বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا اهْبِطُواْ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ
অর্থঃ অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।( সুরা বাকারাঃ আয়াত নং-৩৬)
এরিক ভন দানিকেন, একজন শখের প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং বিভিন্ন গ্রন্থের প্রণেতা। সুইস বংশদ্ভূত এই প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রাচীন জনগোষ্ঠীর উপর ভীন গ্রহের উন্নত প্রাণীর প্রভাবের প্রবক্তা। তিনি বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক রহস্যকে নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ভাবে বিচার করেন যে, প্রাচীন কালে এ পৃথিবীতে এলিয়েনের আবির্ভাব হয়েছিল, পৃথিবীর বর্তমান মানবজাতি তাদেরই বংশধর। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত তার বই ‘Chariots of God’ ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রস্তাবিত তত্ত্ব হচ্ছে কোনো এক সুদূর অতীতে ভিন গ্রহের কোনো এক অভিযাত্রী দল স্পেস শীপ নিয়ে পৃথিবীতে আগমণ করে। অতঃপর তাদের পরিবহণের জন্য ব্যাবহৃত মহাকাশ যানটি কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের আর নিজ গ্রহে ফেরার কোনো উপায় থাকেনা, বাধ্য হয়ে তারা পৃথিবীকে নিজেদের আবাসস্থল করে নেই। এখানে সভ্যতার কোনো উপকরণের উপস্থিতি না থাকায়, মানব সভ্যতার আদিম অবস্থায় নিপতিত হয়। এরই মধ্যে কয়েক প্রজন্ম গত হয়ে যায় এবং তাদের পিতৃ গ্রহ থেকে আরো এক দল অভিযাত্রী গোলাকার যানে করে তাদের খোঁজ নিতে পৃথিবীতে আসে এবং এসে এক আদিম জাতির পরিচয় পায়। তখনকার আদিম মানুষ এই অভিযাত্রীকে দেবতা মনে করে আর তাদের গোলাকার মহাকাশ যানকে মনে করে রথ(Chariot), এই ভাবে দেবতা ও রথের পৌরাণিক কাহিনীর সূচনা হয়। তিনি তার লিখনীতে বিভিন্ন ঐশী ধর্ম ও গ্রন্থের অযৌক্তিকতা প্রমাণে প্রয়াসী হন। তিনি বিশ্বাস করেন পিরামিড, স্টোনহেঞ্জ, ইনকা সভ্যতা এমনকি প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা এলিয়েনের অবদান। এরিক ভন দানিকেনের সাথে ফ্রিমেসন্স এর সরাসরি কোনো যোগাযোগ আছে এরূপ কোণ প্রমান আমাদের হাতে নেই, তবে তাকে অনেকে ফ্রি মেসন্সদের এজেন্ট বলে থাকেন। তবে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে, কারন ফ্রিমেসন্সদের কাবালা চর্চার সাথে প্রাচীন অনেক নকশার মিল পাওয়া যায়, আর কাবালা এক প্রকার কালো যাদুবিদ্যা যা কিনা শয়তানের সাথে তার সম্পর্ককে ইংগিত করে। চার্লস ডারউইন যেখানে শয়তানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিতে পারেন, স্রষ্টার অস্তিত্ত্বে অবিশ্বাসী দানিকেন মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করতে শয়তানের তত্ত্ব হাজির করতেই পাবেন।
আরও একটি তত্ত্বের কথা পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে, একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী মানবজাতির পূর্বপুরুষকে ভীন গ্রহের অধিবাসী বলে দাবী করেছেন। রিপোর্টটি নিম্নরূপঃ
“পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বলে যারা নিজেদের দাবি করে, সেই মানুষ নাকি আসলে এ গ্রহের প্রাণীই নয়! মার্কিন পরিবেশবিদ অ্যালিস সিলভারের লেখায় উঠে আসছে এমনই চমকপ্রদ তথ্য৷
অ্যালিস তার নতুন বই 'হিউম্যানস আর নট ফ্রম আর্থ: অ্যা সায়েন্টিফিক ইভোলিউশন অব দ্য এভিডেন্স' বইয়ে দাবি করেছেন, মানুষ পৃথিবীর জীবই নয় বরং ভিনগ্রহের প্রাণী৷ বহু বছর আগে ভিনগ্রহের কিছু প্রাণী পৃথিবীতে এসেছিল৷ তাদের সঙ্গেই নাকি পৃথিবীতে আসে মানুষ৷ জনাকয়েক মানুষ এ গ্রহে রেখে বাকিরা নিজেদের গ্রহে ফিরে যায়৷
