মঙ্গলবারের নিশি সঙ্ঘের সদস্যরা আজ আবার মিস মারপেলের বসার ঘরে উপস্থিত। আজ ডাঃ পেন্ডারের পালা। দেখাই যাক যাজক মশাইয়ের ঝুলি থেকে কি বের হয়।
বুড়ো পাদ্রী নিরব হাসিতে আরম্ভ করলেন।
মানুষের অপরাধের স্বীকারোক্তি প্রচুর শুনলেও বাস্তবে এমন ঘটনার সাথে আমি খুব একটা জড়িয়ে পড়িনি। আপনারা যেমন ঘটনা চাইছেন তেমন ঘটনা খুব একটা আমার ভান্ডারে নেই। যে কটা আছে তার থেকেই একটা বলছি।
সবাই আগ্রহ ভরে ডাঃ পেন্ডারের দিকে তাকায়।
ভূতুড়ে পরিবেশ বলতে কি বোঝায় তা এ ঘটনার আগে আমি জানতাম না। বিশ্বাসও করতাম না। ঘটনার পর থেকে আজও ভূতুড়ে পরিবেশ এর কথা উঠলেই আমি এক ঝটকায় সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। এখনও আমি কেঁপে উঠি ও জায়গার কথা মনে করলে। পৃথিবীতে খুব কম জায়গাই আছে যেখানে আপনি পা দেওয়া মাত্রই শুভ কিংবা অশুভের প্রভাবের কেঁপে উঠবেন বারবার। ডার্টমুরের ও বাড়িটি ছিল ভীষন অপয়া।
মিস মারপেল ডাঃ পেন্ডারের কথার ফাঁকে বললেন, আপনি কি বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি। এমন অপয়া বাড়ি সবখানেই থাকে। এই যেমন ধরুন গাঁয়ের শেষ মাথার বাড়িটা। বুড়ো স্মিথ সর্বস্বান্ত হয়ে ও বাড়ি ছেড়েছিল। মালিকানা যায় কারস্লেক পরিবারের হাতে। ক’দিনের মধ্যে গৃহকর্তা জনি কারস্লেক সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ভীষন খারাপভাবে পা ভেঙ্গে ফেলে। তার স্ত্রী অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শেষমেষ তারা স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিনে পাড়ি জমায়। আর ছোট-খাট অঘটন তো ওখানে লেগেই আছে।
পেট্রিক স্বভাবমত একটু কেশে নিয়ে দ্বি-মত পোষন করল। এগুলো আসলে সবই গুজব। এমন কিছু ঘটলেই তা ফুলিয়ে - ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়। শেষকালে বাড়তে বাড়তে ভূতুড়ে বাড়িতে পরিনত হয়। স্যার হেনরিও পেট্রিকের সাথে একমত পোষন করল। এক ফাঁকে জয়েস উঠে গিয়ে ঘরের দুটো বাতি নিভিয়ে দিল। ফায়ারপ্লেসের আগুন ছাড়া ঘরে আর কোন আলো নাই। এমন পরিবেশে ভূতুড়ে বাড়ির গল্প বেশ মানাবে।
ডাঃ পেন্ডার জয়েসের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। শান্ত স্বরে বলতে লাগলেন, আপনারা ডার্টমুরের ও বাড়িতে থাকেননি। থাকলে হয়ত মত পরিবর্তন করতেন। বাড়িটা ছিল ডার্টমুরের সীমান্তে। অনেকখানি জায়গা নিয়ে সাবেকী আমলের অনেক জায়গা নিয়ে বাড়িটি। চারদিকের পরিবেশ দিনের আলোতে বড় চমৎকার। ক্রেতার অভাবে বেশ কয়েক বছর বাড়িটি খালি ছিল। পরবর্তীতে আমার কলেজ সহপাঠী স্যার রিচার্ড হেইডেন বাড়িটি কিনে নেন। বেশ ক’বছর সামনা-সামনি দেখা না হলেও পত্রযোগ ছিল। বাড়িটি কেনার পর সে আমাকে ওখানে আমন্ত্রন জানায়।
বাড়িটি খুব যে বেশী বড় তা নয়। আমন্ত্রতি অতিথির তালিকায় আমি ছাড়াও ছিলেন তার চাচাতো ভাই এলিয়ট হেইডেন; লেডী ম্যানারিং ও তার মেয়ে ভায়লেট; ক্যাপ্টেন রজার্স ও স্ত্রী; তরুন ডাঃ সিমন্ড এবং মিস ডায়না এসলি। কারও সাথেই পূর্ব পরিচয় না থাকলেও মিস ডায়না এসলির ব্যাপারে কিছুটা পত্রিকার কল্যানে জানা-শোনা ছিল। অসাধারন সুন্দরী। অসংখ্য গুনাগ্রহীর কারনে তাকে নিয়ে রটনাও কম না। আমার সন্দেহ হল বেড়ানোর জন্য এই জমায়েতকে আমন্ত্রন জানানোর পেছনে মিস ডায়না এসলিই প্রধান কারন। প্রথম দিন থেকেই তার দিকে রিচার্ডের মুগ্ধ দৃষ্টি আর আচরন আমার এ ধারনার প্রধান কারন।
