পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
পর্ব-৬
পর্ব-৭
পর্ব-৮ পর্ব-৯
যে সময়ে আমি এটা লিখছি(দুপুর সাড়ে তিনটা), ২৯ বছর আগে ঠিক সেই সময়ে আমি ময়নামতি সেনানিবাস(কুমিল্লা)এর টিপরা বাজার বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে। আমার সেনাদলের ছয় মাসের জেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাকে তার মোটর বাইকে লিফট দিয়েছেন। তাঁকে আমি বললাম যদি চিটাগাংএর বাস আগে আসে তা'লে আমি চিটাগাং আর ঢাকার বাস আগে আসলে আমি ঢাকায় যাব। পিতার প্রথম স্থাবরটি ঊনি বছর খানেক আগে চিটাগাংএই বানিয়েছেন যা আমি তখনো দেখিনি আর আমার পরিবারের সবাই তখন ঢাকায় থাকেন।
ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন হওয়ায় ঢাকার বাস আগে আসলো।
চাকুরী ২ বছর ১১ মাস।
২ বছর ১১ মাসে আমি মোট ২ দিন ১১ ঘন্টা ছুটি পেয়েছি কিনা সন্দেহ। তখন এক একটা সেনাদলে ৫/৬ জনের বেশী কর্মকর্তা থাকতো না যেখানে আমার সেনাদলে ২৭ জন থাকার কথা। তাই ছুটি ছিল সোনার হরিন,আর অবিবাহিত হ'লে তো ছুটির প্রশ্নই নেই। বাসে চড়ে আমি আমার ভাগ্যকে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম প-নে-রো দি-নে-র ছুটি পাবার জন্যে। এ ক'দিনে কি কি করবো বার বার তার পরিকল্পনা করছিলাম আর বার বার বদলাচ্ছিলাম, তবে একটা ব্যাপারে স্থির ছিলাম যে সাত বীর শ্রেষ্ঠের মধ্যে যাদের কবর বাংলাদেশের মাটিতে সেগুলো দেখতে যাবো।
কখন যে পিপল ট্রান্সপোর্টের বাসটি গুলিস্তানে পৌঁছুল বুঝতেই পারলাম না। সন্ধ্যা লাগার আগেই বাসায়।
বাবা দেশের বাইরে তাই বাসা গমগম করছে। সারারাত ভাই বোন আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসর যখন ভাংগলো তখন কাক ডাকা ভোর।
আমি ঘুমুতে গেলাম।
____________________________________________
পুর্ব কথন-রাজনীতি বিস্ময়কর শয্যা সংগী সৃষ্টি করে।
সে বছরেরই (১৯৮১)ফেব্রুয়ারীতে আমি আমার সেনাদল নিয়ে ঢাকায়- স্বাধীনতা দিবস কুচকাওয়াজের জন্যে। দিনে দুটো মহড়ার পর আর কিছু করার থাকতনা। পুরোনো বিমান বন্দরের এক কোণে আমাদের ক্যাম্প। ক্যাম্প থেকে হাঁটা পথে ১০ মিনিট দূরে আমাদের বাসা। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
তখন সশস্ত্র বাহিনী দিবস ছিল না। তিন বাহিনী তিনটি আলাদা দিন পালন করতো। সেনা বাহিনী দিবস ছিল ২৫ শে মার্চ। সে দিবসটি ঊপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান আমাদের নিমন্ত্রণ করেছেন (কন্টিঞ্জেন্ট কমান্ডার হিসেবে) । স্থান অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা সেনানিবাস (এখন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব)। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর পৌছুলাম। অতিথি অত্যন্ত বেশী, জায়গার তুলনায়। নড়াচড়া করার ঊপায় নেই (তখন সেনা কুঞ্জ ছিল না)। ধাক্কায় দুবার মেঝে থেকে মাঠে চলে এলাম। খুব সম্ভবতঃ আমিই সেখানে সর্ব কনিষ্ঠ আমন্ত্রিত কর্মকর্তা।
রাত আটটার দিকে হঠাৎ ক্লাবের মাঝখান থেকে শোরগোল উঠল- ঠেলায় ঠেলায় আমি তখন শোরগলের কাছেই। তাকিয়ে দেখি রষ্ট্রপতি লেঃ জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বেশ কিছু অফিসার ঘিরে ধরেছেন এবং উচ্চ স্বরে তর্ক করছেন।
কেউ একজন চিৎকার করে উঠলেনঃ Sir, how could you make RAZAKAR Shah Aziz the Prime Minister of our country(স্যার, আপনি রাজাকার শাহ আজিজকে কি করে দেশের প্রধান মন্ত্রী বানালেন)?
জেনারেল জিয়ার তাৎক্ষণিক উত্তরঃ Politics make strange bed fellows!
ভীড়ের মধ্যে থেকে কে যেন বললেনঃ Sir you have to pay for it (স্যার এ জন্যে আপনাকে মূল্য দিতে হবে)।
..and he paid with his life. তাকে মূল্য দিতে হয়েছিল- নিজের জীবন দিয়ে- মাত্র দু মাস পাঁচ দিনের মাথায়।
স্বাধীনতার পর থেকেই দেখছি-মুক্তি যোদ্ধারা যেন কে কার আগে মরবেন তার প্রতিযোগিতায় মেতেছেন-আজ অব্দি দেখছি।
-চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:৪৩