
ছোটবেলা থেকেই একটু গোবেচারা ধরনের হবার জন্য বন্ধু বান্ধবরা আমাকে বিশেষ স্নেহের চোখে দেখতো। অনেকটা সময় ব্যয় করেছি আমি বন্ধুদের এই “স্নেহ” থেকে “ধইরা থাবড়া লাগামু” স্টেজে উঠার জন্য।

একারনে যেখানে অনেকেই ততক্ষনে অন্ধ মোলাকাত দুই একটা সেরে ফেলেছে, তখনও তারা আমাকে জানানোর দরকার মনে করতো না। এখন সবাই ধুম ধাম দেখা করলেও, কলেজে যখন ছিলাম, অন্ধ মোলাকাত বা ব্লাইন্ড ডেটিং এর কনসেপ্ট তখন আমাদের জন্য নতুনই ছিলো। ইংলিশ মুভির বদৌলতে সবে তখন জেনেছি যে প্রেমে পড়ার একটা নতুন পথ আবিস্কৃত হয়েছে, সে পথ যথেষ্ট কঠিন। কারন মিথ্যা বলাটাই ইন্টারনেটের সংস্কৃতিতে স্মার্টনেস। বেজায় রকমের ভীতু থাকার জন্য আমি নিজে তো করতে পারিইনি, অন্যেরটাতে সাথে গিয়ে যে একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করবো সেটাও হচ্ছিলো না।
যা হোক, প্রথম সুযোগ আসলো যখন মেডিকেলে ভর্তি হলাম। দ্বিতীয় বর্ষে উঠি উঠি করছি, এর মাঝে আমার এক বান্ধবী তার এক চ্যাট ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার ঘোষনা দিলো। শুধু তাই না, সে সাথে আরো তিনজনকে নিয়ে যাবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলো। আমি তো সবার আগে গিয়ে খাতায় নাম লিখিয়ে এলাম।

এটাকে ব্লাইন্ড ডেট বলা যাবে নাকি, তা নিয়ে বিস্তর গবেষনা হলো। গুগল মামু দেখালো যে
“দুইজন মানুষ যাদের পূর্বে কখনো দেখা হয়নি, তাদের সাক্ষাতকেই বলে ব্লাইন্ড ডেট”। যেহেতু ঘাড় ত্যাড়া করে দাঁড়ানো একটা ছবি ছাড়া আর কোন ছবি দেখা যায়নি ছেলের (যে ছবিতে সে যে একটা মানুষ তা ছাড়া কিছুই বোঝা যাচ্ছে না), সেহেতু এটা ব্লাইন্ড ডেটই বটে।

কিন্তু বিধাতা আমার উৎসাহ দেখে মুচকি হাসলো।

নির্দিষ্ট দিনে আমার আরেক জায়গায় একটা দাওয়াত পড়ে গেলো। সে বন্ধু আমাকে লোভ দেখালো যে সে আমার জন্য অবশ্যই শর্মা হাউজের ঢাকা পিজ্জা অর্ডার করবে। পিজ্জা না অন্ধ মোলাকাত, এরকম কঠিন ধর্ম সংকটে পড়ে আমি সেদিন ক্লাসে মানুষের প্রক্সি দিতে ভুলে গেলাম। বিকালে ঢাকা পিজ্জার মোহনীয় ছবি মনের কোণে ভেসে উঠতেই সব বাদ দিয়ে আমি ডিং ডিং করে আমি শর্মা হাউজে গেলাম বটে, কিন্তু মন পড়ে রইলো ঢাকা ভার্সিটির কফি প্লেসে।

(ফার্মেসি ডেপার্টমেন্টের একদম পাশে, এখন অবশ্য এই জায়গাটা উঠে গেছে)। রাতে হলে ফিরেই দৌড় দিলাম বন্ধুদের এক্সপেরিয়েন্স শোনার জন্য। কিন্তু কেউ আমাকে তেমন কিছু বলতে আগ্রহী না। বিশাল হাউ কাউ বাঁধানোর পর তারা আমাকে জানালো, যে ছেলের চেহারা এবং কথা বলার ভঙ্গি দেখে সবাই অক্কা পেয়েছে। এবং ১৫ মিনিট পরেই তারা দৌড়ে ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। অনেক হাসাহাসি হলেও মনের দুঃখ আমার পুরো গেলো না, যাই হোক না কেন, অন্ধ মোলাকাত তো!