মিস এসলির আচরন থেকে কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। একদিন তিনি রিচার্ড ছাড়া কারও দিকে নজর না দেন তো পরদিনই রিচার্ডকে তিনি চোখেও দেখেন না। তার পুরো মনযোগ এলিয়েটের উপর। আবার হয়ত পরদিনই তিনি ডাঃ সিমন্ডের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
রিচার্ডের বাড়িটি ছিল অনেক পুরানো আর কালো গ্রানাইট পাথরের তৈরী। বাড়ির জানালা দিয়ে দূর পাহাড়ের অপূর্ব শোভা চোখে পড়ে। বাড়ির কাছাকাছি বনের ভেতর প্রস্তর যুগের কিছু নিদর্শনের ভগ্নাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন একটা ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কার হয়েছিল। খননের পর জানা গেল ওটা হল এক প্রাচীন মন্দির। এ ব্যাপারটা নিয়ে রিচার্ড বেশ আগ্রহী ছিল। বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে ও মন্দিরের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল সে। বাড়ির খুব কাছেই ছিল মন্দিরটা। পুরানো যুগের গাছপালা মরে যাওয়ায় নতুন করে ওখানটায় বনায়ন করা হয়। রিচার্ড আমাদেরকে সাথে নিয়ে ও জায়গায় বেড়াতে বের হল।
বনের ভেতর পা দেবার পর থেকেই অদ্ভূত এক অস্বস্তি আমাকে ঘিরে ধরে। বনের ভেতর কবরের মত নিরবতা। একটা পাখির আওয়াজ পর্যন্ত নাই। একেই ভূতুড়ে পরিবেশ বলে বোধ করি। নিজের পায়ের আওয়াজে নিজেই চমকে উঠছিলাম। রিচার্ড আমার অস্বস্তিটুকু ধরে ফেলে। জিজ্ঞেস করে, অস্বস্তি লাগছে?
আমি অস্বীকার করলাম না।
রিচার্ড বলল, প্রাচীন দেব-দেবীদের কাছে এমন অস্বস্তি হওয়াই স্বাভাবিক। এ হল দেবী এস্টারের মন্দির।
এস্টার?
এস্টার বা ইস্টার বা এসথোরেট। যে কোন নামেই তাকে ডাকতে পার। ওয়েলস এর ওদিকটায় এস্টারের আরেকটা মন্দিরের কথা আমরা জেনেছি। তবে আমার মতে এটাই মূল মন্দির। এই ঘন, নির্জন বনের ভেতরই দেবীর আবাস মানানসই। এখানেই চলত তার গোপন আরাধনা।
মিস ডায়না এতক্ষন কথা না বললেও গোপন আরাধনা শব্দ দুটো তার মনে দাগ কাটল। জিজ্ঞেস করল, গোপন আরাধনা? ব্যাপারটা কি ?
বলতে বলতে আমরা একটা খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসলাম। সামনেই একটা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ। পুরোটাই পাথরের তৈরী। ভেতরে একটা পাথরের থামের উপর খোদাই করা ছবি আঁকা আছে। এক শিং ওয়ালা দেবী বসে আছে সিংহের উপর।
রিচার্ড আমাদের সাথে দেবীকে পরিচয় করিয়ে দিল। চাঁদের দেবী এস্টার।
আমরা সবাই ঘুরে ঘুরে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখছিলাম এমন সময়ে হঠাৎই মিস ডায়না এক অদ্ভূত প্রস্তাব দিয়ে বসল। চলুন না আজ সবাই একটা ফেন্সী ড্রেস পার্টি করি। পার্টি শেষে চাঁদের আলোয় এসে না হয় আমরাই দেবীর আরাধানা করে যাব।
ব্যাপারটা আমার পছন্দ হল না। এলিয়ট আমার পাশেই ছিল। ও বোধ করি বুঝে ফেলল আমরা মনের অবস্থা। জিজ্ঞেস করল, আপনার পছন্দ হচ্ছে না ব্যাপারটা ?
