পোষ্টটি সম্পূর্ণ আজাইরা। নিজ দায়িত্বে পড়ার জন্যে অনুরোধ করা হল।

ঈদটা মাটি হতে হতে হয় নাই। জীবন থেকে একটা ঈদ এত্ত সহজে মাটি হতে দিব?
এত্ত সস্তা?

ঈদের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো আম্মার ডাক শুনে। কিছুক্ষণ পর আব্বাও ডাকাডাকি শুরু করলেন। ঘুম থেকে উঠলাম সকাল পৌনে সাতটায়। অবশ্যই ডিজিটাল সময়ে পৌনে সাতটা (এনালগ সময় হইলে পৌনে ছয়টা বলতে পারতাম)। যদিও মোবাইলে এলার্ম দেয়া ছিল সকাল ছয়টায়। উঠেই আম্মার সাথে প্যান প্যানানি শুরু। “আম্মা ক্ষিদা লাগছে।”, শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে আম্মা ফ্রিজ থেকে বের করে দিলেন কিছু ঠান্ডা লুচি আর আমার প্রিয় আচার। ব্যাস, মুখ হাত না ধুয়েই শুরু হল আহার পর্ব। আহার শেষে ব্রাশটা গালে পুরে দাঁত মাজতে মাজতে গেলাম গোসলে। আমাদের গ্রামের বাড়ি আমাদের শহরের বাসা থেকে প্রায় ছয়-সাত কি.মি. দূরে। আর যোগাযোগ ব্যাবস্থাও খুব ভাল। তাই আমরা ঈদের সকালে সপরিবারে গ্রামে পৌছায়। গ্রামে সব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শুরু হয় ঈদের দিনের, আর নামাজ শেষে শহরে এসে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের দিনের ইতি টানি। তাই সবাই সকাল সাড়ে সাতটায় বের হলাম বাসা থেকে । এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ফোনে চাচাদের খোঁজ নেয়া, আমরা কখন পৌছুব। যাই হোক তাদের আশ্বস্ত করে প্রায় আধা ঘন্টা পরে পৌছুলাম গ্রামের বাড়ি। নামাজ নাকি সাড়ে দশটায়। তখন ঘড়িতে কেবল আটটা কি সাড়ে আটটা বাজে। কি আর করা। দাদা গত হয়েছেন কিছুদিন আগে। তাছাড়া সকাল শুরু হয় আব্বা-আম্মা-দাদা-দাদী কে সালাম করে। আব্বা আম্মাকে গোসলের পরই সালাম করে সালামী আদায় শেষ। আমি আর আব্বা গেলাম কবরস্থানে। প্রথমে দাদার কবর। পরে আমার অন্য পূর্বপুরুষদের কবরও জিয়ারত করলাম। সেখান থেকে এসে বসে গেলাম সেমায় খেতে। চাচা আর ফুফুদের ভেতর আমার বাবাই সবার বড়। তাই তার সম্মানও আলাদা। আর বাবার বড় ছেলে আমি। তাই বরাবরই সবার একটা আলাদা আদর পেয়ে থাকি। খেতে না পারলেও কোন ভাবে সবার মন রক্ষা করে অল্প স্বল্প সেমায় খেয়ে রওনা দিলাম ঈদ্গাহের উদ্দেশ্যে। সব চাচা আর চাচাতো ভাই একসাথে। নামায ভালভাবেই আদায় করলাম। আকাশ মেঘলা ছিল। ভাগ্যিস বৃষ্টি আসে নি। নামায শেষে বাসায় ফিরে আবার ভোজন পর্ব। এবার ভোজন শেষে রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। সিএনজি যোগে আড়াইটার দিকে বাড়ি শহরে ফিরলাম। কিন্তু আসার পর থেকে ঈদ মাটি হওয়া শুরু।
ঈদের দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই। অনেক পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়। হয় অনেক ফাজলামি, বান্দরামি। ঈদের মূল আনন্দ মূলত করা হয় বন্ধু বান্ধবের সাথেই। কিন্তু এইবার পরিস্থিতি ভিন্ন! যেই বন্ধুরেই ফোন দিই সবাই ব্যাস্ত। কেউ গার্লফ্রেন্ড নিয়া, কেউ আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ কিছুক্ষন পর বের হবে- এখন টায়ার্ড। আবার কেউ ফোনই ধরে না। ব্যাপার কিছুই বুঝলাম না। কিছুক্ষণ ব্লগ পড়ে বিকাল পাঁচটার দিকে দিলাম ঘুম। ঘুম ভাঙলো আম্মার ডাকে রাত আটটায়। কিছুতেই ঘুম ভাঙছিল না। আম্মা নাশতা করতে ডাক দিলেন। কোনমতে চোখ খুলে খেতে খেতে ঘুম পালাল।
সময় রাত সাড়ে নয়টা।ঈদের দিন যদি হয় আঠারো ঘন্টা ( সকাল ছয়টা থেকে রাত ১২টা) তাহলে তার মধ্যে সাড়ে সাত ঘন্টা মাটি। কোন মজাই হল না। কি জানি মনে করে বাসার বাইরে বের হলাম রাত দশটায়। বাইরে খুব কম যান চলাচল করছে। রিক্সা একদম চোখে পড়ে না। যাও দুই একটা চোখে পড়ে তাও খালি পাওয়া মুশকিল। রাস্তার উপর অনেক ছেলে গ্রুপ বেধে গান বাজাচ্ছে। আবার অনেকে আতশবাজিতে মত্ত। কিছুদুর হেটে একটা রিক্সা পেলাম। ঠিক করলাম বগুড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র সাতমাথা পর্যন্ত। তারপর শুরু হল রিক্সা ভ্রমন। রিক্সাওয়ালার সাথে এই কথা সেই কথা বলতে বলতে ঠিক করলাম বগুড়া শহরটা অনেকদিন ঠিকভাবে দেখা হয় না। তাই রিক্সাটাকে জলেশ্বরীতলা দিয়ে ঘুরিয়ে আবার রওনা দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। পথে দেখা আমার ভার্সিটির এক ফ্রেন্ডের সাথে। রিক্সা বিদায় করে গেলাম ওর বাসায়। ওর সাথে ছিল আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র প্রাইভেটের এক ভাইয়া। যার বাড়ি ফেনীতে। কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি বগুড়ায় একা একা ঈদ করছেন। আমার বন্ধুটি ও ঐ বড় ভাই রোটারিয়ান। রোটারী ক্লাবের সুত্রেই তাদের পরিচয়। আলাপ সুত্রে জানতে পারলাম তাদের ঈদও কেটেছে আমার মত। আলাপের পুরোটা সময় জুড়েই আলোচনা হল রাজনৈতিক অনেক ব্যাপারে। খুব ভাল লাগল তার সাথে আলাপ করে। আমরা কেউই রাজনীতি করি না। এমনকি আমাদের রাজনৈতিক ধারণা, দর্শণও ভিন্ন। তারপরও এত তথ্য নির্ভর আলোচনা যেন ছেড়ে উঠতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু আব্বা বারবার ফোন করে বাসায় আসতে বলায় পরবর্তীতে আবার দেখা করার কথা বলে ফিরে আসলাম বাসায়, ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটা ছুঁই ছুঁই। আর এভাবেই শেষ হল একজন ব্যচেলরের ঈদ।
আপনাদের ঈদ কেমন কাটল জানতে ইচ্ছে করছে। তাড়াতাড়ি লিখে জানান।