বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, এনডিসি, পিএসসিকে। সেনাবাহিনীতে তার চাকরি লাভ, পদোন্নতি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথমত, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, এনডিসি, পিএসসি (বরখাস্ত) ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫৮ সালে ঢাকায় জš§গ্রহণ করেন। পিতা গোলাম আযম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সাধারণ ক্ষমা গ্রহণ না করায় নাগরিকত্ব বাতিল হলে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান। আযমী ১৯৭৫ সালে সিলেট সরকারি অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করার পর লন্ডনে গিয়ে পিতার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে গোলাম আযম পাস্তিানের পাসপোর্টে অস্থায়ীভাবে সপরিবারে দেশে ফেরত আসেন এবং বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আযমী এইচএসসি তৃতীয় বিভাগে পাস করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া একজন অতি সাধারণ ছাত্র সেনাবাহিনীতে কিভাবে কমিশন পেলেন সে প্রশ্ন অনেকেরই। এরপর এইচএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ একজন ছাত্র রাতারাতি বিএমএতে এসে কিভাবে ডিগ্রি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পেয়ে যান সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
দ্বিতীয়ত, আযমী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং সবার জন্য নির্ধারিত তারিখের একমাস পর তিনি মিলিটারি একাডেমীতে যোগদান করেন। নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় সিলেটস্থ কোনো দূর-সম্পকীয় চাচার ঠিকানা দিয়ে ভর্তি হন যা সেনাবাহিনী আইনে অত্যন্ত গর্হিত একটি বিষয়। অথচ তার পিতা তখনও পাকিস্তানি নাগরিক এবং পাকিস্তানি পাসপোর্ট বহন করেন। একজন বিদেশি নাগরিকের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি পেলেন?
তৃতীয়ত, সেনাবাহিনীতে ‘সোর্ড অব অনার’ পেতে হলে একজন ক্যাডেটকে হতে হয় সর্ব বিষয়ে চৌকষ। অথচ সর্ব বিষয়ে চৌকষ না হয়েও আযমী লাভ করেছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাডেট হিসেবে সম্মানজনক খেতাব ‘সোর্ড অব অনার’। তিনি ছিলেন একজন অ-সাঁতারু (নন সুইমার)। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষণকালীন আযমী কোনো দিন সাঁতারে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সেনাবহিনীতে কর্মরত প্রত্যেক অফিসারের জন্য বিএমএ থেকে কমিশন লাভ করা জন্য সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক এবং শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষার একটা আবশ্যকীয়। অথচ কিভাবে একজন অ-সাঁতারু কর্নেল পদোন্নতি প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন?
চতুর্থত, আযমী মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কোর্স করার সময়ে সড়ক দুর্ঘটানায় পতিত হন। যার ফলে তিনি শতকরা ২৭ ভাগ ক্লাশে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রচলিত বিধি মোতাবেক এরকম অবস্থায় একজন সামরিক অফিসার ওই কোর্স থেকে ইউনিট বা নিজস্ব সংস্থায় ফেরত যাওয়ার কথা। অথচ তিনি কোর্স থেকে ফেরত যাওয়া দূরের কথা সার্বিক ফলাফলে পঞ্চম স্থান নিয়ে কোর্স শেষ করেন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো।
পঞ্চমত, আযমী ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়ায় উচ্চতর প্রশিক্ষণে যান এবং সেখানকার জামায়াতে ইসলামী দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানে জামায়াত নেতাদের আয়োজিত এক ইফতার পার্টিতেও যোগদান করে তিনি সেনা কর্তৃপক্ষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন। তার এই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানানো হয়। কিন্তু সেনাবাহিনী এই শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় এরকম কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ষষ্ঠত, কোনো বিদেশি নাগরিকের সেনানিবাসে প্রবেশের প্রচলিত নীতি মোতাবেক সেনাসদরের পূর্ব অনুমতি প্রয়োজন হয়। অথচ তার পিতা গোলাম আযম একজন বিদেশি নাগরিক হয়েও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতীত সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে তৎকালীন মেজর আযমীর বাসায় রাত্রিযাপন করেছেন। জামায়তে ইসলামীর সিলেটের দুইজন শীর্ষস্থানীয় নেতা তার জালালাবাদ সেনানিবাসের বাসায় তার পিতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে চাকরিকালীন তার পিতা অস্ত্রধারী দেহরক্ষীসহ সেনানিবাসের ভেতর তার বাসায় গিয়ে রাত্রিযাপন করেন। একজন রাজনৈতিক নেতাকে কোনো প্রকার নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়াই সেনানিবাসের বাসায় বসবাস করতে দেয় সেনা আইনের পরিপন্থী নয় কী?
Click This Link
...........................
আমার তো মনে হয় আযমীর পাশাপাশি সেনা বাহিনী নিয়েও কিছু প্রশ্ন করা উচিত ,