'আঠার বছরের টগবগে তারুণ্যদীপ্ত যুবক জয়নাল আবেদীন চরের সন্ধান। নদীর ঢেউয়ের মতো প্রবাহমান তার জীবন। অজস্র চর ভাঙ্গা-গড়ার খেলার সাক্ষী জয়নাল নিজেকে খাপ খাইয়ে চালিয়ে যাচেছ পড়ালেখা। ডানপিটে চরের ছেলেটি সবেমাত্র কলেজে পড়ে। বাবা ডাঃ মুকবুল আহমেদ চৌধুরীর খুব ইচ্ছা জয়নালকে ডাক্তারী পড়াবে। এই মহান পেশায় ছেলে নিয়োজিত থেকে গ্রামের মানুষের সেবা করে যাবে। বড়ই অভাব ডাক্তারের এ অজপাড়া গ্রামে। পানিপড়া, তাবিজ, জ্বীন হুজুর বড়জোর আনাড়ি হোমিওপ্যাথির ডাক্তারই এখানের ভরসা। সবশেষ ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পরবর্তী সময়ে কলেরা বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। মানুষের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের অজ্ঞতা এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, ডায়েরিয়ার রোগীকে পানি পান করা থেকে বিরত রেখে তাবিজ লাগিয়ে দেওয়া হয় কারণ পানি খেলে ডায়েরিয়ার প্রকোপ আরো তীব্র মাত্রায় হওয়ার নাকি সম্ভাবনা বিদ্যমান। শিশুর কৃমির কারণে পেট ব্যাথা অথচ তাকে জ্বীন হজুরের কাছে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে পিটিয়ে ভূত তাড়ানোর নামে চিকিৎসা করা হচ্ছে। গর্ভবতী মহিলার রক্তক্ষরণ হচ্ছে অথচ তাকে হোমিওপ্যাথির বড়ি খাওয়ানো হচ্ছে খালি পেটে তিন বেলা। এমন সব অদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুকবুল সাহেবের বড় ইচ্ছা তার জয়নালকে ডাক্তার বানাবে, গ্রামের মানুষজনকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে। সুনাম কুড়াবে বাপের ছেয়ে হাজারো গুণ বেশী। সবাই বলবে বাপকে বেটা ।
না, জয়নাল তা মানতে নারাজ। তার একটাই ইচ্ছা এখন যুদ্ধে যেতে হবে। সাফ কথা, মা-মাতৃভূমি বাঁচলেই তো ডাক্তারের প্রয়োজন হবে, চিকিৎসা হবে। অভিমানী ছেলে কথা রাখে নি, কোন এক ভোরে মায়ের কদমমুচি করেই পালালো। মা আছিয়া খাতুন যেন স্বপ্নের ঘোরে ছেলেকে চলে যেতে দেখেছেন। মাত্র আঠার বছরের যুবক যুদ্ধের কি বুঝে তা ওনার মাথায় ধরে না। যেন নিজের ইচ্ছায় জীবন বিলিয়ে দেওয়ার খেলায় মেতেছে ছেলেটি। যাওয়ার আগে জয়নাল বলে গিয়েছে, মা তোমার পায়ের ছোঁয়াই আমার সাহস, তোমার বুক ভরা দোয়াই আমার বুলেট। এই মাতৃভূমিতে যদি আমার মায়ের নিরাপদ ঘুমও নিশ্চিত করতে না পারি তবে বেঁচে থেকেও বা লাভ কি!'
- একাত্তরের অবুঝ বালক, পৃ-৩১
**উপন্যাসটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয় মিজান পাবলিশার্স থেকে