এর মাঝে একবার সুযোগ এলো, ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হওয়ার। অর্থাৎ আমার দূরসম্পর্কের এক আন্টি ব্লাইন্ড ডেটে যাবে, আমাকে সাথে যেতে হবে সাথে। কারন আমার আপন খালামণি অত্যন্ত কড়া স্বভাবের মানুষ, সে কিছুতেই একজন ভালো মানুষ(আমি!

) ছাড়া বেরুতে দেবে না। আন্টি আমার থেকে মাত্র ৪ বছরের বড় আর আমার সাথে বন্ধুর মত সম্পর্ক হলেও, আন্টি তো। আমি কিন্তু কিন্তু মুখে রওনা দিলাম। বুদ্ধি করে ব্যাগে একটা আর্চি কমিকস ঢুকিয়ে নিয়ে গেলাম। সাক্ষাতের জায়গা ঠিক হলো ধানমন্ডি লেক। যথা সময়ে লেকে পৌঁছে বসে আছি; ছেলের দেখা নাই। ছেলের মোবাইল বন্ধ, আন্টির মুখ অন্ধকার।ফ্রিতে ফুচকা পাবার যে সম্ভাবনা ছিলো তা উবে যাচ্ছে দেখে আমার মুখও গম্ভীর।

হঠাৎ সামনের বেঞ্চের হতচ্ছাড়া টাইপ দেখতে যে লোকটাকে দেখে আমি মুখ বাঁকিয়েছিলাম খানিক আগে, সে এসে বললো, “চারপ্রাইজ”।


আন্টি কি সারপ্রাইজড হবে, আমি উলটে পড়লাম ছেলের চারপ্রাইজে! সবচেয়ে ভয়াবহ কথা হচ্ছে ছেলে মাথায় তেল দিয়ে আঁচড়ে এসেছে।আমি ভয়ে ভয়ে আন্টির দিকে তাকালাম। দেখি সে দিব্য হাসি দিচ্ছে, মানে সে “চারপ্রাইজ” জাতীয় শব্দ শুনে অভ্যস্ত। এরপরের কাহিনী… সে শুধুই এক দুঃখের ইতিহাস।


আমি অতি কষ্টে হাসি মুখে ঝুলিয়ে আর্চি কমিক্সে মনোনিবেশ করলাম। কিন্তু আমার কান তো সজাগ, তাই কথা না শুনে থাকতে পারলাম না।
ছেলেঃ
তুমার ছবি জানো আমার আম্মাকে দেখাইচি। তুমি এত মোটা হইচো ক্যান?মেয়েঃ
হিহি।
ছেলেঃ
আমি না রোজই তুমারে স্বপ্নে দেখি।
মেয়েঃ
হিহি।ছেলেঃ
কি খাবা? অ্যাই অ্যাই বওওওওয়।মেয়েঃ
না না কিছু না। এই ত্রিনিত্রি, তুই?ত্রিনিত্রিঃ
কোক দিতে বলো একটা।
(এরাম কষ্ট কইরা বসে আছি, একটা কোক তো কমই হইলো

)
ছেলেঃ
খালি কোক? আমার কাচে তো কোন ভাংতি নাই, আমার কাচে শুধু ৫০০টাকার নোট থাকে। (মানিব্যাগ খুলে নোট দেখানো এবং নোট বাতাসে নাড়ানো পূর্বক)
এবারে সত্যি আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুনো শুরু করলো।

কতটা হামবড়া এবং ক্ষ্যাত হলে একটা মানুষ মানিব্যাগ খুলে টাকা দেখায়?

