
১। চলচ্চিত্রে প্রভাব
বিশ্বায়নের একটি প্রত্যক্ষ ও বাহ্যিক ধরণ হলো আমাদের নতুন প্রজন্মের কথাবর্তার পরিবর্তন। অনুকরণপ্রিয় শিশুরা বাবা-মাকে বাংলা ভাষায় সম্বোধন না করে বিদেশী বিশেষত ইংরেজিতে পাপা-মাম্মী/মম ডাকতে আগ্রহী। কথায় কথায় অন্য ভাষায় শব্দের ব্যবহার, বাংলা শব্দের বিকৃতি এখন প্রায়শ ল্য করা যায়।
অবান্তর কাহিনী আর পাত্র-পাত্রীদের মুখ দিয়ে বাংলা ভাষাকেও অশুদ্ধ ও বিকৃতভাবে করেছোকে কর-ছ, বলেছোকে বল-ছ, খাইতাছ, চাইতেছি জাতীয় শব্দ বলানোর চেষ্টা চলছে।
স্বাধীনতার পর দেশে যেমন সৃষ্টি হল নৈরাজ্য, অরাজকতা, তারই ঢেউ এসে লাগল চলচ্চিত্র শিল্পে। চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিচ্ছে মৌলিকত্ব, সৃজনশীলতা, মূল্যবোধ, জাতীয় চেতনা। শিল্প, সাহিত্য, নাটক যেমন কলকাতামুখী হচ্ছে, চলচ্চিত্রও পথ ধরছে বম্বে-মাদ্রাজের।
বিদেশী চলচ্চিত্রের অশুভ প্রভাব পড়েছে আমাদের চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে এখন স্বল্প বসনা নারীদের পদচারণা খুব বেশী। শিল্পের ছোঁয়া নেই এসব অভিনয়ে। উত্তেজক দৃশ্যসমূহে শিহরিত হয় দর্শকবৃন্দ। বিদেশী চলচ্চিত্রে তরুণদের বিয়ার খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমাদের তরুণেরা মাদকের নেশায় মত্ত। বিদেশী সংস্কৃতির মরণ ছোবল আমাদের যুব সমাজকে অপরাধপ্রবণও করে তুলেছে।
৯০% সিনেমাতে পাত্র-পাত্রীরা সব ধনকুবের। চোখ ধাঁধানো বাড়ি, গাড়ির মালিক। পত্র-পাত্রিরা অভিনয় করছে জিন্স আর গেঞ্জি পরে, অনেকের বেশ ভূষা, চুলের ছাট অত্যন্ত হাস্যকর। এসব হাস্যকর বেশ-ভূষা পরিহিত তথাকথিত ধনকুবেরদের সুখ-দু:খ আমাদের সত্তর ভাগ দরিদ্র মানুষের জীবনকে প্রতিফলিত করতে পারছে না।
২। সাহিত্যে প্রভাব
বাংলা আমাদের ভাষা, শুধু এই কথা বলে আত্মতৃপ্তি লাভ একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক কারণে ভাষা- সংস্কৃতির আগ্রাসনের ফলে এমন অনেক শব্দ আমরা আমাদের লেখায় ও দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, যেগুলো সামগ্রিক ভাবে আমাদের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসবিরোধী। যেমন, 'প্রয়াত' শব্দটির কথাই যদি ধরি। আজকাল শব্দটি যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে 'প্রয়াত' বলার প্রচলন আছে, কিন্তু কাদের মধ্যে ? 'প্রয়াত' মানে প্রস্থান করা বা চলিয়া যাওয়া। সব কিছু শেষ হয়ে যায়, মরণের পরে মানুষ চিরতরে চলে যায়-একথা মুসলমানরা বিশ্বাস করে না। মুসলমানরা পরলোকে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে মৃতু্যর পরই অনন্ত জীবনের শুরু। সুতরাং একজন মুসলমান প্রয়াত হয় না, সে ইন্তেকাল করে অর্থাৎ রূপান্তরিত হয়। স্নাতক- এ শব্দটিরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে; যা নিতান্তই স্নান ও পৈতে পরিয়ে শিক্ষা সমাপনের স্বীকৃতি দানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। দুর্ভাগ্যক্রমে এটিরও প্রচলন এদেশে শুরু হয়ে গেছে। এই হীনমন্যভোগী সাহিত্যিকরা লাশকে মরদেহ, দাফনকে শেষ কৃত্য, দাওয়াতকে নেমন্তন্ন, নাস্তাকে জলপানি, মুনাজাতকে প্রার্থনা, শহীদ মিনারকে শহীদবেদী লেখে এবং বলার চেষ্ঠা করছে। আরও কিছু অপ্রচলিত শব্দকে প্রচলিত করা হচ্ছে যেমন- জান্নাত, কবর, পানি,দোয়া শব্দগুলোর স্থলে স্বর্গ, সমাধী, জল, আর্শীবাদ। আগামীতে হয়ত বা এরা রুহের মাগফিরাতকে আত্মার সদগতি, নামাজকে উপাসনা, রোজাকে উপবাস, হজকে তীর্থযাত্রা বলবে। এরা সালামের পরিবর্তে সুপ্রভাত, Good morning বলতে আত্মতৃপ্তিবোধ করেন।
