somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু ইকবাল……

০৮ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইকবালকে আমি খুবই কম জানি… বলতে গেলে তেমন কিছু জানিই না… স্কুলে ইকবালের সাথে আমার কোনই স্মৃতি নেই। কারন স্কুলে আমি ছিলাম চরম বোরিং এবং নিজে স্বীকার না করলেও, একটু আঁতেল টাইপ। সারা জীবন নিলয়,নাজিয়া আর ইরাকে ছাড়া আর কাউকেই চিনিনি! স্কুল ছাড়ার পর প্রথম reunion টাতেও আসিনি। মেডিকেলে ভর্তির পরের একটা reunion এ যখন গেলাম, আমি মোটামোটি নিশ্চিত… যে আমাকে কারো মনে নেই, কারণ আমার নিজের বেশিরভাগ ছেলের চেহারা মনে থাকলেও নাম মনে ছিলনা। মেয়েরা না। ইকবালের সাথে আসলে আমার তখনই দেখা। হাসিমুখে যখন এসে hi বললো, আমি তারচেয়েও আনন্দ নিয়ে hello বললাম! কারন তখন আমার অসামাজিক title কি করে দূর হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত। আমি নিজেই আগবাড়িয়ে বললাম, তুমি মনে হয় আমাকে চিনতে পারোনি। ইকবাল খানিকক্ষন হেসে উত্তর দিলো, “এরকম ভাবার কারন কি? অবশ্যি আমার মনে আছে।ভালো student দের মনে রাখতে হয়”। মাথায় বাজ পড়লো, কারন আমার ইকবালকে মনে নাই। একজন যে ইকবাল ফারুক ছিল, তা মনে আছে, কিন্তু আর কিছুই মনে নাই।প্রাণপনে ভাবতে লাগলাম, A section এ ছিল কি? আজীবনই তো আমি B section।মীরা টিচারের কাছে পড়া না পারায় বেঞ্চের উপর যে দাঁড়িয়ে থাকতাম, পাশের বেঞ্চে ইকবাল কখনো ছিল কি? অমি যখন ছেলেদের মারপিটে champion হইত, কোন চিপায় কি এই ছেলে ছিল? কখনো বড়ই এর বিচি কি ছুড়ে মারসে?লাইনে কি কখনো দেখসি? ব্রেন চরম ভাবে বেইমানি করলো, কিচ্ছু মনে করতে পারলাম না। লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম, “তুমি মনে হয় আগের থেকে দেখতে ভালো হয়ে গেছো, এইজন্য ঠিক চিনতে পারতেসিনা”। ইকবাল বল্লো, তোমার এমনিতেই মনে নাই, ব্যাপার না…এখন চেনা হবে। ধরতে গেলে এইটাই ইকবালের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। কারন স্কুল লাইফে ওর নাম ছাড়া আর কিছুই জানতাম না।


ইকবালের সাথে আমার যোগাযোগ mainly ফেসবুকে। চ্যাট করতে করতে জানলাম তার কি পছন্দ, কি অপছন্দ। অনেক চেষ্টা করেও যদিও আমি স্কুলের কোন কিছুই মনে করতে পারিনি। এবং টের পেলাম, যে সে অসম্ভব হাসিখুশি। আমি ইকবাল কে যতক্ষন দেখসি, হাসি ছাড়া দেখিনি।lively হাসি, শুধু তার বন্ধুরাই জানে! পরের reunion গুলো attend করতে করতে আর ফেসবুকের কল্যাণে আমাদের নতুন friendship হইল বলা যায়। অনেকদিন যোগাযোগ নাই…… কোন সমস্যা নাই, যেদিন দেখা হবে, সেদিনই এত আন্তরিক ভাবে কথা বলা শুরু করবে যে মনে হবে ২ দিন আগেও জম্পেশ আড্ডা হইসে!!


