দেখতে দেখতে ৬টি বছর কেটে আরো এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। অথচ মনে হয় এই সেদিন জীবনের প্রথম বাংলা ব্লগটা লিখেছি। ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসের একটি দিন, নিজের আপন ভাষায় ব্লগ লেখার আনন্দ দিয়ে শুরু হলো বাংলা ব্লগিং। ইংরেজীতে একটু আধটু ব্লগিং আরো অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলাম কিন্তু নিজের ভাষায় লেখার আনন্দটা না থাকলে এত দীর্ঘ সময় ধরে ব্লগিং এবং লেখালেখিতে জড়িত থাকতে পারতাম কিনা সন্দেহ আছে। কর্মজীবনের সমস্ত কিছু অন্যের ভাষায় ঘটে। ক্লায়েন্ট, পার্টনার, পড়ালেখা, কাজকর্ম সব অন্যের ভাষায় করতে হয়। তারপর বাংলা সাইটগুলোতে এসে একটু বাংলার ছোঁয়া প্রচন্ড ব্যস্ত ও পিপাসার্ত জীবনে এক গ্লাস বরফ শীতল ঠান্ডা পানি ও শরীর জুড়ানো নির্মল বাতাসের মত লাগে। নিজের ভাষার প্রতি অনুভূতি প্রকাশের এরচাইতে ভাল উদাহরণ আমার জানা নাই।
কম্পিউটার স্ক্রিনে যেদিন প্রথম বাংলা দেখেছিলাম সেটা ছিল খুব অদ্ভুত একটা দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রথম দিনগুলোতে 'bangla' লিখে সার্চ দিতাম ইয়াহুতে (গুগলের জন্ম হয়নি তখনো)। বাঙালিদের করা কিছু ফোরাম আর আইআরসির সাইটের কল্যাণে বড়জোর banglish কিছু শব্দ পেতাম। IRC-র নেশাটা এই বাংলা+ইংলিশের কল্যাণেই ধরেছিল। বাংলিশে মন পুরোপুরি ভরেনি তাই IRC-তে বাংলা অক্ষরে ও বাংলা শব্দে চ্যাট করার জন্য একটা এমআইআরসি স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম, বাংলিশ টাইপে অভ্যস্থরা বাংলার মত কঠিন টাইপ পদ্ধতি অভ্যস্থ হতে পারেনি, উদ্যোগটা পুরোপুরি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলো। ওয়েবে বাংলার ভবিষ্যত নিয়ে সেদিন যে আশঙ্কা জেগেছিল তা প্রায় পুরোপুরিই কেটে গেল যেদিন বাংলা ভাষায় করা একটা ব্লগ সাইট এবং সেখানে লিখতে উৎসাহী একদল ব্লগারের সন্ধান পাই। জীবনে কোন কিছুতে এতটা আচ্ছন্ন হয়নি, দুই-তিন বছর বলতে গেলে টানা ব্লগিং করেছি। রাতের ঘুম বাদ দিয়ে ব্লগিং, সকালে দেরি করে ওঠে অফিস গিয়ে কাজ ফাঁকি দিয়ে ব্লগিং, সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সাথে সাথে আবার ব্লগিং। কর্মজীবনে সফলতার ধারাবাহিকতায় বাধ সাধলো ব্লগিং, লাখ দশেক টাকার একটা সফটওয়্যারের কনট্রাক্ট হারাই। হারানোর খাতায় শুধু এইটুকুই, প্রাপ্তির খাতাটা অনেক বড়। কাজের ফাঁকে আজো তাই ব্লগে ঢুকে পড়ি, লেখার জন্য সময় বের করার চেষ্টা করি। সময়ের অভাবে ছোটখাটো কোন লেখা দিই বা ফেসবুকে সারমর্মের মত স্ট্যাটাস দিয়ে বের হয়ে যাই আর ভাবি কিছুদিনের ভেতরেই কিছুটা সময় বের করতে পারবো, আবার আগের মত ব্লগিং করবো। সেই সময় আর আসে না, তবে আসবে এই বিষয়ে নিশ্চিত। যদি বেঁচে থাকি তা হলে ৪৫ এর ঘর পার হওয়ার সাথে সাথে কর্মজীবনের ইতি ঘটিয়ে আবার ফিরে আসবো, লেখালেখি ও ব্লগিং এর জগতে। সেই পর্যন্ত ঠুকে ঠুকে যেটুকু করা যায়।
সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।