবেরিকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপেও যিনি প্রস্তুত ছিলেন সেই আলো ছড়াতে।
বিশ্বকাপের পর আর একটা মৌসুম মাত্র ছিলেন মার্শেইয়ে। নতুন ঠিকানা হলো বায়ার্ন মিউনিখ এবং সেখানেই ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটছে ফরাসি উইঙ্গারের। জার্মান ক্লাবের হয়ে চারটি বুন্দেসলিগা জিতেছেন। গত বছর বায়ার্নের ট্রেবল জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে হয়েছেন ইউরোপের সেরা ফুটবলার, ছিলেন ব্যালন ডি’অরের সেরা তিনেও। জিদান যাঁকে ‘ফ্রান্সের রত্ন’ বলেছিলেন সেই রিবেরিকে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা উইঙ্গার বলছেন অনেকেই। বিশ্বকাপে দিদিয়ের দেশমও তাই তাকিয়ে ছিলেন তাঁর দিকে। কিন্তু পিঠের চোটের কারনে তার খেলা নিয়ে সংশয় ছিল তারপর অনুশীলনে আবার চোট পেয়ে একেবারে বিশ্বকাপ স্বপ্নই শেষ গেল।
মার্কো রিউস (জার্মানি) :
জার্মান বুন্দেসলীগায় এবার দারুণ খেলে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্কো রিউস। জার্মানরা এবার তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল বিশ্বকাপ জয়ের কিন্তু তাদের সে স্বপ্নে বড় একটা ধাক্কাই লাগল কারন চোটের কারনে এবার বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না এ তারকা খেলোয়ার ৷ বিশ্বকাপ শুরুর শেষ মুহুর্তে আর্মেনিয়ার সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সময় চোট পান বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এ তারকা ফুটবলার। অ্যাঙ্কলের লিগামেন্টে ছিড়ে গেছে ফলে পায়ে চাপ দিতে পারছেন না তিনি ৷ জার্মান ফুটবল সংস্থা ঘোষণা করে দিয়েছে অ্যাঙ্কলের চোটের জন্য বিশ্বকাপে আর নামতেই পারবেন না রিউস ৷ দলের তরফে জানানো হয়েছে, রিউসের অ্যাঙ্কলের লিগামেন্ট ছিড়ে গিয়েছে ৷
ল্যান্ডন ডনোভান (যুক্তরাষ্ট্র):
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ২৩ সদস্যের দলে না রেখে ফুটবল বিশ্বকে ব্যথিত করেছেন দলটির কোচ জার্গেন ক্লিন্সম্যান। সুনাম নয়, পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে দল ঘোষণা করা হবে বলে আভাস দিয়েছিলেন জার্মানির বর্ষীয়ান এ কোচ। সেটা করতে গিয়ে নিশ্চিত ব্রাজিল বিশ্ব কাপে দলের সেরা খেলোয়াড়ের সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ক্লিন্সম্যান। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের তুরুপের তাসকেই দল থেকে বাদ দিয়েছেন তিনি। বিশ্ব কাপে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সর্বোচ্চ (১২ ম্যাচে ৫ গোল) গোলের মালিক ডনোভান। এমনকি তার চেয়ে ৩১ ম্যাচে লিওনেল মেসি, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও ওয়েন রুনি যৌথভাবে বেশী গোল করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্লাব ফুটবলে মনোনিবেশ করার জন্য গত বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে এক বছরের জন্য দুরে ছিলেন ডনোভান। কিন্তু মেজর লীগ সকারে (এমএসএল) লা গ্যালাক্সির হয়ে শেষ ম্যাচে দুই গোল করে টুর্নামেন্ট ইতিহাসে সর্ব কালের সর্বোচ্চ গোল দাতার স্থানটি দখলে নিয়েছেন ডনোভান। তথাপি ক্লিন্সম্যান তাকে বিশ্ব কাপ দলে জায়গা দেননি।
মারিও গোমেজ (জার্মানি):
