somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মির্চিফাইল

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এগুলোকে বলে নাগা মরিচ। বাংলাদেশে একে বোম্বাই, ফোটকা বা কামরাঙা মরিচ বলেও ডাকা হয়। অতিরিক্ত ঝালসম্পন্ন এই মরিচের ঝাল SHU স্কেল অনুসারে ১০,০০,০০০; টাবাস্কো সসের চেয়ে ৪৫১ গুণ বেশি। তুলনা হিসেবে বলা যায় দৈনন্দিন যে কাঁচামরিচ আমরা খাই তার SHU ১০০ থেকে ১,০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে; গড়ে ৩০,০০০।


ছবির নাগাগুলো আমার পার্সোন্যাল স্টক। যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখি। এ ছাড়া আমার খাওয়া বিস্বাদ। কেন এই মরিচপ্রীতি সেটা বলার আগে মরিচ নিয়ে কয়েকটা তথ্য শুনুন।


[] স্কোভিল হিট ইউনিট, সংক্ষেপে SHU স্কেল দিয়ে মরিচের ঝালের মাত্রা মাপা হয় (নামটা এর আবিষ্কারক অ্যামেরিকান ফার্মাসিস্ট উইলবার স্কোভিলের নামানুসারে)।

[] এই স্কেল অনুসারে সবচেয়ে ঝাল মরিচ হচ্ছে ক্যারোলিনা রিপার (২২,০০,০০০ SHU)। এর ওপরে সম্ভবত ড্র‍্যাগন ব্রিদ - ২.৬ মিলিয়ন SHU.

[] মরিচের ঝালের যে লংকাকান্ড আমরা অনুভব করি সেটি আসলে স্বাদ নয় বরং ব্যাথার অনুভূতি।

[] মরিচ কিন্তু আসলে আম কাঁঠালের মতোই এক ধরণের ফল কিন্তু ব্যবহৃত হয় মশলা হিসেবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ক্যাপসিকামও মরিচ। কামড়ে খান না শশার মতো। মরিচ হচ্ছে ক্যাপসিকাম গণের সোলানেসি পরিবারের উদ্ভিদ।

[] মরিচের খোসার তুলনায় বিচিতেই বেশি SHU, আবার পেকে গেলেও SHU অনেক বেড়ে যায়।


মরিচের অসংখ্য, অসংখ্য, অসংখ্য দুর্দান্ত গুণ আছে। বেশি খেলে কী হতে পারে, সেটাও মানুষভেদে এবং স্বাস্থ্যের অবস্থাভেদে আলাদা। সেই আলোচনা গুগলে আছে; দেখে নেবেন ইচ্ছা হলে।। বরং মরিচ কীভাবে 'দিল খুশ' করে দেয়, সেটা বলি।


মরিচে (এবং যে কোন মশলাদার জিনিসে) থাকে ক্যাপসাইসিন নামের একটা রাসায়নিক উপাদান। আর আমাদের মুখের ভেতর আছে টিআরপিভি১ নামের রিসিপটর (এটা শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও আছে)। এর কাজ মস্তিষ্ককে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতির সিগন্যাল দেয়া।

ক্যাপসাইসিন লালায় মিশে গেলেই মস্তিষ্ক ভাবে যে আগুন লেগেছে কারণ ক্যাপসাইসিন শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যাথার অনুভূতি তৈরি করে। মস্তিষ্ক তখন তীব্র রক্তপ্রবাহ, দ্রুত শ্বাস - সবই বাড়িয়ে দেয় ইন্টারন্যাল কুলিং সিস্টেম চালু করার জন্য। শরীর ঠান্ডা করতে হবে না?

ব্যাপারটা অনেকটা জোরে দৌড়ে আসা বা এক্সারসাইজ করার পর যা হয় আর কি। খেয়াল করলে দেখবেন অনেক ঝাল লাগলে লোকে হাঁপায়। সেটা এজন্যই।


এইবারে ওই যে পুড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাথার অনুভূতিও তৈরি করেছে ক্যাপসাইসিন, সেটাতে ভোদাই হয়ে যায় মস্তিষ্ক। সে তখন আর স্পাইসিনেস এবং ব্যাথার মধ্যে পার্থক্য করতে না পেরে 'এন্ডোরফিন হরমোন' ছড়িয়ে দেয় অনেকটা।

এই হরমোনটাকে 'হ্যাপি হরমোন'-ও বলে কারণ এটা আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে ব্যাথা কমানোর জন্য। তাই মনটাও ভাল্লাগে অনেক। এই অবস্থাটাকে বলে 'পিপার হাই ইফেক্ট'। এক্সারসাইজ করলেও এন্ডোরফিন বেরোয়; অনুভূতিও তাই এরকমই।

তাই Spicy foods are the healthiest drug in the world.


এইবার আমার মরিচপ্রীতির কারণ বলি। কারণটা হচ্ছে - আমি জানি না।

সত্যিই জানি না। তবে আমার ছোটছেলেরও এই প্রীতি আছে এবং তার সাথে অনেক কিছুতেই আমার ব্যাপক মিল। এই 'পিপার হাই ইফেক্টটা' সম্ভবত অ্যাডিক্টিভ। খাও, ঝাল লাগবে, ভালো লাগবে, আরো বেশি খাও, আরও বেশি হ্যাপি হরমোন - এই সাইকেলে চলতে থাকে।

এই ব্যাপারটা নিজেকে দিয়েই বের করেছি অনেক বছর ধরে খেয়াল করে। এখন এক বেলা ভাতের সাথে গড়ে দুই থেকে তিনটা ওই নাগাটা লাগে। সাথে সকালের নাস্তায় ১৪-১৫টা কাঁচামরিচ ডিমপোচের সাথে। আগে ইনটেক কম ছিল। কয়েক বছরে আস্তে আস্তে বেড়েছে। মরিচের দামের লম্ফ দেখেই আমি নাগায় ঢুকেছিলাম। আর হ্যাঁ, এতে আনার কখনই বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি, হয় না।

আমাকে সম্ভবত 'হটচিলিফাইল' ডাকা চলে।


__________
পুনশ্চ:
কয়েকজন আমাকে বলেছিল আমার এই বেশি মরিচ খাওয়াটা আসলে শো-অফ করা; ম্যাসক্যুলিনিটি (!) দেখানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা। হায় রে কপাল! তাদের কে বোঝাবে ব্যাপারটা সিম্পল ড্রাগ অ্যাডিকশন ছাড়া আর কিচ্ছু না?

বিঃ দ্রঃ
তখ্যগুলো অবশ্যই আমি আবিষ্কার করিনি। সবই আমাকে মামা দিয়েছে। আমি কেবল নাগাগুলোকে কিনে এনেছি। তথ্যে কিছু ভুল থাকলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এত হট্টগোল এত সুরাসুর এখানে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিত্যতই লেগে থাকে হট্টগোল, রাজপথে জায়গা নেই,
হাঁটতে গেলেই মানুষের ধাক্কায় হারাই খেই,
বিশৃঙ্খল নগরীর বুকে স্বার্থপরতার বসবাস;
এখানে মাটিতে পা ফেললেই বুকে মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস।

বাস, কার, রিক্সা, ভ্যা ন, ম্যা ক্সি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×