না। হচ্ছে না।
এটা আসলেই মন্দির কিনা তার কোন প্রমাণ নেই। তবে রিচার্ড তাই মনে করে। ইদানীং এটা নিয়ে সে মেতে আছে। প্রাচীন মন্দির হলেই যে এখানে দেবীর উপস্থিতি কিংবা অশুভ আত্মার উপস্থিতি থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
এসবে বিশ্বাস না করলেও এই বনে ঢোকার পর থেকে অজানা একটা ভয় যে মনে জেগে উঠেছে তা তো অস্বীকার করা যায় না।
এলিয়ট আমার উত্তর শুনে আমার দিকে অস্বস্তি ভরা দৃষ্টিতে তাকায়। বলে, তা আপনি ঠিকই বলেছেন। কিছু একটা ব্যাপার যে এ বনে আছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তুমি কি বল সাইমন্ড?
ডাক্তার উত্তর দেবার আগে খানিকটা ভেবে নেয়। শেষে বলে, একটা অজানা অস্বস্তিতে যে ভুগছি তা ঠিক।
এর মাঝে ভায়োলেটও এসে আমাদের সাথে যোগ দিল। এসেই বলল, এ জায়গাটাকে আমার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না। চলুন বেরিয়ে পড়ি।
আমরা সকলেই এক সাথে বেরিয়ে আসলাম। কেবল মিস ডায়না খানিকটা পিছিয়ে পড়লেন। পেছন ফিরে দেখি উনি খুব মন দিয়ে দেবী ছবিটাকে দেখছেন। যেতে যেতে রাতের আলোয় দেবীর আরাধনা করার অংশটুকু ছাড়া একটা ফেন্সী ড্রেস পার্টির ব্যাপারে সবাই এক বাক্যে সায় দিল।
বিকেলটা হৈ-হুল্লোড় করে কেটে গেল। ডিনারের আগে যে যার মত সেজে নিজ নিজ রুম থেকে নেমে আসলাম। রজার্স আর তার স্ত্রী সেজেছে নিওথিলিক যুগের বাসিন্দা। রিচার্ড পড়েছে নাবিকের পোষাক আর এলিয়ট আদিবাসী ডাকাত সর্দার। ডাঃ সাইমন্ড হয়েছেন হোটেল শেফ, লেডী ম্যানারিং হাসপাতালের নার্স আর তার মেয়ের সেজেছে ক্রীতদাস। আমার সাজ নেওয়াটা সহজ ছিল। আমি হয়েছি ধর্মযাজক। কেবল মিস ডায়না কি সাজ দিলেন তা বোঝা গেল না। তিনি আগাগোড়া নিজেকে কালো আলখেল্লায় মুড়িয়ে এসেছেন। জিজ্ঞেস করলে জবাব দিলেন তিনি হয়েছেন অজ্ঞাতনামা যাকে কেউ চেনে না , জানে না।
ডিনার শেষে সবাই বাড়ির খোলা বারান্দায় বসেছি। গল্প-গুজবে চমৎকার সময় কাটছে। রাতটা ভারী সুন্দর। ভরা পূর্নিমার আলোয় চারদিক মহোনীয় হয়ে উঠেছে। ঘন্টাখানেক পর খেয়াল করলাম মিস ডায়না আমাদের মাঝে নেই। রিচার্ডের মতে নিশ্চয়ই তিনি নিজের রুমে চলে গেছেন।
ভায়োলেট প্রতিবাদ করে বলল, না। না। সে ঘরে যায়নি। আমি তাকে আধা ঘন্টা আগে ওদিকের বনের ভেতর যেতে দেখেছি।
ভায়োলেট যেদিকটা নির্দেশ করল সেদিকে পুরানো ভাঙ্গা মন্দিরটা আছে। ওদিকে তাকিয়ে আমরা অবাক হবার সাথে সাথে অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলাম। রাতের বেলায় ওদিকে যাওয়ার দরকারটা কি? সবাই এক সাথে রিচার্ডের নেতৃত্বে ওদিকে এগিয়ে গেলাম। সবার মনেই এক প্রশ্ন মিস ডায়না ওদিকে কেন গেলেন?