গত বছর সিরি এ’তে ফিওরেন্তিনায় অভিষেক হওয়ার পর মৌসুমটা তার ক্যারিয়ারের সব চেয়ে খারাপ কেটেছে বলে নিজেই স্বীকার করেছেন মারিও গোমেজ। ফিওরেন্তিনার হয়ে ১৫ ম্যাচে মাত্র ৪ গোল করে বাজে মৌসুম কাটানোর পরও ইউরো ২০১২ চ্যাম্পিয়নশীপে দারুন পারফর্ম করা এবং দেশের হয়ে ৫৯ ম্যাচে ২৫ গোল করা ২৮ বছর বয়সী এ তারকা খেলোয়াড় কোচ জোয়াচিম লো’র পরিকল্পনায় থাকবেন বলে সকলেই আশা করেছিলেন। হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে না ওঠায় এবং গোমেজের ম্যাচ ফিটনেসে ঘাটতি থাকায় ব্রাজিলগামী দলে তিনি জায়গা পাননি। সে বিবেচনায় জার্মান দলের হয়ে মিরোস্লাভ ক্লোসাকে শেষ টুর্নামেন্টের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোমেজ অবশ্যই ক্লোসার পরে প্রাধাণ্য পেতে পারতেন। ক্লোসা এবং লুকাস পোডোলস্কি সিজনাল স্ট্রাইকার হওয়ায় সে ক্ষেত্রে গোমেজের অনুপুস্থিতিতে বেশ ভুগতে হতে পারে জার্মানিকে। গোমেজের শারিরীক সক্ষমতা, ধৈর্য্য সব কিছু ব্রাজিলের জন্য উপযোগী ছিল। দু’জনের ম্যধ্যে দু’জন স্ট্রাইকার নিয়ে লোর খেলার পরিকল্পনা মানে আক্রমনাত্মক ফুটবল বাদ দিয়ে তাকে রক্ষনাত্মক খেলতে হতে পারে।
সামির নাসরি (ফ্রান্স):
দিদিয়ার দেশ্যাম ফ্রান্স দল ঘোষনা করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত লীগে অসাধারন নৈপুন্য দেখিয়ে এবং ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ শিরোপা জয় করে মাঠ মাতিয়েছেন সামির নাসরি। বিশ্ব কাপের জন্য ব্রাজিলগামী দলে তিনি থাকবেন প্রায় সকলেই এটা ধারনা করেছিলেন। কিন্তু দলের সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে নাসরির সম্পর্ক খুব ভাল ছিলনা। ১৯৯৮ বিশ্ব কাপ জয়ী ফ্রান্স দলের অধিনায়ক দেশ্যাম অতীতে দলের অভ্যন্তরীন বিরোধের কথা স্মরনে রেখেছেন। ২০০৮ ইউরোতে নাসরি উইলিয়াম গালাসের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে অসম্মান করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন নাসরি। দুই বছর আগে পোল্যাান্ড-ইউক্রেনে হাতেম বিন আরফার সঙ্গে বিবাদের মুল ব্যক্তি ছিলেন নাসরি। এরপর স্পেনের কাছে ২-০ ম্যাচে পরাজয়ের পর মন্তব্যের কারনে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন নাসরি। এ সময় জার্মান ফুটবল ফেডারেশন তাকে আন্তর্জাতিক তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ করে। তার পর থেকে ফ্রান্সের হয়ে মাঝে মধ্যে খেলার সুযোগ পেলেও ক্লাব অথবা দেশের হয়ে তেমন একটা কিছু দেখাতে পারেননি নাসরি।
গায়েল ক্লিচি (ফ্রান্স):
নাসরির বাদ পড়াটা কোনভাবে প্রত্যাশিত হলেও দল থেকে ক্লিচির বাদ পড়াটা ছিল বিস্ময়কর। অনেকের ধারনা ম্যানচেস্টার সিটিতে দুই খেলোয়াড়ের যোগাযোগের কারনেই ব্রাজিল যেতে পারছেন না ক্লিচি। নাসরির বাদ পড়া নিয়ে ক্লিচি সতীর্থ খেলোয়াড়দের কাছে বলুক এবং দক্ষিন আফ্রিকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক এমনটা এড়াতেই দেশ্যাম তাকে দল থেকে বাদ দিয়েছেন। তবে ক্লিচি ব্রাজিলে অমূল্য সম্পদ হতে পারতেন ফ্রান্সের জন্য। প্যাট্রিক এভরার বয়স হয়ে গেছে এবং ইতোমধ্যেই তিনি তার সেরা সময় পার করে এসেছেন। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লুকাস ডিগনের অভিজ্ঞতাও খুব বেশী নয়। লেফট ব্যাকে দারুন ভুমিকা রাখতে পারতেন ক্লিচি এবং এটা হতে পারত তার শেখার সময়।
অ্যাশলি কোল (ইংল্যান্ড):
আরেক অভিজ্ঞ লেফট-ব্যাক ব্রাজিল বিশ্ব কাপ মিস করতে যাচ্ছেন। বিশ্ব কাপ দলে কেন তাকে রাখা হয়নি - সে ব্যাপারে অবশ্য ইংল্যান্ড কোচ রয় হডসন টেলিফোন করে কোলকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রত্যেক কোচের মধ্যেই একটা পরিকল্পনা থাকে বিশ্ব কাপে দলের ভবিষ্যত খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেয়া। ইংল্যান্ড দলের কোল সব সময়ই উদাহরণ সৃস্টিকারী এবং দলের হয়ে সব চেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মার। তাই ব্রাজিলগামী দলে তার নামটাই সর্বাগ্রে থাকার কথা ছিল।
মাইকেল ক্যারিক (ইংল্যান্ড):
