আমি কখনো নাটক লিখিনি। গতকাল আমার এক টেলার-মাসটার বন্ধু বলল—তিনটে পয়েন্ট দিচ্ছি,এটা নিয়ে লিখুন।
পয়েন্ট-১
পশ্চিমবঙ্গে মৌলভীরা ভাতা পাচ্ছে,টোলের পন্ডিতরা পাবে না কেন।
পয়েন্ট-২
ব্রিটিশ আমলে ২৫০জন মৌলভীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল,এই ভাতা তার পুরস্কার নয় তো?
পয়েন্ট-৩
আমার বান্ধবী আয়েশা একটা কবিতা লিখেছে,কবিতার বিষয়বস্তু ওই ভাতা,কবিতাটা পড়ুন,তবে লেখায় যেন ওই কবিতার ছাপ না থাকে।
লেখক জীবনে এমন অনেক পরীক্ষায় পড়েছি বহুবার।লিখেছি,পাঁচ মিনিটে অনুগল্প,যা দেখছি তাই নিয়ে
তাৎক্ষণিক গল্প।
ভাবলাম বন্ধু বোধহয় তেমনই পরীক্ষা নিতে চাইছে।নিক।
কবিতাটা একবার পড়ে বইটা ফেরৎ দিলাম।বললাম,বাজারটা করি তারপর লিখে দেব।
বাসায় ফিরে লিখলাম একটা শ্রুতি নাটক।
বন্ধু ফোন করল।ফোনেই শুনল কি লিখেছি।
শুনে বলল,প্রিন্ট করে দোকানে নিয়ে আসেন।
গেলাম।
বলল—এটা আমি কালকের চরৈবেতি সাহিত্য আড্ডায় পাঠ করব।তার আগে আপনি তিনবার পাঠ করে শোনান। শোনালাম।
বলল—আপনি কি কাল আড্ডায় যাবেন?
--না কাল আমি গ্রামের বাড়ি যাব।
আজ গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে তাকে ফোন দিলাম।বলল—
সাহিত্য আড্ডায় ওটা পাঠ করেছি। সবাই ধন্য –ধন্য করল।
আমার চিন্তা-ভাবনা আর তার প্রকাশের জন্য অগনিত হাততালি।
বললাম—নারী কন্ঠের পাঠ কে করল।
--কুদ্দুসের মেয়ে মধুরিমা।(অনুষ্ঠানের আয়োজকের মেয়ে)
অবাক হলাম আমাকে কোন ধন্যবাদ জানাল না সে। অনুষ্ঠানে
আমার নাম একবারও উচ্চারণ করে নি।তবে ছ-পাতা প্রিন্ট বাবদ তিরিশ টাকা দিয়েছিল সে।
আমি আনন্দিত আমার টেলার-মাসটার বন্ধু সেলাই করে প্রচুর নাম কিনলেও,গল্প কবিতার জগতে বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি।আজ থেকে সে নাটক-মাস্টার নামে খ্যাতিমান হল।
ভাবলাম
সামুর বন্ধুদের শুনিয়ে দিই সেই সেই নাটক। পড়ুন আঞ্চলিক ভাষায় লেখা সেই নাটক:
নাটিকা:ভাবতে হবে
---উঠো মোলবির বাপ,ঘড়িতে বুধোয় বারোটা-তেরোটা বেজে গেল,শেহেরি খাবা
মেহেরবানি করে গলির টিপকল থেকে এক বোলটিন পানি এনে দাও।
--- ধুর মাগী,রেতের নিদে কত হুরপরি আমার সপুনে দ্যাখা দ্যায়,তুর খ্যানকাবতি আওয়াজে,ওরাসব পালিন গেল।একবোলটিন পানি আনা আমার
কাম তো শুধু,বেশ তু দু-আঁচা চুলা ধরা।
--হুঁ, ধরাবো তো,তুমার বিড়ি খুয়া লায়েটটো দিয়ে যাও,আমি কাল কুড়িন আনা পাতা গুলান জড়ো করি।
--এই লে লায়েট,তা চাল,ডাল আছে তো কিছু নাকি শুধু শাকসিজা দিয়েই শেহেরী খাওয়াবি?
