somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Dull Friday !

০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদের ছুটি শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যায়। আমার ক্ষেত্রে বরবার উলটো ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছি ঈদের ছুটিতে এবার। গ্রামের বাড়িতে বহুবছর ঈদ করা হয় না। গ্রামে পুরুষ মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। পুরুষেরা সবাই প্রবাসে থেকে টাকা পাঠায় এবং নারীরা বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে খায়। এখন আবার অলিগলিতে হোটেল ও ছাপড়ি ফাস্ট-ফুডের দোকান হয়েছে। কারো বাড়িতে গেলে বাসায় হাতে বানানো খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। কেউ লেবুর শরবত, বেলের শরবত বানাতে আগ্রহী নয়। বিদেশ থেকে পাঠানো ট্যাং দিয়ে আপ্যায়ন সারেন বাড়ির লোকজন। আগের মতো আনন্দ হয় না ।

ঢাকায় ছুটি কাটাতে এসে পড়েছি মহা প্যারায়। বাবা গিয়েছেন বোনের বাড়ি ; বাসায় কেবল আমি, মা এবং মামা রয়েছেন। মামা কে বাসায় দেখে খুবই বিরক্ত লাগলো। পরিবার ফেলে তিনি কাজের সন্ধানে বিদেশ যাবেন ! বাংলাদেশে উনার পরিবার ডাল-ভাত খেয়ে ভালোভাবে জীবনপার করছিলো। মামার পরিবারের কারো অভিযোগ না থাকলেও তিনি নিজের পেশায় সন্তুষ্ট নন। উনার সারাজীবনের একটাই স্বপ্ন 'একবার বিদেশ যেয়ে ঘুরে আসি'। মামা খুব ভালো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ পারেন। কত চাহিদা এখন এসব পেশার ! কিন্তু তিনি বিদেশে যাবেনই । মামা আমাদের বাসায় এসেছেন ফ্লাইট ধরতে। আজ সারাদিন খেটেও উনার গোছগাছ শেষ হয় না। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে উনার মোবাইল ফোন নষ্ট হয়ে গেছে। বাসায় তার জন্য ভালো-মন্দ রান্না হয়েছে। মামা খেতে খুব ভালোবাসেন। বিদেশ চলে গেলে উহাকে কে মজার মজার খাবার রান্না করে খাওয়াবেন ? মামার বক্তব্য হচ্ছে, " বুকে পাথর চেপে যাচ্ছি বিদেশ "।

বাসার সামনে থেকে সিএনজি ধরিয়েছি। সিএনজিওয়ালা কে বললাম বিমানবন্দর যাবো। দরদাম করে উঠে পড়লাম সিএনজিতে। অল্প একটু যাওয়ার পর হটাৎ মামা বলেন তিনি মাস্ক ও মোবাইল চার্জার নিতে ভুলে গিয়েছেন। আবার বাসার সামনে আসলাম। মামা বাসায় গিয়ে উনার ভুলে ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে আবার সিএনজি তে উঠে পড়লেন। আমরা পুনরায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।

সিএনজির ভিতরে মামা দোয়া দরুদ পড়ছে আর আমি সামুতে লেখা পড়ছি। আজকে ব্লগ বেশ উত্তপ্ত মোদি-ইউনূস বৈঠক নিয়ে। ব্লগার তানভীর জুমার কে দেখলাম অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ' ভারতের মুসলিমদের ওয়াকফ বিল সংশোধনী ' নিয়ে ব্লগ লিখেছেন। ব্লগার শাম্মী বিএনপি-এনসিপি কে নিয়ে স্যাটায়ার পোস্ট দিয়েছেন। শাম্মী সাহেব খুবই নিরীহ মার্কা ব্লগ লিখেন। কিন্তু তিনিও যে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবেন তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে । উনার মতো অনেকেই বর্তমান সময়ে চুপ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। সামুর লেখা পড়তে পড়তে ভুলে গিয়েছিলাম যে আমাদের সিএনজি এয়ারপোর্ট ক্রস করে ফেলেছে। মামার ডাকে হুশ ফিরলো। মামার মুখের দিকে চেয়ে দেখি তিনি ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। আশেপাশে চেয়ে দেখি বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন চলে এসেছি। ড্রাইভার কে মামা জিজ্ঞাসা করে কেন আমাদের এখানে আনা হলো ? আমি কোনো ভুল লোকেশন দিয়েছি কিনা। ড্রাইভার বলে সে ভেবেছিলো আমরা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাবো। এয়ারপোর্ট না বলে বিমানবন্দর বলাতে নাকি এমন ভুল হয়েছে। ড্রাইভারের কথায় অবাক হলাম। অবশেষে বিমানবন্দর থুক্কু এয়ারপোর্টে পৌছালাম।