বনের কাছে এসে এক অজানা আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করল। পা দুটো যেন কেউ টেনে ধরে রেখেছে। কিছুতেই এগুতে দিতে চায় না। আশেপাশের বাকীদের অবস্থাও কম-বেশী আমার মতই। যদিও মুখে কেউই কিছু স্বীকার করল না।
একে একে সবাই বনের ভেতর প্রবেশ করল। গাছগুলো এত ঘনভাবে বেড়ে উঠেছে যে চাঁদের আলো মাটিতে পড়ে না। সবাই ফিসফাস করে কথা বলছে। আমাদের নিজস্ব শব্দগুলোই আমাদের মনে ভয় ধরিয়ে দিল। এক সময় আমরা মন্দিরের কাছাকাছি খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসলাম। চাঁদের আলোয় ভাঙ্গা-চোরা ঐতিহাসিক মন্দিরটার দরজার দিকে তাকিয়েই আতঙ্কে জমে গেলাম।
মন্দিরের ভেতর থেকে একটা ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এসেছে। মাথার বাঁকানো শিং দুটো চাঁদের আলোয় চকচক করছে। রিচার্ড চেঁচিয়ে বলে, ঈশ্বর!
সবার আগে সামলে নিল ভায়োলেট। তীক্ষè গলায় বলল, এ তো ডায়না! নিজেকে কি করেছে সে!
দরজার মুখ থেকে সামনে বেরিয়ে আসে ডায়না। মিষ্টি গলাটাকে বিকৃত করে বলে, সাবধান। আমি এস্টর মন্দিরের যাজিকা। দেখে-শুনে পা ফেলো। নয়ত আমার হাতের বন্দি মৃত্যুকে তোমাদের দিকে ছুঁড়ে দেব।
লেডী ম্যানারিং কিছুটা রাগত স্বরে বলল, যথেষ্ট ভয় দেখিয়েছো। এবার থাম।
রিচার্ড অবশ্য উৎসাহ দিয়ে বলে, দারুন ডায়না! দারুন! তুমি পারও বটে।
চাঁদের আলোয় আমার চোখ দুটো সয়ে এসেছে ততক্ষনে। ডায়নাই বটে। মুখে বেশ মেকআপ করেছে। চোখ দুটোয় নিষ্ঠুরতা। ঠোঁটের কোনায় বাঁকা হাসি। আবার চেঁচিয়ে উঠে সে। বলে, সাবধান। আর এক পাও কেউ এগুবে না। এগুলোই মৃত্যু।
ততক্ষনে আমাদের সবারই উৎকন্ঠায় জায়গায় রাগ আর বিরক্তি জায়গা করে নিয়েছে। ডায়নার আর বাড়াবাড়ি করা ঠিক হচ্ছে না। সবার সামনে রিচার্ড। ডায়নার দিকে এগুতে এগুতে বলল যথেষ্ট হয়েছে। এবার থাম।
কিন্তু ডায়নার কোনদিকেই নজর নেই। কারও কথাই যেন তার কানে ঢুকছে না। বলে চলেছে, আর কাছে আসবে না। আসলেই মৃত্যুর অদৃশ্য বান ছুঁড়ব।
রিচার্ড দ্রুতগতিতে ডায়নার দিকে এগুতে থাকে। তখনই ব্যাপারটা ঘটল। রিচার্ড আচমকা থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর সামনের দিকে সটান করে মাটিতে পড়ে গেল।
ডায়নার মুখ চলছে। রিচার্ড নিথর হয়ে মাটিতে পড়ে আছ । আমরা হতভম্ব।
হঠাৎ ডায়না খিলখিল করে হাসতে শুরু করলে। চাঁদের আলোয় ও ভূতুড়ে পরিবেশে পুরো ব্যাপারটাই কেমন জানি অবাস্তব আর অপার্থিব। আমাদের পায়ে যেন শিকড় গজিয়েছে। এলিয়েট দ্রুত গতিতে আমাদের পেছন ফেলে রিচার্ডের দিকে উঠে গেল। আমাদের পেছন করে রিচার্ডের উপর ঝুঁকে ওকে উঠাবার চেষ্টা করতে থাকে। উঠ, রিচার্ড। উঠ। তোমাদের আর নাটক করতে হবে না।
কিন্তু রিচার্ড আর উঠে না। রিচার্ডকে সোজা করে মাটিতে শোয়ায় সে। আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ে সে। চেঁচিয়ে বলে, ডাক্তার, জলদি আসুন। ও মনে হচ্ছে মারা গেছে !
