ধর্ম বা ইসলাম নিয়ে, আমি লিখিনা। এ সংক্রান্ত পোস্ট পড়া কিংবা সেখানে সাধারণত মন্তব্যও করি না। কেননা কে জানে, মানুষের সবচেয়ে কোমলমতি অনুভুতিতে যদি ভুল করে আঘাত দিয়ে ফেলি। ব্যাতিক্রম শুধু পালা পার্বনের দিনগুলিতে যেখানে শুভেচ্ছা দেবার জন্যই লেখা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর চেয়েও অনেক বিষয় আছে, যা অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য। আর ধর্মের কথা কানের সামনে বার বার বাজানো বা শোনা আমার ধাতে সয় না।
কিন্তু আজ না লিখে পারলাম না। সিটিজিবিডি নামের সহব্লগার ইসলামের সাথে বেহেস্ত হুর পরী ইত্যাদি পারলৌকিক পুরস্কারের নানাবিধ উপাখ্যান জুড়ে দিয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন। নির্দোষ পোস্ট হলেও, সেটা আমার ভালো লাগেনি। কেননা আমি মনে করি স্রস্টার সন্তস্টি অর্জনই মুখ্য। বেহেস্ত হুর পরীর লোভে ইসলাম পালন করাটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না। ভিন্নমত থাকতেই পারে। সেটাই আমি সুন্দর করে লেখকের কাছে উপস্থাপন করেছিলাম।
কিন্ত সবচেয়ে অবাক কান্ড হলো, দুজন বেশ কুৎসিতভাবে ইসলামকে আক্রমন করে বক্তব্য দিলেন। সেখানে যে ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে, সেটা বিবেকবান এবং শিক্ষিত যে কাউকেই আহত করবে। (নীচে নমুনা দেখুন... )
[ কালিদাস কবিয়াল বলেছেন:
''হযরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করিয়াছেন, বেহেশতের ডাগর নয়না হুরগন একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হইয়া সুমধুর ও সুউচ্চ কণ্ঠে গাহিবে------''
মোহাম্মদ এ যুগে জন্ম নিলে হয়তো টাংকি-ছেদা টাইপের রগরগে সেক্সলামী-সঙ্গীতের ব্যবস্থাও রাখতেন। বাহাত্তরটা হুরির সাথে মাস্টারবেসন-ডগিস্টাইল-ওরাল-সাকিং ইত্যাদি নানাবিদ যৌনসুখানুভূতির কামুক বর্ণনাও হাদিস কোরআনে পাওয়া যেতো। আমার মনে হয় মোহাম্মদের মত কামুক পুরুষ পৃথিবীতে খুব বেশী নেই- এ লোক এগারটা বিয়ে করলো, গনিমতের মাল(যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হিসেবে প্রাপ্ত নারীদের ভোগ করার পরও তাঁর সহবতের লিপ্সা কমেনি; বেহেশতেও আবার সত্তরটা নারী ও ত্রিশটা গেলমান(চিরকিশোর)-এর ব্যবস্থা রাখছে!
আসেন আমরা সবাই মিলে তাঁর জন্য দোয়া করি- 'হে আল্লাহ তুমি মোহাম্মদের সেক্সপাওয়ার আরো সত্তর গুণ বাড়াইয়া দাও, তিনি যেন অনন্তকাল বেহেশত-বেইশ্যা সঙ্গম করিতে পারেন; বলুন আমিন।']
মাত্র মাসখানেক বয়সি একজন ব্লগার, যে আবার নিজেকে কবি দাবি করে ব্লগে কবিতা লিখে থাকে, তার এই ধরণের অপমানজনক আচরণের স্পর্ধার উৎস কোথায়? ব্যাক্তিগত জীবনে সে কোন শিক্ষায় শিক্ষিত যে, ভিন্নমত, ভিন্নধর্মের প্রতি তার এই কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ?
শুধু এই বস্তুটি নয়, ব্লগে এ রকম নমুনা আরো বেশ কয়েকবারই দেখেছি। মঙ্গলের কথা হচ্ছে, এধরণের ঘৃণাবাদি লেখক বা কমেন্টদাতাকে অনেক সময়ই, মডারেটররা সাময়িক ব্যান করে রেখেছিলেন। এর পরেও রাবণের মাথার মত একটার পর একটা গজিয়ে যাচ্ছে।
একজন ব্লগার আছেন ( আমি তার পোস্টের একজন ভক্ত ছিলাম) যিনি ইতিহাসে পাতা খুড়ে অনেক সুন্দর সুন্দর বিষয় তুলে আমাদের সাথে ভাগ করেন। একদিন তাকেও দেখলাম, চিহ্নিত এক ইসলাম বিদ্বেষি/বিকৃতকারির গুণকীর্তন করে পোস্ট দিয়েছেন। ফ্যান হিসেবে তাকে এ ব্যাপারে তার দৃস্টি আকর্ষন করা হলে, তিনি মুক্তচিন্তা আর বাক স্বাধীনতার অজুহাত তুললেন। ফলে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধটা অনেকটাই হ্রাস পেলো। সেই থেকে তার ব্লগে যাওয়া কম হয়।
আরেকজন ব্লগার একবার বোখারি হাদিস বলে চিহ্নিত এক ইসলাম বিদ্বেষি ব্যাক্তির রেফারেন্স দিলেন। সেটা তাকে তথ্যপ্রমানসহ দেখিয়ে দেবার পর, আমি তার চক্ষুশুল হলাম। ফলাফল এই হলো যে, তিনি গোপনে আমার পোস্টে আসেন, এবং গোপনে মাইনাস প্রদান করে প্রস্থান করেন। তিনি পারেন তো ছলে বলে কৌশলে আমাকে ঘৃণিত একগোষ্ঠির
একনিস্ট সদস্য বানিয়ে ব্লগে ঢি ঢি ফেলে দেন।