মামা তার যাবতীয় ফরমালিটি সম্পূর্ণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমার তেমন কাজ নেই তাই মানুষজন পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। বিদেশ থেকে কারো লোক এসেছে আবার কারো যাচ্ছে। কেউ হাসছে কেউ কাঁদছে। কেউ কেউ ট্রলি নিয়ে, সিরিয়াল ব্রেক করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। অনেকে দেখছে তাদের কাঙ্খিত প্লেন কয়টায় আসবে। প্রবাসীদের জন্য অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এয়ারপোর্টের হালচাল দেখতে দেখতে হটাৎ খুব হইচই শুরু শুনতে পেলুম। দুইজন ভদ্রলোক নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছেন। একজন লম্বা ও অন্যজন খাটো। লম্বা লোকটি পার্কিং করার জায়গা না পেয়ে খাটো লোকটির গাড়িটির গা ঘেষে তার নিজের গাড়ি রাখতে গিয়ে খাটো লোকটির গাড়িতে দাগ ফেলে দিয়েছে। লম্বা লোকটি সুবিশাল দেহের অধিকারী। তার বিপরীতে খাটো লোকটি শারীরিক গড়ন হালকা। তাই তিনি স্ত্রী ও পুত্র সমেত লম্বা লোকটির সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে খাটো লোকটির ছেলে লম্বা লোকটির মুখে ঘুষি মারে। লম্বা লোকটি তখন wwe এর মতো দুইজন(খাটো লোক ও তার ছেলে) কে গলায় পেচিয়ে ধরেছে। এদিকে খাটো লোকের ওয়াইফ সজোরে চড় মেরেছে লম্বা লোকটির গালে। তীব্র ব্যাথায় লম্বা লোকটি খাটো লোক ও তার ছেলেকে ছেড়ে দেয়। লম্বা লোকটি তার প্রতিপক্ষদের থ্রেট দিতে থাকে সে নাকি অনেক বড়ো সরকারি চাকুরি করে। খাটো লোক এবং পরিবারের সবাইকে তিনি দেখে নিবেন। অন্যদিকে খাটো লোকটি বলতে থাকে সে নাকি বিজিএমইএ এর একজন প্রভাবশালী গার্মেন্টেস ব্যবসায়ী। লম্বা লোকের মতো এরকম সরকারি চাকুরি করা মানুষজন উনার পকেটে থাকে। পুরাতন স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর যখন অভিযোগের তীর এটিএন বাংলাএ মাহফুজ আহমেদের দিকে আসে তখন তিনি বলেছিলেন, " র‍্যাব-পুলিশ নাকি উনার পকেটে থাকে "।

একদিকে গাড়ি পার্কিং নিয়ে মারামারি হচ্ছে আর চারপাশের মানুষ তাদের না থামিয়ে মারামারির দৃশ্য ধারণ করছে। একজন স্বেচ্ছাসেবী এসে লোকজন কে ভিডিও করতে মানা করলে ঝগড়ার সূত্রপাত হয় যা সবশেষ মারামারির পর্যায়ে পৌছায়। একজন প্রবাসী রিটার্ন বিদেশ ফেরত যাত্রীর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করা হয়। এতে জনৈক প্রবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে স্বেচ্ছাসেবীর গায়ে হাত তুলে। প্রবাসী ব্যক্তিটি ভলানটিয়ারের ব্যক্তিগত ডিটেলস কালেকশন করে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে ভলানটিয়ার ছেলেটিকে শাসিয়ে যায় তার নাকি চাকুরি খাবে জনৈক প্রবাসী। প্রবাসী সেবার নামে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভলানটিয়ার ছেলেটি নাকি সকল প্রবাসীদের অপমান করেছেন।এই লোক নির্ঘাত আম্লিকের করতো। বিগত বছরে আম্লিক অনেক লোকের চাকুরি খেয়েছে এভাবে থ্রেট দিয়ে। লোকটির ব্যাপারে ভালোভাবে খোজ নেয়া দরকার ছিলো ।




সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৫১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্ত্ব এবং দেশের রিজার্ব বারানোর এইটা একটা পথ হতে পারে…

লিখেছেন ফেনা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বাংলাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮.৫ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৯৬% শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, অর্থাৎ তারা অদক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্বের দিনগুলি - চতুর্থ অংশ

লিখেছেন দর্পণের প্রতিবিম্ব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩১





আমি বহুবার বিভিন্ন বইয়ে কিংবা দেয়ালে বা নাটক-সিনেমায় শুনেছি বা দেখেছি মানুষ একাকী চলতে পারে না। এ বিষয়ে আমার খুবই দ্বিমত ছিল কারণ আমি একাকী চলতে পারতাম। অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শব্দের নয়া ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা-মজহার দম্পতি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৭


বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুটা ছিল জনতার কণ্ঠে, এখন সেটা রূপ নিচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট গলার একচেটিয়া লোকের তর্জন-গর্জনে । শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, এটা অস্থায়ী সরকার—জনগণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম হয় কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩৮



আমাদের দেশের সরকার সমূহ যখন সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে আমেরিকা আমাদের দেশের সরকার পরিবর্তন তাদের দায়িত্ব মনে করে। তারা এটা করে আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×