somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইফতার নিয়ে কিছু কথা

০৮ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সতেজ খেজুর দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে সালাতে যেতেন। যখন সতেজ খেজুর পাওয়া যেতনা, তখন তিনি শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যখন শুকনো খেজুরও পাওয়া যেতনা, তখন তিনি কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন [ সুনান আবু দাউদ (২৫৩৬) ]

উপরোক্ত হাদিসে জানা যায় যে, কি দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইফতার করতেন। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, তিনি ইফতার করতে তড়িঘড়ি করতেন, যখনই মাগরিব সালাতের সময় উপনীত হতো বা সুর্য অস্ত যেত তখনই ইফতার করতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু পরিস্কার ভাবে বলেছেন যে, তিনি খেজুর খেয়েছেন, “মাগরিবের সালাতে যাওয়ার আগে।”

প্রকৃতপক্ষে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাওম ভঙ্গ করতে উৎসাহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের উপর থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ইফতার তাড়াতাড়ি করবে।

তিনি ইফতারের সময় নিম্নের দোয়া পড়তেনঃ “ আল্লাহর রহমতে তৃষ্ণা নিবারন হয়েছে, রক্ত পরিশুদ্ধ হয়েছে এবং পুরস্কার মঞ্জুর করা হয়েছে” [ সুনান আবু দাউদ (২৩৫৭), আলবানি সহীহ সুনান আবু দাউদে একে হাসান হাদীস বলেছেন ]

রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর অভ্যাস ছিলো, তিনি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যেমন আমরা আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসে দেখতে পেয়েছি। এটা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, বিজোড় সংখ্যক খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।

কিন্তু, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের সকালে কখনোই কিছু খেজুর না খেয়ে বাইরে যাননি, এবং সেই খেজুর গুলো সংখ্যায় বিজোড় হতো। [ সহীহ আল বুখারী (৯৫৩) ]

আরো একটি হাদিস আছে যার বর্ণনা কারী হিসাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম বলা হয়ে থাকে, তা হলো এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ যে খেজুর পেলো সে যেন, খেজুর দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে, আর যে তা পেলোনা, সে যেন পানি দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে, আর নিশ্চয়ই পানি হলো পবিত্র করার মাধ্যম। ” [ সুনানে তিরমিযী (৬৯৪) ]

তবে হাদিসটি দুর্বল।

তবে যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর অনুকরণে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত, যদি তা পাওয়া যায়। তবে একজন মুসলিম চাইলে অন্য যে কোনো হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করতে পারেন।

মাগরিবের আগে ইফতারে খাদ্যের ধরণ এবং পরিমান নিয়ে কোনো কঠিন কোনো বিধি- নিষেধ নেই, যদিও এটা পরিস্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই সময় অল্পই খেতেন।

কিছু মানুষের কাছে এটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সালাতের আগে, খেজুরের সাথে সাথে ফাস্ট ফুডের মত আরো কিছু খাবার যেমন, সিঙ্গাড়া, সামোচা কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়া। এই খাদ্য গুলো খেজুরের সাথে নানা মসজিদে, এমনকি মদীনায় নবীর মসজিদেও ইফতারে পরিবেশন করা হয়। এই রীতিতে কোনো সমস্যা নেই। মূল কথা হলো একজন মুসলিম সময় সম্পর্কে সচেতন হবে। তারা পানাহারে নিজেদের এতটাই মশগুল করে রাখবে না যে, সালাত পরে আদায় করতে হয় কিংবা এর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা হয়। পুরুষদের জন্য এটা একটি ভুল যে, শুধু মাত্র ইফতার খেতে ব্যাস্ত থাকার কারণে মসজিদে জামাতে সালাত আদায় না করা। ইফতার হলো তা যা মুসলিমদের সালাতের পূর্বে সাওম ভঙ্গের জন্য খাওয়া উচিৎ। সালাতের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত তারা যে কোনো হালাল খাদ্য ভক্ষন করার ব্যাপারে স্বাধীন।

আল্লাহ বলেনঃ

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

অর্থঃ রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।

[সুরা বাকারাঃ আয়াত নং-১৮৭]

খাবার গ্রহণের অগ্রাধিকার ভিত্তিক কোনো সময় নেই, শুধু মাত্র সেহরী খাওয়ার সময় ব্যাতিত। অন্যথায় রাতের যে কোনো সময় মুসলিমরা খাবার গ্রহণ করতে পারে। কিছু মানুষ মাগরিব এর সালাত এর পর পেট পুরে খেতে পছন্দ করে। আবার অনেকে তারাবী পড়ার পর মূল খাবার খায়। মানুষের নানা রকম ব্যাক্তিগত পছন্দ থাকে। এ ব্যাপারে পরিবার ও সংস্কৃতি ভেদে নানা রকম রীতি পরিলক্ষিত হয়। তবে একজন মুসলিম রমজানে খাবার ব্যাপারে নুন্যতম সেই পরিমিতি বোধ দেখাবে যা সে, বছরের অন্য সময় দেখিয়ে থাকে, যদি সে এর চেয়ে বেশী পরিমিতি বোধ দেখাতে না পারে। তারা রমজানের রাত্রী গুলোতে খাবার নিয়ে অধিক ব্যস্ত থাকা পরিহার করবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আদম সন্তান পেটের চেয়ে এমন কোনো পাত্র নাই, যা তারা জঘন্য ভাবে পূর্ণ করে। আদম সন্তানের পিঠ সোজা রাখার জন্য কয়েকটি দানায় যথেষ্ঠ। তাকে যদি বেশী খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ তার খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ বাতাসের জন্য নির্ধারণ করে নেয়। [ সুনানে তিরমিযী (২৩৮০) এবং মুসনাদে আহমদ (১৭১৮৬)। আলবানী তার সহীহ আল জামীতে হাদিস দুটিকে সহীহ বলেছেন ]

সুত্রঃ http://www.islamtoday.com

(ইংরেজী থেকে অনুদিত)

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×