শুনে অবাস্তব মনে হলেও অ্যালিস তার দাবির ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী৷ এর স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণও দিয়েছেন তিনি৷ অ্যালিসের দাবি, কম মাধ্যাকর্ষণ শক্তিবিশিষ্ট কোনও গ্রহেই জন্ম মানুষের৷ তাই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না তারা৷ অধিকাংশ মানুষই তাই পিঠ ও কোমর ব্যথায় ভোগে৷
তিনি মনে করেন, ভিনগ্রহের উন্নত প্রজাতিকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল, তাই মানুষই এই গ্রহের সবচেয়ে উন্নত জীব৷ কিন্ত্ত পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি তারা৷ সূর্যের আলোয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিক ভাবে যে সমস্ত খাবার-দাবার পাওয়া যায়, তা মানুষের পছন্দ হয় না৷ তাই খুব সহজেই ক্রনিক রোগে আক্রান্তও হয়ে পড়ে৷
এ প্রসঙ্গে শিশুর জন্মের উদাহরণও দিয়েছেন অ্যালিস৷ তিনি বলেন, ‘মানব শিশুর জন্মের সময় মাথাটা এতই বড় হয় যে অনেক সময় মায়েদের প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়৷ কখনও আবার মা ও শিশুর প্রাণহানিও ঘটে থাকে৷’
অ্যালিসের দাবি, পৃথিবীর আর কোনও প্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় না৷ টিকটিকির মতো বেশ কিছু সরীসৃপ দিনের পর দিন রোদে থাকলেও তাদের ত্বকে কোনও ক্ষতি হয় না৷ অথচ মানুষ কয়েক দিন টানা 'সানবাথ' (সূর্যস্নান) নিলে , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়৷
এমনকি মানুষের বডিক্লক দিনে ২৫ ঘণ্টার ভিত্তিতে তৈরি৷ পৃথিবীর সময়ের হিসেবের সঙ্গে তা মেলে না বলেই প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে মানুষ৷ মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও এমন ভুরি ভুরি প্রমাণ মিলবে বলে দাবি করেন অ্যালিস ৷
কিন্তু উন্নত প্রজাতির মানুষকে তবে হঠাৎ কম উন্নত গ্রহে এনে ছেড়ে দেয়া হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যালিস বলেন, ‘পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব অনেকটাই দ্বীপান্তরে নির্বাসনের মতো৷ ভিনগ্রহের প্রাণীদের কাছে পৃথিবী অনেকটা জেলখানার মতো৷ প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ খুবই হিংস্র৷ তাই সঠিক আচার-আচরণ শিখতেই পৃথিবীতে নির্বাসনে পাঠানো হয় তাদের৷’
নিজের এই বই যে বিতর্ক তৈরি করবে, সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল এই মার্কিন পরিবেশবিদ৷ বিতর্ককে তাই রীতিমতো স্বাগতও জানিয়েছেন তিনি৷ অ্যালিসের ধারণা, তার তথ্যকেই সত্যি বলে ধরে না নিয়ে মানুষ যদি তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে, তবে তার দাবির স্বপক্ষে আরও প্রমাণ মিলতে পারে৷ খুলে যেতে পারে বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তও৷”
এ ধরনের রিপোর্ট নতুন কিছু নয়, একটি নাস্তিক পৃথিবী বানানোর জন্য ফ্রিমেসন্সদের সেই মহাপরিকল্পনারই একটি অংশ।
তবে এলিস নিজের অগোচরে একটি সত্য স্বীকার করে নিয়েছেন, আর তা হলো মানুষ আসলেই এখানে এলিয়েন। আমরা মুসলমানেরা এ কথাটিই বলে আসছি, মানুষকে পৃথিবীতে নির্বাসন দেয়া হয়েছে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। তার কর্ম ফল অনুসারে সে তার আদি গৃহে ফিরে যাবে ( জান্নাত ), নতুবা স্রষ্টার অবাধ্যতার জন্য অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। মোদ্দা কথা প্রকৃতই মানুষ এখানকার আদিবাসী নয়, আগন্তুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:০৬