সম্প্রতি সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, কোনরূপ ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া, শুধুমাত্র SSC এবং HSC পরীক্ষার GPA এর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে! প্রশ্ন ফাঁস এবং কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রন করাই নাকি এ সিদ্ধান্তের মূল কারন! অথচ এ সিদ্ধান্ত শোনামাত্র দেশের আপামর সচেতন জনগন এবং সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে! ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগসহ সমগ্র সামাজিক যোগাযোগ সাইটে এ নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে! আর হবেই না বা কেন, এটা তো কোন ছেলেখেলা নয়, রীতিমত হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জীবন মরণের ব্যাপার!
এতদিন ধরে SSC, HSC তে ভাল GPA এর পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার মাধ্যমেই কেবল মিলত এই মহান শিক্ষায় আসার সুযোগ! GPA এর ভিত্তিতে ছিল ১০০ নাম্বার, আর ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নাম্বার, মোট ২০০ নাম্বারের ভিত্তিতে হতো ফাইনাল সিলেকশন। সুন্দর এই পদ্ধতি ছিল সর্বজনগৃহীত। তাই দেশ সেরা মেধাবীরাই এযাবতকাল চিকিৎসা শিক্ষায় এসেছে, তাই চিরকাল এই পেশার প্রতি মানুষের সম্মানের জায়গাটুকুও ছিল অক্ষুন্ন!
নানান কারনে যারা বোর্ড পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলাফল করতো, তাদেরও সুযোগ থাকতো অনেক বেশি পরিশ্রমের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা প্রমান করার! বর্তমান পদ্ধতিতে তার সুযোগ কোথায়? কেন বোর্ড পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা একজন শিক্ষার্থী তার জীবন গড়ার, তার স্বপ্নপুরনের, অন্তত চেষ্টা করার একটা সুযোগও পাবে না?
যারা গতবছর কোথাও ভর্তি না হয়ে শুধুমাত্র মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য সারা বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করেছে, তারা এখন কি করবে?
এত হাজার হাজার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিড়ে, কিসের ভিত্তিতে ভর্তির যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে? যদি একই গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগ্যতা বিচারের জন্য তাদের পাওয়া নাম্বার এর হিসেব করা হয়, তাহলে কি দরকার ছিল এই গ্রেডিং সিস্টেম নামক প্রহসনের? তাহলে ফিরিয়ে নেয়া হোক পুরনো ডিভিশন সিস্টেমে, যেখানে অন্তত সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েও কোন জায়গায় ভর্তি হতে না পারার যে কষ্ট, তা থেকে মুক্তি পাবে শিক্ষার্থীরা!
প্রশ্ন ফাঁস, এটা তো শিক্ষার্থীদের দোষ নয়! আজকের বাংলাদেশে সব পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁস হয়, তাহলে সরকারের নজরদারির দুর্বলতার জন্য কেন শিক্ষার্থীরা বলির পাঠা হবে?
আর কোচিং সেন্টার কি শুধু মেডিকেল ভর্তির জন্যই আছে নাকি? যেখানেই পরীক্ষা, সেখানেই কোচিং সেন্টার। ভার্সিটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, জাতীয় ভার্সিটি, বিসিএস, পুলিশ নিয়োগ, প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ, সেকেন্ডারি শিক্ষক নিয়োগ, IELTS, IBA, সেনাবাহিনী নিয়োগ......... মোটকথা সবকিছুর কোচিং আছে আমাদের দেশে! এজন্য কি সব নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হবে?
GPA এর ভিত্তিতে এসবকিছুর নিয়োগ দেয়া সম্ভব?
যদি তা না ই হয়, দয়া করে মেডিকেলের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেয়া কোনভাবেই ঠিক হবে না! প্রশ্ন ফাঁস এবং কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে, সরকারি নজরদারি জোরদার করা হোক। যেন ভর্তি পরীক্ষা হয় আরও কলুষ মুক্ত এবং আরও স্বচ্ছ। কেননা ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া কেবলমাত্র জিপিএ এর ভিত্তিতে কখনোই প্রকৃত যোগ্যদের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়! তাই আমরা আশা করি, সরকার তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে সম্মানিত জায়গাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না! সেই সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ডাক্তার হবার জন্য, অন্তত চেষ্টা করার সুযোগ দেবে! জিপিএ এবং পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফলের মাধ্যমেই সবাই জেনে নেবে কে এই শিক্ষার যোগ্য এবং কে নয়!