ইংল্যান্ড দলের আরেক ধারাবাহিক খেলোয়াড়। ডেভিড ময়েস কোচ থাকাকালীন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দারুন খারাপ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন ক্যারিক। এভারটনের সাবেক এ কোচের কৌশল ছিল ক্লাব খেলোয়াড়দেরকে দ্বিতীয় সারির হিসেবে গন্য করা এবং স্যার এ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে তাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষন করা। এই মানসিক যন্ত্রনাই হয়তোবা সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারনে ব্রাজিলগামী দলে সুযোগ পাননি তিনি। কিন্তু মাঝ মাঠে ক্যারিকের অভাব অনুভব করতে হতে পারে ইংল্যান্ডকে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় পল স্কোলস যেমন বলেছেন, এই মুহুর্তে প্লেমেকার হিসেবে স্টিভেন জেরার্ডের একমাত্র বিকল্প হতে পারে ক্যারিক।
ফিলিপ কুটিনহো (ব্রাজিল):
কুটিনহোকে বাদ দিয়ে লুইজ ফেলিপ স্কলারি ক্যারিসমেটিক সেরা একাদশ সাজাতে চান। এ ক্ষেত্রে লিভারপুলের কুটিনহোকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশে চেলসি মিডফিল্ডার উইলিয়ানকে সুযোগ দিতে চান তিনি। এ ক্ষেত্রে উভয় খেলোয়াড়ই মেধাবী। তবে উইলিয়ান শারীরিকভাবে কিছুটা এগিয়ে এবং কঠোর পরিশ্রমকে ভয় পান না। অবশ্য পজিশনের কারনেও উইলিয়ান খানিকটা এগিয়ে। যা কুটিনহোর জন্য আরো বাড়ানো দরকার। মাঝ মাঠে কুটিনহো ভাল খেলেন। কিন্তু স্কলারির দলের চরিত্র হচ্ছে কৌশলগত দক্ষতা এবং শারিরীক শক্তি উভয় দিক এগিয়ে থাকা। যে কারনে পলিনহো, ফার্নান্দো, অস্কার এবং রামিরেজকে দলে সুযোগ দিয়েছেন তিনি।
লুকাস নেইল (অস্ট্রেলিয়া):
গত দুই বিশ্ব কাপে সকারুদের রক্ষনভাগের মুল স্তম্ভ ছিলেন নেইল এবং দক্ষতার সঙ্গে যে ক’জন অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় যে কোন পরিস্থিতিতে মাঠে মানিয়ে নিতে পারেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। ২০১৪ বিশ্ব কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারি প্রথম দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালিফাই করার মুল খেলোয়াড়ও ছিলেন তিনি।
তবে নিজ ক্লাবে সাম্প্রতিক ফর্মের কারনে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। এমনকি তার ম্যাচ ফিটনেসেও ঘাটতি রয়েছে।
আলি করিমি (ইরান):
ব্রাজিল বিশ্ব কাপে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা ছিল অভিজ্ঞ করিমির। কোচ কার্লোস কুইরোজও বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারে নিজের কাজ করা ফুটবলাদের মধ্যে সেরাদের এতজন হিসেবে ৩৫ বছর বয়সী করিমিকে উল্লেখ করেছেন। ব্রাজিল বিশ্ব কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ইরানের হয়ে সব চেয়ে বেশী অবদান রেখেছেন করিমি। ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক দেশটির মধ্যে সবচেয়ে সেলিব্রেটি ফুটবলারও তিনি। আবার বিতর্কিত দের মধ্যেও অন্যতম তিনি। ২০০৮ সালে করিমি প্রকাশ্যে ইরান ফুটবল ফেডারেশনের সমালোচনা করেছিলেন। তার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমেদিনেজাদ এবং হাসান খেমেনির হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিল। এর এক বছর পর দেশটিতে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে করিমি এবং কতিপয় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হাতে সবুজ ব্যান্ড পড়েছিল। মুলত ইরানের রক্ষনাত্মক সংস্কৃতি বিবেচনায় রেখেই করিমিকে ব্রাজিলগামী দল থেকে বাইরে রেখেছেন কুইরোজ।
তথ্যসূত্র : বিভিন্ন পত্রিকা, ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া।