somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝরাতে, ভুতের অবিশ্বাসের চক্করে =p~ =p~

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়ে দেখতে এই অজ গ্রামে এসে কি বিপদেই না পড়লাম? রাত দেড়টায় স্টেশনে নেমে দেখি স্টেশন পুরো ফাঁকা। মানুষতো দূরের কথা দু-একটা নেড়ি কুত্তাও যে চোখে পড়ছে না। যে বাসায় এসেছি সেটাও তো ঠিক মতো চিনি না। বাড়ির মালিক মানে আমার হবু শশুড়ের নামটা শুধু জানি। এখন এই শীতের কনকনে রাতে সারাটা রাত বুঝি স্টেশনে বসেই কাঁপাকাঁপি করতে হবে। নাহ, এভাবে দাড়িয়ে থেকে কোন লাভ নাই, তারচেয়ে বরং যদি.....

"কোথায় যাওয়া হচ্ছে, শুনি?"

চমকে উঠলাম। ডানে-বায়ে, সামনে-পিছনে তাকায়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। উপর-নীচেও বাদ রাখলাম না কিন্তু কেউই যে নেই। ভুল শুনলাম নাকি? B:-)

"আহা, ঘাড়টাকে অত কষ্ট না দিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে, বলে দিলেই তো হয়।"

নাহ, এবার স্পষ্ট শুনেছি, কানের ভুল হতেই পারেনা। খুব ভালো করে তাকাতেই দেখলাম পুরোনো ভ্যাটকা বট গাছটার পিছন থেকে শুকনা মতো এক লোক বের হয়ে এল।

"কেপন চৌধুরীর বাড়িতে যাব, চিনেন তাকে?"
"চিনব না আবার? নামটা যেমন কেপন, স্বভাবটাও যে একই। এমনই কিপ্টের কিপ্টে যে তার বাসার পিপড়াগুলোও খিধের জ্বালায় সবসময় ছটফট করে। B:-) তা ঐ বাড়িতে কি কাজ পড়ল আবার?"
"ইয়ে, উনার মেয়েকে দেখতে মানে...ইয়ে"
"অ, বুঝেছি। তা শ্বশুড় কি আর খুজে পেলেন না? আমি হলে মোটেই ও বাড়িতে অন্তত বিয়ে করতে যেতাম না"
"আপনি কে. মানে আপনার পরিচয়?"
"আমি! আমাকে চিনলেন না? ওসি মালেকের নামে যে এই গ্রামের বাঘে-গরুতে এখনও এক ঘাটে পানি খায়। গ্রামে বাঘ নেই বটে কিন্তু গরু আছে অনেক। আমার নাম শুনলেই গড়গড় করে পানি খাওয়া শুরু করে।" B-)
"আপনার বাসা কি কেপন চৌধুরীর বাসার আশেপাশেই?", আমি বললাম।
"আগে ওদিকেই থাকতাম। এখন এখানেই থাকি। গাছের উপরে বেশ নিরিবিলি থাকা যায়, একেবারে ঝঞ্ঝাট মুক্ত।"
"এখানে, এই গাছের উপরে? কেন? "
"তা কি করে বলবো, বলেন। গ্রামে যেয়ে কতজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কেউ তো আমাকে দেখেও না, কথাও শোনে না। দুই একজন পরিচিত লোক এই স্টেশনে আমাকে দেখেছে বটে কিন্তু দেখার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। কোন মানে আছে , বলেন তো?"

অবাক হলাম আমি, "অজ্ঞান হবে কেন?"
"সেটাই তো আমার প্রশ্ন? ভু- ভু-ভুত বলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে"
"ভুত !!! ভুত কেন বলবে?" ভয় পেলাম না আমি কিন্তু একটু যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। :||
"সেটাই তো আমারও প্রশ্ন? মাস দুই আগে মারা গেছি বটে, তাই বলে ভুত?"
"আপনি মারা গেছেন? ম-মশকরা করছেন না-নাকি?"
"দুই আঙ্গুল লেখাপড়া শিখেই বেশ বেয়াদব হয়ে পড়েছ দেখি। আমি তোমার সাথে মশকরা করতে যাবো কেন, ছোকড়া?" ওসি মালেক বেশ ক্ষেপে গেলেন এবার।