ভারতীয় সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, এমনকি পাঠ্য বাইয়েল জন্যও আমরা কলকাতানির্ভর হয়ে পড়েছি। স্বাধীন দেশে বাস করে এখনো মনে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী নামের পরজীবীর বাংলা সাহিত্যে ভারতপ্রীতি লণীয়। অথচ বাংলাদেশের উন্নতমানের প্রকাশনাগুলো পশ্চিম বাংলায় ঠাঁই পাচ্ছে না।

৩। ডিজুস জেনারেশন: চেতনা শক্তির ঘাটতি
সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের ল্যেই যৌন সুড়সুড়ি মার্কা আহবান নিয়ে হিন্দি এসে আমাদের ঘর ও মনে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে। ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়ালগুলো মূলত চারিত্রিক অধ:পতন আর পণ্যের বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সন্তানরা মজে যাচ্ছে কোজআপ ওয়ানে, লাঙ্ চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায়, প্রথম আলো-মেরিল তারকা জরিপ কিংবা ডিজুস উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসে। এ যুবসমাজ মঞ্চে ওঠে গান গায় 'সূর্যদয়ে তুমি.. সূর্যাস্তে তুমি' বা 'আমি বাংলায় গান গাই...' আর মোবাইল ফোন বা MP3, MP4 এ বেজে ওঠে আশিক বানায়া... বা ধুম্মা চলে...।
ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল আর ডিসেম্বর মাসের ৪ দিন লাল-সবুজ আর হলুদের বাহারী সাজে ছেয়ে যায় দেশ। মনে হয় আমাদের মত দেশপ্রেমিক জাতি দুনিয়াতে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যখন আমাদের পাশ্ববর্তী দেশের চ্যানেলে জাতীয় পতাকাকে পদদলিত করে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়, তখন এর প্রতিবাদ জানানোর মত দেশপ্রেমিক লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।
চে-গুয়েবারার ছবি কিংবা দু'তিনটা পদ্য সংবলিত টি-শার্টেই যৌবনের প্রানশক্তি নয়। জাতীয় কবি এই ঘুণে ধরা যৌবনের জয়গান গাননি। গাই গরু শিং ভাঙলেই যেমন বাছুর হতে পারে না, এ সব উগ্র সাজে তথাকথিত যোদ্ধা সেজেও যোদ্ধা হওয়া যায় না। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার এসব 'বাই প্রোডাক্টে' ইদানিং ছেয়ে গেছে আমাদের অলি-গলি, হ্রাস পাচ্ছে যুব সমাজের জাতীয় চেতনা শক্তি।
৪। বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন ও কার্ডে অশ্লীলতা:
ভারতীয় অনুকরণে অশ্লীল বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক শালীনতাকে দিনদিন বিলীন করে দিচ্ছে। পণ্য যাই হোক না কেন বিজ্ঞাপনে নারীর বিভিন্ন অশ্লীল ভঙ্গি থাকবেই এ যেন নারীরই বিজ্ঞাপন। এখানে নারীই যেন একটা পণ্য। যেমন: পুরুষের মুখের ক্রিমের বিজ্ঞাপনেও নারী মডেল, কনডমের বিজ্ঞাপনের ভাষা, জন্মবিরতীকরণ ট্যাবলেট, পারফিউম ইত্যাদি বিজ্ঞাপনের দৃশ্য এবং ভাষাসমূহ আমাদের সুস্থ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ফর্বস জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফি এখন ৫৬ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাণিজ্য। তাই দেখো যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ম্যাগাজিন, সিডি, ভিডিও, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বিস্তারকে আশঙ্কাজনকভাবে শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। সিনেমায় সহিংসতা ও যৌনতার বৃদ্ধি এবং সঙ্গীতে পশ্চিমা ঢং অনুকরণ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছ্ বে;িশেষ করে উপগ্রহ সমপ্রচার ব্যবস্থার বিস্তার এ ব্যবস্থাকে আরো বেগবান করেছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের ধরণ ও বিষয়বস্তুর সাথে স্থানীয় মূল্যবোধের প্রত্য সংঘাত অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষনীয়।