এক নজরে দেখলাম একটাই ৫০০টাকার নোট।

কোকের আশাও নাই হইলো। সেই মুহূর্তে আমার খালামণি ফোন দিয়ে বাজখাঁই গলায় প্রশ্ন করলো,
“ঐ তোরা দুইটা কই? বাসায় আসিস না কেন?” আমি আনন্দে একটা লাফ দিয়ে কপোত কপোতিকে জানালাম টাইম শেষ, গেম ওভার।

এতে ছেলে বিশেষ বিরক্ত দৃষ্টি দিলেও আমি গা করলাম না। রিক্সায় ফিরতে ফিরতে প্রশ্ন না করে পারলাম না যে সে ছেলেকে চেনে কিভাবে। উত্তর শুনে আঁতকে উঠলাম,
“আরে, এমনিতেই ফোন করতো। তারপরে গল্প এই আরকি। এই শোন, তোর কালকে মেডিকেলে ক্লাস শেষ কয়টায়?”“কেন আন্টি?”
“না মানে, কালকেও আর একজনের সাথে দেখা করবো। প্লিজ প্লিজ তোকে আসতেই হবে”।কিন্তু একবার বেলতলায় গিয়ে বেল পড়ে মাথাটা যেরকম ফুলছে, ফোলা ১ বছরে কমলে হয়। আমি তৎক্ষনাত বানিয়ে বানিয়ে মেডিকেল কত কঠিন জায়গা এবং কিভাবে আমাদের বিকেল সন্ধ্যা পুরোটাই লাশকাটা ঘরে থাকতে হয় তার ভয়াবহ বর্ননা শুনিয়ে দিলাম।

শুনে আন্টি চুপসে গেলো। দেখে আবার আমার মায়া হলো।
“এক কাজ করি আন্টি, আমি তোমাকে বাসা থেকে বের করে আনি, তারপরে তুমি যাইও দেখা করতে। আমি ক্লাসে যাবো”।আন্টি খুশী আমিও খুশী।

তবে ফোলা মাথা নিয়ে আরো দুইবার আমাকে বেলতলায় যেতে হয়েছিলো, সে কথায় পরে আসি।

সেই আন্টি যে কত অন্ধ মোলাকাত করেছেন সেটা বের করতে তদন্ত কমিটি বসাতে হবে।

পরের বছর ঈদের ছুটিতে সিলেট এসেছি। আমার জিগারের দোস্ত বললো,
“দোস্ত, তোরে আমার লগে যাইতে হবে একজায়গায়”। তখনো ফেসবুক জনপ্রিয় হয়নি, তবে বাংলাক্যাফে আর ইয়াহুর দৌরাত্ব চলছে। তো সেই ইয়াহুতেই পরিচয়, ছেলে শাহজালাল ভার্সিটির শহীদ মিনারে দেখা করতে চায়; ওখানকারই ছাত্র। SUST সম্পর্কে কিছু অদ্ভূত কথা শুনেছি, এইজন্য ঠারে ঠারে আমার বন্ধুকে প্রশ্ন করে সিওর হয়ে নিলাম। এমনকি আগের করুন কাহিনীও শোনালাম। সে জানালো, ছেলে তার খুবই ভালো বন্ধু, ছেলে এই, ছেলে সেই ইত্যাদি। আমার দোস্তর একটা গাধা ড্রাইভার ছিলো যে ওদের গাড়ি দুইবার ল্যাম্পপোস্ট এবং একবার ভ্যানগাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়েছিলো। সেই গাড়িতেই দুইবার আয়াতাল কুরসি পড়ে উঠলাম।
SUST এর শহীদ মিনার একটা চমৎকার জায়গা, যে কারো মন ভালো হতে বাধ্য। গিয়ে দেখি ছেলে নাই, আমি আরো খুশী। বাদাম কিনে উপরে উঠলাম। একটু পরে খেয়াল করলাম সন্দেহজনক চেহারার দুইটা ছেলে আমাদের ফলো করতেছে।

আমি দোস্তরে গুঁতা দিলাম। সে একনজর দেখে জানালো, এরকম বখাটে আচরনের ছেলে অবশ্যই তার বন্ধু না, সে ছবি দেখেছে।