"মরে গেছেন, তারমানে তো আপনি ভু-ভু-ভুততততত ! " B:-)
"কি শুরু করলে , বলো তো? গ্রামের মূর্খ্য লোকগুলোর কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু তোমার মতো শহরের শিক্ষিত ছেলে ছোকড়াও যদি এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করে, তাহলে চলে? এই বিজ্ঞানের যুগে কি কেউ ভুতে বিশ্বাস করে নাকি? কোথায় ভুত, কিসের ভুত। কই পারলে আমার সামনে একটা ভুত হাজির করোতো।"
"কিন্তু আপনি না বললেল, আপনি মারা গেছেন?"
"গেছি তো, অবশ্যই গেছি। তো? মানুষ মরবে, এটাতো স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক কথা। এর সাথে ভুতের সম্পর্কটা কোথায়।"
"কিন্তু মরে গেলেতো আপনি ভু-ভু-ভু........."
"আবার সেই ভুত। তোমাদের এইসব কুসংস্কার দূর করোতো। ভুত থাকলে দেখাও না একটা? কই দেখাও?" X(
"ইয়ে আপনি না হয় ভুত বিশ্বাস করেন না কিন্তু আপনি নিজেই যে ভু-ভুঃ...।"
"দেখ ছোকড়া। এই নাস্তিক মালেককে ওসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করাতে পারবেনা। পৃথিবী আজ কোথা থেকে কোথায় পৌছে গেছে আর কোথায় তোমরা পড়ে আছো? এই শতাব্দিতে এসে কিনা আমাকে ভুতে বিশ্বাস করতে বলো? মরে গেছি বটে কিন্তু বিজ্ঞান থেকে দূরে তো সরে যাইনি। বিজ্ঞান যেহেতু বলছে ভুত নেই, তো নেই।এসব অযৌক্তিক কথা আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবেনা। হাহঃ"
"দেখুন, আ-আমি মনে হয় এবার অ-অজ্ঞান হয়ে পড়বো? প-পড়ে গেলাম কিন্তু।"
"আরে , দাড়াও দাড়াও। খবরদার, অজ্ঞান হবে না। " X((
"কিন্তু, ভুত দেখে অজ্ঞান হবোনা? এটাও যে অযৌক্তিক।" :-*
"আবার সেই ভুত। ধুর, তোমার সাথে কথা বাড়ায়ে আর কাজ নাই। চলো , তোমাকে কেপনের বাড়িতে বরং পৌছে দিই।"

মাইল খানেক হাটতেই এসে পড়লাম আমার হবু শ্বশুড় বাড়িতে। দরজায় নক করতেই সাস্থবান এক লোক দরজা খুললেন। আসার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম তাই আমাকে দেখেই চিনে ফেললেন।

"এসে পড়েছো বাবা, আমি তোমার জন্যই রাত জেগে অপেক্ষা করছিলাম। তা, আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?"

"আরে না, কিসের সমস্যা। আমি ছিলাম না সাথে?"

চমকে উঠলেন কেপন চৌধুরি। কন্ঠস্বরের মালিকের খোঁজে ডানে-বায়ে, সামনে-পিছনে সবদিকেই তাকালেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে উপরে-নীচেও তাকালেন, কেউ নেই। শেষে অন্ধকারে মিশমিশে কালো, শুকনা ওসিকে দেখতে পেয়ে ভু-ভু-ভু......বলতে বলতেই দাঁত কপাটি লেগে .......

ওসি মালেক এগিয়ে এসে আমার হবু শ্বশুড়কে হালকার উপর পর্যবেক্ষন করে বললেন, "দেখ, অবস্থা দেখ, এও অজ্ঞান হয়ে পড়লো। এদের ভুতের কুসংস্কার আর গেলনা। আরে, কোথায় ভুত, কিসের ভুত? ভুত বলে কিছু আছে নাকি? পারলে দেখাও না এক-আধটা ভুত ..........." /:)

ট্রেনের জন্য বসে আছি। ভোর সাড়ে তিনটায় একটা ট্রেন আসার কথা। কেপন চৌধুরির বাসায় আর ঢোকা হয়নি আমার। ভুতের সাথে সম্পর্ক আছে এরকম লোককে জামাই বানাবেই বা কেন? এখন বসে থাকা ট্রেনের জন্য। অবশ্য আমি একা না। ওসি মালেকও (উনার ভুত আর কি) আছেন সাথে। পৃথিবীতে বিজ্ঞানই যে সবকিছু আর ভুত বলে যে কিছু নেই সেটা বুঝানোর আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। :-< |-)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৭
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×