--আছে গো আছে,দু-মালোয় চাল আছে,এক খাবল ডাল আছে,ইদুর-কামড়া
আলু আছে খানকতক,ওতেই আমাদের শেহেরীও হবে,এফতারও হবে।লোকে
বুলে,মোলবির মা সুখে আছে,অরা জানেই না,রুজার মতুন সারা বছরই আমরা একবেলা খিয়ে বাঁচি।
---সুখশান্তি খুয়াদুয়াতে লয়রে মোলবির মা,মুনের সুখই আসল,তু চুলা ধরা আমি পানি আনি।
--ললটিন টো নিয়ে যাও,সাঁজবেলা জাত সাপ বেরালছিল গলিতে।
---এই লে তুর পানি,আরে তুর চুলায় জি আগুনের চিয়ে ধুয়া বেশি।
---চুলা আর আমাদের জীবুন ইরকমই মোলবির বাপ,আগুনের চিয়ে ধুয়া বেশি।
--শুভানাল্লা,তু জি দেখছি মোলবিসাহেবদের মুতুন কথা বুলছিস মোলবির মা!
--তুমার মোলবিকে তো আমিই প্যাটে ধরাছি মোলবির বাপ,মোলবিদের মুতুন কথা বুললেই দোষ?
--আরে আমি কি দোষের কথা বুলছি,তুর কথাটো শুনে ভাল লাগল তাই বুললাম।
--আমার ভাল লাগে না বুঝলা মোলবির বাপ,মোলবি আমার আড়াই হাজার টাকা পায় গরমেন থেকে,তা আমাদের জন্যে কি কল্লে?
--কি করে করবে বল মোলবির মা,অরও তো প্যাটে চারটা জনমালছে,তাদের পুষতেই হয়রান বেচারা।
--যারা প্যাটে জনমালো তারাই বুঝি সব আর আমরা জি অকে প্যাটে ধরলাম,মাদরাসায় পড়তে পাঠালাম,আমরা বুঝি কেউ লয়?
--কে বুললে আমরা কেউ লয়,আমরা হলাম গিয়ে গাছ,মোলবি তার ছায়া।
---

--মোলবিও তো কুনো পাসাদে থাকে না,দুটো খুপরি তুলতে ব্যাটা আমার ঘামে দাড়ি ভিজে যেত।
--গরমেন তো তিনকাঠা জমি দিলে,অতে কি আমাদের একখান খুপরি হতো না?
--বাদ দে মোলবির মা,সাড়ে তিন হাত জমি আমাদের নামে আল্লা এজেসটি করে রেখাছে।
--বুঝলা মোলবির বাপ।আমার একটো কথা মুনে পড়ে গেল,আমার নানা বড় মোলবি ছিল। তিনি বুলতো,বিটিশ আমলে নাকি আড়াইশো দেওবন্দী মোলবিকে পুড়িন মেরাছিল,এই আড়াই হাজার টকা তার পুরস্কার লয় তো?
--তাতে তুর কি,মোলবি আমার ছেলাপলা নিয়ে সুখে থাকলেই হল।
--মোলবিরাই শুধু সুখে থাকবে মোলবির বাপ?টোলের পন্ডিতগুলা তারা কি দোষ করছে বুলো? অই সোনা পন্ডিত অর তো ছেলা দুটা না-খিয়ে মরার দশা,পরনে কানি নাই। অদের কথা কে ভাববে?
--ভাবতে হবে মোলবির মা,ভাবতে হবে। তা তু-আমি ইসব ভাবার কে,বল?যার ভাবার সে ঠিকই ভাববে। তুর হাতও চলে না,জালও জলে না,আলুসানা ডাল হতেই দেখছি আজান পড়ে যাবে।
--রাত ফুরালেই সকাল হয় গো মোলবির বাপ,আমাদের ভাবা গুলান চুলার ধুয়ার মুতুন বাতাসে মিশে যায়,কি বুলো?
@