ডাইনে বামে সবজায়গাতেই ফলো করে, কি জ্বালা।

আমি বিরক্ত হয়ে জোর করে আমার বন্ধুকে নিয়ে চলে যাবার জন্য রওনা দিলাম। কি ভয়াবহ, সেই ছেলে(যারে দেখে আমার গাধা দোস্ত চিনতে পারেনি

) আরো ৫/৭টা ছেলে জোগাড় করে মোটর সাইকেল নিয়ে আমাদের গাড়িকে ফলো করা শুরু করলো। একেকজনের চেহারা দেখেই আত্মা ঠান্ডা হয়ে যায়। আমার বন্ধু তো ভয়ে শেষ।

আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু গালি জানতাম সব উগড়ায়ে দিলাম ওর উপর, তাও মেজাজ ঠান্ডা হয়না।


গাধা ড্রাইভার হঠাৎ করে স্মার্ট হয়ে গেলো। ভার্সিটি এরিয়াতেই স্পিড প্রায় ৮০ তুলে ছিটকে বের হয়ে অপরিচিত এক রাস্তায় ঢুকে গেলো। আমি মিনমিন করে বলতে চাচ্ছিলাম যে ভার্সিটিতে এত জোরে গাড়ি চালালে পুলিশ ধরবে, ড্রাইভার আমাদের জানালো, “আফা, শান্তি কইরা বসেন। কোনো টেনশন নাই”।

আমরা টেনশন না নিয়ে পারলাম না, তবে ছেলেগুলোকে ড্রাইভার কি করে যেন গা ঝাড়া দিয়ে ফেললো। ড্রাইভারের বেতন বাড়ানোর অঙ্গিকার আমি আমার দোস্তকে করায়ে তারপরে দুইজনে ঠান্ডা হবার জন্য আম্বরখানার বনফুলে পিজ্জা নিয়ে বসলাম। হায়, অন্ধ মোলাকাত!


এরপর থেকে আমি কান ধরলাম, যা ইচ্ছা হোক, আমি আর ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হইতে রাজি না। মানে, কোন অন্ধ মোলাকাত প্রত্যাশীকে সাহায্য করতে রাজিনা।

সেই বছর হাই ফাইভ আবার বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। সবার মত আমিও অ্যাকাউন্ট খুলে ঘাড় ত্যাড়া একটা ছবি ঝুলাইলাম। মানে যে ছবি দেখে কিছুই বোঝার উপায় নাই, তাই সকলে ধরতে বাধ্য যে এই মেয়ে খুবই ইসমার্ট।

আমাদের স্কুলের হাই ফাইভ গ্রুপে খুবই মজা হতো, সেটার জন্যই ঢুকতাম। একদিন দেখি সাইকোপ্যাথের ছবিআলা এক অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাড রিকোয়েস্ট এসেছে। কি ভেবে অ্যাড করে মহা আনন্দে মেসেজ চালাচালি শুরু করে দিলাম। কিন্তু ৭ দিনের মাথায় ধরতে পারলাম ছেলের মাথার সবকয়টা তার ছিড়া, শুধু ছিড়া না, সবগুলো আবার স্পার্ক করে। অর্থাৎ মাথা নষ্ট।

সুতরাং মানে মানে কেটে পড়লাম। এর মাঝে ফেবু জনপ্রিয় হওয়ায় আমি হাইফাইভের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেসবুকে ঢুকে গেলাম।
হঠাৎ সেখানেও সেই তারছিড়া এসে উপস্থিত। এসে আমাকে বেশ কিছু ত্যাড়া কথা শুনিয়ে দিলো, যার সারমর্ম হচ্ছে আমি তাকে শুধু ধোঁকা না, যাকে বলে প্রবঞ্চনা করেছি।

কি কাহিনি? কাহিনী হচ্ছে আমার ঘাড় ত্যাড়া ছবি দেখে সে আমাকে তাদের ভার্সিটির এক বড় আপু ভেবেছিলো, যে অতীব সুন্দরী এবং যার উপরে সে ফিদা।

