বিদেশি সন্ত্রাসী, জঙ্গি গ্রুপ ও মাফিয়া ডনদের সহযোগীদের হাতে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছদ্মনামে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে। সব পাসপোর্টের তথ্য পুলিশের যাচাই-বাছাই করার নিয়ম থাকলেও কিছু অসৎ পুলিশ সদস্য উৎকোচের বিনিময়ে তদন্ত না করেই রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছেন। এসব সন্ত্রাসী বা অপরাধী বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের সন্ত্রাসী ছাড়াও রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি তদন্ত করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার পর পাসপোর্ট অধিদফতরকে অবহিত করা হয়। এ ধরনের ১১৬টি পাসপোর্ট
বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০০৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইস্যু করা সব পাসপোর্টে উলি্লখিত স্থায়ী ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে তদন্তে মাঠে নেমেছে।
বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুর রব হাওলাদার ১১৬টি পাসপোর্ট বাতিল করার কথা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, পাসপোর্ট দেওয়ার সময় নিবিড় তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন থেকে ছদ্মনামে পাসপোর্ট নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টায় দেওয়া পাসপোর্টগুলোর স্থায়ী ঠিকানা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আমেরিকান দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ আসে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে গিয়ে ছদ্মনামে পাসপোর্ট নেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে পড়ে। তদন্তে দেখা গেছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার নোটিশে যেসব পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
সূত্র জানায়, শুরুর দিকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে শুধু পাসপোর্ট নবায়নের কাজ করা হতো। পরে এখান থেকে এখন নতুন পাসপোর্টও দেওয়া হয়। ছদ্মনামে পাসপোর্টধারীদের মধ্যে ভারতীয় সন্ত্রাসী অনুপচেটিয়া, মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগী দাউদ মার্চেন্ট, ছোটা শাকিলের সহযোগী জাহিদ শেখ, আরিফ, মিয়ানমারের নাগরিক মোঃ শহীদ, রফিকুল ইসলাম, মোঃ তৌহিদসহ বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নামও রয়েছে।
গত ১৭ জুন থাইল্যান্ডের দ্য ব্যাংকক পোস্ট পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা তামিল বিদ্রোহী ও আল কায়দার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। এ ধরনের তিন সন্ত্রাসীকে থাইল্যান্ডের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী নামে ওই রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ার কারাগারে দুই বছর থাকার পর ছাড়া পায়। অপর দুই সন্ত্রাসীর মধ্যে চুবরি আওয়ি ও মোহাম্মদ মুদবাহেমও বর্তমানে ব্যাংককের কারাগারে। থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ডিএসআই) দীর্ঘ তদন্ত করে তাদের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য নিশ্চিত হয়। ডিএসআইয়ের প্রধান পুলিশ কর্নেল তাওয়ি সদসং পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ওই রোহিঙ্গারা প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে থাইল্যান্ডে যায়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আল কায়দা ও তামিল টাইগারদের সঙ্গে যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে।
২০০৪ সালের পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের প্রবণতা বেড়েছে। এ সময় থেকেই মূলত দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গি নেতারা তৎকালীন সরকারের প্রশ্রয়ে থেকে নির্বিঘ্নে কাজ করেছে। ওই সময় থেকেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গি নেতাদের বাংলাদেশে আসা-যাওয়া শুরু হয়। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রশাসন অন্যদিকে ব্যস্ত থাকায় সন্ত্রাসীরা নীরবে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে ২০০৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া পাসপোর্টগুলোর স্থায়ী ঠিকানা পুনর্তদন্ত করে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.............................
সমকাল থেকে