হান্টিংটন সাহেবের "ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন" নামের তত্ত্বটি, ইসলামকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে সুচতুর প্রচারণার কৌশল বানিয়েছে কিন্তু উগ্রপন্থি জায়নবাদি এবং নিওকনরা। ৯১১ এর নাটক সফলভাবে মঞ্চায়নের পর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালানোটা অনেকটাই সহজ হয়েছে। "লুজ চেইঞ্জ" ছবিটায় উত্থাপিত প্রশ্নগুলির উপর ভিত্তি করে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এটা উগ্র জায়নবাদি আর নিওকনদের যৌথ ষড়যন্ত্র বৈত নয়। একারণে ৯১১ এর ঘটনাকে সাজানো নাটক বলেই মনে হচ্ছে।
আর সেই ৯১১কে উপজিব্য করেই একদল বিকৃত মানসিকতার ঘৃণাবাদিরা পৈশাচিক উল্লাসে অত্যন্ত জঘণ্য এবং কদর্য ভাষায়, ইসলাম, ইসলামের নবী, এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে আক্রমন করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, দুটি মুসলমান প্রধান সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালিয়ে হত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ওই দেশদুটির বিশেষ করে ইরাকের প্রত্নতাত্মিক নিদর্শনগুলিকে চিরতরে ধবংস করে দিয়েছে। অনাহার আর অনাচারে দেশ দুটিকে সয়লাভ করে দিয়েছে। যেখানে ক্ষুধার জ্বালার অস্তিত্ব ছিল না, সেখানে আজ ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য নারীদের গণিকাবৃত্তির মত পেশায় নিযুক্ত হতে হচ্ছে।
পশ্চিমের এই ঘৃণাবাদিতা আমাদের দেশের কিছু বিকৃত মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এই ঘৃণাবাদিতা কিন্ত আজকের নয়। এই সব ঘৃণাবাদিরা বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই সক্রিয়। তারা প্রগতিশীলতার আড়ালে তাদের ঘৃণাবাদি কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আমার স্কুলের এক সহপাঠির বড় ভাইটি বামপন্থি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। তো বড় ভাইয়ের আড্ডা খানা থেকে বেশ কিছু কথা সে আমাদের কাছে বলতো। দুটি নমুনা শুনুন।
" আল্লাহ হু আকবর, কানা মুরগি জবা কর।"
" একদিন এক ল্যাংড়া ভিক্ষুক, সুরা ফাতেহা পাঠ করছে। কাছে দাড়ানো ছিল এক অন্ধ ভিক্ষুক। ল্যাংড়া ভিক্ষুকটি যেই মাত্র ইয়া কানা বুদু আয়াতটি বলেছে, সেই মাত্র অন্ধুটি মনে করলো তাকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। সেও পাল্টা বলে উঠলো ইয়া ল্যাংড়া বুদু......"
(ঘৃণাবাদিদের এই ঘৃণ্য বাক্যগুলি ছড়িয়ে দেবার বাসনা আমার ছিল না। শুধু মাত্র তাদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য উল্লেখ করতে হলো। সৃস্টিকর্তা আমায় ক্ষমা করুন)
তারা আদর্শিক দিক দিয়ে অবশ্য নিজেদের মানব ধর্মের অনুসারি বলে দাবি করলেও, সব রাগ সব ঘৃণা প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছেন ইসলামকেই। তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলিতে কিন্তু যে সব আচার অনুসরন করা হয়, তা আমাদের প্রতিইবেশি ধর্মেরই। এসব করে তারা তো সনাতন ধর্মেরও অবমাননা করছেন।
তাই প্রশ্ন জাগে, তাহলে মানবতাবাদি, প্রগতিশীল এসব ভড়ং ধরার দরকারটাই বা কি? সবচেয়ে গোল বাধে এরা কেউ অক্কা পেলে। তখন না পারে পোড়াতে না পারে গোর দিতে। এদের আদর্শে হয়তো সবকিছু আছে, নেই শুধু অন্তস্টিক্রীয়ার আচারটুকু। অনেক জল ঘোলা করে শেষ মেস চুপি চুপি মাটিচাপা দিয়ে এরা হাপ ছেড়ে বাঁচেন।
এতদিন শুনে এসেছিলাম, বামপন্থিদের সাথে নাকি পুজিবাদিদের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রদর্শনে এরা দেখি একজন আরেকজনের একান্ত সুহ্রদ। অংকটা বুঝতে পারছি না।
৯১১ এর পর যে বিশাল পরিসরে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামুলক অপপ্রচার চলেছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে নেই। এত মেধা, এত অর্থ, এত লোকবল, এত প্রভাব কাজে লাগালেও, লাভের লাভ, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দলে দলে মুসলমানরা ইসলাম ত্যাগ করেনি। হ্যা, সাময়িক কিছুদিন অনেক ভোগান্তি হয়েছে, অন্যায় আগ্রাসনে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে নিহত হয়ে হয়েছে। কিন্ত শত নির্যাতন আর অপপ্রচারের মুল লক্ষ্য যেটা, ইসলামকে উৎখাত তার কোনটাই সামান্যতম অর্জিত হয়নি। ফলে ঘৃণাবাদিদের সব অপচেস্টাই মাঠে মারা গেছে।
উগ্র সাম্প্রদায়িক ঘৃণাবাদিদের মনে রাখা উচিত, ইসলাম কোন ল্যাম্পপোস্ট নয়, যে পথ চলা বেওয়ারিশ কুকুরের দল, ইচ্ছে করলেই সেখানে জল বিয়োগ করতে পারবে।