আমাদের দেশের যত্রতত্র আজ অশ্লীল ম্যাগাজিনের হিড়িক, ভেতরের অংশ তো দূরের কথা এর ওপরই রয়েছে উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা ও যৌনাচারের সুড়সুড়ি, যা আমাদের দেশের কমলমতি যুবকরা সহজেই এগুলো হাতে তুলে নেয়। ফলে নিজের অজান্তেই কালো মেঘের গ্রাসে আচ্ছন্ন করে ফেলে তাদের সুন্দর চরিত্রকে। এই অশ্লীল ম্যাগাজিনগুলো অধিকাংশই আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি। সমপ্রতি পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের দেশের অশ্লীল ম্যাগাজিনগুলো।

৫। রেডিও টেলিভিশনে প্রভাব:
আমাদের জাতীয় প্রচার মাধ্যম রেডিও টেলিভিশনের ভূমিকা এখনো খুবই আপত্তিকর। ১৯৬২ সাল থেকেই এখানেই বাম-রামদের আখড়া গড়ে উঠেছিল। জাতীয় আদর্শের প্রতীক হওয়ার পরিবর্তে দলীয়করণের হিংস্র থাবায় এটি জর্জরিত হয়েছে অনেকবার। গোটা জাতি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে ৯০% মুসলমানের দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যমটিতে নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অসৎ চরিত্রের লোকগুলোকে টুপি ও দাড়ি পরিয়ে উপস্থাপন করা হয়। ইসলাম পন্থীদের ঘৃণা করাই যেন আমাদের এই প্রচার মাধ্যমগুলোর মূল উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে।
বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো আমাদের সমাজ বিনির্মাণে যতটুকু ভূমিকা পালন করার কথা তা অনেকাংশে আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত। কারণ মিডিয়া মালিকদের রাজনৈনিতক অভিলাষ, অর্থোপার্জনে হীন চিন্তা এবং বৈধ-অবৈধ বিজ্ঞাপনের প্রতিযোগিতা। এখন আর টিভি চ্যানেলগুলো পরিবারের সবাই এক সঙ্গে বসে দেখার সুযোগ নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় যে অবস্থা পরিলতি হয় তাতে অনুষ্ঠানের মূল বিষয়ের চেয়ে উপস্থাপিকার ঢঙই মনে হয় মূখ্য। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অবমাননা করা হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে। অনুষ্ঠান শুরুই হচ্ছে Hi, Hello viewers, good morning, good evening ইত্যাদির মাধ্যমে। ইংরেজ ফ্যাশনে 'র' কে 'ড়' আর 'ল' কে 'লো' বলে। তা হলে আমাদের স্বাতন্ত্র্যতা থাকলো কোথায় ?

৬। সঙ্গীত ও লোককাহিনীর উপর প্রভাব:
দেশীয় সংস্কৃতিতে অন্য একটি বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের সঙ্গীতের ক্ষেত্রে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুরসম্ভার হারিয়ে যাচ্ছে বিজাতীয় সঙ্গীতের প্রভাবে। আবদুল আলীম, আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে পল্লী জীবনের যে হৃদয়গ্রাহী চিত্র ফুটে উঠত তা এখন আর শোনা যায় না। ব্যান্ড সঙ্গীতের নামে আমাদের নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা যে চেচামেচির মহড়া দেয় তা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে না মোটেও। তথাপি একদল উঠতি যুবকের অবচেতন মনের দুর্বলতাকে পুঁজি করে এসবের বাজার দিন দিন গরম হচ্ছে। আগে যেখানে একতারা, দোতরা, সারিন্দা, তবলা, ঢোল এবং বাঁশির সুরে বাঙালির হৃদয় আকুল হতো, এখন গীটার আর কী বোর্ডের কর্কশ সুরের মাঝে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে বেহুলা-লীন্দর, কমলার বনবাস কিংবা আলেমতি প্রেমকুমারের যে যাত্রাগান পালাগান হতো এবং গ্রাম বাংলায় মানুষ রাতবর প্রাণ ভরে উপভোগ করতো, তাও এখন আর দেখা যায় না। এখন যুবক-যুবতীদের প্রেমকাহিনী ছাড়া গান রচনা চিন্তা করতে পারে না। গানের ভাষাও কর্কশ, উচ্চ শব্দের কারণে বুঝাও যায় না গায়ক কি বলছেন।

৭। পোশাক-পরিচ্ছদের উপর প্রভাবঃ
