এগুলোকে বলে নাগা মরিচ। বাংলাদেশে একে বোম্বাই, ফোটকা বা কামরাঙা মরিচ বলেও ডাকা হয়। অতিরিক্ত ঝালসম্পন্ন এই মরিচের ঝাল SHU স্কেল অনুসারে ১০,০০,০০০; টাবাস্কো সসের চেয়ে ৪৫১ গুণ বেশি। তুলনা হিসেবে বলা যায় দৈনন্দিন যে কাঁচামরিচ আমরা খাই তার SHU ১০০ থেকে ১,০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে; গড়ে ৩০,০০০।
ছবির নাগাগুলো আমার পার্সোন্যাল স্টক। যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখি। এ ছাড়া আমার খাওয়া বিস্বাদ। কেন এই মরিচপ্রীতি সেটা বলার আগে মরিচ নিয়ে কয়েকটা তথ্য শুনুন।
[] স্কোভিল হিট ইউনিট, সংক্ষেপে SHU স্কেল দিয়ে মরিচের ঝালের মাত্রা মাপা হয় (নামটা এর আবিষ্কারক অ্যামেরিকান ফার্মাসিস্ট উইলবার স্কোভিলের নামানুসারে)।
[] এই স্কেল অনুসারে সবচেয়ে ঝাল মরিচ হচ্ছে ক্যারোলিনা রিপার (২২,০০,০০০ SHU)। এর ওপরে সম্ভবত ড্র্যাগন ব্রিদ - ২.৬ মিলিয়ন SHU.
[] মরিচের ঝালের যে লংকাকান্ড আমরা অনুভব করি সেটি আসলে স্বাদ নয় বরং ব্যাথার অনুভূতি।
[] মরিচ কিন্তু আসলে আম কাঁঠালের মতোই এক ধরণের ফল কিন্তু ব্যবহৃত হয় মশলা হিসেবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ক্যাপসিকামও মরিচ। কামড়ে খান না শশার মতো। মরিচ হচ্ছে ক্যাপসিকাম গণের সোলানেসি পরিবারের উদ্ভিদ।
[] মরিচের খোসার তুলনায় বিচিতেই বেশি SHU, আবার পেকে গেলেও SHU অনেক বেড়ে যায়।
মরিচের অসংখ্য, অসংখ্য, অসংখ্য দুর্দান্ত গুণ আছে। বেশি খেলে কী হতে পারে, সেটাও মানুষভেদে এবং স্বাস্থ্যের অবস্থাভেদে আলাদা। সেই আলোচনা গুগলে আছে; দেখে নেবেন ইচ্ছা হলে।। বরং মরিচ কীভাবে 'দিল খুশ' করে দেয়, সেটা বলি।
মরিচে (এবং যে কোন মশলাদার জিনিসে) থাকে ক্যাপসাইসিন নামের একটা রাসায়নিক উপাদান। আর আমাদের মুখের ভেতর আছে টিআরপিভি১ নামের রিসিপটর (এটা শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও আছে)। এর কাজ মস্তিষ্ককে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতির সিগন্যাল দেয়া।
ক্যাপসাইসিন লালায় মিশে গেলেই মস্তিষ্ক ভাবে যে আগুন লেগেছে কারণ ক্যাপসাইসিন শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যাথার অনুভূতি তৈরি করে। মস্তিষ্ক তখন তীব্র রক্তপ্রবাহ, দ্রুত শ্বাস - সবই বাড়িয়ে দেয় ইন্টারন্যাল কুলিং সিস্টেম চালু করার জন্য। শরীর ঠান্ডা করতে হবে না?
ব্যাপারটা অনেকটা জোরে দৌড়ে আসা বা এক্সারসাইজ করার পর যা হয় আর কি। খেয়াল করলে দেখবেন অনেক ঝাল লাগলে লোকে হাঁপায়। সেটা এজন্যই।
এইবারে ওই যে পুড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাথার অনুভূতিও তৈরি করেছে ক্যাপসাইসিন, সেটাতে ভোদাই হয়ে যায় মস্তিষ্ক। সে তখন আর স্পাইসিনেস এবং ব্যাথার মধ্যে পার্থক্য করতে না পেরে 'এন্ডোরফিন হরমোন' ছড়িয়ে দেয় অনেকটা।
এই হরমোনটাকে 'হ্যাপি হরমোন'-ও বলে কারণ এটা আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে ব্যাথা কমানোর জন্য। তাই মনটাও ভাল্লাগে অনেক। এই অবস্থাটাকে বলে 'পিপার হাই ইফেক্ট'। এক্সারসাইজ করলেও এন্ডোরফিন বেরোয়; অনুভূতিও তাই এরকমই।
তাই Spicy foods are the healthiest drug in the world.
এইবার আমার মরিচপ্রীতির কারণ বলি। কারণটা হচ্ছে - আমি জানি না।
সত্যিই জানি না। তবে আমার ছোটছেলেরও এই প্রীতি আছে এবং তার সাথে অনেক কিছুতেই আমার ব্যাপক মিল। এই 'পিপার হাই ইফেক্টটা' সম্ভবত অ্যাডিক্টিভ। খাও, ঝাল লাগবে, ভালো লাগবে, আরো বেশি খাও, আরও বেশি হ্যাপি হরমোন - এই সাইকেলে চলতে থাকে।
এই ব্যাপারটা নিজেকে দিয়েই বের করেছি অনেক বছর ধরে খেয়াল করে। এখন এক বেলা ভাতের সাথে গড়ে দুই থেকে তিনটা ওই নাগাটা লাগে। সাথে সকালের নাস্তায় ১৪-১৫টা কাঁচামরিচ ডিমপোচের সাথে। আগে ইনটেক কম ছিল। কয়েক বছরে আস্তে আস্তে বেড়েছে। মরিচের দামের লম্ফ দেখেই আমি নাগায় ঢুকেছিলাম। আর হ্যাঁ, এতে আনার কখনই বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি, হয় না।
আমাকে সম্ভবত 'হটচিলিফাইল' ডাকা চলে।
__________
পুনশ্চ:
কয়েকজন আমাকে বলেছিল আমার এই বেশি মরিচ খাওয়াটা আসলে শো-অফ করা; ম্যাসক্যুলিনিটি (!) দেখানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা। হায় রে কপাল! তাদের কে বোঝাবে ব্যাপারটা সিম্পল ড্রাগ অ্যাডিকশন ছাড়া আর কিচ্ছু না?
বিঃ দ্রঃ
তখ্যগুলো অবশ্যই আমি আবিষ্কার করিনি। সবই আমাকে মামা দিয়েছে। আমি কেবল নাগাগুলোকে কিনে এনেছি। তথ্যে কিছু ভুল থাকলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