পিজ্জাহাটে যে get together টা হইসিলো, সেটা থেকে বের হয়ে, আমি ইকবাল আর আরতাদ গেসিলাম আনাম র্যাঙ্কস প্লাজায়, কারন ইকবাল তার জিগরি দোস্ত মঞ্জুর মোর্শেদের গার্লফ্রেন্ড তিন্নির জন্য টেডিবিয়ার কিনবে। মঞ্জুর আমেরিকায়, কিন্তু gf ঢাকায়… ইকবাল কে কিনতে হবে। ইকবাল কে হেল্প করতে গেলাম। অনেক খুঁজে একটা choice করা হলো। কিনবে কি কিনবে না চিন্তা করতে করতে আমার ফ্রেন্ড রেদোয়ান এসে হাজির… ওর সাথে আমার কই জানি যাওয়ার কথা ছিল। পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর ইকবাল তার স্বভাবসুলভ হাসিমুখে গল্প শুরু করলো। আমি আর আরতাদ পিছে দাঁড়িয়েই আছি…দাঁড়িয়েই আছি…এদের আর গল্প শেষ হয় না। একটু পর আমি সন্দেহ প্রকাশ করলাম… এরা কি আগে থেকে একজন আরেকজনকে চিনত নাকি! আরতাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “ইকবাল!” আমি ভাবলাম এত lively আর friendly ছেলে… স্কুলে একবারো কথা হয় নাই… কিভাবে হইল! পিকনিকেও কি যায় নাই? নাকি আমি গিয়েও যাইনাই! এর কতো পরের কথা… আমি ভুলেই গেসি… কিন্তু পরেরবার দেখা হতেই ইকবালের প্রাণখোলা হাসির সাথে প্রথম কথা… “সব তিন্নিদের মনে হয় পছন্দ এক! টেডি বিয়ারটা ভালোই হইসে”।


প্রায় চার মাসের মত ইকবালের সাথে কোন কথা নাই… অসম্ভব ব্যস্ত আমি আমার মেডিকেল আর হাবিজাবি নিয়ে… মাঝে মাঝে ফেসবুকে hii hello… এর মাঝে শুরু হল মাথা নষ্ট করা world cup cricket।১৮ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ছিলো আমার স্কুল জীবন থেকে dream singer ব্রায়ান আডামসের কনসার্ট। ৫ দিন দুনিয়ার যত মানুষকে চিনি সবাইকে যন্ত্রণা দিয়ে অস্থির করে টিকেট জোগাড় করে গেলাম তারে এক নজর দেখতে। রাত সাড়ে এগারোটায় কনসার্ট শেষ করে ধানমন্ডি ২ এর স্টারে গেলাম খাবার কিনতে। হঠাৎ শায়ের আর ইকবালের সাথে দেখা। সে দেখেই বললো কনসার্টের সামনে তোমাকে দেখলাম তো। আমি টাশকি খেয়ে বললাম, শায়ের তো ছিল, তুমি কই ছিলা? পাচ্ছিলাম না গাড়ি, রাত এত হয়ে গেছিল, আর বেশী কথা না বলেই দৌড় দিলাম। যেতে যেতে বললাম, পরে knock করবো। আর করা হয়নি। সেটাই ছিল আমার ইকবালের সাথে শেষ দেখা।
সিলেটে ছিলাম… অন্যমনস্ক ভাবে ফেসবুকে ঢুকতেই লিথীর স্ট্যাটাস… shocked। আতঙ্কে আরতাদকে ফোন দিলাম… টানা বিজি। শায়ের কে দিলাম… শুনলাম ইকবাল হারিয়ে গেছে। বিশ্বাস হল না… এভাবে কেউ হারায় নাকি… তাও আবার ইকবাল… এত হাসিমুখের একটা ছেলে… আগের দিন ইকবালের বাঘ আর সবুজ জার্সি পরা প্রফাইল পিক্স এ কমেন্ট করসি “পাংখা হইসে ভাই”… স্ট্যাটাসে দেখলাম রাতিবকে মুড়ি খেতে বলসে লালাখাল না যাওয়ার জন্য… কিভাবে সম্ভব??? দোয়া করতে করতে রাতে আবার ফোন দিলাম… একই কথা। এরপরও বিশ্বাস হলো না… মোটামোটি নিশ্চিত ছিলাম যে সকালে কোথাও থেকে পাওয়া যাবে। আজকে শায়ের যখন ফোন করে আবার বললো, ইকবাল আসলেই হারিয়ে গেছে… ভয়ংকর শূন্যতা গ্রাস করল। অসম্ভব ভয় পেলাম। কারন আমাদের বন্ধুটি পানিতে হারিয়ে গেছে। আমি একবার সাঁতার শিখতে গিয়ে পানিতে ডুবে গেসিলাম… কি ভয়ংকর সেই অনুভূতি আমি জীবনেও ভুলবো না। মাত্র ৭/৮ হাত দূরে আমার বন্ধু ফারিয়া পানিতে ছিল… আমি ওকে বোঝাতে পারছিলাম না যে আমার শক্তি শেষ…আমি ডুবে যাচ্ছি। আমার শুধু মনে হচ্ছিল, আম্মু তো ঢাকায় নাই,কখন আসবে সিলেট থেকে। কিন্তু আমি আর ইকবাল তো এক না… আমি তো আর লালাখালের মত ভয়ংকর গভীরে ছিলাম না… হাল্কা বিস্তর হলেও সাঁতার পারতাম… বাড়ানো হাত দেখে ফারিয়া কিছুটা হলেও বুঝে এগিয়ে এসেছিল…ইকবাল আমার মত ভাগ্যবান ছিল না……