সাইমন্ড দ্রুত আমাদের ছেড়ে এগিয়ে গেল। এলিয়েট ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। একটু পর পর ও নিজের হাতের মুঠোর দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বলার আগেই ডায়না খনখনে গলায় হিস্ট্রিয়ার রোগীর মত বলতে শুরু করে, ঈশ্বর! আমি ওকে খুন করে ফেলেছি। আমি খুনী। খুনী।
এ কথা বলতে বলতে ডায়না জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ওদিকে লেডী ম্যানারিং চেঁচাতে লাগল। আমাকে এখান থেকে বের করুন। বের করুন। আমি পাগল হয়ে যাব। বের করুন।
এলিয়েট আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, এ হতে পারে না। এভাবে কোন মানুষ খুন হতে পারে না। এটার স্বাভাবিক কোন ব্যাখা নেই।
ভূত-প্রেতে আমার বিশ্বাস নেই। ওকে বললাম, তোমার ভাইয়ের হৃৎপিন্ডে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা ছিল। এমন উত্তেজনা হয়ত তিনি সহ্য করতে পারেননি।
ওর হাতটা আমার চোখের সামনে তুলে ধরে বলল, আপনি বুঝতে পারছেন না।
আমি খেয়াল করলাম ওর হাতে যেন কালচে একটা রেখা। সন্দেহ করার আগেই এলিয়েট আরও নিচু গলায় বলল, ও উত্তেজনার বশে হার্ট-ফেল করে মারা যায়নি। ওর হৃদপিন্ড বরাবর ছুরি চালানো হয়েছে। অথচ কোন অস্ত্র তো পেলাম না!
আমি ওর দিকে হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না। রিচার্ডের দেহটার দিকে এগিয়ে যেতেই সাইমন্ড ওকে পরীক্ষা শেষে উঠে দাঁড়াল। ওর মুখটা ফ্যাকাশে। চোখে-মুখে চাকা আতঙ্ক। হতভম্বের মত বলল, এ তো ভূতুড়ে ব্যাপার। কে জানি ওর বুক বরাবর কোন লম্বা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। অথচ আশেপাশে কোন ছুরি নাই।
তাহলে এলিয়েট যা বলল সব সত্য। আমরা একে অপরের দিকে তাকালাম। শেষে এলিয়েট বলল, কিন্তু এ তো অসম্ভব। নিশ্চয়ই আছে। চলুন খুঁজে দেখি।
বৃথাই আমরা কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করলাম। ভায়োলেট হঠাৎ বলল, আমি ডায়নার হাতে কি যেন একটা চকচক করতে দেখেছি।
এলিয়েট মাথা নেড়ে বলল, রিচার্ড তো ওর দশ হাতের ভেতরই যায়নি।
লেডী ম্যানারিং ডায়নার কাছেই ছিলেন। তিনি ওর হাত, আশেপাশে খুঁজে বলল, না। ছুরি-টুরি কোথাও দেখছি না। তুমি ঠিক দেখেছিলে ভায়োলেট?
ডাঃ সাইমন্ড ডায়নার নাড়ি পরীক্ষা করে বলল, ইনাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া দরকার। একটু ধরবেন কেউ?
ধরাধরি করে আমরা ডায়নার অচেতন দেহটাকে বাড়িতে রেখে আবার ফিরে এলাম রিচার্ডের মৃতদেহটাকে নিয়ে যাবার জন্য। আজকাল গোয়েন্দা গল্পে কল্যানে একটা ছোট ছেলেও জানে কোন খুন হলে পুলিশ আসার আগে অপরাধের ঘটনাস্থল পরিবর্তন করা ঠিক না। সে কালে আমাদের এ ব্যাপারে জ্ঞানের ঘাটতি ছিল। রিচার্ডের মরদেহটা ঘরে রেখে পুলিশ আনার জন্য খানসামাকে পাঠানো হল। পুলিশ ফাঁড়ি ছিল প্রায় বারো মাইলের দূরত্ব।
খানসামা বেরিয়ে যাবার পর এলিয়েট আমাকে একপাশে নিয়ে বলল, অমাাদের ওখানে গিয়ে অস্ত্রটা পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখা দরকার। ভূতে খুন করেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ জড়িত থাকলে দেরী করলে আর পাওয়া যাবে না।
অস্ত্রের খোঁজ করাটা জরুরী হলেও এ রাতে ওখানে আবার যাবার ব্যাপারে আপত্তি আছে। বিশেষ করে পুলিশ আসার আগে। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম ওকে নিবৃত্ত করার জন্য। কিন্তু ওকে ঠেকানো গেল না। সাথে একটা অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
