বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, “নিশ্চয়ই মানুষের কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল, এবং প্রত্যেকের কর্মফল হবে তার নিয়তের উপর। যেমন, যার হিজরতের নিয়ত হবে আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যেই হবে। এবং যার হিজরতের নিয়ত হবে পার্থীব কোনো স্বার্থ হাসিল, অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করা, তাহলে তার হিজরত এর প্রতিফল সে যে উদ্দেশ্যে করেছে, তাই পাবে।” ( সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ মানুষের সকল কর্ম এর উপর নির্ভরশীল। নিয়ত ব্যতিত মানুষের কোনো আমলই কবুল হয়না।
ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে বলতে হয় নিয়ত হচ্ছে এক রকম ইচ্ছা বা অন্তরের চালিকা শক্তি, যা কোনো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আপনি যে সময় কোনো কাজ করতে চান, সেই সময়টিতেই কাজটি করার নিয়ত থাকতে হবে। আপনার হৃদয় নিয়তের সাথে বাঁধা থাকবে এবং আপনি তা বিচ্ছিন্ন করতে পারবেননা। নিয়ত মানুষের জিহবা দ্বারা উচ্চারিত কোনো উক্তি নয়ঃ “ ও আল্লাহ আমি অমুক অমুক ইচ্ছা পোষন করি----” না এটি মনের ভেতর আন্দোলিত কোনো চিন্তা। এটা কোনো কাজ করার চালিকা শক্তি বা ইচ্ছা। যখন আপনার নিয়তের উপস্থিতি আছে, তখন মুখে বা অন্তরে কিছু বলার কোন প্রয়োজন নেই।
নিয়তের পেছনে কারণ হচ্ছে দুই বা ততোধিক কর্মকে আলাদা করা, যেমন যোহরের সালাত এবং আছরের সালাত। নিয়ত শুধুমাত্র আল্লাহর খাতিরেই পরিচালিত হতে হবে। এটাকে এখলাস (বিশুদ্ধতা) বলে। বিশুদ্ধ এবং অকপট নিয়তের ব্যপারে কুরান মজীদে আল্লাহ বলেনঃ
“ তাদেরকে এ ছাড়া নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই স্বঠিক ধর্ম।” ( সুরা বাইয়্যিনাহঃ আয়াত- ৫)
তিনি আরো বলেনঃ
“ যে কেউ ইহকাল কামণা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। আর যারা পরকাল কামণা করে এবং মুমিন অবস্থায় যথাযথ চেষ্টা- সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” ( সুরা আল-ইসরাঃ আয়াত ১৮-১৯)
আল্লাহ আরো বলেন,
“ তাদেরকে সৎপথে আনার দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজের উপকারার্থেই কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা যে অর্থ ব্যয় করবে, তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে এবং তোমার প্রতি অন্যায় করা হবেনা। ” ( সুরা বাকারাঃ আয়াত-২৭২)
আমরা উপরে উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে দেখেছি, “মানুষের আমল পূর্ণরূপে ঈমানের উপর নির্ভরশীল” এর অর্থ মানুষের কাজ নিয়ত গুণেই বিচার্য্য হবে। আবু আম্মার ইয়াসির কাজী তার Riyaa – Hidden Shirk বই এর ১৮ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ
“The hadeeth on intention indicates that every delibrate action of a person has an
intention behind it. The intention may be praiseworthy, condemnable, or neither of the two, but an intention must exist. In other words, every action that a person performs has a goal or a purpose. The Prophet (sallallahu alayhe wa sallam) went on to say that every person will achieve that which he intended.”
“ উপরোক্ত হাদীস এটাই নির্দেশ করে যে, প্রতিটা মানুষেরই স্বেচ্ছায় কৃত যে কোনো আমলের পেছনেই কোনো নিয়ত থাকে। নিয়ত হতে পারে প্রশংসনীয় বা নিন্দনীয়, অথবা এর একটিও নয়, কিন্তু নিয়ত অবশ্যই থাকবে। অন্য কথায়, প্রতিটা কাজ যা একজন মানুষ করে, তার একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, প্রত্যেক মানুষ তাই পাবে যার নিয়ত সে করেছে।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার চেহারা বা সম্পদের দিকে দেখেননা। তিনি শুধু তোমার অন্তর ও কর্ম দেখেন।” ( বুখারী ও মুসলিম)
আবু বকর আল- জাযায়রি তার মিনহাজ আল ইসলাম নামক গ্রন্থের প্রথম খন্ডে ১৪৫-১৪৬ পৃষ্ঠায় বলেনঃ
“Looking at the hearts means looking at the intentions, for it is the intention that is the driving and motivating force behind the deed.