ইকবালের তেমন কিছু আমি জানি না… কিন্তু এতটুকু জানি… এটা হওয়ার কথা ছিল না… তার লালাখালে একটা চমৎকার outing হওয়ার কথা… ফিরে এসে ছবি আপ করে আমাদের সবাইকে জানানোর কথা… শায়েরের সাথে MBA ফর্ম জমা দেবার কথা… এত lively আর হাসিখুশি একটা ছেলে মুহূর্তের মাঝে হারিয়ে গেল… এটা কেমন করে মেনে নেয়া যায়??? জায়গাটা যে গভীর… সেটা কি লালাখাল কর্তৃপক্ষ জানে না?? এমন তো না যে এই জাতীয় ঘটনা এবার এ প্রথম… তারা কি পারতো না একটা নোটিস দিতে যে কোন কোন জায়গায় পানিতে নামা যাবে আর কোন কোন জায়গায় যাবে না?? তারা একটা বিনোদন কেন্দ্র খুলে বসেছে, অথচ বিন্দুমাত্র নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে নি!! অবশ্য এসব কথার একটা সহজ উত্তর আছে… এটা বাংলাদেশ। এর উপরে আর কোন কথা নেই। মাধবকুন্ডে প্রতি বছর না হলেও ৫/৭ জনের মৃত্যুর পর, অনেক বছর পরে কিছু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। লালাখাল কর্তৃপক্ষ আর কতজন ইকবাল কে চায় নূন্যতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে???


সবকিছুই অর্থহীন, কারন আর যাই হোক, ইকবাল ফিরে আসবে না। আমাদের কাছে প্রার্থনা ছাড়া আর কিছু নেই। ইকবাল একজন ভাল মানুষ ছিল…ভাল বন্ধু ছিল… সে সবসময় আমাদের হৃদয়মাঝে থাকবে। আমি জানি সময়ের সাথে সব শোক কমে যায়… কিন্তু ইকবাল, you will be missed so much. স্কুলের অল্প যে কয়েকজন আমার বন্ধু ছিল, তার মাঝে বন্ধু তুমি একজন। শায়ের ইকবালকে উদ্দেশ্য করে এত মর্মস্পর্শী একটা নোট লিখছে, পড়ে চোখের পানি আটকানো যায় না… মঞ্জুর ইকবালের হারিয়ে যাওয়ার ঠিক আগের মূহুর্তের একটা ছবি রেখেছে যেখানে সে নদীটা পার হচ্ছে… কোনভাবেই দেখা যায় না। আমি ভেবে পাচ্ছিনা, যদি আমার এত কষ্ট হয়, তবে আরতাদ, মঞ্জুর, সামি, শায়ের না জানি কিভাবে আছে। বন্ধু, তোমার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই।


পরম করুণাময় আল্লাহ তোমাকে জান্নতবাসী করুক আর তোমার পরিবারকে এই শোক সহ্যের ক্ষমতা দান করুক, এই দোয়াটুকুই রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১১ রাত ২:০১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×