ওটা ছিল এক দীর্ঘ আর উত্তেজনাকর রাত্রি। সময় যে কোনদিন দিয়ে কেটে যাচ্ছিল টেরই পাচ্ছিলাম না। এক সময় পুলিশ এসে পৌঁছায়। সব শুনে প্রথমেই আমাদের রাতের বেলা এমন ছেলেমানুষি করার জন্য এক চোট বকে নিল। সব শুনে , দেখে তারা মিস ডায়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইল। তবে ডাঃ সাইমন্ড ডায়নাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ঘুমটা ওর জন্য জরুরী। ফলে সকালের আগে আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।
সারা রাত আমরা বসার ঘরেই বসে ছিলাম। কোন ফাঁকে যে চোখ লেগে এসেছিল বুঝতে পারিনি। আন্দাজ সকাল সাতটার দিকে সাইমন্ডের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙ্গল আমার। জিজ্ঞেস করল আমি এলিয়েটকে দেখিছি কিনা।
এলিয়েট তখনও ফিরেনি। ও কোথায় গেল তা বলতে বলতে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। মনে কু’ডাক দিচ্ছে। খুঁঁজতে খুঁজতে ভাঙ্গা মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা। যা ভয় করেছিলাম তাই হল। ঠিক যে জায়গায় রিচার্ডের দেহটা গত রাতে পড়েছিল ঠিক সেখানটায় ঘাসের উপর মুখ উপড়ে পড়ে আছে এলিয়েট ।
দ্রুত তাকে পরীক্ষা করে দেখল সাইমন্ড। এলিয়েট অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক। তবে বাম কাঁধের কাছে একটা লম্বা ছুরি গেঁথে আছে। রক্ত ঝরেছে প্রচুর। ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম সবাই মিলে ধরাধরি করে। সবাই ওর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় রইল। জ্ঞান ফিরলে অন্তত জানা যাবে কে এবং কিভাবে ঘটল এত কিছু।
কিন্তু এলিয়েট যা বলল তাতে পুরো ব্যাপারটা আরও পেঁচিয়ে গেল। এলিয়েট অস্ত্রটা খুঁজতে খুঁজতে মন্দিরের কাছে যাওয়ার পর আচমকা খেয়াল করল কে জানি বনের ভেতর থেকে তাকে অনুসরন করছে। ভাল করে খেয়াল করে কাউকে পেল না কিন্তু কেউ যে অনুসরন করছে তাতে সে নিশ্চিত। একটু পর একটা ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। বাতাসটা আসছিল মন্দিরের ভেতর থেকে। বাতাস আসছে কোথা থেকে তা দেখার জন্য মন্দিরের দরজা দিয়ে এলিয়েট ভেতরে লক্ষ্য করে যা দেখল তার কোন ব্যাখা সে যেমন দিতে পারল না তেমনি আমরাও কোন ব্যাখা দাঁড় করাতে পারলাম না। তার চোখের সামনে মন্দিরের ভেতরের থামে আঁকা দেবীর মূর্তিটা ধীরে ধীরে বড় হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে। এলিয়েট হাঁ করে তাই দেখছিল এমন সময় একটা তীক্ষè ব্যাথায় অনুভব করে বাম কাঁধে। সেই সাথে মাথায় প্রচন্ড আঘাত। এরপর আর তার মনে নেই কিছু।
ছুরিটার মালিক ছিল রিচার্ড। মাস খানেক আগে এক নিলাম থেকে ওটা কিনেছিল সে। তবে ওটা কোথায় সে রাখত তা কেউ বলতে পারল না। পুলিশ আরও ক’দিন তদন্ত করল। তাদের মতে ডায়নাই ছুরি মেরেছে রিচার্ডকে। কিন্তু আমরা ওতগুলো মানুষ যখন জ্যান্ত স্বাক্ষী যে রিচার্ড ডায়নার দশ হাতের ভেতরও যায়নি আর আমরাও ডায়নার হাতে কোন ছূরি বা কোন কিছু ওকে ছুঁড়ে মারতে দেখিনি তখন পুলিশ ডায়নার বিরুদ্ধে কোন কেস দাঁড় করাতে পারল না। কোন কিছুর সমাধানও আর হলো না।
ডাঃ পেন্ডার তার কাহিনী শেষ করলেন। সবাই নিরব। রেমন্ড নিরবে ধূমপান করতে থাকল।
একটু পর জয়েস নিরবতা ভেঙ্গে বলল, কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না! একেবারেই ভূতুড়ে ব্যাপার-স্যাপার। আপনার কোন ব্যাখা ছিল না?