পোশাক-পরিচ্ছদে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ছিল । বিদেশী সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ও চর্চা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জিন্স, টি-শার্ট, স্কার্ট এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের খুবই প্রিয়। শাড়ি-লুঙ্গি কিংবা পাজামা-পাঞ্জাবি এখন আর তাদের তেমন প্রিয় নয়। আমাদের মেয়েদের অনেকেই স্বল্পবসনকে আধুনিক জীবনের নমুনা বলে ভুল করে । এমনকি পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণের ফলে তারা একদিকে যেমন আধুনিক জীবনের অচিন পাখিকে ধরতে পারে না, তেমনি দেশীয় সংস্কৃতির সাথেও নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না । ফলে তারা একটি দোদুল্যমান অবস্থায় পতিত হয় এবং অবশেষে জীবন হয়ে পড়ে ল্যহীন ও হতাশাপূর্ণ।
৮। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল :
বিশ্বায়ন আমাদেরকে যতটুকু এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের যুব শ্রেণীর চরিত্রকে নষ্ট করার জন্যও সমান ভূমিকা রাখছে। কম্পিউটারে বাসায় বসে অশ্লীল সিডি ভিসিডি দেখা, ইন্টারনেটে অশ্লীল পণোগ্রাফী ইত্যাদি এখন ছাত্র ও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচেছ। এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের জন্য গভীর রাতে ফ্রি প্যাকেজ দিচ্ছে অথচ সময়মতো ঠিকই গলাকাটা বিল নিচ্ছে, যা আমাদের জাতিকে মেধাশূন্য করে দেবার গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
৯। উৎসবের উপর প্রভাব
আমাদের সংস্কৃতির উপর আর এক ভয়ংকর থাবা পড়েছে যা গ্রাস করেছে সম্ভাবনাময় তরুণ্যকে। থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন ডে, প্রভৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি তরুণ-তরুণীদের গ্রাস করেছে, তাদের সুকুমার বৃত্তিকে করেছে কলুষিত। বাঙালির পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন তরুণ-তরুণীদের এতটা আলোড়িত করতে পারছে না। যা ছিল সুস্থ, যা ছিল সুন্দর, যা ছিল চিরন্তন- সেসব মূল্যবোধের রক্তে সর্বনাশা মহামারির বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানসিক গোলামীর কারনেই ইকবাল-নজরূলকে মাথার উপর থেকে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথকে মাথার ওপর বসানো হয়। মঙ্গল প্রদীপ, শিখা অনির্বাণ প্রভৃতি কালচার আমদানী করা হচ্ছে। জাতীয় সংস্কৃতিতে মনসার গান, শিবের গাজন, ঢাকের বাদ্য, কাঁসার ঘন্টা, শঙ্খ, উলুধ্বনি প্রভৃতিকে আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গীভূত করা হচ্ছে। পথে পথে মূর্তি নির্মাণ করে মসজিদ নগরীর গৌরব ম্লান করা হচ্ছে। ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বা সংস্কৃতির কথা বলে এক শ্রেণীর মানুষ এদশের শিল্প সংস্কৃতিতে আর্য-মুম্বাইয়া মডেলে ব্যভিচারী শিল্প-সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করতে চাইছে। এদেশের বেশীরভাগ সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, পেন্টিং-এ সেঙ্ এবং ভায়োলেন্সের প্রকট বিস্তার তারই প্রমাণ।
অপসংস্কৃতির শত শত মিসাইল এসে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিক চেতনা বিশ্বাসকে চুরমার করে দিচ্ছে। অপসংস্কৃতির তুফান আমাদের রাজনীতিবিদ, অধ্যাপক, ছাত্র, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী মহলকে হিপ্নোটাইজড করে জাতীয় বেঈমানের কাতারে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভাষা এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একতরফা যুদ্ধের হাতে দেশকে সঁপে দিয়ে দেশ বাচাঁনোর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজা ঠিক নয়। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা সময়ের দাবী।
বি:দ্র: এটি আমার একটি প্রবন্ধের অংশবিশেষ।
সোনার বাংলাদেশ ব্লগ...