সেই ফেসবুকে এসে আমার আসল চেহারার এক ছবি দেখে ধরতে পেরেছে যে আসলে আমি তো সেই রুমী আপু না। তার একটাই কথা, এরকম ধোঁয়াটে ছবি দেয়ার মানে কি! ত্যাড়া কথা বললে আবার আমার মাথায়ও রক্ত উঠে, সুতরাং বলাই বাহুল্য আমিও শুনায় দিলাম বেশ কিছু কথা।

এরপরের ইতিহাস আসলে ধোঁয়াটে, কারন কিভাবে যে একজন আরেকজনের পরিচিত হলাম সেটা ঠিক মনে নাই। এর মাঝে বেশ কিছু কমন ফ্রেন্ডও পড়ে গেলো। তবে এত কাহিনী না বলে ডাইরেক্ট প্রসঙ্গে যাই, কোন এক কুক্ষণে আমরা অন্ধ মোলাকাতের জন্য রাজী হইলাম।


আমার তরফ থেকে পুরাই অন্ধ, কারন ফেসবুকে তার ঐ ভূতের আর একটা ছোটবেলার একটা ছবি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। আমি বেজায় অলস, সুতরাং বললাম, শহীদ মিনার পর্যন্ত যেতে পারবো, এর বেশী না।

পুরান সব কাহিনী মনে করে টেনশন করতে করতে শহীদ মিনার উপস্থিত হলাম। প্রধান টেনশন, ছেলে বেশী শয়তান টাইপ; টিজিং আর পচানিতে তিন মহাদেশ থেকে ডিগ্রী নেয়া।

মোটামোটি ডিফেন্সিফ মেকানিজম নিয়ে গেলাম যে ছেলে কোন কথা শুনে খ্যাক খ্যাক করে হাসলে মাইর লাগায় দিবো, কি আছে জীবনে। শহীদ মিনারে গিয়ে ফুচকা মামার পাশে দাঁড়ায়ে ফোন দিলাম। দেখি সামনে দাঁড়ানো এক ছেলে ফোন ধরলো। ছেলেও আমার দিকে ব্যাপক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে, আর আমি তো পুরাই হা।

কারন ঐ পাজি আমাকে বলেছে যে তার হাইট ৫’১০”, আর সামনের ছেলেটা খুব বেশী হলে ৫’৪”। ছোট বেলার ছবিতে দেখা যাচ্ছিলো গায়ের রঙ যথেষ্টই শ্যামলা, সামনের ছেলেটা একদম ফর্সা। ভয়ে ভয়ে বললাম,
“এইটা কি তুমি?” ফোনের ওপাশ থেকে শয়তানি হাসি ভেসে এলো,
“কোনটা আমি? আমি তো এখনো আসিই নি। হায় হায়, কয়জনকে তুমি একদিনে আসতে কইছো? এ তো সর্বনাশ…” আমি পচানি শুরুর আগেই তাড়াতাড়ি ফোন কাটলাম।

ছেলেটাকে ইশারায় বললাম যে ভাই, আমি না। ছেলেটাও হেসে তার ফোনের দিকে ইঙ্গিত করলো। বেচারা, সেও মনে হয় অন্ধ মোলাকাতেই এসেছে।

মেজাজ চরমে উঠলো, শেষে ভাবলাম, যথেষ্ট হইছে এখন যাই গা ফেরত। হঠাৎ ফোন আসলো,
“আই কই তুমি, আমি কালো রঙের টি শার্ট পড়া”। সামনে তাকিয়ে আরেকবার হার্ট অ্যাটাক।

পুরা মেয়েলী ধরনের একটা লোক, হাঁটাচলা আর চেহারা দেখেই বড় বড় কয়েকটা ঢোক গিললাম। এ যদি ট্রিপল ইতে পড়ে তাইলে আমার নাসার হেড হওয়া দরকার।