ডাঃ পেন্ডার মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ছিল। কিন্তু সব যুক্তি দিয়ে মেলানো যাবে এমন নয়। কারন সব প্রমাণ আমি হাতে পাইনি।
জয়েস তার মতামত তুলে ধরল। আমার মনে হয় আপনাদের সম্মোহিত করে ডায়নাই ওকে ছুরি মেরে খুন করেছে। ভুলে যাবেন না ভায়োলেট ডায়নার হাতে ছুরি চকচক করতে দেখেছিল।
রেমন্ড বলল, আমারও মনে হয় ডায়নাই খুন করেছে। ভুলে যাবেন না আমরা সব দেখছিলেন চাঁদের আলোয়। হয়ত ছোট কোন ধনুক ছিল ওর আলখাল্লার ভিতরে। ওটা দিয়ে ছুরি ছুঁড়ে মারে সে। আপনারা কেউ খেয়াল করেননি। আপনাদের মন তখন আতঙ্কিত আর উত্তেজিত ছিল।
স্যার হেনরির ব্যাখাটাও একই রকম। তবে তার মতে মিস ডায়না নন। বরং এলিয়েট যেমনটা বলছিলেন তেমনি কেউ বনের ভিতর লুকিয়ে থেকে রিচার্ডকে লক্ষ্য করে ছুরি মেরে খুন করেছে। মিস ডায়নার হাতে কিছু ছিল কি ছিল না তার কোন সঠিক তথ্য তো নেই কারও কাছে। একজন বলছেন ছিল আর বাদ-বাকীরা বলছেন না।
পেট্রিক অবশ্য এর সব কটারই বিরোধিতা করল। বলল, আপনাদের সবার কাছেই আমার প্রশ্ন হল তাহলে খুনের অস্ত্রটা গেল কোথায়? মিস ডায়না এর পরপরই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার কাছের ধনুকটা কোথায়? ভুলে যাবেন না তাকে বহন করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর খুনের অস্ত্র পাবার আশায় তার চারদিকেও ভাল করে তল্লাসী চালানো হয়েছিল। একই কথা লুকানো আততায়ীর জন্যও প্রযোজ্য। আততায়ীটি কিন্তু বন থেকে যদি ছুরি ছুঁড়ে মারে তবে ছুরিটা তো রিচার্ডের বুকেই গেঁথে থাকার কথা। আমি বরং আত্মহত্যা তত্ত্বে বিশ্বাস করছি। স্যার রিচার্ড নিজেই নিজের বুকে ছুরি মেরেছেন। তারপর তা বনের ভেতর ছুঁড়ে দিয়েছেন যা চাঁদের আলোয় কারও চোখে পড়েনি।
রেমন্ড প্রশ্ন করে, স্যার রিচার্ড আত্মহত্যা কেন করবেন? আর কেনই বা বনের ভেতর একেবারে হঠাৎ করে?
এ আমি বলতে পারব না। তবে স্যার রিচার্ডের মৃত্যুতে এর চেয়ে ভাল আর কোন ব্যাখা আমি দাঁড় করাতে পারছি না। তবে ভূতে খুন করেছে এটা বিশ্বাস করি না।
মিস মারপেল মাথা নাড়লেন। বললেন, আমার মনে হয় না উনি আত্মহত্যা করেছেন। পুরো ঘটনাটাই অদ্ভূত। আমার মনে পড়ছে গত বছর লেডী শার্পলির পার্টিতে যে ছেলেটি ক্লর্ক গলফ খেলার কোর্ট সাজাচ্ছিল সে একটা গলফের গর্তে পা আটকে পড়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। আমরা প্রথমটায় কেউ টেরই পাইনি সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
কিন্তু খালা তাকে তো আর ছুরি দিয়ে খুন করা হয়নি- রেমন্ড বলল।
না। না। খুন করা হয়েছে তা তো বলছি না। আমি বলতে চাইছি স্যার রিচার্ডকে খুন করার একটাই মাত্র উপায় আছে। কিন্তু তিনি কেন পড়ে গেলেন তার কারনটা জানাও সমান জরুরী। তিনি কিন্তু ডায়নার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কোন শিকড়ে পা বাঁধিয়ে উল্টে পড়াটা খুব স¦াভাবিক।
মিস মারপেলের কথা শেষ হবার আগেই ডাঃ পেন্ডার কৌতহূলী গলায় জিজ্ঞেস করল, আপনি বলছিলেন একটি মাত্র উপায়েই স্যার রিচার্ডকে খুন করা সম্ভব। সেটা কি ?
আমার মনে হয় আপনি জানেন কে খুন করছেন। আমার মনে আছে গত যুদ্ধের সময় আহত জ্যাক বায়ার্নসে দেখতে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সে যুদ্ধক্ষেত্র এড়াতে নিজেই নিজের বাম হাতে ছুরি মেরে দিয়েছিল। অবশ্য আমাকে যখন ঘটনাটা বলছিল তখন লজ্জিত ছিল সে। আমাদের খুনীর সাথেও জ্যাকির এ জায়গাটায় মিল আছে। এলিয়েট নিশ্চয়ই ডানহাতি ছিল? ডানহাতি না হলে অবশ্য তার বাম কাঁধে ছুরি বসানো সম্ভব না। তবে যে উদ্দেশ্যে সে খুনটা করেছে তা মনে হয় পূরন হয়নি।
রেমন্ড শান্ত স্বরে বলল, এলিয়েট? কেন তোমার এমন মনে হচ্ছে?