Allahs Messenger (sallallahu alayhe wa sallam) also said: ‘He who seriously considered doing a good deed but did not do it, will have one good deed recorded for him.’ (Muslim).
Just Seriously considering a good deed is a good deed itself by which one earns a
reward. This is due to the virtuousness of having a proper intention.”
“অন্তরের দিকে তাকানোর অর্থ হচ্ছে নিয়তের দিকে তাকানো, নিয়তই কোনো কর্মের পেছনে চালিকা শক্তি। আল্লাহর রসুল আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি একটি ভালো কাজ করার সংকল্প করে, কিন্তু তা না করে, তাহলে তার আমলনামায় একটি ভালো কাজের সওয়াব লিখিত হবে। ( মুসলিম)।
কোনো একটি ভালো কাজ করার ইচ্ছাই তার জন্য ভালো কাজের সওয়াব আণয়ন করে। এইটি ভালো নিয়তের ফজিলতের কারনেই নির্ধারিত হয়।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ মানুষকে তাদের নিয়ত অনুসারেই একত্রিত করা হবে” ( সুনানে ইবনে মাজা)
মুসলমানদের প্রথম প্রজন্ম বিশুদ্ধ ও অকপট নিয়তের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। আমরা ইবনে রজব আল-হাম্বলী প্রণীত জামি আল উলুম নামক গ্রন্থ থেকে প্রাথমিক প্রজন্ম থেকে বিবৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে উপসংহার টানব।
ফুকাইল বিন ইয়ায নিম্নোক্ত আয়াত সম্মন্ধে বলেন, “ যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?” ( সুরা আল-মুলকঃ আয়াত ২) – কে এতে অকপট এবং বিশুদ্ধ, যদি কেউ অকপট হয়, কিন্তু বিশুদ্ধ নয়, তাহলে তার কর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। আবার যদি বিশুদ্ধ হয় তবে অকপট নয়, তাও গ্রহণ যোগ্য নয়। এটা আল্লাহর কাছে তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা বিশুদ্ধ ও অকপট হবে। এটা তখনই অকপট হবে, যখন তা শুধুমাত্র আল্লাহর খুশীর উদ্দেশ্যেই করা হবে, আর তখনই বিশুদ্ধ হবে, যখন তা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুসারে করা হবে।
ইয়াহিয়া ইবনে কাসীর বলেন, “আগে নিয়ত শিখুন, কেননা তা আমলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ”
জায়েদ আশ-শামী বলেন, “ নিশ্চয়ই আমি চাই, আমার প্রতিটা কাজের জন্যই নিয়ত থাকুক, এটা খাওয়া বা পান করা হলেও”
তিনি আরো বলেন, “ভালো কিছু আকাঙ্ক্ষা করে সব কিছুর জন্যই নিয়ত করুন, যদি শৌচাগারে গমণের উদ্দেশ্যেও হয়।”
ইবনুল মুবারক বলেন, “ একটি ছোট আমলও তার নিয়তের কারণে অনেক বড় ফল দিতে পারে, আবার অনেক বড় কাজ শুধুমাত্র নিয়তের কারণে ছোট হয়ে যায়”।
ইবনে জিলান বলেন, তিনটি জিনিস ছাড়া কোনো কর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়ঃ আল্লাহ ভীতি, ভালো নিয়ত ও বিশুদ্ধতা ( অর্থাৎ সুন্নাহ অনুসারে করা)
ফুদাইল ইবনে ইয়ায বলেন, “ আল্লাহ আপনার কাছে থেকে নিয়ত ও ইচ্ছা দেখতে চায়”।
এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর।
সূত্রঃ আবুল গাজী আল ইরাকী
( ইংরেজী থেকে অনুদিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৩