ছেলেটা বলে, আচ্ছা! কেমন হবে বল তো, আমাদের বাবুর চোখ যদি হয় আকাশ রাঙা?
মেয়েটা একটু পুলকিত হয়। মনে মনে আকাশ রাঙা এক জোড়া নবীন চোখ কল্পনা করে সে। একটু খুশি হয়ে ওঠে যেন। তারপর একটু ভেবে বলে, ‘উমম... আচ্ছা, আকাশ রঙের সাথে একটু সবুজ আভা থাকা চাই। কি দারুণই না লাগবে তাহলে!’
ছেলেটা খুশি হয়। চোখ দিয়ে একরাশ ভালবাসা ছড়িয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও প্রতুত্তরে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আরেকটু চেপে বসে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা তখন বলে, ‘আমাদের বাবুটার হবে টুক টুকে একটা গোলগাল মুখ’।
মেয়েটা যোগ করে, ‘আর যখন সে মিষ্টি করে হাসবে, দুগালে পড়বে এই এত্ত সুন্দর দুটো টোল’।
ছেলেটা এবার মেয়েটার হাত ধরে। টুন টুন করে কয়েকটা শব্দ হয় যেন। চুড়ির। মেয়েটা তার হাতের চাপ একটু বাড়িয়ে দেয়। এই চাপটুকু দিয়ে সে তার ভালবাসা বুঝিয়ে দেয় ছেলেটাকে। তারপর মেয়েটা বলে, ‘আচ্ছা, আমাদের বাবুর চুল কোকড়া হলে কেমন হবে বলতো?’
ছেলেটা একটু ভাবে। তারপর বলে, ‘কোকড়া চুল দেখতে ভালই লাগে আমার। কিন্তু কোকড়া চুলের মানুষ হয় একটু বদ মেজাজি। প্রতিদিন সকালে চুল আচড়াতে দিয়ে যেই চিরুনি আটকে যায় অমনি মেজাজ যায় বিগড়ে’। তারপর তারা দুজনেই ভেবে নেয় যে তাদের বাবুর চুল হবে সিল্কি। আর একটু লালচে কাল রঙের।
এর পর তাদের আলোচনা চলতেই থাকে। বাবু লম্বা হবে, নাকি মাঝারি উচ্চতার; ফর্সা, নাকি ট্যান; এসব হাজার বিষয়ে কথা বলে তারা। তারপর একসময় তারা দুজনেই বলে, ‘আমাদের হবে একটা ছেলে। যে তার সবুজাভ আকাশী চোখ দিয়ে জয় করে নেবে পৃথিবীর সব মেয়ের মন!’ এসব বলার পর ছেলেটা মেয়েটার বাম কানের কাছে একটা চুমু দেয়। তখন মেয়েটা তার টোল খাওয়া মুখে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। ছেলেটাও একটু হাসে। মিষ্টি করে।
টেবিলের ওপাশ থেকে একটা ভরাট কন্ঠ বলে ওঠে, ‘স্পেসিফিকেশন সব নোট করা হয়েছে। আপনাদের বাচ্চাটা হতে যাচ্ছে ঠিক এরকম’। বলে একটা বাটনে চাপ দেয় সে। টেবিলের উপর ভেসে ওঠে একটা বাচ্চার হলোগ্রাফিক ইমেজ। বাচ্চাটা তার হবু বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে তার টোল খাওয়া গালে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আকাশী-সবুজ চোখে তখন তার রাজ্যের বিষ্ময়! মেয়েটার চোখে পানি চলে আসে। এবার হাতের চাপ বাড়িয়ে দেয় ছেলেটা। ভরাট কন্ঠটা মনে করিয়ে দেয় যে, তাদের বাচ্চাটা এক্সাক্ট এরকম হবেনা। নেচারাল কিছু বায়োলজিকাল মর্ফিং অ্যালাউ করা হবে। যাতে সব বাচ্চা একই রকম না হয়ে যায়।
তারপর সে আরো বলে, ‘নেক্সট একটা ওভারী চেম্বার ফাকা হবে দশ দিন পরে। তারপর কালচার হতে প্রায় দশ মাস। অবশ্য এক্সাক্ট ডেটটা একটু এদিক ওদিক হতে পারে। তার মানে ঠিক দশ মাস দশ দিন পরে যোগাযোগ করছেন আপনারা’।
এরপর প্রয়োজনীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার করে, ছেলেটা আর মেয়েটা একে অপরের হাত ধরে বেরিয়ে আসে দেশের সব চেয়ে বড় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম থেকে।