আর কেউ কিভাবে খুন করবে তাই তো বুঝতে পারছি না। ভূতুড়ে পরিবেশটা বাদ দিয়ে চিন্তা কর। দেখবে তোমারাও বুঝতে পারবে। এলিয়েটই প্রথম রিচার্ডের দিকে এগিয়ে গেল। তাকে উপুড় করল। সে কিন্তু সবাইকে পেছন রেখেই কাজটা করছিল। অনায়াসেই রিচার্ডের হৃদপিন্ড বরাবর একটা ছোরা গেঁথে আবার তার নিজ কোমরে লুকিয়ে ফেলা সম্ভব। পার্টিতে কিন্তু তার সাজ ছিল ডাকাত সর্দার। ডাকাত সর্দারের কোমরের বেল্টে নিশ্চয়ই কিছু অস্ত্র, ছুরি থাকার কথা। আমার মনে আছে তরুনী বয়সে এমনি এক পার্টিতে এক ডাকাত সর্দারের সাথে নেচেছিলাম আমি। তার কোমরের বেল্টে পাঁচটি ছোরা আর দুইটি ড্যাগার গোঁজা ছিল। স্বভাবতই নাচটা সুখকর হয়নি।
সবাই সত্যটা জানার জন্য ডাঃ পেন্ডারের দিকে তাকায়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডাঃ পেন্ডার বললেন, ঘটনা ঘটার পাঁচ বছর পর আমি সত্যটা জানতে পারি। এলিয়েট হেইডেন আমাকে একটা চিঠি লেখে সব জানায়। আমাকে জানানোর কারন তার মনে হয়েছে আমি সব সময় তাকে সন্দেহ করেছি। তার ভাষ্যে পুরো ব্যাপারটাই হঠাৎ করে ঝোঁকের মাথায় করা হয়ে গেছে । কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। সে নিজেও ডায়না এসলিকে পছন্দ করত। কিন্তু সে ছিল দরিদ্র্য আইনজীবী। রিচার্ড মারা গেলে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে যশ আর অর্থ দুটোই তার হাতে আসার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে ডায়নাকেও পাওয়া সম্ভব ছিল। রিচার্ড মাটিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। এলিয়েট তাকে তুলতে গিয়ে কিছু না ভেবেই বেল্টে গোঁজা ছুরিটা রিচার্ডের বুকে গেঁথে দিয়ে আবার বেল্টের অন্য ছুরির পাশে রেখে দেয়। পুরো ব্যাপারটাই হয়েছে ক্ষনিকের চিন্তা থেকে। পরবর্তীতে নিজের উপর থেকে সন্দেহ দূর করার জন্য এলিয়েট নিজেকেই নিজে ছুরিকাঘাত করে।
মিস মারপেল যেমনটা বলছিলেন ঠিক তেমনি রিচার্ডের মৃত্যু থেকে এলিয়েটের কোন লাভ হয়নি। রিচার্ডের সম্পদের উত্তরাধিকারীর তালিকায় এলিয়েট ছিল না। মিস ডায়নাও অন্য জায়গা বিয়ে করেন। চিঠিতে এলিয়েট লিখেছে পুরো পাঁচ বছর নরক যন্ত্রনা ভোগ করেছে সে। আর পারছে না। দক্ষিন মেরুতে একটা অভিযানে অভিযাত্রী হিসেবে চলেছে সে। ফিরে আসার সম্ভবনা কম। অন্তত দেশের জন্য কিছু করে নিজের পাপের বোঝা কমাতে চায় সে।
এক টুকরো নিরবতায় সবাই চুপ করে থাকে। তারপর নিরবতা ভেঙ্গে স্যার হেনরি বলে, দেশের জন্য কিছু করেই মেরছে সে। আপনি আমাদের ওদের সত্যিকার পরিচয় দেননি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি আপনি কার কথা বলছেন।
ডাঃ পেন্ডার মাথা ঝাঁকিয়ে স্যার হেনরির সাথে একমত হয়ে বলল, যদিও এলিয়েট আমাকে বলেছে সেই খুনটা করেছে কিন্তু তারপরও আমি বিশ্বাস করি ও জায়গায় কিছু একটা অশুভ ব্যাপার আছে যা ক্ষনিকের জন্য এলিয়েটে উপর ভর করেছিল বলেই ও ওমনটা করতে পেরেছে।