ফোন কেটেই আমি ঘুরে দৌড়।
“আরে আরে পালাচ্ছো কেন?”কথা শুনে ঘুরে দেখি সাদা টি শার্ট পড়া একটা ছেলে হাসতে হাসতে উলটে পড়তেছে।
“তুমি ঐলোককে আমি ভাবছো? এই জন্য পালাচ্ছিলা?” মন্তব্য হজম করতে বড় কষ্ট হচ্ছিলো।

কারন আমি আবার কিছুদিন আগে ডায়লগ দিছিলাম যে আমি মানুষের চেহারা না তার ব্যবহার দিয়ে যাচাই করি, চেহারা কোন ব্যাপার না।

ফার্স্ট রাউন্ড হেরে মহা মেজাজ খারাপ হলো। বানিয়ে বানিয়ে কি বলেছি মনে নাই, তবে এমন কিছুই বলেছিলাম যেটা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না। সেকেন্ড রাউন্ডে না হারার জন্য বললাম,
“কিন্তু তুমি তো বলছিলা তুমি দেখতে হ্যান্ডসাম। তোমার চেহারা তো ভালো না, কেমন অ্যাবনরমাল ভাব আছে”।
“ওহো! আর তুমি তো আইছো ইংল্যান্ডের মহারানী মিস আলকাতরা বানু?”
“তোমার মতো আফ্রিকানের পাশে দাঁড়াইলে অবশ্যই আমি ব্রিটিশ”।
“তোমার দিকে তাকাইতে হইলে তো ঘাড় এতো নিচু করতে হয় যে ঘাড় ব্যথা করে”।
“আমার ঘাড় ব্যথা করে না, কারন আমি এরাম খ্যাত পুলাপাইনের দিকে তাকাই না”।
একটু পরেই তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো; যেটা আসলে সবসময়েই লাগতো। আশে পাশের টোকাই কিছু মজা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। একটু পরে খেয়াল হলো যে শহীদ মিনারের কপোত কপোতিরাও হাসিমুখে আমাদেরকে দেখছে। শেষ পর্যন্ত আমি ইতি টানলাম,
“সিরিয়াসলি! এখনি তুমি আমার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ডিলিট হবা”।
“ইহ, আইছে আরেকজন, ঝাঁসির রানী ত্রিনিত্রিবাঈ! দূরে গিয়া মরো।
কিন্তু ডিলিট হবার আগে কি কিছু খাবা?”“না”।
“কিন্তু আমার চেঁচাতে গিয়ে গলা শুকায়ে গেছে”।
তখন মনে হলো কিছু খাইলে মন্দ হয়না। খেতে যেতে এবং আসতে আরো বার তিনেক খ্যাঁচ ম্যাচ লাগলো। সেই খ্যাঁচ ম্যাচ এখনো লেগেই আছে।

প্রথম দিকে আমার বন্ধুরা এই খ্যাঁচ ম্যাচকে বড়ই রোমান্টিক ভাবতো, শেষ কালে তারাও রায় দিলো, যে এটা ৩য় শ্রেনীর ঝগড়া বিশেষ, যেটা করার বয়স আরো ১৫ বছর আগে ফেলে আসছি।

এবং দুঃখজনক, সে এখনো আমাকে তার বন্ধু বলে স্বীকার করে না। তার বক্তব্য, তার বন্ধু হবার জন্য আমাকে আরো তিনবার জন্মাতে হবে।

মেজাজ বিলা না হওয়ার কোন কারন দেখিনা।

কয়টা বর্ষা পার করলাম, আর গুনলাম না (অঙ্কে কাঁচা), কিন্তুক এখনো you got mail এর মত অন্ধ মোলাকাত হইলো না। আফসোস, চরম আফসোস!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ বর্তমান যুগে অন্ধ মোলাকাত স্বাস্থ্যের জন্য অতীব ক্ষতিকর।এ বিষয়ে বোকাছেলের একটি
কঠিন করুন পোস্ট আছে। ভাইয়ারা না ঢুকলেও চলবে, তবে আপুদের একবার ঢুঁ মারাটা দরকার!




ছবিঃ গুগল মামু